somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লাল জামার কাহিনি-অনুবাদ গল্প

২০ শে জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আব্বাসীয় খলিফা মনসুর একরাতে তাওয়াফ করছিলেন । হঠাৎ একটি করুণ সুরের আওয়াজ তার কানে ভেসে এল । তিনি দেখতে পেলেন, একজন কেঁদেকেটে আল্লাহর কাছে মুনাজাত করছে ।লোকটি বলছে ,হে আল্লাহ ! আমি এই জুলুম অত্যাচারের বিরুদ্ধে আপনার দরবারে ফরিয়াদ করছি । যে লোভের কারণে মানুষ প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তার বিরুদ্ধে ফরিয়াদ করছি । লোকটির চোখের পানি তার দাড়ি বেয়ে বেয়ে ঝরছে । এ দৃশ্য দেখে মনসুর আর স্থির থাকতে পারলেন না । তার মনে হল এই লোকটি তার বিরুদ্ধেই দোয়া করছে । মনসুর সেখান থেকে সরে এলেন । মসজিদুল হারামে এসে দু রাকাত নামাজ পড়লেন। এরপর প্রহরীদের পাঠালেন লোকটিকে খুঁজে নিয়ে আসার জন্য । তারা গিয়ে লোকটিকে নিয়ে এল । নুরানি চেহারার এক বুজুর্গ ব্যাক্তি। ধীর পায়ে তিনি খলিফার সামনে হাজির হলেন । আদবের সাথে তাকে সালাম করলেন । খলিফা সালামের জবাব দিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলেন ,আচ্ছা আমাকে একটু বলুন তো কার জুলুমের বিরুদ্ধে আপনি এভাবে দোয়া করছিলেন ?কে সেই লোভী যার লোভের কারণে মানুষ তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে??আমাকে একটু খুলে বলুন । আপনার কথাগুলো শোনার পর মনে হয় আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি । খলিফা অস্থির হয়ে তাকে প্রশ্ন করছিলেন ।
খলিফার প্রশ্নের জবাবে তিনি মুখ খুললেন । তার ভয় হচ্ছিল ,খলিফা তার কথা শোনার পর হয়তো তাকে শাস্তি দিতে পারেন । এমনকি কতলও করতে পারেন ।তাই তিনি খলিফার কাছে নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি চাইলেন । খলিফা তাকে অভয় দিলেন । খলিফার আশ্বাস পেয়ে তিনি বলতে শুরু করলেন। তিনি বললেন ,যার অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমি দোয়া করছিলাম এবং যার লোভের কারণে মানুষ অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে সেই ব্যাক্তিটি হচ্ছেন আপনি ।এ কথা শুনে খলিফা বেশ ক্রুদ্ধ হলেন । কিছুটা অবাকও হলেন । তিনি বললেন,ওরে নির্বোধ !ধন –সম্পদ ,ঐশ্বর্য সব তো আমার হাতের মুঠোয়। এরপরও আমার আবার কিসের লোভ থাকতে পারে ?
বুজুর্গ লোকটি বললেন, সবচেয়ে বড় লোভ তো আপনার ভেতর । আল্লাহ আপনাকে মুসলমানদের আমির বানিয়েছেন অথচ আপনি তাদের ভুলে গিয়ে ভোগ বিলাসে মত্ত হয়ে পড়েছেন । নিজের চারপাশে আপনি ইটের দেয়াল , লোহার ফটক এবং সশস্ত্র প্রহরীদের দিয়ে আড়াল তৈরি করে রেখেছেন । বিশেষ কিছু লোক ছাড়া কেউ আপনার কাছে যেতে পারে না । যারা ক্ষুধার্ত-অসহায় তাদের আর্তনাদ আপনার কানে পৌঁছায় না ।। আপনি কড়া হুকুম দিয়ে তাদের বাধা দিয়ে রেখেছেন ।
আপনার উদাসীনতা দেখে আপনার কর্মচারিরাও কাজে অবহেলা করতে শুরু করেছে । তারা ভেবেছে ,স্বয়ং খলিফা যেখানে আল্লাহর খেয়ানত করছেন তাহলে আমরা তার খেয়ানত করতে অসুবিধা কোথায় ?তারা ঠিক করে নিয়েছে তাদের ইচ্ছা ছাড়া কারো অভিযোগ যেন আপনার কানে না পৌঁছে । তাহলে তারা ইচ্ছামত লুটপাট করতে পারবে। এভাবে তারা সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার শুরু করেছে । ফলে মানুষ তাদেরকে ভয় পেতে শুরু করেছে । তাদেরকে খুশি রাখার জন্য ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছে । তাদের অত্যাচারে দেশের মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে । তাদের অভিযোগ শোনার মত আর কেউ থাকেনি । আপনার উপস্থিতিতে আপনার খেলাফতে অন্যায় ছড়িয়ে পড়েছে ।মুসলমানরা মুসলমানদের উপর জুলুম শুরু করেছে ।
আমিরুল মুমিনিন !তাহলে বলুন, ইসলামের আর কী বাকি রইল ?
আমিরুল মুমিনিন ! শুনুন ,আমি একবার চীনে গিয়েছিলাম । তাদের সম্রাটের শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল ।তিনি দুঃখ করছিলেন আর কাঁদছিলেন । তার সভাসদরা তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল । তখন তিনি বললেন ,শোন !আমার কান নষ্ট হয়ে গেছে এজন্য আমি কাঁদছি না । আমি তো কাঁদছি এজন্য যে আমার দরবারে এসে কোন মজলুম সাহায্য চাইবে কিন্তু আমি তার কথা শুনতে পারব না ।তখন আমি কিভাবে তাকে সাহায্য করব ?তবু যাক, আমার কান নষ্ট হয়েছে কিন্তু আমার চোখ তো ঠিক আছে । তোমরা সবাইকে বলে দাও কোন অসহায়-দুঃখী কেউ থাকলে সে যেন লাল রঙের জামা পরিধান করে। তাহলে আমি তাকে চিনতে পারব ।
এরপর থেকে তিনি হাতির পিঠে চড়ে বেড়াতেন আর খুঁজতেন অভাবী বা দুঃখী কেউ আছে কিনা । লালজামা পরা কাউকে দেখলে তাকে সাহায্য করতেন ।
আমিরুল মুমিনিন ! সে একজন অমুসলিম বাদশাহ অথচ প্রজাদের জন্য তার মনে কত দয়া । আর আপনি মসলমানদের খলিফা ,আল্লাহর নবীর উত্তরসূরী । তবু আপনি তার থেকে পিছিয়ে আছেন ।
আমিরুল মুমিনিন ! আপনি কি ভাবছেন যে আপনি আপনার সন্তানদের জন্য ধন –সম্পদ জমা করছেন ? তাহলে শুনে রাখুন ,ধন-সম্পদ দান করার মালিক ,আপনি নন । কাউকে ধন-সম্পদ একমাত্র তিনিই দেন ।মায়ের উদর থেকে যে শিশু ভুমিষ্ট হয় তার তো কোন কিছু থাকে না । কিন্তু আল্লাহ একদিন তাকে ধনী বানিয়ে দেন ।
আপনি কি মনে করছেন যে আপনি নিজেকে শক্তিশালী করার জন্য এসব করছেন তাহলে বনু উমাইয়ার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিন । তারাও বহু অর্থের মালিক ছিল কিন্তু তাদের পরিণাম আল্লাহ যা চেয়েছেন তাই হয়েছে ।
মনসুর লোকটির কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন । খলিফার লোকজন অবাক হচ্ছিল লোকটির সাহস দেখে ।এরপর লোকটি বললেন ,আমিরুল মুমিনিন !কেউ কোন অপরাধ করলে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে আপনি তাকে শুধু মৃত্যুদণ্ড দিতে পারেন ।কিন্তু সর্বশক্তিমান আল্লাহ যাকে শাস্তি দেন তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন না বরং তাকে চিরদিনের জন্য আযাবে নিপতিত করেন ।তিনি সর্বদর্শী,সর্বজ্ঞ।আপনার সবকিছু সম্পর্কে তিনি অবগত আছেন । একটু ভেবে দেখুন তো যেদিন তিনি সবার হিসাব নিবেন সেদিন আপনার ক্ষমতা ম,আপনার ধন-সম্পদ আপনার কী কাজে আসবে ?
একথা শুনার পর মনসুর কাঁদছিলেন আর বলছিলেন, হায়! আমার কি দুর্ভাগ্য । হায় আমার যদি অস্ত্বিত্বই না হত ।তাঁর দু চোখ বেয়ে তখন অনুতাপের অশ্রু ঝরছিল ।
এরপর লোকটি বললেন,আমিরুল মুমিনিন ! জনগণের মাঝে যারা জ্ঞানী গুণী তাদেরকে আপনার সভাসদ বানান । রাষ্ট্রীয় কাজে তাদের কাছে পরামর্শ চান । আপনার দরবার সবার উন্মুক্ত করে দিন। গরীব অসহায়দের সাহায্য করুন । যাকাত এবং খাজনা সঠিক পরিমাণে উসূল করুন । হকদ্বারদের মাঝে ইনসাফের সাথে তা বিলিয়ে দিন । তাহলে হয়তো দেশে শান্তি ফিরে আসবে । আল্লাহর আযাব থেকে আপনিও রেহাই পাবেন ।
এরপর আযান হল । সবাই নামাযে চলে গেল । লোকটিও চলে গেলেন । নামাযের পর মনসুর তাকে আবারো খুঁজলেন । কিন্তু তাকে আর পাওয়া যায়নি ।
এমনই ছিলেন সে যুগের শাসক এবং আলিম ।খলিফাকে হক্বকথা বলতে তিনি ভয় পাননি । খলিফাও নিজের ভুল স্বীকার করতে কুণ্ঠাবোধ করেননি ।





১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×