উইলবার রাইট ও অরভিল রাইট ১৯০৩ সালে কার্যত উড়োজাহাজ বানিয়ে, লোকচক্ষুর সামনে চালিয়ে দেখিয়ে দিলেন মানুষের পক্ষে ওড়া সম্ভব, আপনি ভাবছেন তখন সবাই খুব খুশি হয়েছিল? না। মানুষের মন এত সহজ স্থান নয়। এর তিন বছর পরে, ১৯০৬ সালে নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে ব্যাপারটির ঘোরতর বিরোধিতা আর উপহাস করে লিখেছিল যার অনেকটা এমন, পৃথিবীতে এমন আহাম্মকও আছে যারা মনে করে, মানুষ (১৯০৩ সালে) উড়োজাহাজে করে উড়েছিল।। পৃথিবীর মূল সমস্যা আহাম্মকরা নয়, বরং (আপাত) `বুদ্ধিদীপ্ত`রা।
উন্নত বিশ্বের গবেষণা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটা কথা দিনে কয়েকবার করে শোনা যায় - প্রোজেক্ট, ফান্ডিং। সরল ভাষায় হল, মাথায় একটা ধারনা আসছে, কাগজে লিখে রাখছি, সরকারকে বলতে হবে কিছু টাকা দিলে পরীক্ষা করে দেখা যায় ধারনাটা যুতসই কি না? লক্ষ করুন, এই পর্যায়ে প্রজেক্ট ফান্ডিং এর সাথে আবিষ্কারের কোন সম্পর্ক নাই। কিন্তু তারা শুধু সরকার নয়, নানা প্রতিষ্ঠান থেকে সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছে। আর তারই ফল স্বরূপ, এত আবিষ্কার, এত পেটেন্ট পশ্চিমাদের হাতে।
বিলক্ষণ এক বংগাল একখানা যন্তর বানাইছে। তাতে নাকি বিনা খরচে বিদ্যুৎ হবে। প্রথম কথা হল, যদিও আবিষ্কারক বলেন নাই, বিনা খরচে। যাই হোক। তার প্রতিবাদে ফেসবুকে ফেনা উঠে যাচ্ছে। সবাই একদিনের জন্য পদার্থবিদ হয়ে গেছে। যে বালকটি হল-এফেক্ট কি বুঝে না সেও দেখি ভেক্টর, নিত্যতা সূত্রের লেঙ্গট ধরে টান দিয়ে দিছে।
কাঁকড়ার গল্প - পাল্লা হালকা করার জন্য বলছি। দুই হাড়িতে কাঁকরা নিয়ে একজন যাচ্ছেন। একটি ঢাকনি দিয়ে পোক্ত করে বাঁধা, আরেটি উপহাসের মত খোলা মুখ। (আপনি বোধহয় আমার পুরাণ পুঁথির গল্প ধরে ফেলেছেন।) যাই হোক, একজন জিজ্ঞাসা করলেন কাঁকরা নিয়ে যাচ্ছ ভাল মশায়, একটার মুখ বন্ধ আরেকটা খোলা কেন? উত্তরে ঐ লোক যা বললেন, তার মোদ্দা কথা হল, বন্ধ ঢাকনাটায় বিদেশী কাঁকরা, মুখ খোলাটায় দেশী। বিদেশী কাঁকড়াগুলো এত্তো বেতমিজ, একটা কোন মতে মাথা তুলে দাঁড়ালে, সবগুলো মিলে ঠেলে বের করে দেয়। সরল মতি ভদ্রলোক বললেন, আর দেশী কাঁকরা? ...কোন মতে যদি একটা কাঁকরা কোন প্রকারের মাথা তুলে একটু বের হতে নেয়, সবগুলো মিলে তার ঠ্যাং ধরে টেনে নামায়, হাড়ির তলায় পাঠায়।
উইলবার রাইট ও অরভিল রাইট আকাশে ওড়ার আগে বহু বিজ্ঞানী আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখেছে, অর্থ, সম্পদ, সময় দিয়েছেন, প্রাণ দিয়েছে। ইতিহাস হয়তো তাদের মনে রাখে নি সবসময় - কিন্তু ভুলে যায় নি। তাদের উৎপ্রেক্ষাগুলোকে ছোট করে দেখলে সেটা ভুল হবে।
দুই বিদ্বান তর্কে নেমেছে কে বড় বিদ্বান। বাঙ্গাল বিদ্বান আর অবাঙ্গালী বিদ্বান। তর্ক চলছে। কেউ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান। সন্ধ্যা হয়ে এলো, তাও ফলাফল হচ্ছে না। এমন সময়,
বাঙ্গাল: বল দেখি, আসমুদ্রহিমাচল মানে কি?
অবাঙ্গাল: সমুদ্র হতে হিমালয় পর্যন্ত।
উপস্থিত জনগণতো হতভম্ব হয়ে গেল। এটাও পারল।
এবার অবাঙ্গাল: কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
বাঙ্গাল: কি করতে হবে বুঝতে না পারা।
উপস্থিত জনগনতো খুশি। এবার বাঙ্গাল এর পালা।
বাঙ্গাল: বাংলায় বল, আই ডোন্ট নো।
অবাঙ্গাল: আমি জানি না।
উপস্থিত জনগনতো খুশি, হাত তালি, উৎসবের ঢেউয়ে সব হারিয়ে গেল।
এই দর্শকদের বড় একটা অংশ কিছুদিন ধরে পদার্থবিজ্ঞানী হয়ে গেছে, ফেসবুক আর ব্লগ এখন এদের দখলে।
ঐ ভুল করে বাংলায় জন্ম নেয়া ছেলেটিকে একটু সময় দিন। আপনার পঙ্কিল জিহ্বা থেকে, বন্ধ প্রকোষ্ঠের মন থেকে একটু রেহাই দিন।আর কোন ভাবে যদি তা না পারেন, ধরুন না হয়- দুষ্ট লোকের মুখে তো শুনেছেন সবাইই খাচ্ছে, পদ্মা সেতু খাচ্ছে, টেংরা টিলা খাচ্ছে, রেলের বগী খাচ্ছে, অয়েল ট্যাংকার খাচ্ছে, স্যাটেলাইট খাচ্ছে, ড্রীমলাইনার খাচ্ছে, সিসিটিভি খাচ্ছে, ফিঙ্গার প্রীন্ট খাচ্ছে, বিমান খাচ্ছে, সোনা খাচ্ছে, ফ্রিগেট খাচ্ছে, শেয়ার বাজার খাচ্ছে – আজ না হয় ও আবিষ্কারের নামে হাওয়াই বিদ্যুৎ ওয়ালারাও কিছু খাক?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




