অনিবার্য কারণে আজ পাবলিক বাসে চড়ে অফিসে আসতে হল। প্রায় ঘন্টা খানেক মিরপুর-১ এ বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছি। একটার পর একটা বাস আসছে আবার চলেও যাচ্ছে। কোনটায় ওঠার উপায় নাই। বেকুবের মত অনেকক্ষন দঁাড়িয়ে থাকার পর একটা বাসে ওঠার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। প্রাণের মায়া পরিত্যাগ করে কোন রকম ঠেলেঠুলে বাসের ভেতর আগে মাথাটাকে পরে শরীরটাকে ডুকাইতে সক্ষম হলাম। কোথাও কোন সিট খালি নাই। আগে বাসের সীটের ডান দিকে উপরে অথবা বাম দিকে লেখা থাকত-শিশু, প্রতিবন্ধী ও মহিলাদের জন্য ৯টি সীট সংরক্ষিত।। যদিও নিজেকে শিশু ও প্রতিবন্ধীদের দলভুক্ত করায় কিঞ্চিত অপমান বোদ করতাম। বড় আশা নিয়ে চার দিক তাকাচ্ছিলাম কিন্তু কোথাও মহিলাদের জন্য আসন বরাদ্দের কথাটি লেখা দেখছি না। উপয়ন্ত না পেয়ে উত্তপ্ত ইঞ্জিন কাভারের উপর নিজেকে কোন রকম স্থাপন করলাম। হঠাৎ একজন যাত্রীকে ঘিরে গুঞ্জন শুরু হল- পাশ থেকে একজন যাত্রী বললেন, ভাই আপনে উঠে এই মহিলাকে বসতে দেন। দেখেন না এটা মহিলা সীট। লোকটা কিঞ্চিত খেপে বললেন কোথায় লেখা আছে এটা মহিলা সীট?? আর মহিলাদের সীট হলেই বা কী ? মহিলারাও তো পুরুষদের সিটে বসে আছে। সামনে ৪টা আসন (চালকের বাম দিকে প্রধান ফটকের সাথে) মেয়েদের জন্য রিজার্ভ এইটার সাথে অইটা মিলাইলে চলবে না। কেন চলবে না? পুরুষদের সীটে মহিলারা ইচ্ছা মত বসতে পারবে আর মহিলাদের সীটে পুরুষরা বসতে পারবে না - এইটা কোন সংবিধানে আছে?? শ্যামলী থেকে এক বয়স্ক ভদ্র মহিলা উঠলেন। অনেক কষ্ট করে উত্তপ্ত ইঞ্জিনের উপর শরীরটাকে মাঝে মাঝে একটা ঝঁাকুনী দিয়ে জানটারে বের হইতে না দেয়ার প্রাণান্তকর চেষ্টা চালাইতেছি। কিন্তু ভদ্র মহিলার জন্য খুব খারাব লাগছে। তাই সহ্য করতে না পেরে মুখ খূললাম। ওই যাত্রীকে উদ্দেশ্য করে বললাম ভাই আপনার কী মা-বোন নেই? নির্লজ্জের মত বড় ব্ড় বুলি আউড়াচ্ছেন অথচ এই মহিলার প্রতি একটু সহানুভুতি কী হয় না?? লোকটা উঠে মহিলাকে বসতে দিলেন।
মিরপুর থেকে শুরু করে জায়গায় জায়গায় থামিয়ে যাত্রী উঠাচ্ছে আর উঠাচ্ছে। তিল ধারনে ঠাই নাই ভেতরে- তবুও হেল্পার বলেই যাচ্ছে আসেন ভাই সীট খালি আছে। এক যাত্রী তো বলেই ফেলল অই ব্যাটা তর গাড়ী কী লোকাল- এ রকম প্যাসেঞ্জার টুকাইতে টুকাইতে যাইতেছস- এটা কী সিটিং সার্ভিস নাকি ফিটিং সার্ভিস? ভাড়া নিবি সিটিংয়ের আর ব্যবসা করবি ফিটিংয়ের - ফাজলামী পাইছস? পাশ থেকে নিপিড়ীত আর একজন বললেন - আরে ব্যাটা এইভাবে গলা না ফাটাইয়া বাসায় গিয়া ঘুম থেকে উঠাইয়া নিয়া আয়।
কলেজ গেট অতিক্রম করে আসাদ গেটের আগেই -বাম পা দেন, পাম পা দেন বলতে বলতে আল্লাহরেরেরেেেেেেেেে । এক মহিলা আসাদ গেটে নামতে চাইলে হেল্পার তাকে বাম পা দিয়ে চলন্ত বাস থেকে নামার জন্য তাগিদ দিচ্ছিল। হেল্পারের নির্দেশ মত মহিলা নামতেই পড়ে যান। এই যাত্রায় জানে বেঁচে গেলেও কোমরে -পায়ে সম্ভবত বেশ চোট পেয়েছেন। মহিলার চিৎকার শুনে সব যাত্রীরা একজোট হয়ে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে। লক্ষ্য করলাম এই একটা জায়গায় সব যাত্রীরা মহাজোট হয়েছে। প্রতিপক্ষ ড্রাইভার, হেল্পার ও কন্টাকটর। এখানে জামায়াত, বিএনপি, আওয়ামীলীগ কোন ভেদাভেদ নাই। এক জোট হয়ে হেল্পারকে বললেন-- বদমাশ এইটা কী প্যাসেঞ্জার নামাবার -উঠাবার জায়গা?? তুই মহিলাকে ঠেলে ফেললি কেন? কন্টাক্টর নরম গলায় বলল - ভাই ক্ষেপেন ক্যান মহিলার কোন ক্ষতি হয় নাই।
২৭ নাম্বারে এসে একটা সীট পাইলাম। জানালার পাশে। তিন সীটে দুজনই পুরুষ। এক চিপায় জড়ো সড়ো হয়ে বার বার লা-হাওলা পড়তে ছিলাম। পাশের যাত্রী ভ্দ্রতার সুরে জিগায় আপা অসুবিধা হচ্ছে না তো?? অপর পাশের যাত্রী ঘুমাইয়া পড়ে সহযাত্রী কাধেঁ। ভাই কী বালিশ পাইছেন?? লোকটা জেগে উঠে জিগায় ঘুমাইয়া পড়ছিলাম?? নিজেই বলেন ঘুমামুনা কী করুম- টেকনিক্যাল থেকে এপর্যন্ত আসতে সময় লাগল ১.৩০ ঘন্টা, অফিসে পৌঁছাইতে লাগবে প্রায় আড়াই ঘন্টা। তাই টাইমডারে কাজে লাগাই। ঘুমাইতে ঘুমাইতে যাই আর ঝিমাইতে ঝিমাইতে আসি:। ভদ্রলোকের কথা শুনে বেশ মজা পাচ্ছিলাম আবার একটু শঙ্কীত ছিলাম না জানি আবার আমার ঘাড়ে--।
টেকনিক্যাল আসার আগেই ভাড়া বুঝিয়া লইল। ধানমন্ডি ২৭ নাম্বার এসে কন্টাক্টর আবার ভাড়া চাইল। বললাম মামা ভাড়া কতবার দিব?? কন্টাক্টর আবারও তোপের মুখে পড়ে এক যাত্রী বলে উঠল এই নিয়া তিনবার ভাড়া চাইলি। এটা রীতি মত মান সম্মানের ব্যাপার। সবাই ভাববে ভাড়া না দিয়াই বইসা আছি। কাজ কর - একটা পেইড সীল বানাইয়া রাখবি। ভাড়া নিবি আর ওই পাবলিকের কপালে সীল মাইরা দিবি-মামলা খতম। ভদ্রলোকের কথা শুনে পাশের যত্রীদের মধ্যে হাসির রোল পড়ে গেল।
অবশেষে আমার গন্তব্যে পৌঁছাইলাম। গাড়ী থেকে নামার জন্য বাম পা দেওয়া মাত্র কন্টাক্টর আমার এক হাত ধরে বলে ভাড়া কাই?? আগ-পাছ কিছু না ভেবেই দুইগালে চড়াৎ চড়াৎ করে থাপ্পোড় বসিয়ে দেই। জানি না কীভাবে একাজ আমি করলাম। এটা দ্বিতীয় বারের মত করলাম।
এর আগে তখন আমার অফিস ছিল তেজগাঁও, এক হরতালের সময় লেগুনায় যাচ্ছিলাম অন্য এক কারনে এক বদমায়েশের পায়ে ইচ্ছা করে পেন্সিল হীল দিয়ে পাড়া দিয়েছিলাম।
পরিস্থিতি আমাকে বাধ্য করেছে এমন রূঢ আচরণ করতে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:৫৪