শুনশান বাড়ি।বাড়িতে ৪ ঘর লোকের বাস।পূর্ব সারিতে ২ঘর আর দক্ষিণ সারিতে ২ঘর।পরিবার ৪টিতে লোকের সংখ্যা মোট ২১-২২জন।যাই হোক যে গল্পটি আজ বলছি সেটা আজ থেকে প্রায় ৮বছর আগের ঘটনা।আমি তখন সম্ভবত ৭ম শ্রেণীর ছাত্র।একদিন ক্লাস করছি হঠাৎ শুনলাম আমাদের স্কুলের পাশের দিঘীতে একটা ৪বছরের বাচ্চা পড়ে গেছে।কথাটা শোনা মাত্রই ক্লাস থেকে সবাই একদৌড়ে দিঘীর পাশে দাড়াতেই দেখি,হ্যা কথাটা পুরোপুরি সত্য।প্রায় ঘন্টা খানেক অতিবাহিত হলো কিন্তু বাচ্চাটির কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছেনা।আমাদের চেনা পরিচিত প্রায় ১০-১২জন দিঘীতে নেমে ডুবের পর ডুব দিচ্ছে কিন্তু কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছেনা।কয়েকজন আবার টানাজাল দিয়েও দেখলো কিন্তু ফল হলোনা।সবাই বলছে তাহলে এককাজ করা যাক, বাঁশ ধরে খুজলে হয়তো পাওয়া যাবে।তাই করা হলো।কিন্তু তাতেও যখন কাজ হলোনা তখন আমাদের লোকালয়ের এক মামা(সঙ্গত কারনে নাম প্রকাশ করছিনা) এসে বললো, আমি ১বার চেষ্টা করে দেখি।উনি আবার আমাদের এলাকার ভালো ডুবারু।উনার কথায় সবাই রাজি হয়ে গেল।১ম ডুব দেওয়ার কিছুক্ষণের মাথায় তিনি উঠে বললেন,খোঁজ পাওয়া গেছে।আমরা সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।এরপর ২য় ডুবে তিনি বাচ্চাটির পা ধরে উপরে তুললেন।এরপর বাচ্চাটিকে মাথার উপরে তুলে চরকির মত ঘোড়ানো হলো কিন্তু যে যাবার সে তো যাবেই।বাচ্চাটিকে আর বাচানো গেলোনা।আমরা স্কুলে ফিরে ক্লাস না করে বাসায় চলে আসলাম।পরে বাচ্চাটির বাড়িতে গিয়ে যা শুনলাম তাতে ভয়ের মাত্রা আরোও বেড়ে গেল।
শুনলাম,বাচ্চাটি রোজকার মত আজও তার বড় ভাইয়ের জন্য টিফিন বক্সে খাবার নিয়ে মাদ্রাসায় যাচ্ছিল।ওর সাথে সমবয়সী আরোও ১টা বাচ্চা ছিল।দুজনে ফিরে আসার সময় গাছের চারা লাগানো একটা দিঘীর পাশ দিয়ে আসছিল।হঠাৎ পা পিছলে ১ম বাচ্চাটি দিঘীতে পড়ে যায়।বাচ্চাটি সাকার জানতো না।কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার এটা যে,বাচ্চাটি পানিতে ডুবছে আর ভাসছে, আর ২য় বাচ্চাটিকে হাত ইশারায় পানির দিকে ডাকছে।কিন্তু বাচ্চাটি কোনরুপ পানি খাচ্ছেনা।এ অবস্থা দেখে ২য় বাচ্চাটি ভয়ে ১ম বাচ্চাটির বাড়ি গিয়ে বললো যে,ওঁ পানিতে পড়ে গেছে।কথাটা শোনামাত্রই সবাই দৌড়ে এসে পানিতে লাফিয়ে পড়ে।
কথাটা শুনে কেমন জানি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।এটাতেই শেষ হলে ভালো হতে।কিন্তু পরেরদিন শুনলাম বাচ্চাটির মাকে ভুতে ধরেছে।ভয়ে আর সেখানে গেলামনা। কিন্তু পরে জানতে পারলাম, ওদের বাড়ির সামনে ১টা সজিনার গাছ রয়েছে। ফকির বা ওঁঝা যাই বলুন উনি এসে বাচ্চার মাকে ঝাড়ফুক করার সময় বললেন,সেই সজিনার গাছটিতে ১টি "কালি" (হিন্দুদের দেবী) রয়েছে।যে কিনা বাচ্চাটিকে মেরে ফেলেছে।১জন বলেছিলো, কিভাবে? উত্তরে ওঁঝা বললো,বাচ্চাটি গরুর মাংস নিয়ে মাদ্রাসায় গিয়েছিলো,আসার পথে বাচ্চাটি এক টুকরো মাংস খেতে খেতে আসছিল।এই কাজটা মোটেই পছন্দ করেনি কালি।তাই সে ইচ্ছে করেই ধাক্কা মারে বাচ্চাটিকে।আর বাচ্চাটি অনেক চেষ্টা করেছিলো পানি থেকে ওঠার কিন্তু কালি ওর পা টেনে ধরেছিল।
হঠাৎ ১দিন শুনলাম ওঁঝা আবার আসতেছে ঝাড়ফুক করতে তাই আমি আগে ভাগেই সেখানে গেলাম। গিয়ে দেখি মহিলাটি রুদ্রমূর্তি। আমি সহ আরোও ৩-৪জন মহিলাটিকে ধরলাম। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় কেউই তাকে ধরে রাখতে পারছিলাম না।ভাবলাম, চেহারা দেখে মনে হলো ১হাত দিয়ে ঘুড়ানি মারলে উল্টে পড়বে আর এখন তার গায়ে এত জোর আসলো কোথা থেকে।
যাইহোক,আয়াতুল কুরসি পড়তে পড়তে মহিলাটির পা চেপে ধরতেই মহিলাটি কর্কশ গলায় বললো,আমাকে ধরেছিস কেন?কালি কি তোর কোন ক্ষতি করেছে? কথাটা শোনামাত্রই পা দুটো ছেড়ে দিলাম এই ভয়ে যদি সত্যি সত্যি বিপদটা আমার ঘাড়ে বসে। তাই কথা না বাড়িয়ে সেখান থেকে চলে গেলাম।পরেরদিন সকালবেলা শুনলাম ওঁঝা এসেছিলো।ওঝা মহিলাটিকে জিজ্ঞাসা করে,তারা কয় ভাই বোন।উত্তরে কালি রূপি মহিলাটি বলে,ওরা সাত বোন কোন ভাই নেই।ওঝা আবার বলে কে কোথায় থাকে? উত্তরে সে বলে, আমি এই বাড়ির সজিনার গাছে,২য় জন রাস্তার মাঝ বরাবর ছোট্ট তাল গাছে(সেটা আবার আমার বাড়ি থেকে ২০০গজ উত্তরে),৩য় ও ৪র্থ জন ছোট্ট গাছটির পাশেই একটা বড় দিঘী যেটাকে সবাই লালদিঘী বলে সেটার ২পার্শে দুইটা বড় তালগাছে,৫ম ও ৬ষ্ঠ জন দিঘীর পাড়ের ১টা পুরোনো মাটির ঘরে,আর ৭ম জন পাকা রাস্তার পাশের ১টা কদম গাছে। ওঝা বললো, তুই যাবি কিনা বল? উত্তরে--- যাবো, তবে লেজ বিহীন পাঠা(পাঠা অর্থাৎ পুরুষ জাতীয়, যেহেতু ছাগলের লেজ হয় তাই লেজহীন পাঠা বলতে ১টা ছোট্ট ছেলে) কে জবাই দিতে হবে। একথা শুনে ওঝা তন্ত্র-মন্ত্রের খেলা শুরু করলে শেষ পর্যন্ত একটা ছোট্ট পাঠা ছাগল জবাইয়ের মাধ্যমে সে চলে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫১