দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের অবিলম্বে মুক্তি ও পুলিশ হেফাজতে তার ওপর চালানো নির্যাতনের তদন্ত দাবি করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ।
সম্প্রতি নিউইয়র্কে সংগঠনের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, অবিলম্বে মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি দিন এবং দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করুন। পুলিশ হেফাজতে মাহমুদুর রহমানের ওপর যে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে তা অত্যন্ত গুরুতর। আদালতে মাহমুদুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ পুলিশের সন্ত্রাসবিরোধী এলিট ফোর্সের সদস্যরা চোখ বেঁধে, জানালার সঙ্গে তার হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে তার ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে তাকে কোনো ধরনের খাবার ও পানীয় দেয়া হয়নি।
বিবৃতিতে হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক গবেষক তাজ থাপা বলেন, পত্রিকা বন্ধ করে তার সম্পাদককে জেলখানায় আটক রাখার ঘটনা প্রমাণ করছে বাংলাদেশ সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও স্বাধীন মত প্রকাশের ব্যাপারে ভীত হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে সহিংসতা গণতন্ত্রের মূলনীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন বলে জোর প্রচারণা চালিয়েছিল।
দৈনিক আমার দেশ-এর প্রকাশনা বন্ধ এবং সাংবাদিকদের ওপর পুলিশি হামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বিবৃতিতে তাজ থাপা বলেন, গত ২ জুন মধ্যরাতে শতাধিক পুলিশ জোর করে আমার দেশ কার্যালয়ে ঢুকে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে ৩৪টিরও বেশি মামলা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৮টিই মানহানি মামলা। পুলিশ জোর করে পত্রিকার প্রেস বন্ধ করার পাশাপাশি প্রকাশনার লাইসেন্স বন্ধ করে দেয়। একইসঙ্গে ওই রাতে ছাপানো পত্রিকার কপিগুলোও নিয়ে যায় পুলিশ। ওই রাতে কর্মরত অনেক সাংবাদিক সেদিনের পুলিশি হামলায় আহত হন।
বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারের সমালোচনা করে সংবাদ প্রকাশের ফলে মাহমুদুর রহমান ও তার সহকর্মী সাংবাদিকরা বাংলাদেশ সরকারের চাপের মুখে ছিল। পত্রিকাটি সেই থেকে এখনও বন্ধ রয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ সরকার তাদের এই পদক্ষেপের যৌক্তিকতা প্রমাণের জন্য মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনেছে।
ইউরোপের মানবাধিকার বিষয়ক আদালতের রায়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, সংবাদপত্র বন্ধের ঘটনা নিশ্চিতভাবেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।
বিবৃতিতে তাজ থাপা বলেন, সরকারের দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার সম্পর্কে গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলাটা যেকোন গণতন্ত্রের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। সংবাদপত্র বন্ধ বা পুলিশ পাঠিয়ে হামলা না চালিয়ে বরং সরকারের উচিত সমালোচনাগুলো থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া। সম্পাদকের বিরুদ্ধে প্রতারণার মিথ্যা অভিযোগ এনে সংবাদপত্র বন্ধ করার যৌক্তিকতা প্রমাণ করা যায় না।
বাংলাদেশের বিচার বিভাগের প্রতি আহ্বান জানিয়ে হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচের পক্ষ থেকে বলা হয়, অবিলম্বে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি দিন। অথবা দ্রুত তার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করুন। একইসঙ্গে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ব্যাপারে যেসব তথ্য জোগাড় করা হয়েছে সেগুলোর যথার্থতা পুরোপুরি সঠিকভাবে যাচাই করুন। আমার দেশ-এর প্রকাশক মোহাম্মদ হাসমত আলী সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে বলেছেন, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তাকে তুলে নিয়ে জোর করে দু’টি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছে। অন্যদিকে সরকারি কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসমত আলী দু’টি বিবৃতিতে সই দিয়েছেন। এর ভিত্তিতেই মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
মানবাধিকার রক্ষা এবং নির্যাতনবিরোধী আন্তর্জাতিক কনভেনশন আইসিসিপিআর অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সরকারের উচিত মাহমুদুর রহমানের ওপর চালানো নির্যাতনের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করা। বাংলাদেশ সরকারকে স্পষ্ট করতে হবে যে, দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নির্যাতনের যুগের অবসান হয়েছে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




