ঢাকা, ২৬ জুলাই (শীর্ষ নিউজ ডটকম): পাঁচ শীর্ষ নেতাসহ তৃণমূলের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার নেতা-কর্মী গ্রেফতার হওয়ার পর কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জামায়াতে ইসলামী। ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আপদকালীন কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা ও দলের সংহতি বজায় রাখতে ভারপ্রাপ্ত নেতৃত্বের আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও দলটির ভাঙনের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে জোরেশোরে এ চেষ্টা চলছে। যদিও সরকারের সংশ্লিষ্টরা এখনো এ চেষ্টায় সফল হতে পারেননি, তারপরও অচিরেই এ বিভক্তি স্পষ্ট হতে পারে বলেও জানিয়েছে দলের একটি সূত্র। ভাঙনের আশঙ্কা:জামায়াতে ভাঙন ধরানোর জন্য জোর তৎপরতা চালালেও এখন পর্যন্ত তেমন একটা গতি আসেনি। গত ২৯ জুন তিন শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী গ্রেফতার হওয়ার পর জামায়াতের একজন শীর্ষ নেতাকে দিয়ে দলে ভাঙনের চেষ্টা করা হয়েছিল।
কিন্তু সেই নেতা অ্যাসাইনমেন্টে ব্যর্থ হলে সম্প্রতি তাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রক্রিয়াটি এখনো অব্যাহত আছে। দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহি পরিষদের সদস্য ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মীর কাশেম আলীও সন্দেহের তালিকায় আছেন। তার সঙ্গে আছে দলের সংস্কারবাদী আধুনিক মনস্ক বড় একটি অংশ।
জানা গেছে, বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের একজন নেতাকে দিয়ে বিভক্তির চেষ্টা চলছে। বিষয়টি টের পেয়ে জামায়াতও তার গতিবিধির ওপর নজর রেখেছে। গত কয়েকদিন ওই নেতাকে দলীয় কার্যক্রমে দেখা যা”েছ না। আত্মগোপনে থাকা জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহি পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর আমির রফিকুল ইসলাম খানকেও এ তৎপরতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ কারণে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি থাকা সত্ত্বেও তাকে খোঁজাখুঁজি হচ্ছে না। দলের ভাঙন ঠেকাতে জামায়াতও পাল্টা প্রস্তু‘তি নিচ্ছে। বিশেষ করে ছাত্রশিবিরের একটি গ্র“পকে নজরদারিতে রেখেছে জামায়াত। এই গ্র“পটি সম্প্রতি দলের কেন্দ্রীয় সভাপতির নেতৃত্ব নিয়ে বিদ্রোহ করেছিল।
সূত্র জানায়, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিয়ে আগে থেকেই অন্তর্বিরোধ আছে। সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বির“দ্ধে দলের একক কর্র্তৃত্ব কুগিত করা নিয়ে অসন্তোষ ছিল। নিজামীর পর সাঈদীর আমির হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় মুজাহিদ আগামীতে আমির পদ পেতে নানাভাবে তৎপরতা চালান বলে অভিযোগ ছিল। কিন্তু তিন নেতা গ্রেফতার হওয়ার পর হঠাৎ পাল্টে যায় প্রোপট। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হাল ধরেন নায়েবে আমির মকবুল আহমদ ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহার“ল ইসলাম। জ্যেষ্ঠতার বিচারে দু’জনের কেউই ভারপ্রাপ্ত আমির ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারির দাবিদার নন। পাঁচ নায়েবে আমিরের মধ্যে মকবুল আহমদ দ্বিতীয় ও পাঁচ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের মধ্যে এটিএম আজহার তৃতীয়। পিছিয়ে পড়েন জ্যেষ্ঠ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামার“জ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা। এতে কামার“জ্জামান অসন্তুষ্ট হন বলে তার ঘনিষ্ঠজনরা জানান। নেতৃত্বের এ পরিবর্তনে দলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। দলের মাঠ পর্যায় থেকে অনেক নেতা-কর্মী এর কারণ জানতে চেয়েছে। সংশ্লিষ্টরা এর কারণ ব্যাখ্যা না করে অপো করতে বলেছেন।
জামায়াতে ভাঙনের আশঙ্কা নিয়ে প্রশ্ন করলে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহার“ল ইসলাম বলেন, জামায়াত ভাঙবে কেন? তিনি বলেন, নেতারা জেলে থাক, আর বাইরে থাক। ভেতরে-বাইরে আমরা সবাই একাট্টা আছি এবং থাকবো।
গ্রেফতার আতঙ্কে জামায়াত নেতৃত্ব:
পাঁচ শীর্ষ নেতার পর জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় অন্যান্য নেতারাও গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছেন। যে কোন সময় গ্রেফতার হতে পারেন আশঙ্কায় তারা নিজ নিজ সাংগঠনিক দায়িত্ব গুছিয়ে রাখছেন। দলের অন্তত আরো পাঁচজন গুর“ত্বপূর্ণ নেতা যে কোন সময় গ্রেফতার হতে পারেন বলে জানা গেছে।
এ তালিকায় সাবেক জামায়াত আমির গোলাম আযম, নায়েবে আমির আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ, মওলানা আবদুস সুবহান, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহার“ল ইসলাম ও কেন্দ্রীয় নির্বাহি পরিষদ সদস্য মীর কাশেম আলীর নাম রয়েছে। মীর কাশেম আলীর পেছনে সার্বণিক গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, রিমান্ডে গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জামায়াতের পাঁচ শীর্ষ নেতার দেয়া কিছু তথ্য যাচাই করার স্বার্থে কয়েকজন নেতাকে হেফাজতে নিতে চায় পুলিশ। তবে তা এখনই, না আরো কয়দিন পর তা নিয়ে রয়েছে সিদ্ধান্তহীনতা। সহসাই তৃতীয় দফায় জামায়াত নেতাদের গ্রেফতার করা হতে পারে।
অচিরেই তৃণমূল নেতৃত্বে ধরপাকড়:
জামায়াতে ভাঙন সম্ভব না হলে দলের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের নেতৃত্বে অচিরেই বড় ধরনের আঘাত আনা হবে। জামায়াতের জেলা ও উপজেলা কমিটির নেতৃবৃন্দের জীবন বৃত্তান্ত সংগ্রহের পর এখন তাদের অনিয়ম ও দোষ-ত্র“টির অনুসন্ধান চলছে। শিগগিরই তৃণমূলের নেতৃত্বকে ধরাশায়ী করতে ধরপাকড় অভিযান শুর“ হবে। এ অভিযান থেমে থেমে চলবে দীর্ঘ মেয়াদে। এর ল হবে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দীর্ঘ স্থায়ী হতাশা সৃষ্টি করা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৮ ফেব্র“য়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মী ফার“ক হোসেন হত্যাকাণ্ডের পর থেকে টানা প্রায় ৬ মাসের ধরপাকড়ে ইতিমধ্যে দলের নেতা-কর্মীদের ভেতর গভীর হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের দমনমুখী দৃঢ় অবস্থানের কারণে দলটির কেন্দ্র থেকে প্রান্তিক পর্যায়ের কর্মীরা ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে উঠেছে। দলীয় কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পুলিশের বেধড়ক লাঠিপেটা ও একের পর এক নতুন মামলায় জড়ানোয় জামায়াতের প্রবীণ নেতা-কর্মীদের একটি বড় অংশ ভীতি ও হাতাশায় পড়েছে। তবে দলটির নেতারা কোন রকমের হতাশার কথা স্বীকার করেন না।
জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আযাদ এমপি বলেন, ‘আমাদের কর্মীরা চাঙ্গা আছে। তারা শক্তভাবেই মাঠে নামতে চায়, কিন্তু আমাদের পলিসি ডেসট্রাক্টিভ নয়। আমরা লংটার্ম মুভমেন্ট দাঁড় করাতে চাই।’
জামায়াতের দুই ধাপের প্রস্তুতি:
গ্রেফতারের আশঙ্কা থাকায় জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান অস্থায়ী নেতৃত্ব দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহি ও কর্মপরিষদের গুর“ত্বপূর্ণ সদস্যদের সঙ্গে পরামর্শ করে আপদকালীন জন্য অন্তত আরো দুই ধাপের নেতৃত্ব প্র¯‘ত রেখেছে। ঘটনা ঘটার পর নতুন নেতৃত্ব দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহার“ল ইসলাম বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী একটি পরীতি ও পুরাতন দল। জামায়াতের নেতারা যদি সরকারের রোষানলে পড়েন, জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়ে গ্রেফতার হন, তাহলে যারা থাকবেন, তারাই দল চালাবেন।’
পাঁচ শীর্ষ নেতার পর নতুন করে গ্রেফতারের আশঙ্কায় থাকা সম্ভাব্য নেতাদের নিয়ে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহি ও কর্মপরিষদের গুর“ত্বপূর্ণ সদস্যরা কয়েকবার বৈঠক করেছেন। পল্লবীর গণহত্যার মতো এ ধরনের কোন মামলায় এটিএম আজহার“ল ইসলাম গ্রেফতার হলে দলের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও ডা. শফিকুর রহমানের মধ্য থেকে একজন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পেতে পারেন। অধ্যাপক মুজিব গত ক’দিন ধরে মাঠ পর্যায়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করছেন।
নেতৃত্বের এ ছকেও চিড় ধরলে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ থেকে নতুন নেতৃত্ব আসবে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি অধ্যাপক তাসনীম আলম, ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, হামিদুর রহমান আযাদ এমপি, নুর“ল ইসলাম বুলবুল, মওলানা আবদুল হালিম, চট্টগ্রাম মহানগর আমির শামসুল ইসলাম এমপি, সিলেট মহানগর আমির এহসানুল হক যোবায়ের প্রমুখ উঠে আসবেন। রাজশাহী মহানগর আমির অধ্যাপক আতাউর রহমান ও খুলনা মহানগর আমির মিয়া গোলাম পরোয়ার মুক্তি পেলে আপদকালীন তারাও কেন্দ্রের গুর“ত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেতে পারেন।
ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমদের বির“দ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগসহ বড় কোন মামলা না থাকায় এ পদে পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম। প্রয়োজনে আপদকালীন দায়িত্ব পাবেন জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির অধ্যাপক নাযির আহমদ।
২৯ জুন জামায়াত আমির মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার একটি মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর ওই রাতেই দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে পরিবর্তন হয়। নেতৃত্বের এ পরিবর্তনটি গ্রেফতারের আগেই জামায়াত আমির মওলানা নিজামী দলের গঠনতন্ত্রে দেয়া মতাবলে ঠিক করে যান।
দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ এমপি বলেন, ‘যে কোন পরি¯ি’তি মোকাবিলায় আমরা সব ধরনের ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত আছি। জামায়াত আদর্শভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠিত দল। লিডারশিপে সাময়িক ক্রাইসিস হলেও সাংগঠনিক পদ্ধতিতেই নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে।’
জামায়াতের দীর্ঘমেয়াদী রণকৌশল:
পাঁচ শীর্ষ নেতার মুক্তি ও দলের বিপর্যয় উতরানোর পথ নিয়ে দলের নীতি-নির্ধারকরা শুর“তে দোটানায় ছিলেন। কিš‘ এখন তারা সরকারের বাকি মেয়াদের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনের কৌশল নিয়েছেন।
নেতাদের মুক্তির দাবিতে কার্যকর কোন কর্মসূচি না থাকায় জামায়াতের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও এক ধরনের ভীতি ও হতাশা বিরাজ করছে। মূল নেতৃত্বের অনুপুস্থি’তিতে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত নেতৃত্ব সাবধানী আচরণ করছেন এবং বিএনপি’র সঙ্গে সমন্বয় রেখে সাধারণ গোছের কর্মসূচি দিয়ে তারা কর্মীদের চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করছেন।
দলের অনুসারীদের বড় একটি অংশ কঠোর কর্মসূচি নিয়ে এখনই মাঠে নামতে প্রস্তুত। কিস্তু নীতি-নির্ধারকরা সরকারের রক্তচু মোকাবেলা করতে চান ঠাণ্ডা মাথায়। এখনই শক্তি য় না করে তারা সরকারের বাকি মেয়াদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে লম্বা কর্মসূচির পরামর্শ দিচ্ছেন। কিš‘ অনুসারীদের ওই অংশটি মনে করছে, সরকার ধরপাকড় ও নির্যাতন করে ধীরে ধীরে যেভাবে শক্তি য় করে দিচ্ছে- তাতে এভাবে কিছুদিন চলতে থাকলে কর্মীদের মাঠে আনা যাবে না।
পল্টন থানা আমির ও সাবেক শিবির সভাপতি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, লোকজন কঠোর কর্মসূচি চাচ্ছে, নেতৃবৃন্দ চাচ্ছেন ধীরে সুস্থে। ফলে নেতাদের চিন্তা ও কর্মীদের চিন্তার মধ্যে কিছুটা ফারাক তো আছেই।’
জনমনে প্রশ্ন, জামায়াত কি করছে:
পাঁচ শীর্ষ নেতার গ্রেফতারের আগে পরেও বড় কোন প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেনি জামায়াত। দলটির নেতা-কর্মীরা কার্যত নীরব। ক্যাডারভিত্তিক সংগঠন হিসেবে জামায়াত-শিবির যে প্রতিক্রিয়া দেখানোর কথা- তা দেখা যায়নি। এই নীরবতা জামায়াত-শিবিরের অতীত চরিত্র এবং দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিপরীত। সাধারনেরও নানা প্রশ্ন এই চুপসে থাকা নিয়ে।
খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক মওলানা র“হুল আমিন সাদী বলেন, ‘নাগরিকত্ব মামলায় গোলাম আযম ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নিজামী-মুজাহিদ গ্রেফতার হওয়ার পর জামায়াত তাৎণিক যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল- এবার পাঁচ শীর্ষ নেতা গ্রেফতারের পরও তা দেখা যায়নি। ব্যাপারটি পরিষ্কার নয়।’
শীর্ষ নেতাদের মুক্তি আন্দোলন নিয়ে জামায়াত-শিবিরের তৃণমূল পর্যায়েও নানা প্রশ্ন। সাধারণ মানুষও জানতে চা”েছ, জামায়াত-শিবির আসলে কি করছে। তাদের এই নীরবতায় ‘নাশকতার’ পরিকল্পনাসহ ইতিমধ্যেই নানা আশঙ্কা ডালপালা মেলছে। সরকারের প থেকেও জামায়াত-শিবিরের যে কোন নাশকতা চেষ্টার বির“দ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামায়াতের উ”চ পর্যায় থেকে সারা দেশের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সর্বো”চ সতর্কতা ও সংগঠিত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ডাক এলেই মাঠে নামার জন্য প্র¯‘ত থাকারও নির্দেশনা রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, আমরা পুলিশের সঙ্গে যুদ্ধে নামতে চাচ্ছি না। সময় হলে একসঙ্গে লোকজন নামবে। আমরা এখন শক্তি সঞ্চয় করছি।’
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহার“ল ইসলাম বলেন, ‘সবকিছুর একটা স্বাভাবিকতা আছে। আমরা স্বাভাবিকভাবেই এগুচ্ছি। আন্দোলন নিয়মতান্ত্রিক এবং গণতান্ত্রিকভাবে চলবে, আইনি লড়াইও চলবে। আমরা সরকারের পাতা ফাঁদে পা দিতে চাই না।’
সরকারের ফাঁদটা কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকারের মন্ত্রীরাই বলছেন জামায়াত কিছুই করতে পারলো না। এর মানে তারা উস্কানি দিচ্ছেন।’
জামায়াতের জঙ্গি আতঙ্ক! :
জানা গেছে, জামায়াত ও ছাত্রশিবির সরকার পতনের আন্দোলনে নামতে এক পাঁয়ে খাড়া। কিস্তু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থি’তি মূল্যায়ন করে তারা সেদিকে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। তারা মনে করছে, জঙ্গিবাদের সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক নিয়ে এতদিন যে প্রচারণা ছিল- এখন মারমুখো আচরণ করলে সরকার তার ষোলকলা পূর্ণ করে ছাড়বে। সরকার জামায়াতের জন্য এমন ফাঁদ পেতেছে বলে জামায়াতের নীতি-নির্ধারকরা টের পেয়েছেন।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতে বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি দূতাবাসগুলো জামায়াতের কার্যক্রম নিবিড় পর্যবেণ করছে। পাঁচ শীর্ষ নেতার গ্রেফতার ও সরকারের যুদ্ধাপরাধের বিচার আয়োজনের প্রোপটে জামায়াত কোন পথে এগুচ্ছে- তার ওপর সূক্ষ্ম দৃষ্টি রাখছে দূতাবাসগুলো।
জামায়াত নেতারা মনে করছেন, সরকার জামায়াতের ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন করতে জেএমবির সঙ্গে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছে। যে কারণে জেএমবি’র বোমা হামলার সঙ্গে জামায়াতকে জড়িত করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে এটিএম আজহার বলেন, ‘সভা-সমাবেশ পণ্ড ও নেতাদের গ্রেফতার করে সরকার নিজেই সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে, আবার জামায়াতের বির“দ্ধে নাশকতার পরিকল্পনার কথাও বলছে। যারা নিজেরাই সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে, তাদের মুখে অন্যের বির“দ্ধে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগ মানায় না।’
জামায়াতে হতাশা শিবিরে ভরসা:
পাঁচ শীর্ষ নেতার গ্রেফতারের পর আরো গ্রেফতার আতঙ্কে মারাত্মক হতাশা ভর করেছে জামায়াতে। প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও নেতাদের সঙ্গে একান্ত আলাপে এ হতাশার প্রকাশ ঘটছে।
শীর্ষ নেতাদের মুক্তির লে দেশব্যাপী বিপ্তিভাবে বিক্ষোভ করলেও সরকারের দৃষ্টিগ্রাহ্য হওয়ার মতো জোরালো কোন প্রতিবাদ করতে পারেনি তারা। এমনকি জামায়াতের সব জেলা ও উপজেলা কেন্দ্র ঘোষিত বিােভ কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। কিন্তু শিবির ১১৭টি সাংগঠনিক শাখার মধ্যে প্রায় সবক’টি শাখায় শক্তভাবে বিক্ষোভ করেছে। তিন নেতার মুক্তির দাবিতে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম শেষে তারা অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এর আগে ছাত্রশিবির জামায়াত নেতাদের মুক্তি না দিলে ‘দেশ অচল’ করে দেয়ার প্র”ছন্ন হুমকি দেয়। কিন্তু জামায়াত বাধা দেয়ায় শেষ পর্যন্ত এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়নি। এই সংকটে জামায়াতের বর্তমান নেতৃত্ব দলের অনুগত ছাত্রশক্তি ছাত্রশিবিরের ওপর ভরসা করেই সরকারকে পর্যুদস্ত করার স্বপ্ন দেখছে।
শিবির সভাপতি মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাদের যে জনশক্তি আছে, এখনই দেশ অচল করে দেয়ার ইচ্ছে করলে আমাদের পে তা সম্ভব। কিন্তু আমরা এখনই শক্তি য় করবো না।’
শিবির সভাপতি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের পর মনে হয়েছে দেশে বিএনপি নেই। শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের পর বাতাসও নড়েনি। বাস্তবতা হচ্ছে তারাইতো এখন দোর্দণ্ড প্রতাপে মতায়। সুতরাং বর্তমান প্রোপটই শেষ কথা নয়।’ তিনি সর্বশক্তি নিয়ে পরি¯ি’তি মোকাবেলা করার কথা জানান।
সামগ্রিক হতাশাজনক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমদ বলেন, ‘দেখা যাক, আল্লাহ ভরসা। দুনিয়ার মানুষতো অনেক কিছুই করে। আল্লাহতো একজন আছেন। শেষ পর্যন্ত তিনিই বিজয়ী হন।’
বিএনপি-জামায়াতে কৌশলগত লড়াই:
বিএনপি’র সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর কৌশলগত বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই চলছে। এ লড়াই এখন পর্যন্ত দল দু’টির নীতি-নির্ধারক ও থিংক ট্যাঙ্কারদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে। বিষয়টি পরস্পরের অবস্থায় চিড় ধরানো পর্যন্ত না গড়ালেও দু’পই নিজেদের পর্যবেণে রেখেছে।
জামায়াতের প্রতি সরকারের কঠোর মনোভাব, যুদ্ধাপরাধের বিচার ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হলে বেশি তিগ্রস্ত হবে জামায়াত। ভোটের হিসাব-নিকাশে ইসলামপন্থিদের এই সমর্থন বিএনপির দিকে ঝুঁকবে। এই সরল বিশ্লেষণ থেকে বিএনপির নীতি-নির্ধারকদের অংশ বিশেষ মনে করছেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মকাণ্ডের বিষয়ে কৌশলী অবস্থান গ্রহণই হবে বিএনপি’র জন্য রাজনৈতিক দূরদর্শিতা।
টানা ৫ মাস সরকারি খড়গে জামায়াত এখন কার্যত পর্যুদস্ত। আরও বিপর্যস্ত হলে জামায়াতের পেশাজীবী গোষ্ঠী এবং মডারেট গ্র“পকে কৌশলে বিএনপি’র সঙ্গে একীভূত করার একটি গোপন মিশন নিয়ে বেশ ক’জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক ও চিকিৎসক কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. হাসান মোহাম্মদ বলেন, ‘বিএনপি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করে না, কিš‘ ধর্মের নির্যাস এবং ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাস করে। আমার বিশ্বাস, এ পরিস্থিতিতে বিএনপি কৌশলী হবে। বিষয়টি নিয়ে সিরিয়াস ভূমিকা নেবে না।’ ড. হাসান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপি সমর্থক শিক প্যানেল সাদা দলের আহ্বায়ক ছিলেন।
জামায়াত নিয়ে বিএনপিতে মতপার্থক্য:
যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুতে জামায়াতের পে দৃঢ় অবস্থান নেয়ার বিষয়ে বিএনপি’র নীতি-নির্ধারকদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। সূত্রের দাবি, বিএনপি’র একজন প্রভাবশালী আইনজীবী নেতা স্থায়ী কমিটির বৈঠকেই যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে বিএনপি’র অবস্থান পে রাখার প্রস্তাব করেন। পরে ওই নেতা একটি জাতীয় দৈনিককে দেয়া সাাতকারে যুদ্ধাপরাধীদের (সম্ভাব্য) আইনি সহায়তা দিতে বিএনপি’র দলীয় কোন সিদ্ধান্ত নেই বলে জানান। যদিও বিএনপি চেয়ারপার্সন দলের সিনিয়র আইনজীবীদের ডেকে যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াত নেতাদের জড়ানো হলে তাদের পে কাজ করার নির্দেশ দেন।
এদিকে বিএনপি’র একজন কেন্দ্রীয় নেতা, যার বির“দ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে, তিনি দলীয় প্রধানকে আশ্বস্ত করেছেন, সাংবিধানিকভাবে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বাধাপ্রাপ্ত হলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সে সব ইসলামী দলের সম্পর্ক ছিন্ন হবে, বিএনপি তাদের সঙ্গে সহানুভূতিশীল আচরণ করলে জামায়াতসহ এ সকল ইসলামী দল বিএনপি’র দিকেই ঝুঁকবে। চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের পর দলে ওই নেতার অবস্থান সংহত হওয়ায় দলীয় প্রধানের সবুজ সংকেত পেয়ে তিনি এসব ইসলামী দলের সঙ্গে যোগাযোগ রা করে চলছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এ অবস্থায় জামায়াত গভীর দৃষ্টিপাতে দেখছে, যুদ্ধাপরাধের বিচার ও ’৭২-এর সংবিধানে ফিরতে সরকারি পদেেপর বিরুদ্ধে বিএনপি কার্যত কতটা আন্তরিক এবং মাঠে কি ভূমিকা পালন করে। যদিও সংবিধান সংশোধনে গঠিত সর্বদলীয় কমিটিতে বিএনপি’র অংশগ্রহণে অনীহা প্রকারান্তরে জামায়াতের প্রতি সমর্থনই প্রকাশ করে। তদুপরি দলীয় রাজনীতির অন্তিম সংকটে বিএনপি’র দিকে মুখিয়ে আছে জামায়াত। কিন্তু বিএনপি এই সংকটকে পুঁজি করছে, না ভেতরে ভেতরে ‘কূটনীতি করছে- তা নিয়ে জামায়াতের নীতি-নির্ধারকদের মধ্যে স্বল্পবিস্তর সন্দেহ আছে। যদিও দলটির নীতি-নির্ধারকরা এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ বিএনপি সম্পর্কে নেতিবাচক চিন্তাকে ‘দুরভিসন্ধিমূলক এবং ‘জোটে ফাটল ধরানোর চেষ্টা বলে মন্তব্য করেন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




