ভূটান এবং তার Gross National Happiness
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
অনেকের মত দেশবিদেশ ঘুরতে আমিও খুবই পচ্ছন্দ করি, এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। আট বছর কাজ করি, চার আনা পয়সা সেভিংস নাই। সব উরাই ঘুরাঘুরির পিছনে। যেখানেই যাই মনরম দৃশ্য, লোকাল খাবার এগুলো ছারাও আরেকটা জিনিষ আমাকে খুবই টানে। সেটা হল লোকাল পিপুল এন্ড কালচাল। ভুটানে এয়ার পোর্টে নেমেই আমার প্রথম যে কথাটা মনে হয়েছে সেটা হল “আহারে আমরা কোথায় থাকি !!!!” । কোন সন্দেহ নাই পাহারের মাঝখানে একটা দেশ, প্রাকৃতিক সৌর্ন্দযে ভরপুর হবেই । কিন্তু ভুটানোর বিষয়টা অনেক খানিই অন্য রকম। বিষ্ময়কর এক শান্তি ওদের দেশের পরতে পরতে । আমাদের হোটেলের পাশেই একটা বাচ্চাদের স্কুল - পাহারের পাদদেশ ঘেসে, একপাশে খরস্রোতা নদী, পিছনে আপেল বাগান। লাল লাল স্কুল ড্রেস পরা বাচ্চাগুলোকে দেখলাম মহা আনন্দে স্কুলের ঘাস পরিস্কার করছে। আমার হাজবেন্ড আমার মুখের কথা কেরে নিয়ে বলল “ আহারে আমার পোলাডারে যদি এরকম একটা স্কুলে পরাতে পারতাম !!!” আমাদের ড্রাইভার কাম গাইড ছেলেটার নাম ছিলো প্রেমা। রিতিমত গুড লুকিং, আধুনিক স্টিাইলে দাড়ি গোফ ট্রিম করা। চোস্ত না হলেও চমতকার ইংলিশ এবং হিন্দি বলে। বাট পরে আছে ওদের কনভেনশনাল হাটুর সমান বিচিত্র পোশাক। সত্যি কথা বললে ভুটানিজদের জাতীয় পোশক কিন্তু আমাদের লুংগী থেকেও অনেক অদ্ভুত । আমাদরে দেশে কেউ লুংগী পরে অফিস করছে এইটা আমরা কেউ কল্পনাই করতে পারি না। ইনফ্যাক্ট কেউ অফিস করলেও পরের দিন তার চাকরি চলে যাওয়ার সম্ভবনা। আর ওদের রাস্ট্রিয় আইন অনুযায়ী অফিসিয়াল পোশাক হচ্ছে এইটা। এবং এই অদ্ভুত পোশাকেও তাদের আত্ম বিশ্বাস, র্স্মা্টনেসের কোথাও কোন কমতি হচ্ছে না। বরং নিজেদের ঐতিহ্যের প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধ এবং র্গ্ব শেখার মত বিষয়। । মজার বিষয় হল ভুটান সরকার কিন্তু রাস্ট্রিয়ভাবেই সাদা চামরার টুরিষ্টদের ডিসকারেজ করে। সার্ক্ভুক্ত দেশ হওয়ার ফলে আপনি মোটামুটি যে পয়সায় ভুটান ঘুরতে পারবেন পৃথিবীর অন্য প্রান্ত থেকে আসলে আপনাকে অন্তত তিনগুন বেশী খরচ করতে হবে। এবং প্রতিবছর একটা নির্দিষ্ট সংখ্যার উপরে তারা টুরিষ্ট এলাউ করে না । এর একটা প্রধান কারন কালচারাল মিশ্রতাটা তারা একটু এরিয়েই চলতে চায়। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন ওখানে কোন গাড়ি হর্ণ্ দেয়না, প্রয়োজন ছাড়া অভারটেক করেনা রাস্ট্রিয়ভাবেই ঘোষিত ওখানে কোন ভিক্ষুক নেই, ওদের প্রধান মন্ত্রীর ভাষায় “ উই হ্যাভ পোর গভমেন্ট বাট নো পোর পিপুল” যেটা আসলেই সত্যি। আমাদের গাইড প্রেমার সাথে কথা বলে যেটা বুঝলাম তাদের চাহিদাটাই আসলে আমাদের সাথে মেলে না। ক্রাইম রেট শূণ্য,চাকুরিতে মেয়েরা পুরুষদের চাইতে আগানো, ইভ টিজিং এর কোন কনসেপ্টই নেই। হোটেল, দোকান সবজায়গায় কাজ করছে মেয়েরা। ওখানে মেয়েদের আত্মবিশ্বাসই অন্যরকম। এর জন্য কোন কৃত্রিম মেকাপের দরকার হয়না। প্রেমার কাছে জানতে চাইলাম এখানকার মেয়েদের এত নিরাপত্তা তোমরা কিভাবে নিশ্চিত করলে। ওর খথা শুনে মনে হলো অন্যকোন পৃথিবীর গল্প শুনছি। বলল এখানকার পুলিশ প্রশাসন মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। কিভাবে? ওদের দেশে রিতীমত আইন আছে কোন মেয়ে যদি কমপ্লেইন করে তাহলে তার কথাই শেষ কথা, এমনকি তাকে কোন এভিডেন্সও সাবমিট করতে হয় না। আমি বললাম কোন মেয়ে যদি সুযোগ নেয়? ও একটু অবাক হয়ে জানতে চাইলো সেটা সে কেন করবে? আমি একটু মনে হলো লজ্ঝাই পেয়ে গেলাম। ওখানে সারা শহরে কোন বিলর্বো্ড নেই । পন্য কেনার দোকান আছে কিন্তু তাতে কোকাকোলা বা ফেয়ার এন্ড লাভলীর কোন সাইনবোর্ড্ নেই। ইন্ডিয়ান পন্য আছে ক্নিতু ড্রুক এর পন্যগুলোর মান এতভালো যে আপনি অন্য পন্য কিনবেন না । একটা আধুনিক শপিং সেন্টারে গেলাম, রিতিমত প্যাথেটিক! 70% বিদেশী পন্যের ডেট ওভার হয়ে গেছে দোকানী জানেই না । তারমানে এগুলা কেনার লোক নাই । টাকা না থাকার কারনে যে লোক নেই এমন না, এগুলা কেনার কা্লচারটাই এখোনো তৈরি হয়নি। বিংশ শতাব্দীতে বসে তারা কিভাবে কনজুমার ওর্য়া্ল্ডকে বৃদ্ধাংগুলী দেখাচ্ছে সেটাই বুঝতে পারলাম না। আমার নিজের অভিজ্ঞতাটাকে বিশ্বাস করতে নিজেরই একটু কষ্ট হচ্ছিলো । বাংলাদেশে ফিরে তাই নেট র্সা্চ দিলাম । সেখানে আমার জন্য রিতিমত চমক ছিলো । যেমন সারা বিশ্ব যখন GNP(Gross National Product)এর পিছনে দৌরাচ্ছে, ওরা তখন রাস্ট্রিয়ভাবে GNH (Gross National Happiness)এ বিশ্বাস করে। ভুটানের চতূর্থ্ রাজা জিগমে সিংগে ওয়াংচুক 1970 সাল এই ইন্ডিকেটর এর প্রবর্ত্ন করেন । Legal code of 1629 “if the government cannot create happiness for its people, then there is no purpose for government to exist.” এইটা হচ্ছে তাদের লিগাল কোড। “Gross National Happiness is more important than Gross National Product.” -4th King of Bhutan, 1972. ওরা সুখি হবে নাতো কি আমরা হব ? ফর দ্যা সেইক অফ জিএনপি যারা দালানের তলে পিষ্ট করে শ্রমিক মারি? যারা শ্রমিকদের ভূখা রেখে প্রফিট গুনি?
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ
গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন
ধর্ম ও বিজ্ঞান
করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন
তালগোল
তুমি যাও চলে
আমি যাই গলে
চলে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফুরালেই দিনের আলোয় ফর্সা
ঘুরেঘুরে ফিরেতো আসে, আসেতো ফিরে
তুমি চলে যাও, তুমি চলে যাও, আমাকে ঘিরে
জড়ায়ে মোহ বাতাসে মদির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন
মা
মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।
অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।
একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন