somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১৫

২৭ শে জুলাই, ২০১০ রাত ১০:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
উপমন্যু ও আরুণির উপাখ্যানঃ


সৌতি বলেন –মুনিগণ এবার পুরাণের কাহিনী শ্রবণ করুন।
অবন্তীনগরে ধৌম নামে এক ব্রাহ্মণ ছিলেন। তার গুরুকুলে শিষ্যরা শিক্ষাগ্রহণ করতে আসত।

এক শিষ্যকে গুরু তার গরুগুলিকে দেখভালের দায়িত্ব দিলেন। গুরুর আজ্ঞায় শিষ্য গরুগুলির সেবা করে।

একদিন গুরু বললেন –তোমায় বেশ পুষ্ট দেখছি! তুমি কি খাও, কোথায়ই বা এত খাবার পাও!

শুনে শিষ্য জোর হাতে বলে –বাছুরদের দুধ পানের পর আমি দুধ পান করি।

গুরু বললেন –এবার বুঝেছি বাছুরগুলি এত দূর্বল কেন। আর কখনও এমন কাজ করো না।

কিছুদিন পর আবার গুরু শিষ্যকে ডেকে বললেন –আবারও তোমায় বেশ পুষ্ট লাগছে, এর কারণ কি! তুমি কি আবার বাছুরদের বরাদ্দ দুধ পান করছ!

শিষ্য বলে –না প্রভু! তুমি বারণ করার পর থেকে আমি আর দুধ খাই না। ভিক্ষা করে পেট ভরাই।

গুরু বলেন –এবার থেকে ভিক্ষা করে সব আমার কাছেই এনে দিও।
এর কিছুদিন পর আবার গুরু শিষ্যকে বললেন –এখনও তোমায় বেশ পুষ্ট লাগছে!

শিষ্য বলে -গাভীদের চরতে দিয়ে আমি সকালে ও সন্ধ্যায় ভিক্ষা করি। সকালেরটা তোমায় দিই। সন্ধ্যার ভিক্ষায় নিজের চলে যায়।

শুনে গুরু হেসে বলেন –সন্ধ্যার ভিক্ষা বেশি হয়। সেটি তুমি নিজে নিচ্ছ! এবার থেকে সকাল ও সন্ধ্যার ভিক্ষাও আমায় দেবে।

এরপর শিষ্য গাভী নিয়ে বনে গেল। খিদেতে তার পাগলের মত অবস্থা। সারা বনে খাদ্যের সন্ধানে ঘুরে ফেরে। শেষে অর্ক বা আকন্দের কোমল পাতা খেয়ে পেট ভরায়। কিন্তু ধিরে ধিরে সে দূর্বল হয়ে পড়ল। এমনকি চোখেও কিছু দেখতে পাচ্ছে না! তবু গরু চরান বন্ধ করল না।

ঘুরতে ঘুরতে শেষে সে এক কূপে গিয়ে পড়ল। সমস্ত দিন গেল সন্ধ্যা উপস্থিত হল।

সব গরুরপাল গৃহে ফিরে এল। কিন্তু শিষ্যের দেখা নেই। গুরু চিন্তিত হলেন। নিজেই বনে শিষ্যকে খুঁজতে বেরলেন।
বনে গিয়ে গুরু ‘উপমন্যু, উপমন্যু’ নাম ধরে ডাকতে লাগলেন।

উপমন্যু কূপের ভিতর থেকে বললো –আমি এখানে আছি।
গুরু এগিয়ে এসে বললেন -তুমি কূপের মধ্যে পড়লে কি করে!

উপমন্যু বলে –আমি চোখে দেখতে পাচ্ছি না, প্রভু! অর্কের পাতা খেয়ে অন্ধ হয়ে গেছি।

গুরুর অনুশোচনা হল। তিনি উপমন্যুকে সঙ্গে সঙ্গে দেববৈদ্য অশ্বিনীকুমারদের স্মরণ করতে বললেন।
শিষ্য জোড়হাতে বহু স্তব করলে আবার চোখে দেখতে পেল। গুরুর হাত ধরে সে কূপ থেকে উঠে এলো।

গুরু সন্তুষ্ট হয়ে তাকে আশির্বাদ করলেন। সেই আশির্বাদে চারবেদে উপমন্যু পন্ডিত হলেন। গুরু আজ্ঞায় তিনি গৃহে ফিরে গেলেন।


আরুণি নামে গুরুর আরেক শিষ্য ছিল।
গুরু তাকে ডেকে একদিন বললেন –ধানের ক্ষেতে আল ভেঙেছে। সব জল বেরিয়ে যাচ্ছে। যাও আল ভাল করে বাঁধ দাও।

আরুণি ক্ষেতে গিয়ে আল বাঁধার অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু জলের বেগে বারবার আল ভাঙতে লাগলো। জল বেরিয়ে যাচ্ছে! যদি গুরু রাগ করেন! এই ভেবে সে নিজেই শুয়ে পড়ে আলে বাঁধ দিল।

সমস্ত দিন গেল, সন্ধ্যা নেমে এলো। তবু শিষ্যকে ফিরতে না দেখে গুরু চিন্তিত হলেন। শেষে শিষ্যের খোঁজে বের হলেন।
ক্ষেতের মাঝে গিয়ে তিনি শিষ্যকে ডাক দিতে লাগলেন। শিষ্য বলে –আমি আলে শুয়ে আছি। অনেক চেষ্টা করলাম তবু বাঁধ দিতে পারলাম না। তাই নিজেই শুয়ে বাঁধ দিচ্ছি।

গুরু তাকে উঠে আসতে বললেন। শিষ্য উঠে এসে গুরুকে প্রণাম করলেন।
গুরু আরুণিকে আশির্বাদ করে বললেন –তুমি চারবেদ ও ছয় শাস্ত্রে পন্ডিত হও।

আরুণি গুরুকে প্রণাম করে গৃহে ফিরে গেলেন। তাকে গুরু উদ্দালক উপাধি দিলেন।

গুরুকুল
..........................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
..........................................
আগের পর্ব:
কথাচ্ছলে মহাভারত - ১৪
Click This Link
.........................................
পরের পর্ব:
কথাচ্ছলে মহাভারত - ১৬
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১০ বিকাল ৫:৫৪
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×