জন্মেজয়ের ধর্ম্মহিংসাঃ
সৌতি বলেন –
রাজা জন্মেজয় সব পাত্রমিত্রদের ডেকে বিলাপ করে বললেন –আমার হৃদয়ে যে হিংসা তা এখনও দুর হল না। আমি অনেক ভেবে দেখলাম, ব্রাহ্মণই আমার আসল শত্রু।
আমার পিতা ধর্মশীল ব্যক্তি। বিনা অপরাধে তাকে শাপ দেওয়া হল। আবার পিতার হত্যাকারীকে যখন বধ করতে গেলাম তখনও এসে এই ব্রাহ্মণই বাধা দিল।
প্রথমে ব্রাহ্মণ শাপ দিয়ে পিতা পরীক্ষিতকে মারল। আবার দুষ্ট তক্ষককেও রক্ষা করল। ব্রাহ্মণের এই কুরীতি আমি আর সহ্য করতে পারছি না। আমার শরীর রাগে জ্বলছে। এখন মনে হচ্ছে সব ব্রাহ্মণদেরই আমি মারবো।
আগেই কার্তবীর্য ব্রাহ্মণ ধ্বংস করেছিলেন, উদর চিরে মেরেছিলেন ভৃগুবংশ। তার মত আমিও ব্রাহ্মণ সংহার করবো-এই আমি প্রতিজ্ঞা করলাম।
রাজার কথা শুনে সকলে স্তব্ধ হয়ে গেল। কেউ কোন কথা বলল না।
রাজা তাদের এই নিরবতার কারণ জিজ্ঞেস করলেন।
মন্ত্রীরা বলল –রাজা কথাটা শুনেই আমাদের ভয়ে মুখ দিয়ে কথা বেরচ্ছে না। কেউই ব্রাহ্মণ হত্যার সপক্ষে যুক্তি দেবে না। তুমি যে কার্তবীর্যের ব্রাহ্মণ হত্যার কথা বললে তার শাস্তিও পৃথিবী বিখ্যাত। সেই ভৃগুবংশে রাম জন্মান এবং ক্ষত্রিয়ের রক্তে পৃথিবীকে পবিত্র করেন। ক্ষত্রিয় যখন পৃথিবীতে আর ছিল না তখন ব্রাহ্মণের ঔরসেই আবার ক্ষত্রিয়ের জন্ম হয়। তাদের কথায় সৃষ্টি ও পালনকার্য চলে। তাদের অভিশাপে ক্ষণকালেই সব ধ্বংস হয়। অগ্নি, সূর্য, কালসাপের প্রতিকার আছে কিন্তু ব্রাহ্মণের শাপের কোন নিস্তার নেই।
তবে, একটি উপায় আছে। সেই উপায়ে ব্রাহ্মণের তেজ ভাঙ্গা যেতে পারে। কুশের স্পর্শে ব্রাহ্মণরা পবিত্র হন। কুশ ছাড়া তাদের কোন কাজ সম্ভব নয়। কুশের অভাবে ব্রাহ্মণের তেজ ক্ষীণ হবে। তারপর তাদের পিছনে লাগা যাবে।
রাজা বললেন –ঠিক আছে, এই উপায়েই ব্রাহ্মণদের বিনাশ করবো। এই বলে রাজা দূতদের ডেকে পাঠালেন এবং আজ্ঞা দিলেন সব খননকারদের ধরে আনতে। খননকারদের নির্দেশ দিলেন পৃথিবীর সব কুশ খুঁড়ে ফেল।
কিন্তু মন্ত্রীরা সে কার্যে বাধা দিলেন। কারণ সেই কুশ আবার সংসারে অশান্তির সৃষ্টি করতে পারে। তাই কুশ খনন না করে তার মূলে ঘি, দুধ, মধু, গুড় দিলে পিপঁড়ে আসবে, তারাই কুশের সর্বনাশ করবে। আবার কেউ সন্দেহও করবে না!
শুনে রাজা খুশি হয়ে সেই আজ্ঞাই দিলেন। পৃথিবীর সব কুশ নিধনে অনুচরদের যাত্রা শুরু হল।
ব্রাহ্মণের পদধুলি মস্তকে নিয়ে গদাধরের অগ্রজ কাশীরাম এ সকল কথা শুনালেন।
..............................
জন্মেজয়ের নিকট ব্যাসের আগমনঃ
ব্যাসমুনি
কুশের অভাবে ব্রাহ্মণরা চিন্তিত হলেন। সকলে আলোচনায় বসলেন। সব শুনে ব্যাস রাজার সাথে দেখা করতে চললেন।
ব্যাসকে দেখে জন্মেজয় খুশি হলেন। তার পা ধুয়ে, সেবা যত্ন করে পূজা করলেন।
ব্যাসমুনি খুশি হয়ে রাজাকে আশির্বাদ করলেন এবং মধুর হেসে জিজ্ঞাসা করলেন –বদরিকাশ্রমে শুনলাম তুমি ব্রাহ্মণদের উপর রেগে আছ, এর কারণ কি!
তুমি পন্ডিত তবু কেন এমন কাজ করছ! এই ব্রাহ্মণের ক্রোধেই যদু বংশ ধ্বংস হল, সগররাজের বংশ উচ্ছন্নে যায়, চাঁদ কলঙ্কিত হন, সাগর লবণাক্ত হন, আগুন সর্বভুক হলেন, ইন্দ্র ভগাঙ্গ হন। তোমার পূর্বপুরুষরা এদের সেবা করেই পৃথিবী জয় করতে পেরেছিলেন। তাদের উপর তোমার এত হিংসা হল কেন!
সব শুনে রাজা বলেন –বিনা অপরাধে ব্রাহ্মণের জন্যই পিতার মৃত্যু হল। আবার পিতার শত্রুকে হত্যা করতে চাইলে সেই ব্রাহ্মণই বাধা দিল। এজন্য ব্রাহ্মণ আমার শত্রু।
ব্যাস বলেন –ধৈর্য ধর রাজন, ক্রোধে ধর্ম নষ্ট করা উচিত কাজ নয়। ব্রাহ্মণদের অকারণে তুমি রাগাচ্ছ। ভবিষ্যৎ কখনও খন্ডন করা যায় না। তোমার পিতার যখন জন্ম হয় তখনই সকল গণৎকাররা বিচার করে দেখেন সাপের কামড়েই তার মৃত্যু হবে। আমার কথা শোন, পিতার জন্য দুঃখ করো না। দৈব্যের বচন কেউ খন্ডন করতে পারে না। শুধু শুধু ব্রাহ্মণদের বিরোধী হয়ো না।
ব্যাসের মুখে এত কথা শুনে রাজা কুশ নিধন বন্ধের নির্দেশ দিলেন।
..........................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
..........................................
আগের পর্ব:
কথাচ্ছলে মহাভারত - ১৮
Click This Link
আলোচিত ব্লগ
চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়
অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন
শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?
অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন
ঘুষের ধর্ম নাই
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।
হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।
পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন
প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update
মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-
গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??
সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন