somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত - ২৯

১৩ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


যযাতির প্রতি শুক্রের অভিশাপঃ

একদিন যযাতি দেবযানীর সঙ্গে বনবিহারে এলেন, নানা বৃক্ষে সুশোভিত অশোক বনে। শর্মিষ্ঠা সেখানে উপস্থিত হলেন। তার তিনপুত্রও পিতাকে দেখে ছুটে এলো। তিন সুন্দর পুত্র দেখে দেবযানী রাজাকে জিজ্ঞাসা করলেন এদের পিতা কে!
রাজা নিরুত্তর থাকলে তার সন্দেহ হল। তিনি পুত্রদের সত্বর আত্মপরিচয় জানাতে চাইলেন এবং এস্থানে তারা কি কারণে এসেছে জিজ্ঞাসা করলেন।


তিনকুমার এত কথা শুনে বললো তাদের মার নাম শর্মিষ্ঠা এবং রাজাকে দেখিয়ে বললো ইনিই তাদের পিতা-এই বলে তারা রাজাকে প্রণাম করলো।
দেবযানীর ভয়ে রাজা বিরস বদনে শিশু তিনটিকে কোলে নিলেন।


সবকথা শুনে দেবযানী ক্রোধিত হয়ে শর্মিষ্ঠাকে ডেকে পাঠালেন। তাকে বললেন আগে সে বলেছিল এরা ঋষিকুমার অর্থাৎ সে মিথ্যাবাক্য বলেছিল!


একথা শুনে শর্মিষ্ঠা অবাক হলেন। করজোড়ে বললেন ধর্ম মতে তিনি মিথ্যা বলেন নি। দেবযানী তার ঈশ্বরী হওইয়ায় রাজাই ধর্মত তার পতি-সে কারণে তার পুত্রদের দেখে দেবী যেন ক্রোধ না করেন।


দেবযানী বললেন সেবিকা হয়ে শর্মিষ্ঠার সাহস দেখে তিনি স্তম্ভিত! কি সাহসে সে তার স্বামীকে ভোগ করে!

দেবযানী রাজাকেও ক্রোধের সঙ্গে বলেন –রাজা শুক্রাচার্যের বাক্য লঙ্ঘন করে সেবিকা গমন করেছেন-এ ঘোর পাপ কর্ম।

তাই তিনি আর রাজার সঙ্গে থাকবেন না।
এত বলে দেবযানী কাঁদতে কাঁদতে পিতৃগৃহে গমন করেন। রাজা বিনয়ের সাথে তাকে বুঝাতে থাকেন, কিন্তু তার ক্রোধ দেখে তিনি ভয় পান। রাজাও তার সঙ্গে চললেন।

পিতার সামনে উপনিত হয়ে দেবযানী স্বামীর চরিত্রবর্ণনা করেন –অধর্মে প্রবৃত্ত হয়ে রাজা শুক্রের বাক্য লঙ্ঘন করে বৃষপর্বের কন্যা শর্মিষ্ঠার সঙ্গে রমণ করেছেন।

একথা শুনে শুক্র ক্রোধের সঙ্গে রাজাকে বলেন –রাজা সর্বধর্মজ্ঞাত পরম পন্ডিত হয়েও তার বাক্য লঙ্ঘন করলেন! গুরুবাক্য লঙ্ঘন করার অপরাধে তাকে জরা অঙ্গে ধারণ করতে হবে।

গুরুর শাপে রাজা কম্পিত হৃদয়ে করজোড়ে বললেন, প্রভুবাক্য লঙ্ঘনের সাহস তার নেই। তিনি কামভাবে শর্মিষ্ঠাকে গ্রহণ করেন নি। ঋতুদানে শর্মিষ্ঠা বারবার প্রার্থনা করায় তিনি তার ঋতু রক্ষা করেন। এই প্রার্থনা না শুনলে তিনি মহাপাপে পতিত হতেন, নপুংসক হয়ে জন্মাতেন এবং নরকে যেতেন। ধর্মের ভয়েই তিনি ঋতুদান করেন। আর রাজার কাছে যে যা প্রার্থনা করে তা তিনি পূরণ করতে বাধ্য সে কারণেও এই কর্ম।

শুক্র বলেন -ধর্মের ভয়ে তুমি এ কাজ করলে, আমার ভয় তোমার ছিল না - এতো তোমার অহংকার!
এত কথা বলার সাথে সাথেই জরা এসে রাজাকে আক্রমণ করল।

নিজের এই বৃদ্ধ বেশ দেখে রাজা হতবুদ্ধি হলেন এবং দুঃখের সঙ্গে শুক্রকে বললেন এখনও তিনি যুবক রূপে সব কামনায় তৃপ্ত হননি এবং শুক্রের কন্যা দেবযানীও প্রথম যৌবনা, এভাবে বৃদ্ধ হয়ে তিনি সংসারের সব সুখ থেকে বঞ্চিত হলেন। প্রভু যদি কৃপা করেন তবে তিনি এই শাপ থেকে মুক্ত হন।



শুক্র বলেন, তার বাক্য খন্ডন হওয়ার নয়, যদি রাজার মন এখনো ভোগে আসক্ত থাকে তা হলে তিনি নিজের জরা অন্য কাউকে দিয়ে তা ভোগ করতে পারেন।

রাজা বলেন তার পাঁচ পুত্র যে তার জরা গ্রহণ করবে তাকেই তিনি রাজ্যভার দান করবেন।

শুক্র আশির্বাদ দিয়ে বলেন যে জন রাজার জরা গ্রহণ করবেন সে দীর্ঘায়ু হবেন রাজ্যের কল্যানে। তার বংশ বৃদ্ধি ঘটবে। সে জন পরম পন্ডিত ও মহাতেজা হবেন।


শুক্রের বাণী শুনে রাজা যযাতি দেবযানীকে নিয়ে নিজ রাজ্যে গমন করেন।
..........................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
..........................................
আগের পর্ব:
কথাচ্ছলে মহাভারত - ২৮
Click This Link
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×