somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৩১

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১০:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যযাতির স্বর্গ গমনঃ
নৃপতি যযাতি রাজ্য ত্যাগ করে মুনিদের সঙ্গে বনে গেলেন। সেখানে কঠিক তপস্যা শুরু করলেন।

বনের ভিতর ফলমূলাহার করেন, অতিথি সেবা করেন। এভাবে সহস্র বছর কেটে যায়। শেষে তিনি সব কিছু পরিহার করে একমনে তপস্যা শুরু করেন এবং অস্তিচর্মসার হয়ে যান। এভাবে আরো দুই সহস্র বছর যায়।


শেষে যোগের মাধ্যমে তিনি শরীর ত্যাগ করে দিব্যরথে চড়ে ইন্দ্রের সভায় উপস্থিত হন। সেখান থেকে যান ব্রহ্মলোকে। দশলক্ষ বর্ষ সেখানে অবস্থান করে আবার ইন্দ্রের সভায় ফিরে আসেন।

ইন্দ্র হেসে জিজ্ঞেস করেন প্রিয় পুত্রকে তিনি কি শিক্ষা দিয়েছেন। আর তিনি ব্রহ্মার সমাজ থেকে ফিরে এলেন কেন।


রাজা বলেন তবে অবধান কর পুত্রকে কি কি শিক্ষা দিলামঃ

শাস্ত্রানুসারে বিধি মতে রাজনীতি শিক্ষা দিয়ে তাকে বলি পৃথিবীতে তারাই শ্রেষ্ঠ, যারা ক্রোধ করালেও ক্রোধী নয় না, গালি দিলেও কিছু বলে না, পরের দুঃখে যে পরোপকারী, মধুর কোমল বাক্য বলে মৃদু স্বরে।

নিজের অন্তরের দুঃখের কথা পরকে বলে না, কপটতা কুবৃত্তি করে না, সদা সত্য বাক্য বলে।
নিজেকে কষ্ট দিয়ে সেই পরিত্রাণ পাবে। পৃথিবীতে তার সমান শ্রেষ্ঠ কেউ হবে না। এমন ব্যক্তিদের বাক্যশুনে পুত্রের মত প্রজাদের পালন করবে।

দরিদ্রের দুঃখ বিনাশ করবে সাধ্য মত, ব্রাহ্মণদের শ্রদ্ধা করবে। বন্ধুদেরও সন্তুষ্ট করবে। চোর-দস্যুদের রাজ্যে স্থান দেবে না। বৃদ্ধদের পালন করবে। অতিথিদের অবহেলা করবে না।

এসব শিক্ষাদান করে রাজা রাজ্য ত্যাগ করেন ও বনে তপস্যা করতে যান।

ইন্দ্র বলেন –রাজা, তুমি পরম পন্ডিত। তোমার মত ধার্মীক কেউ নেই। তুমি নিজ ইচ্ছায় ইন্দ্রলোক, ব্রহ্মলোক ভ্রমণ করতে পারো। তুমি কি পূণ্য করলে ধরায় জন্মগ্রহণ করে!

রাজা বলেন –আমি বৃষ্টিধারা গুণতে পারি। আমার পূণ্য কথা অশেষ। স্বর্গ, মর্ত, পাতালে আমার তুল্য কাউকে দেখি না।

শুনে ইন্দ্র হেসে বলেন –অহংকার করে তুমি দেবতাদের সমাজকে নিন্দা করলে। এই পাপে তুমি ক্ষীণপূণ্য হলে। তাই তোমায় আর স্বর্গে স্থান দেওয়া যায় না।

এতে রাজা অবাক হলেন।
বললেন –আমার কপালে এই কর্মই ছিল। পাপের শাস্তি আমি নেব। কিন্তু আমার একটা প্রার্থনা আছে। পূণ্যবান লোকরা যে পথে আছেন সেই পথ দিয়েই যেন আমি পতিত হই।

ইন্দ্র বলেন –নিজ গুণে তুমি পুনরায় স্বর্গে আসবে।


এরপর রাজা যযাতি নিচে পতিত হলেন, যেন আকাশ থেকে সূর্য পতিত হলেন।

এই সময় শূণ্যে চারজন ডাক দিয়ে বলেন –কে পতিত হন!
পূণ্যবানের আজ্ঞায় রাজা শূণ্যে আটকে যান।

সেই অষ্টকরা বলেন –তুমি কোন মহাজন! কার পুত্র, সূর্য-অগ্নি-চন্দ্রের মতো তোমার তেজ। তুমি স্বর্গ থেকে চ্যুত হলে কেন!

রাজা বলেন –আমি যযাতি, পুরুর পিতা, নহুষের পুত্র। পূণ্যবানদের অবজ্ঞা করায় আমি ক্ষীণপূণ্য হয়ে স্বর্গচ্যুত হলাম। ধনহীনে যেমন পৃথিবীতে বন্ধুরা ত্যাগ করে, পূণ্যহীনে তেমনি স্বর্গ থেকে দেবতারা ত্যাগ করেন।

অষ্টক বলেল –কোথায় তুমি ছিলে! কেনই বা এরূপ হল!

রাজা বলেন –পৃথিবীর রাজারূপে অবস্থানকালে লক্ষ রাজা আমায় পূজা করেন। পুত্রকে রাজ্য দিয়ে বনে তপস্যা করতে গেলাম। শেষে স্বর্গে আমার স্থান হলো। স্বর্গসুখ বর্ণনাতীত! সহস্র বছর স্বর্গসুখ ভোগ করে ইন্দ্রের সভায় যাই। সেখানেও মহাসুখে সহস্র বছর অবস্থান করি। সেখান থেকে আবার ব্রহ্মলোকে। নন্দনকাননের কথা কি আর বর্ণনা করবো! অপ্সরীদের সাথে ক্রীড়া করলাম, কামরূপী হয়ে বেরালাম।


দৈবের নির্দেশে একদিন ইন্দ্র প্রশ্ন করলেন তার উত্তরে নিজ পূণ্যের গান গাইলাম। সে দোষেই আজ স্থানচ্যুত।

অষ্টকরা প্রশ্ন করলেন -স্বর্গ থেকে যারা পতিত হন তাদের কি গতি হয়!

রাজা বলেন –ক্ষীণপূণ্য করে সেইজন নরকে পতিত হন। তারা পুনরায় দেহ ধারণ করেন দ্বিপদ-চৌপদ প্রাণীরূপে। পশু, কীট, পতঙ্গ বিভিন্ন রূপ পান। শকুন, শেয়াল তাদের খায়। তারা বারবার জন্মায়, বারবার মরে। নিজের কর্মফল খন্ডন করতে পারে না।

অষ্টকরা শুনে দুঃখিত হন এবং এর প্রতিকার জানতে চান।

রাজা বলেন –যজ্ঞ, হোম, ব্রত, অতিথি সেবা, গুরু ব্রাহ্মণের সেবা, দেবতার আরাধনা, সুখদুঃখে সমান থাকা-এসবের মাধ্যমেই নরক থেকে পরিত্রাণ সম্ভব।

অষ্টকরা বলেন –রাজা, তুমি পূণ্যবান। তোমার সমান কেউ নেই। তুমি এখানে নিশ্চিন্ত হয়ে অবস্থান কর। এখানে ইন্দ্রের ভয় নেই।
রাজা জানান তিনি ক্ষীণপূণ্য তাই স্বর্গে আর তার স্থান নেই।


শুনে অষ্টক, শিবি, বসু, প্রতর্দন রাজাকে ডেকে বলেন –আমাদের চারজনের যা পূণ্য আছে তা নিয়ে তুমি হেথায় অবস্থান করো।

রাজা বলেন –আমি কৃপণের মতো পরের দ্রব্য গ্রহণ করতে পারবো না।

শিবি বলেন –রাজা তুমি কিছু তৃণ দিয়ে আমাদের পূণ্য ক্রয় করো।
রাজার তাতেও ঘোর আপত্তি। ছেলেমানুষের মতো বাক্য। তৃণ দিয়ে পূণ্য ক্রয় করে লোকের উপহাস তিনি গ্রহণে অপরাগ।

এত শুনে তারা বলেন –রাজা তুমি আমাদের বাক্য না শুনলে আমরাও তোমার সাথে তুমি যেখানে যাবে সেখানে যাবো।

এতসব কথোপকথন যখন হচ্ছে সে সময় পাঁচটি দিব্যরথ সেথায় উপস্থিত হল। তাদের সে রথে করে ইন্দ্রের অমরাবতীতে আনা হল।

বৈশম্পায়ন বলেন –শুন মহারাজ, জন্মেজয়! সেই চারজন রাজা যযাতির কন্যার পুত্র। কন্যার পুত্রের পূণ্যে যযাতি মুক্ত হলেন। পুনরায় তিনি স্বর্গে অবস্থান করলেন।

..........................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
..........................................
আগের পর্ব:
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৩০
Click This Link


২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×