somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৩৫

০৮ ই মে, ২০১১ রাত ৯:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেবব্রতের যুবরাজ হওনঃ

গঙ্গার বিরহে শান্তনু কাতর হলেন। সর্বদা স্ত্রীর গুণের কথা ভাবেন। গঙ্গার কথা ভেবেই তার যৌবন গেল। তিনি আর বিবাহ করলেন না। দান, ধ্যান, যজ্ঞ করে জিতেন্দ্রিয়, সত্যবাদী রাজা রাজ্য শাসন করেন। এভাবে কিছু বছর গেল।

একদিন রাজা মৃগয়া করতে ভাগীরথী তীরে যান এবং গঙ্গার কূলে বসে তার রূপ দেখতে থাকেন। হঠাৎ তার দৃষ্টি যায় এক অপরূপ যুবার উপর। কামদেবের মত রূপ, হাতে ধনুঃশর। মহাবীর শরজালে গঙ্গার জল বেঁধে ফেলেন। রাজা দেখেন যুবা গঙ্গায় প্রবেশ করলেন। তিনি চিন্তিত মুখে সেখানেই বসে রইলেন। তাকে দেখে গঙ্গা প্রসন্ন হলেন এবং নারীরূপে রাজার সামনে পুত্রকে নিয়ে আবির্ভূতা হলেন।


রাজাকে ডেকে গঙ্গা বলেন –কি কারণে চিন্তা কর, রাজন! এই তোমার কুমার, নাম দেবব্রত। এর গুণ বর্ণনা করা যায় না। বশিষ্ঠের কাছে এর অস্ত্রশিক্ষা, দেবগুরু-দৈত্যগুরুর সমান এর শাস্ত্র জ্ঞান। অস্ত্রবিদ্যা জানে ভৃগুরাম/পরশুরামের সমান। সংসারে যত বিদ্যা নীতিশাস্ত্র ধর্ম, এ পুত্রের অগোচরে নহে কোন কর্ম। একে তোমার হাতে সপে দিলাম। তুমি একে যুবরাজরূপে অভিষেক করো। এত বলে গঙ্গা অন্তর্ধান হলেন।

পুত্রকে পেয়ে রাজা আনন্দিত হলেন। রাজ্যে এসে শুভক্ষণ দেখে তার অভিষেক সুসম্পন্ন করলেন।

প্রজারা আনন্দিত হল। রাজ্যের ভার যুবরাজের হাতে দিয়ে রাজা মৃগয়া গেলেন।

একদিন রাজা যমুনার তীরে উপস্থিত হলেন। কালিন্দীর তীরে হরিণ খুঁজছিলেন, সে সময় এক অপূর্ব সুগন্ধে সে স্থানের বাতাস আমোদিত হল।
কিসের সুগন্ধ অনুসন্ধান করতে করতে শান্তনু এগিয়ে গিয়ে দেখেন নৌকায় এক পরমা সুন্দরী যুবতী বসে আছেন। তার রূপে চারদিক আলোকিত। কন্যার চোখ দুটি অতি চঞ্চল, বিকশিত পদ্মের মত তার তনু, বচন যেন কোকিলের কুহু তান, কুসুমে করবী ভার সুচারু-সুকেশা।
কন্যাকে দেখে শান্তনু কামে পীড়িত হলেন। এগিয়ে এসে রাজা কন্যার পরিচয় জানতে চাইলেন।

কন্যা বলেন -আমি দাস রাজার কন্যা। ধর্ম রক্ষার্থে পিতা নৌকা বাইতে আজ্ঞা করেছেন।

কন্যার কথা শুনে রাজা দ্রুত কন্যার পিতার কাছে গমন করলেন।

রাজাকে দেখে মীনজীবী(জেলে) ধীবর দাসরাজা দ্রুত উঠে এসে নিজের রত্ন সিংহাসনে তাকে আহ্বান জানালেন। তার আগমনের কারণ জানতে চাইলেন।

শান্তনু তার কন্যাকে বিবাহ করার অনুমতি চাইলেন।

দাসরাজা বলেন যদি তিনি কন্যার যোগ্য হন তবেই তার হাতে কন্যাদান করবেন। শান্তনু কুরুবংশের শ্রেষ্ঠ, তথাপি তাকে কথা দিতে হবে তার কন্যার সন্তানরাই রাজ্যের অধিকার পাবে।

শান্তনু বলেন একাজ তিনি কখনই করতে পারবেন না। কারণ দেবব্রত যোগ্য এবং তার অভিষেকও হয়ে গেছে। এই বলে তিনি সে স্থান ত্যাগ করে চলে যান।

কিন্তু রাজ্যে ফিরেও রাজা মন থেকে সে কন্যার চিন্তা দুর করতে পারেন না। সব সময় তার স্মৃতিতে মগ্ন থাকেন। অধোমুখে মনের দুঃখে দিন কাটান।
পিতার দুঃখে পুত্র চিন্তিত হন। এর কারণ জানতে চান। তিনি জানান পিতার আজ্ঞায় দেব-নর-দানব সকলকে বশ করে তিনি তার মনের দুঃখ দুর করবেন।

পুত্রের কথা শুনে শান্তনু বলেন –তুমি কুরুকূলের একমাত্র সন্তান। কিন্তু তোমার যদি কিছু হয় তাহলে বংশের কি হবে। সে কথা চিন্তা করে আমি দুঃখ পাচ্ছি।

বুদ্ধিমান দেবব্রত পিতার কথা শুনে মন্ত্রীদের কাছে গেলেন।
সব শুনে মন্ত্রীরা বলেন –মৃগয়া করতে গিয়ে রাজা গন্ধকালী কন্যার দেখা পান। কিন্তু তাকে বিবাহ করতে চাইলে দাসরাজা তোমার কারণে কন্যা দিতে চাননি।

এত শুনে দেবব্রত রথে চড়ে দাসরাজার সামনে উপস্থিত হলেন এবং পিতার জন্য তার কন্যাকে প্রার্থনা করলেন।

দাসরাজা বলেন –আমার কন্যা জগৎ বিখ্যাত।

এত শুনে জন্মেজয় ধীবরবংশে ঐ সুন্দরী কন্যার জন্মের কারণ জানতে চাইলেন।
..........................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
..........................................
আগের পর্ব:
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৩৪
Click This Link
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×