somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৩৬

২৭ শে মে, ২০১১ দুপুর ১২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মৎস্যগন্ধার উৎপত্তিঃ

বিশ্বম্পায়ন জন্মেজয়কে বলেন –মাছের গর্ভে এই ব্যাস জননীর জন্ম এবং তিনি পরাশর মুনির দয়া লাভ করে সুগন্ধী হন।


দ্বাপর যুগে এক ধার্মীক সত্যশীল রাজা ছিলেন–পরিচয়। তিনি সবকিছু ত্যাগ করে বনে কঠিন তপস্যা শুরু করেন। শিরে জটা, বৃক্ষের বাকল(ছাল) পরিধান, কখনও ফল-মূলাহার করেন, কখনও বা কেবল জল। কখনও গলিত পত্র, কখনও কেবল বাতাস-এভাবে রাজা অনাহারে তপ করতে থাকেন।

গ্রীষ্মকালে চারদিক যখন জ্বলছে তখন রাজা উর্দ্ধপদে তপ করেন। তার তপ দেখে ইন্দ্র ভয় পেলেন এবং ঐরাবতে চেপে রাজার কাছে উপস্থিত হলেন এবং অনুনয় করলেন তপ ভঙ্গের।

শেষে তাদের বন্ধুত্ব হয়। ইন্দ্র নিজের গলার বৈজয়ন্তীমালা খুলে রাজার গলায় পরালেন। তাকে স্ফটিকময়(স্বচ্ছ ও শুভ্র প্রস্তর বিশেষ)বিমান ও একটি বংশদন্ড দিয়ে ইন্দ্র চেদি রাজ্যের রাজা করে ফিরে গেলেন।

রাজা পরিচয় অঘ্রাণ মাসে উৎসব করে সেই দন্ড রাজপুরীতে এনে ইন্দ্রপূজা করলেন। পরেরদিন নানা অলংকারে সজ্জিত হয়ে চেদিরাজ পরিচয় নিয়ে নানা দান, যজ্ঞ করলেন। শেষে অযোনিসম্ভবা এক কন্যা গিরিকাকে পর্বতে দেখতে পেলেন এবং সেই পরমাসুন্দরীকে বিবাহ করলেন।

রাজা স্ত্রীর সঙ্গে নানা ক্রীড়া করে আনন্দে দিন কাটান। কিছুকাল পর ঋতুকাল এলে ঋতুস্নান করলেন পাটেশ্বরী এবং দান ধ্যান করে পবিত্র হলেন।

সেদিন মৃত পূর্বপুরুষরা স্বপ্নে রাজাকে বললেন মৃগ মাংসের শ্রাদ্ধ কর।
পিতৃগণের আজ্ঞা পেয়ে পরিচয় মৃগয়া করতে অরণ্যে গেলেন। কিন্তু ঋতুমতী স্ত্রীর কথা কিছুতেই ভুলতে পারলেন না। মৃগয়া করতে তার মন লাগে না। সব সময় স্ত্রীকে তিনি স্মরণ করেন। এভাবে কামের উত্তেজনায় তার বীর্য স্খলিত হল। দেখে রাজা চিন্তিত হলেন। হাতে তার পোষা পাখি ছিল। একটি পাতায় বীর্য দিয়ে পক্ষীকে তার পাটেশ্বরীর কাছে প্রেরণ করলেন। পাখি রাজার আজ্ঞায় উড়ে চললো। পথে আরেক পাখি খাদ্যদ্রব্য ভেবে তা কেড়ে নিতে গেল। দুই পাখির যুদ্ধ শুরু হল। এদিকে পাতাটি আকাশ থেকে যমুনা নদীতে পড়ল।


দীর্ঘিকা নামে এক স্বর্গের বিদ্যাধরী(গায়িকা) মুনিশাপে মাছরূপে যমুনা নদীতে অবস্থান করত। সে ঐ বীর্যটি ভক্ষণ করল। দশমাস পর ধীবরের জালে মাছটি ধরা পড়ল। কূলে এসে মাছটি প্রসব করে মুনিশাপ মুক্ত হয়ে নিজ দেশে গেল।

ধীবররা দেখল একটি পুত্র ও একটি কন্যা। তারা অবাক হল। ধীবররাজ সন্তান দুটি নিয়ে চেদিরাজের কাছে গেলেন। অপুত্রক রাজা সন্তান দুটি দেখে আশ্চর্য হলেন। পুত্রটিকে নিয়ে কন্যাটিকে ধীবর রাজাকে দিলেন। পরে পুত্রটি মৎসরাজ রূপে নাম করেন।

কন্যাকে নিয়ে ধীবররাজ নিজ গৃহে আসলেন এবং বহু যত্নে তাকে পালন করতে লাগলেন। নাম হল তার সত্যবতী।

রূপে তার সমান কেউ নেই। কিন্তু কন্যার দুর্গন্ধে কেউ তার কাছে যায় না। সে জন্য তার অন্য নাম মৎসগন্ধা। ধীবররাজ চিন্তিত হলেন। ভাবলেন যমুনা নদী দিয়ে কত মুনি যাতায়াত করেন।
কন্যাকে বললেন –ধর্মের কারণে তুমি পার কর মুনিদের।
পিতৃ আজ্ঞায় কন্যা সেখানে থাকে এবং মুনিদের পারাপার করে।


মহামুনি পরাশর, যিনি শক্ত্রির পুত্র, তীর্থযাত্রা করতে গেলে হঠাৎ সেই পথে যান এবং কৈবর্তের সুন্দরী কন্যাকে দেখে মোহিত হন।

তিনি বলেন –সুন্দরী, নৌকার কর্ণধার কোথায়!

কন্যা বলেন তার পিতা দাস রাজা। পুত্র না থাকায় তিনিই সকলকে পার করেন। তার নাম মৎস্যগন্ধা।

নৌকায় যেতে যেতে পরাশর বলেন কন্যার জন্মবৃত্তান্ত জানেন। তিনি কন্যার থেকে বংশধর পুত্র কামনা করেন।

কন্যা যোড়হাতে বলেন তিনি নীচজাতির কুমারী। সর্বোপরি তিনি দুর্গন্ধা। তার কাছে মুনি কিভাবে আসবেন। আর মুনি বিবাহ না করলে কন্যা কি ভাবে তাকে কামনা করবেন!

মুনি হেসে বলেন তিনি পরাশর মুনি। তিনি বর দেবেন তাই কন্যার কোন ভয় নেই। মৎসের দুর্গন্ধ দুর হয়ে তিনি পদ্মগন্ধা হবেন। প্রথম যৌবনে তিনি যেমন অনূঢ়া আছেন সর্বদা তিনি এরূপই থাকবেন মুনির আশিষে। কেউ পরিচয় জানতে চাইলে বলবেন তার জন্ম কৈবর্ত্তের ঘরে। মুনির বরে মহারাজই তাকে বিবাহ করবেন।


একথা বলতে বলতে কন্যার দুর্গন্ধ দুর হল এবং তিনি সুগন্ধি হলেন। তিনি গন্ধবতী নামে খ্যাত হলেন। এক যোজন দূর থেকে তার সুগন্ধ পাওয়া যেত তাই লোকে তাকে যোজনগন্ধাও বলত। সুন্দরী কন্যা মুনির বরে অতীব সুন্দরী হয়ে উঠলেন। নিজেকে দেখে কন্যা হরষিত হলেন।

পুনরায় যোড়হাত করে বলেন, মুনির বাক্য খন্ডন হয় না। কিন্তু যমুনার দুই তটে কতো লোকজন, জলেও অগণিত নৌকা, তাই লোক প্রচারিত হতে বাকি থাকবে না কিছুই।

শক্ত্রি-পুত্র পরাশর মহা তপধন। মুহূর্তে তিনি চারদিকে কুজ্ঝটি বা কুয়াশায় পূর্ণ করলেন। যমুনার মধ্যে একটি দ্বীপের সৃষ্টি হল। পদ্মগন্ধা কন্যার সাথে মুনি সেথায় রমণ করলেন।

কন্যা গর্ভবতী হলেন এবং তার গর্ভে বিখ্যাত ব্যাসদেব জন্মগ্রহণ করলেন। দ্বীপে জন্মগ্রহণ করায় তার নাম হল দ্বৈপায়ন। তিনি বেদের চারটি ভাগ করে ব্যাস নামে খ্যাত হন। পুত্র শুক ও বৈশম্পায়ন ও অন্যান্য শিষ্যদের চতুর্বেদ ও মহাভারত অধ্যয়ন করান। তাঁরাই মহাভারতের রচনাগুলি পৃথক ভাবে প্রকাশ করেন।

জন্মমাত্র ব্যাস জননীকে বলেন -আজ্ঞা করুন মা, এক্ষুনি তপোবনে যাই।
কথা দিলেন যখনই জননী ডাকবেন তখনই তিনি উপস্থিত হবেন। জননীর আজ্ঞা নিয়ে ব্যাস তপোবনে তপস্যায় রত হলেন।
..........................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
..........................................
আগের পর্ব:
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৩৫
Click This Link
২৩টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×