somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১১৪

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[পূর্বকথা - কৃষ্ণের কথা মত অর্জুন সরস্বতীর তীর থেকে সুভদ্রাকে হরণ করলেন...যদুবীররা ক্রুদ্ধ হয়ে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করল ... সুভদ্রা অর্জুনের সারথি হলেন...যদুবীররা পরাস্ত হতে লাগল .. ]

বলরামের নিকট অর্জ্জুনের রণজয় সংবাদঃ



বলরাম যখন সসৈন্যে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে যাত্রা করছেন, তখন দূত এসে তাকে প্রণাম জানাল।
সে উর্দ্ধশ্বাসে কাঁদতে কাঁদতে সব কথা বলে –হে প্রভু! আর অর্জুনের হাত থেকে আমাদের রক্ষা নেই। তাঁর উপর সুভদ্রা রথ চালাচ্ছেন। তারা কখনও মেঘে লুকায়, কখনওবা শূন্য মাঝে। খঞ্জন পাখির মত যেন নাচ করছে। সৈন্যদের মধ্যে দিয়ে ঘন ঘন ফণির মত চলে। সৈন্যদের ঘন ঘন প্রদক্ষিণ করে, যেমন মৎস জলে চরে। ডানদিকে, বামদিকে রথ বায়ুবেগে ছুটে, কখনও মাটিতে কখনওবা সূর্যমণ্ডলে ওঠে।
সৈন্যদের সাথে অর্জুন যুদ্ধ করলেও, সে যে কোথায় কেউ বুঝতেই পারছে না। নানাবর্ণে ধনঞ্জয় অস্ত্র বর্ষণ করছেন। অগ্নি অস্ত্রে কোথাও দাবানল দেখা দিল। কোনখানে সৈন্য মাঝে বায়ু অস্ত্র মারছেন। কোথাও বা ভুজঙ্গ(সর্প) অস্ত্র মারলেন। কোনখানে জল-বৃষ্টি-শীতে তনু কাঁপে। কোথাওবা শর জালে ভানু(সূর্য) ঢেকে দেন। অর্জুনই সবাইকে মেরে যাচ্ছেন। কেউ তাঁকে ছুঁতেও পারছে না। কত যে সৈন্য মরছে, তা কেউ বলতে পারবে না।
তাঁর এই যুদ্ধ দেখে সকলেই চমৎকৃত। সকল কুমাররা মিলে আমায় দূত করে বার্তা পাঠাল।

মুষলী(বলরাম) দূতে বলেন –সত্য করে বল। অর্জুন এমন তুরগ রথ কোথায় পেল!

দূত বলে –হে যাদবেন্দ্র(বলরাম), বলতে ভয় হয়। গোবিন্দের রথ, সুগ্রীবাদি ঘোড়া [কৃষ্ণের রথের চারটি ঘোড়া। শৈব্য-গায়ের রং সবুজাভ হরিতাভ, সুগ্রীব-স্বর্ণাভ তুষারসদ বর্ণ, মেঘপুষ্প-নীলাভ নবীন জলধরের মত এবং বলাহক-ভস্মবর্ণ] দেখলাম।
সারথি দারুককে দেখলাম বাঁধা অবস্থায় রথে বসে আছেন।
সুভদ্রাকে দেখলাম সারথি হয়ে রথ চালাচ্ছেন।

দূত মুখে এত কথা শুনে বলরাম মাটিতে মাথা হেঁট করে বসে পরলেন। অভিমানে তাঁর চোখ দিয়ে জল বইতে থাকল। তাঁর অঙ্গের কস্তূরী গন্ধে চারদিক আমোদিত হয়ে উঠল। সর্বাঙ্গ বয়ে তাঁর কালঘাম বইতে থাকে।
যদুবীরদের দিকে তাকিয়ে বলরাম বলেন –গোবিন্দ দেখছি আমায় অপমান করছে। নিজের সারথি ও ঘোড়া সহ রথ অর্জুনকে দিল। অর্জুনের কি শক্তি যে এমন কাজ করতে পারে! না বুঝে আমি অর্জুনকে দোষি মনে করেছিলাম। আমার সামনে মিথ্যে কথা বলল! এখন আমার সামনে আসবে কিভাবে তাই ভাবছে।
দুর্যোধনকে বিবাহ কারণে ডেকে পাঠালাম। অধিবাস অনুষ্ঠানের জন্য ব্রাহ্মণরা বসে আছেন!

এতসব বলে বলরাম অধোমুখে বসে রইলেন। সেই সময় নবঘনশ্যাম কৃষ্ণ সেখানে উপস্থিত হলেন। ভূমিতে পরে বলরামকে প্রণাম করলেন। ক্রোধে বলরাম তাঁর দিকে তাকালেন না।

গোবিন্দ বলেন –হে স্বামী(প্রভু), রাগ কেন করছেন! আপনার পদতলে আমি কোন অপরাধ করলাম!

উগ্রসেন(বলরাম) বলেন –তুমি বড়ই কুকর্ম করেছ। তুমি পার্থকে ভদ্রা হরণ করতে বলেছ। সে কারণেই নিজের রথ, সারথি ও তুরঙ্গ(ঘোড়া) দিয়েছ। তোমাকে দোষ দেব না তো আর কাকে দোষ দেব!

গোবিন্দ বলেন –সবাই জানেন সেই রথে পার্থ ভ্রমণ করতেন। আমি কি ভাবে জানব সে ভদ্রা হরণ করবে! নরমায়া বুঝতে আমি পারি না। প্রভু অকারণে আমার উপর আক্রোশ করছেন। সুভদ্রা যদি নিজেই রথ চালাতে চান, দারুকের তাতে কি দোষ!
হে দূত সত্য করে বল দারুক সে রথে কি করছিল!

দূত বলে –দারুক নিজের বশে নেই। পার্থ তাকে বেঁধে রেখেছেন।

শ্রীকৃষ্ণ বলেন –যাদবরা সকলে শুনুন আমার কথা অনুভব করুন।

আদিপর্ব মহাভারতের বিচিত্র উপাখ্যান, কাশীরাম দাস কহেন, শুনেন পুণ্যবান।
......................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
......................................
আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১১৩ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৫
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

আমরা সবাই জানি, ইরানের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক সাপে নেউলে বললেও কম বলা হবে। ইরান ইজরায়েলকে দুচোখে দেখতে পারেনা, এবং ওর ক্ষমতা থাকলে সে আজই এর অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়।
ইজরায়েল ভাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নগ্ন রাজা কর্তৃক LGBTQ নামক লজ্জা নিবারনকারী গাছের পাতা আবিষ্কার

লিখেছেন মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪০

LGBTQ কমিউনিটি নিয়ে বা এর নরমালাইজেশনের বিরুদ্ধে শোরগোল যারা তুলছেন, তারা যে হিপোক্রেট নন, তার কি নিশ্চয়তা? কয়েক দশক ধরে গোটা সমাজটাই তো অধঃপতনে। পরিস্থিতি এখন এরকম যে "সর্বাঙ্গে ব্যথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×