somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১২১

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[পূর্বকথা - কৃষ্ণ ও অর্জুন সপরিবারে যমুনার তীরে বেড়াতে গেলেন....ব্রাহ্মণবেশী অগ্নিদেব এসে তাদের খান্ডব বন দহনের অনুরোধ করলেন...কৃষ্ণ ও অর্জুন অগ্নিকে সর্ব প্রকার সাহায্যের আশ্বাস দেন...... কৃষ্ণ ও অর্জুনের কৃপায় ময়দানব ও পাঁচটি প্রাণী রক্ষা পায়..তারা হল তক্ষকরাজের পুত্র অশ্বসেন ও মন্দপাল ঋষির চারটি শার্ঙ্গক (সারস জাতিয় পক্ষি!) সন্তান-জরিতারি, সারিসৃক্ক, দ্রোণ ও স্তম্ভমিত্র....]

সুভদ্রার সহিত অর্জ্জুনের ইন্দ্রপ্রস্থে গমনঃ


দ্রৌপদী ও সুভদ্রা

এরপর অর্জুন কৃষ্ণের সাথে প্রভাসতীর্থে(দ্বারকার কাছে শ্রীকৃষ্ণের স্মৃতি বিজড়িত স্থান-অপর নাম সোমনাথ) ফিরলেন। কিছুকাল দ্বারকায়ও অবস্থান করলেন। দেখতে দেখতে বারো বছর শেষ হল।

অর্জুন এবার সুভদ্রাকে সঙ্গে নিয়ে ইন্দ্রপ্রস্থে ফিরে গেলেন।
প্রথমেই ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরকে প্রণাম জানালেন। যুধিষ্ঠির আনন্দে তার শিরে হাত রেখে আশীর্বাদ করলেন।
পার্থ মাতা কুন্তী ও ভীমকে প্রণাম জানালেন। নকুল-সহদেব প্রণাম জানালে তাদের আশীর্বাদ করলেন।

এবার দ্রৌপদীর সাথে দেখা করতে পার্থ অন্তপুরে গেলেন। পার্থকে দেখে দ্রৌপদী অসম্ভব কষ্ট পেলেন। অতি ক্রোধে তিনি অধোমুখে বসে রইলেন।

অনেকক্ষণ নিরবে থেকে পার্থ বলেন –হে প্রিয়ে, কি কারণে আমার প্রতি তোমার এত ক্রোধ! আমার কোন দোষে তুমি এত কষ্ট পাচ্ছ! বার বছর পর আমাদের দেখা হচ্ছে। কি কারণে তুমি এত রেগে আছ কিছুই বুঝতে পারছি না।

দ্রৌপদী বলেন –হে পার্থ, আমাকে আর দগ্ধ করবেন না। আপনি এখান থেকে গেলে আমার মন স্থির হবে। আমাকে আপনার আর কি প্রয়োজন! যেখানে যাদবী সুভদ্রা আছেন সেখানেই আপনি যান। নতুনকে পেয়ে পুরাতনকে অবহেলা করলেন। নতুন স্ত্রী পেয়ে আমাকেতো সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়েছেন!

শুনে লজ্জিত হয়ে পার্থ বলেন –হে দেবী! তুমি এটা উচিত কথা বললে না। তোমাকে ছাড়া সংসারে আমার আপন আর কেউ নেই। লক্ষ স্ত্রী এলেও সবার উপরে তোমার স্থান। আমরা পঞ্চভাই সম্পূর্ণরূপে তোমার অনুগত। সুভদ্রার উপর মিছে রাগ রেখ না।

অর্জুন এভাবে দ্রৌপদীকে বোঝতে লাগলেন। অর্জুনের সকল কথা শুনে দ্রৌপদী খুশি হলেন। তারা আবার আনন্দে আলাপ করতে লাগলেন।

কিছুদিন পর বলরাম ও নারায়ণ নানা রত্ন ও অনেক দাসী নিয়ে ইন্দ্রপ্রস্থে এলেন। ছোট বোনের যৌতুক হিসেবে অশ্ব, হাতি, গাই, বলদ প্রভৃতি আনলেন।
কৃষ্ণকে দেখে ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির খুব খুশি হলেন। দুজনে পরস্পরকে আলিঙ্গন করে শিরোঘ্রাণ নিলেন। সবাই আনন্দে আলাপ করতে লাগলেন।
কিছুদিন থেকে বলভদ্র কৃষ্ণকে ইন্দ্রপ্রস্থে রেখে দ্বারকায় ফিরে গেলেন।
এসময় সুভদ্রা গর্ভবতী হলেন। নির্দিষ্ট সময় তিনি পরম সুন্দর এক পুত্র সন্তান জন্ম দিলেন। দ্বিতীয় চন্দ্রের মত তার অঙ্গের জ্যোতি। রূপে শিশু ভুবন আলো করল। রূপে বীর্যে সে পিতার সমান হল। দ্বিজরা বিচার করে তার নামকরণ করতে বসলেন। ভয়শূন্য নির্ভীক সুন্দর শরীর, ক্রোধপর মন্যুমান অতিশয় বীর সে কারণে মান হল – অভিমন্যু। এঁনার গুণের কথা ধিরে ধিরে প্রকাশ হবে।

দ্রৌপদীরও পাঁচপুত্র হল পঞ্চপাণ্ডব থেকে। সবাই রূপে গুণে পিতাদের সমান হল। দ্বিজরা তাদের নামকরণ করলেন।
ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরের পুত্রের নাম হল –প্রতিবিন্ধ্য।
বৃকোদর পুত্র –সুতসোম।
অর্জুন পুত্র –শ্রুতকর্মা।
নকুল পুত্র –শতানীক এবং সহদেব পুত্র –শ্রুতসেন।
সন্তানের মুখ দেখে সকলে আনন্দিত হলেন।

মহাভারত শ্রবণ করলে সকল বিপদ দুর হয়। দুঃখ-শোক নাশ হয়, সম্পদ বাড়ে।
কাশীরাম দাস কহেন, শুন সারোদ্ধার (গূঢ় মর্ম নিরূপণ), ইহা বিনা সংসারেতে সুখ নাহি আর।

আদিপর্ব সমাপ্ত—
......................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
......................................
আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১২০ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:০৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×