somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হেয়াল ফন্ডিতে কয়...

১৮ ই এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৪:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কবিতায় সৌন্দর্য ও চেতনা




আসলে কবিতার একক কিংবা সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞায়ন অসম্ভব। “আমেরিকার আত্মা” বলে খ্যাত ওয়াল্ট হুইটম্যানের এই ছোট রচনাটিকেও কবিতা না বলে উপায় থাকে নাঃ

নিবেদন-দৃশ্য
হাজার পুরুষ রমনী নিপুন সবাই এসেছে।
উপহার হাতে হাতে, গুচ্ছ গুচ্ছ
শোভমান শিশু, বন্ধু ও যুবা তাদের ঘিরেছে

(লেখককৃত অনুবাদ)

অথচ এই রচনায় তেমন জোরালো কোনও আবেগ নেই, চিন্তা তো নেই-ই। মানব-সম্মিলনের একটি আনন্দঘন নির্মল দৃশ্য আছে মাত্র। তা সত্ত্বেও কেন এটি কবিতা? হুইটম্যানের মতো বড় কবি এটি লিখেছেন বলেই? – না। এই রচনায় মানব-মৈত্রীর একটি সৌন্দর্য ধৃত আছে বলেই। আমাদের অভিজ্ঞতায় এমন মিলনমেলা সাময়িক কিংবা এখনো তা কাঙ্ক্ষিত বলেই। এভাবে প্রাগুক্ত আবেগ ও চিন্তার পাশাপাশি সৌন্দর্যের প্রসঙ্গও এসে যায়। সৌন্দর্য দুভাবে বাঙ্ময় হয় কবিতায়ঃ দৃষ্টিনান্দনিক চিত্ররূপময়তা আর জীবনোপলব্ধির ব্যঞ্জনা হিসেবে। দৃশ্যগত সৌন্দর্য অতি সহজ ভাষায় হলেও তা মনের ভেতর কোমল অনুভূতির সৃষ্টি করে। আবার কখনও শব্দ ও বাক্যের ঝঙ্কার আমাদের পুলকিত করে। এখানে থেকে সৌন্দর্যবোধের ধারণা। লক্ষ্যনীয় যে, ভাষা যেমনই হোক, তা পাঠকের মনে যেন কাব্যময় আবেদন সৃষ্টি করতে পারে, গদ্যময় আবেদন নয়। অতিসুলভ দৃষ্টান্ত জন কীটস্‌ এর ওড টু আ নাইটিঙ্গেল কিংবা ওয়র্ডসওয়র্থ-এর ড্যাফোডিলস্‌ অথবা সলিটারি রীপারে উভয় প্রকার সৌন্দর্যই আজো মন্দ্রিত আছে। বিশ্বকবিতার পাশাপাশি বাংলা কাব্যভুবন থেকেও সৌন্দর্যের এমন রাশি রাশি দৃষ্টানের বিশাল সংকলন প্রকাশ সম্ভব। তবে প্রাতিষ্ঠানিক প্রবন্ধ লিখতে বসি নি বলে সেই দায় থেকে নিজেকে মুক্ত রেখেই বলছিঃ কেবল মুগ্ধতার নিমিত্তেই কি কবিতায় সৌন্দর্য সৃষ্টি-অনুসৃষ্টি হয় নাকি যা নেই তার উপস্থিতির ঔচিত্যের বোধ এই সৌন্দর্যের প্রতি আমাদের উন্মুখ রাখে অথবা এ সংক্রান্ত পিপাসাকে ত্বরান্বিত করে। সালংকার অথবা নিরলংকার ভাষায় এই সৌন্দর্যের আবাহন ঘটে কবিতায়। যখন আমরা পড়ছি না, তখনও কিছু কিছু পংক্তি আমাদের স্মৃতিতে হঠাৎ ঝিলিক দিয়ে ওঠে, জীবনানন্দের পংক্তিগুচ্ছঃ

ছাতার মতন বড় পাতাটির নিচে বসে আছে
ভোরের দোয়েল পা
খি

অথবা

পৃথিবীর সব প্রেম আমাদের দুজনার মনে
পৃথিবীর সব রূপ লেগে আছে ঘাসে
আকাশ ছড়ায়ে আছে শান্তি হয়ে আকাশে আকাশে


আমরা অভিভুত হয়ে পড়ি। আর শ্রবণের সঞ্চিত স্মৃতিতে কীটস্‌-এর নাইটিঙ্গেল ফের গান গেয়ে উঠলে,
পি বি শেলীর বিশ্ববিদিত উক্তিটি মনে পড়ে যায় আমাদেরঃ আমাদের মধুরতম সঙ্গীত তা-ই যা আমাদের সবচেয়ে বেশি দুঃখের কথা বলে। কীটস্‌-এর পাখিটি যতোটা না বেদনার সঞ্চার করে তার চেয়ে এর শ্রোতা কবি মানুষটির যন্ত্রনার্ত আর্তি পাঠককেও আর্দ্র করে তোলে তাঁরই অভিন্নতায়। তবে রবীন্দ্রনাথের সোনার তরীর কথা যদি কেউ বলেন, তাহলে আমি মনে করি, এক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন। সোনার নৌকাটি নৈসর্গিক নদীতে নদীতে প্রবহমান থাকলেও ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই ছোট সে তরী/ আমারই সোনার ধানে গিয়েছে ভরি। এই কবিতায় স্বর্ণতরী ও স্বর্ণশস্য প্রতীকী বলে এতে প্রাগুক্ত অভিঘাত নেই। বরং কবিতাটি এ জীবনোপলব্ধির সারাৎসার যেঃ মানুষ নশ্বর, কিন্তু কালের প্রবাহে মানুষের কীর্তি অবিনশ্বর। তাই কবিতায় সৌন্দর্য কেবল দৃষ্টিনন্দনের বিষয় নয়, মহৎ চিন্তারও ফল। বলা বাহুল্য, দৃষ্টি ও শ্রবণের এই নান্দনিক অভিজ্ঞতা এবং মহৎ চিন্তা অর্জন এবং সাধন “চেতনা” ব্যতীত সম্ভব নয়। কিন্তু কবিদের চেতনা বলতে আমরা কী বুঝি?

ভাববাদে ‘চেতনা থেকে বস্তুর’ এবং বস্তুবাদে ‘বস্তু থেকে চেতনার’ উৎপত্তি হয়। তবে শুধু নির্জীব বস্তু চলৎশক্তি অর্জন করলেই তা চেতনা হয় না। কবিতায় চেতনা কবির সচেতনতার নামান্তর। কবির রাজনীতিক সচেতনতা ও দার্শনিক বিশ্বাস থেকে এই চেতনার জন্ম। ধর্ম, যৌনতা, নানান ব্যক্তিক অনুসন্ধান কবির চেতনা চর্চার বিষয়। তবে শেক্সপীয়র, গ্যেটে এবং রবীন্দ্রনাথের মত অসম্ভব বড় কবি-নাট্যকারের ভাববাদ, সাংস্কৃতিক অলংকার উদার মানবতাবাদে প্রতিষ্ঠা পায়। মানবপ্রেম ও মানবকল্যাণ বড় কবিদের মৌলিক প্রবণতা এবং অঙ্গীকার। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর কথাটা স্মরণ করছিঃ সাহিত্য হচ্ছে সামাজিকতা। অনেকে বলেন, কবিতা সমাজ বদলায় না, সময়ের বাঁকে বাঁকে সৃষ্ট সংবেদনগুলোর অনুবাদ সম্পন্ন করে মাত্র। এই অনুবাদকেই আমরা বলছি চেতনা; যা কখনও ব্যক্তিক, কখনও রাজনীতিক।


১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×