somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি রিভিউঃ Red Cliff- ধংসান্তক প্রেম উপাখ্যান

১৫ ই নভেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Red Cliff একটি চাইনিজ যুদ্ধের মুভি। এশিয়ান ফিল্মগুলো আমার বেশ ভালোই লাগে। কারন আছে, পরিবেশ, আর চেনা জানা গল্প। বাপ দাদাদের মুখে শোনা আর ইতিহাস বইয়ের সাথে কিছুটা মিল বেশ ভালোই লাগে। অন্তত্য বারুদ পোড়া গন্ধটার থেকে ভালো। ঢাল তলোয়ারের ব্যাপারগুলো বেশ আকর্ষনিয়।



Red Cliff সেরকমের একটা ফিল্ম। এ ধরনের ফিল্মগুলো আমি জাষ্ট গিলি। ভাষাগত দিক দিয়ে কিছুটা সমস্যা সর্বদাই হয়, কিন্তু ভালোলাগার পরিমান অপরিবর্তনিয়।
প্রাচিন চিনের থ্রি কিংডম এর উপর ভিত্তি করে বেশ কয়েকটা মুভি হয়েছে। আমিও বেশ কয়েকটা দেখেছি। কিন্তু এটা ছিল একটু আলাদা। এটা বেশ বড় লেনথ এর মুভি। ২ খন্ডে ভাগ করে ২ বছরে রিলিজ করা হয়েছে। জন উ এটা পরিচালনা করেছেন বেশ কারিগরির মাধ্যমে। সর্বকালের সব থেকে বেশি খরচে এশিয়ান ফিল্ম এটা। দেখানোর তাগিদেই প্রচুর খরচ করেছেন তিনি। জমিয়ে জমিয়ে।



যাই হোক তাহলে কাহিনি নিয়ে কিছুটা আলোচনা করা যাকঃ
প্রাচীন অখণ্ড চীনের হান রাজবংশের শেষদিকে তিন রাজ্যের (থ্রি কিংডমস) ঘটনা নিয়ে নির্মিত হয়েছে জন উ পরিচালিত রেড ক্লিফ ছবিটি। প্রাচীন চীনের এই তিন রাজ্য এবং এ সময়ের বিখ্যাত রেড ক্লিফের যুদ্ধ নিয়ে বেশ কয়েকটি ছবি নির্মিত হয়েছে। কিন্তু কোনো ছবিতেই যুদ্ধের পেছনের রাজনীতি বা কারণগুলো উঠে আসেনি তেমনভাবে। জন উ চেষ্টা করেছেন যুদ্ধকে পাশে রেখে রাজনীতি, প্রেম এবং জোর করে ভালোবাসা লাভের আশায় মিথ্যার এক ভয়াবহ রূপকে পর্দায় তুলে আনতে।
চীনের মূল ভূখণ্ড সম্রাট ঝিয়ান হানের শাসনে হলেও পশ্চিম, পূর্ব এবং দক্ষিণ অঞ্চল আলাদাভাবে শাসন করতেন সান কুয়ান, লিই বেই এবং ঝাও ইউ। তবে তারা প্রত্যেকেই ছিলেন সম্রাট হানের প্রতি বিশ্বস্ত। হানের হয়ে পুরো রাজ্যের দেখাশোনা করতেন তার প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান সেনাপতি কাও কাও। আগের বছর বৃষ্টি না হওয়ায় খাজনা আসেনি রাজ্যের অনেক দিক থেকেই। ঝিয়ান হান নিজেও একথা জানেন এবং সে কারণে তিনি কাউকে চাপও দেননি। কিন্তু কাও কাও তখন অন্য ভাবনায় মশগুল। নিজস্ব সেনাদল তৈরির অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে এক সম্ভ্রান্ত জমিদারকে সপরিবারে হত্যা করেন কাও কাও এবং সম্রাটকে বোঝাতে সক্ষম হন এই 'অবাধ্য' জমিদারের মতো তিন রাজ্যও শিগগিরই বিদ্রোহ করতে চলেছে।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও যুদ্ধে মত দিলেন হান। ১০ লাখেরও বেশি সেনা নিয়ে তিন রাজ্য আক্রমণের জন্য রওনা হন কাও কাও। প্রথম লক্ষ্য স্থলপথের বিখ্যাত সেনাপতি পশ্চিমের অধিপতি লিউ বেইকে 'দমন করা'। 'চ্যাংবাঙের' ১৫ হাজার সেনা নিয়ে কাও কাওর মুখোমুখি হন লিউ। যুদ্ধে দেশের সেরা সেনাপতিরা সেই সময়ে লিউ বেইয়ের অধীনে থাকলেও সাধারণ জনগণের কথা চিন্তা করেই পিছু হটে লিউ বেই।
পরাজয়ের গ্লানি এবং কাও কাওর সেনাদের হাতে দুই স্ত্রীকে হারানো বিপর্যন্ত লিউ বেইকে তার প্রধান পরামর্শদাতা এবং দীর্ঘদিনের বন্ধু ঝুগ লিয়াং জানান, কাও কাওর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় পশ্চিমের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা। তাদের বোঝানো শুধু পূর্ব দখল করেই ক্ষান্ত হবেন না কাও কাও, পশ্চিমের দিকেও হাত বাড়াবেন তিনি। কিন্তু পূর্বের চিরশত্রু পশ্চিম কেন শুধু শুধু 'সম্রাটে'র বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়াবে? অসাধ্য সাধন করতে বেরিয়ে পড়েন ঝুগ। উত্তরের শান্তিপ্রিয় সান কুয়ানকে রাজি করিয়ে ফেলেন সহজেই। কিন্তু আসল সমস্যা পশ্চিমের যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ 'দিগ্বিজয়ী' খেতাব পাওয়া ঝাও ইউকে রাজি করানো। অনাবৃষ্টির সবচেয়ে বড় শিকার ঝাওয়ের পশ্চিমাঞ্চলে দুর্ভিক্ষ আসন্ন। এ অবস্থায় সে যুদ্ধের জন্য রাজি হবেন কি না সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। কিন্তু ঝাও এক কথায় রাজি হয়ে যান। কারণ আর কেউ না জানুক একমাত্র তিনিই জানেন কাও কাওর আসল উদ্দেশ্য।
দশ বছর আগে কাও কাওর সেনাবাহিনীতে সেনাপতি ছিলেন ঝাও। তখন আরেক সেনাপতি ছিলেন কাও কাওর বন্ধু শেন ঝেন। শেনের মেয়ে ঝিয়াও কিয়াও ভালোবেসে বিয়ে করেন ঝাওকে। কিন্তু ঝিয়াওর প্রতি গোপন প্রেম পোষণ করতেন কাও কাও, যা শুধু ঝিয়াওই জানতেন। এবং বিয়ের পর জানতে পারেন ঝাও। এত যুদ্ধ, হত্যা, বিদ্রোহের মিথ্যা অজুহাত সব বিছুর পেছনেই রয়েছে প্রেম না পাওয়ার ব্যর্থতা। কাও কাওর মূল উদ্দেশ্য পশ্চিম দখল করা এবং ঝাওকে হত্যা করে ঝিয়াওকে নিজের করে পাওয়া। তার নকল মিথ্যা, রাজনীতি, কূটনীতির পেছনে স্রেফ একটাই কারণ, এক নারীকে বিছানায় টেনে আনা, লাখো মানুষের বলি দিয়ে হলেও।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে পশ্চিমকে জয় করা খুব একটা সহজ ছিল না। এর এক পাশে বিশাল জলরাশি এবং আরেক পাশে পাহাড়। একমাত্র একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী এবং একই সঙ্গে নৌযুদ্ধে বিশেষজ্ঞ না হলে তা একেবারেই অসম্ভব। কিন্তু সেই অসম্ভবকে সম্ভব করতেই কাও কাও প্রচুর অর্থের লোভ দেখিয়ে দলে ভিড়িয়ে নেন ঝাওয়ের দুই নৌ-জেনারেলকে। শুরু হয় কাও কাও এবং ঝুগ লিয়াংয়ের মধ্যে এক মনস্তাত্তি্বক লড়াই, কূটনীতি আর রাজনীতির খেলা। সেই খেলার প্রথম ধাপে জয় পায় ঝুগ এবং কাও কাওর আদেশে নিহত হয় সেই দুই নৌ জেনারেল। কিন্তু মাত্র এক লাখ সেনা নিয়ে কিভাবে ১০ লাখ সেনার মোকাবিলা করবেন তিন শাসক? রেড ক্লিফের উপত্যকায় এক অসম্ভবকে সম্ভব করতে কাও কাওর বিরুদ্ধে একসঙ্গে হন তিন শাসক, তিন সমর বিশেষজ্ঞ আর এক দুর্দান্ত মেধার অধিকারী তুখোড় রাজনীতিবিদ।

Personal Rating: 8.০

Personal Grade : A+

Personal Quote : ভালোবাসার একটা অবাধ্য রুপ। ট্রয় ছেড়ে রেড ক্লিফে।

মুভি রিভিউঃ Awake (2007) - পরিষ্কার মৃত্যুতত্ত্ব।


মুভি রিভিউঃ Knowing - পৃথিবি ধ্বংস হবে। আগেই ঠিক করা

আমার মুভি রিভিউ ব্লগ সিনেঘর। ঘুরে আসুন। বুক্মার্ক রাখুন।

http://cineghor.blogspot.com
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×