somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার একদিন অথবা আমাদের প্রতিদিন

২৩ শে মে, ২০১০ দুপুর ১২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯ শে মে, বুধবার, ২০১০: প্রায় সাড়ে চার ঘন্টার ঘুম ভেঙ্গে ৭ টা ৪০ মিনিটে উঠতে হল অফিসে সময়মত যেতে হবে বলে। ৮টা ১৫ মিনিটে বাসা থেকে বের হয়ে একই প্রজেক্টে (ছায়াবিথী, বাসাবো) অবস্থিত আমার প্রথম সন্তান ১মাস বয়সী আহনাফ উল্লাহকে সাক্ষাত দিতে তার নানার বাসায় গিয়ে ১কাপ চা পান শেষে ৮টা ৪০ মিনিটে শুরু হয় আমার মহাযাত্রা (অফিস যাত্রা)।

প্রয়োজনীয় যেকোন যাত্রাই বিরক্তিকর, তার মধ্যে প্রতিদিনের অফিস যাত্রা অন্যতম। অসহনীয় ভাড়া দিয়েও কোন রিকসা না পেয়ে রওনা দেই বাসাবো টেম্পুস্ট্যান্ডের (বর্তমানে যদিও টেম্পুর বদলে চলছে ভাঙ্গাচুরা ম্যাক্সি নামক বাহন)। অনেকটা নিজের অনিচ্ছাতেই দাড়িয়ে যায় বিশাল দীর্ঘ ম্যাক্সি যাত্রীর লাইনে, আমার অবস্থান প্রায় ২০০ জনের পিছনে। একটি ম্যাক্সি একসাথে ১৭ জন লোক বহন করতে পারে যার মধ্যে কমপক্ষে ২জন বিনা লাইনে এক্সট্রা খাতিরে ভ্রমন করে। ম্যাক্সিগুলো ছোট রাস্তায় জটলা লাগানো, বিশেষ করে মোড়গুলোকে কঠিনীকরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই গাড়ীগুলোকে সাধারণত অন্য সকল ছোট গাড়ী চালকেরা বিশেষ করে রিকসা ও প্রাইভেট কার চালকেরা বেশ ভয়ই পায় কারণ ওরা যখন তখন যেকোন ক্ষতি সাধন করলেও কোন বিশেষ কারণে কোন প্রকার জবাবদিহীতার সম্মুখীন হতে হয় না।

পাবলিক পরিবহনে কিংবা যেকোন পাবলিক লাইনে খুব কম মানুষই চুপচাপ থাকতে পারে। তার মধ্যে রাজনৈতিক সমালোচনাই বেশী মুখরোচক। পাবলিক পরিবহনে ভ্রমন করলে কিংবা কোন পাবলিক লাইনে দাড়ালে খুব সহজেই বুঝা যায় যে প্রতিটি মানুষ শুধু দেখতেই আলাদা নয়, তাদের মতামত, চিন্তাভাবনা সবই সতন্ত্র। তবে একটা কথা মানতেই হবে এ ধরনের পরিবেশে সবাই নিজেকে খুবই জ্ঞানী মনে করে যেন তার জ্ঞানের কাছে অন্যের জ্ঞান খুবই তুচ্ছ। যেমন আমার সামনের দিকে দাড়ানো এক ভদ্রলোক বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলছিল, খিলগাও ফ্লাইওভারের ডিজাইনটি খুবই বাজে হয়েছে, সে ডিজাইনার হলে আরও কি কি করত তাই বলছিল। তার ভাবটা এমন ছিল, সে সুযোগ পেলে নিজ খরচে তার নিজস্ব ডিজাইন বাস্তবায়ন করত, কারন আমি বুঝতে পারছিলাম তার ডিজাইন বাস্তবায়ন করতে বর্তমান খরচের কয়েকগুন বেশী খরচ পরত যা তখনকার সরকারের পক্ষে প্রায় অসম্ভব ছিল। দাড়িয়ে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে পাশেই যাত্রীর জন্য অপেক্ষমান একটি অটোকে (সিএনজি নামেই পরিচিত) দু-তিন জন মিলে গুলিস্তান যেতে বললে সে একদাম ১৩০ টাকা চায় যা আমার কাছে অরাজকতাই মনে হচ্ছিল, মিটারে বড়জোড় ৩৫ টাকা আসবে। সে নিজেই যেন ভাড়ার আইন প্রণেতা।

যাহোক অবশেষে প্রায় ৪০ মিনিট পর ম্যাক্সিতে চড়ে গাদাগাদি (পাশের লোকের স্বাস্থ্য ভাল হলে টের পাওয়া যায় কত ধানে কত চাল) করে কোনরকম বসার সুযোগ পেয়ে মনে হল আমার পাগুলো যেন যাবৎজীবন কারাভোগের পর মুক্ত হল। স্ট্যান্ডের বিভিন্ন প্রকার চাঁদা মিটিয়ে গাড়ীর দরজায় তিনজন স্টাফ পরিচয়ে দাড়িয়ে আমাদের মহাযাত্রা শুরু হল। তারপরও আশ্বস্ত হলাম এই ভেবে যে সময়মত অফিসে যাওয়ার আশা এখনও ফুড়িয়ে যায়নি। পরক্ষণেই ভাবনায় পড়লাম যখন কিছুদুর যেতেই গাড়ীটি পিছনে জটলা লাগিয়ে রাস্তার উপর থামিয়ে স্টার্ট বন্ধ করে দিল। জানতে চাইলে শিশু বয়স পার হয়ে মাত্র কৈশোরে পা দেয়া হেলপার ছেলেটি বলল গাড়ীর ইনজিলের (ইঞ্জিন) মবিল শেষ হয়ে গেছে। এবার পাবলিকের অতি প্রিয় রাজনৈতিক আলোচনা মোড় নিল ম্যাক্সি স্টাফদের সমালোচনায় (গালিগালাজ)। প্রায় ১০ মিনিট পর গাড়ী রওনা দিয়ে খিলগাও ফ্লাইওভারের ওপর আসলে আশেপাশের কোলাহল না থাকায় যাত্রীদের অনেকেই আবার তাদের প্রিয় রাজনৈতিক আলাপচারিচায় ফিরে এল। বেশীরভাগ আলোচনাই ছিল সরকারের কঠোর সমালোচনা করে। আমার পাশের লোকটি যে বর্তমান সরকার দলের তা বুঝা গেল যখন সে বেশ রাগত সুরে বলল আগের দলও তো তাই করে গেছে। এই দেশের সরকারের এটি একটি গতানুগতিক প্রথা যে পূর্বের সরকারের কঠোর সমালোচনা করা কিন্তু নিজেরাও আবার সেই একই পথে চলা।মৌলিক উন্নয়নের ধার ওরা ধারে না কারণ মৌলিক উন্নয়নের ফল ভোগ করতে ৫ বছর পার হয়ে যাবে হয়ত তখন আর ওরা ক্ষমতায় নাও থাকতে পারে, আর এ ভাবনা থেকেই নিজেদের আখের গোচাতে বেশী ব্যস্ত থাকে।

অবশেষে ১০ টা ১৭ মিনিটে বিরক্তিকর প্রায় ৬টি সিগনাল অতিক্রম করে দৈনিক বাংলায় নামি। এখন আমার অফিস যেতে কিছুদুর বাকী (পল্টন মোড় পার হয়ে প্রেসক্লাবের পূর্বেই তুপখানা রোড)। রিকসাভাড়া ১৫ টাকা চাওয়ায় এবারও রিকসায় চড়া হল না। অবশেষে ১টাকা ভাড়ায় লোকাল বাসের দরজায় কোনরকম ঝুলে পল্টন মোড় নেমে হেটে অফিসে পৌঁছি প্রায় ১০ টা ২৮ মিনিটে। তারপর অফিসের গল্প আর নাইবা বললাম..... দিনশেষে প্রায় ৭ টা ৩০ মিনিটে রওনা হয়ে যাত্রাপথের আরেকটি নতুন গল্প নিয়ে বাসায় পৌঁছি রাত ৯টায় এবং আবারো পরদিন অফিস যাত্রার প্রস্তুতি......

সরকারের কাছে আবেদন প্লিজ ভেবে দেখুন কোন শ্রেণীর মানুষগুলো যাত্রাপথে এতকষ্ট করে এতসময় নষ্ট করে থাকে। আপনার ভেবে সময় নষ্ট করার দরকার নেই আমিই বলছি এই শ্রেণীর মানুষগুলোই ঢাকা শহরে সবচেয়ে বেশী প্রয়োজনীয় ও পরিমাণে সবচেয়ে বেশী। তাই ১০ থেকে ১৫ মিনিটের রাস্তায় যেন কারও ৯০ মিনিট খরচ না হয় এই বিষয়টি ভাবলেই মৌলিক কাজ করা হবে। সরকারের লজ্জা হওয়া উচিত এজন্য যে সামান্য মিটার চালিত গাড়ীগুলোও সরকারের আইনকে তোয়াক্কা করে না, অথবা সরকারকে দূর্বল ভাবে। আরেকটি বিষয় ভাবা উচিত যে বড় রাস্তার পাশাপাশি ছোট রাস্তায়ও ট্রাফিক আইন প্রতিষ্ঠিত করা যাতে করে যাত্রাপথের একটা বড় সময় কারো অরাজকতায় নষ্ট হয়ে না যায়।
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×