somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গণিত মানেই জটিল

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সকাল ১০:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গণিত মানেই জটিল, কঠিন বা ভয়ের কিছু নয়। গণিত মানেই সহজ ও সরলতা। আমাদের মনে একটা অমূলক ধারণা বাসা বেঁধে থাকে যে, গণিত বা অংক মানেই কঠিন কঠিন কিছু সমস্যা বা পাটীগণিত এবং এর সমাধান করতে যেয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলা। আমরা স্কুলে গণিতের ক্লাসে বেত ব্যাবহার করে থাকি। আমরা স্কুলের বাচ্চারা "গণিত বাড়ীর কাজ" না করে ক্লাসে আসলে তাদের কঠিন শাস্তি দিই। আমাদের অধিকাংশ স্কুলেই গণিত শিক্ষকটি থাকেন নামজাদা, ডাকসাইটে এবং শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাত করার জন্য প্রসিদ্ধ। গণিত শিক্ষকের রাগী ভাব এবং কাঠিন্য আমাদের মনে ছোটবেলায় গণিত বিষয়টা সম্পর্কে একটা বিরুপ ধারণা দিয়ে থাকে। আমাদের বাচ্চারা গাণিতিক সমস্যার সমাধান করে, অথচ তারা জানে না যে কেন তারা এইসব সমস্যা সমাধান করছে অথবা এইসব সমস্যার সমাধান করে লাভটাই বা কি অথবা এইসব সমস্যাগুলো আদৌ যে কী ধরণের সমস্যা সেটাই তারা বোঝে না। নীরস গণিত রাগী শিক্ষকের হাতের বেতের মাধ্যমে হাজির হয় তাদের সামনে। গণিত আর বেত তাই অনেকটাই একই অর্থ বহন করে। গণিত মানেই আমাদের শিক্ষার্থীদের কাছে একটি কঠিন বিষয় এবং একটি কঠিন সমস্যার নাম।

অথচ গণিত নিজে কোন সমস্যা নয় বরং বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের একটা হাতিয়ার। গণিত কোন সমস্যা নয় বরং গণিতের সাহায্য নিয়ে অনেক সমস্যা সমাধান করা যায়। গণিত একজন বিশ্বস্ত সাহায্যকারী এবং খুব বড় একজন বন্ধু। আমাদের স্কুলগুলোতে গাণিতিক ধারনাগুলোর উপর যতটা না জোর দেয়া হয় তার থেকে বেশী জোর দেয়া হয় গাণিতিক সমস্যাগুলো সমাধান করার ক্ষেত্রে। সত্যি কতা বলতে কী, আমাদের স্কুলগুলোতে বিভিন্ন গাণিতিক ধারণাগুলো সম্পর্কে কোন জ্ঞানই দেয়া হয় না। শিক্ষক ক্লাসে আসে এবং গাণিতিক ধারণাগুলো সম্পর্কে বিন্দুমাত্র আলোচনা না করে সরাসরি সমস্যা সমাধানে চলে যান। শিক্ষক ক্লাসে এসেই "অনুশীলনী-১" এর বিভিন্ন "গাণিতিক সমস্যা" বা "অংক" সমাধানে লেগে যান। ছাত্ররা সেই "অংক"টি কিভাবে করা হল তা বুঝতে চেষ্টা করতে প্রচন্ড মাথা খাটায়। যারা মাথা খাটিয়ে কিছুটা আঁচ পায় যে এভাবে এভাবে করলে অংকটা করা যায় তারা ভাল ছাত্র হিসেবে নাম কামায় আর বাদবাকীর গায়ে সেটে যায় গড়পড়তা বা খারাপ ছাত্রের তকম। শিক্ষার্থীরা একটা করে "অংক" করে, বুঝতে চেষ্টা করে "অংক"টা কিভাবে করল, এবং এই "বুঝতে চেষ্টা" করা থেকে যে ধারণা পায় তা কাজে লাগিয়ে অন্যা অংকগুলো করার চেষ্টা করে। যদি ক্লাসের বোর্ডে করা "অংক"-এর মত আরেকটা অনুরুপ "অংক" পাওয়া যায় তাহলে তারা বোর্ডে করা অংকটার সমাধানে যে সকল পদ্ধতিগুলো ব্যাবহার করা হচ্ছে সে পদ্ধতিটাই ব্যাবহার করে এবং কেবল সংখ্যাগুলো বদলে দিয়ে অনুরুপ অংকটি সমাধান করে। আর যদি বোর্ডে করা অংকটির সাথে অন্য কোন অংক না মিলে তাহলে আর তাদের পক্ষে বেশীদূর এগুনো সম্ভব হয় না। এটা অনেকটা একটা যন্ত্র কারো চোখের সামনে বানিয়ে দেখালাম, যেখানে যন্ত্রটির বেশ কিছু যন্ত্রাংশ আছে। এরপরে যদি পূর্বে বানানো যন্ত্রটির যন্ত্রাংশগুলোর মতই অনুরুপ কিন্তু আকারে বড় বা ছোট কিছু যন্ত্রাংশ দেয়া হল এবং বলা হল, এই যন্ত্রাংশগুলি ব্যাবহার করে আগের যন্ত্রটির মত একটা যন্ত্র বানাও। পুরো বিষয়টাই এখানে অনেকটা নকল করার মত। এখানে চিন্তাশীলতার বা মননশীলতার কিছু নেই। এখানে মনশীলতা বা সৃজনশীলতা তখনই থাকবে যখন আপনি কোন একটি যন্ত্র বানিয়ে দেখিয়ে অনুরুপ আরেকটি যন্ত্র বানানোর জন্য না বলে খোদ যন্ত্রবিদ্যা পড়ানোর পর বলবেন, এবার তোমরা তোমাদের বিদ্যা কাজে লাগিয়ে এমন একটি যন্ত্র বানাও যা দিয়ে কোন একটি নির্দিষ্ট কাজ করা যায়। আমদের স্কুলগুলোতে যন্ত্রবিদ্যা না পড়িয়ে বরং নকলবাজীই শিক্ষা দেওয়া হয়।

গাণিতিক সমস্যা একটি ব্যাবহারিক বিষয়। কোন ব্যাবহারিক বিষয়ে যাওয়ার আগে তত্ত্ব সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরী। বিভিন্ন তত্ত্ব না জেনে কেবল মাত্র অনুমান করে ভাগ্যের উপর নির্ভর করে সরাসরি ব্যাবহারিক কাজে যাওয়াটা এবং এর ফলে ফল লাভ করার আকাংখা করাটা ঠিক নয়। আমাদের স্কুলগুলোতে গণিতের ব্যাবহারিক দিক সম্পর্কে সম্পূর্ণ একশভাগ জোর দিয়ে তাত্ত্বিক দিকটি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়। এর ফল ভাল হয় না এবং এর প্রমাণ আমাদের গণিতভীতি এবং গণিত সম্পর্কিত অনাগ্রহ। গণিত মানেই আমাদের কাছে একটা উচ্চস্তরের জিনিস। গণিত বলতে আমরা বুঝে থাকি খুব কঠিন একটা বিষয় যা আয়ত্ত্বে আনা সহজ নয়। আমাদের "অনুশীলনী-১" প্রীতি আমাদের গণিত সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণা দিয়ে আসছে সবসময়। আমাদের এই "অনুশীলনী-১" প্রীতি কমিয়ে বরং "অনুশীলনী-১" এর আগে আলোচনা করা তত্ত্বগুলো যদি স্কুলের স্যারেরা ব্যাখ্যা করতেন তাহলে আমাদের গণিত নিয়ে এই নেতিবাচক ধারণাও হত না এবং বেত ব্যাবহারের প্রয়োজনীয়তাও হত না। ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখুন আপনি বেত হাতে ছাত্রদের গণিত পড়াচ্ছেন। এটা কি কোন সুস্থতার লক্ষণ? বেত হাতে নিয়ে ক্রীতদাসদের পিটিয়ে জোরপূর্বক তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত শ্রম আদায় করা যায়, কিন্তু বেত হাতে করে আপনাকে সারাজীবন পিটালেও কি আপনি কি আমার চিন্তাশক্তি বাড়াতে পারবেন? পারবেন না। আমি সমস্যা নিয়ে চিন্তা করব কোথায়! আমার প্রধান চিন্তা আপনার বেত থেকে কিভাবে বাঁচা যায়! যদি শারীরিক পরিশ্রমের কাজ হত, তাহলে না হয় "বল জোরে হেঁইয়ো" বলে একটা ঠেলা দিয়ে আরেকটু বেশী কাজ করতে পারতাম, কিন্তু "সরলীকরণ" নামের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একটা গাণিতিক সমস্যার সমাধান করার মত মানসিক কাজ করা সম্ভব নয়। আপনি যদি অতিরিক্ত উদ্দিপনার উপকরণ হিসেবে ক্রীতদাসের সাথে বেত ব্যাবহার করে তাকে পিটিয়ে শারীরিক চাপ প্রদানের মাধ্যমে অতিরিক্ত কাজ আশা করেন তাহলে আরো বেশী তত্ত্ব সম্পর্কে ধারণা দিয়ে মানসিক চাপ দিয়ে শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সমস্যা সমাধানের মানসিক কাজ আশা করুন। তত্ত্বের পরে ব্যাবহারিক আসবে, বিষয়টা কোন জটিল কিছু নয়, অনেক সহজ একটি বিষয়। আমরা অনেকেই জানি, কিন্তু মানি না।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ২:২৯
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×