somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গায়ক গাধা

৩০ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট্ট-মোট্ট এক শহর। নাম দেবপুর। অনেকদিন আগে সে শহরে ছিল এক ধোপা। তার ছিল হ্যাংলা-পাতলা ও রোগা টাইপের একটা বৃদ্ধ গাধা। ধোপা তার গাধাকে বোলা নামে ডাকতো। সকাল হলেই বোলার পিঠে চাপিয়ে ধোয়া কাপড় দোকানে নিয়ে যেতো, আবার সন্ধ্যা বেলা একইভাবে ময়লা কাপড় বাসায় নিয়ে আসতো। কাপড় আনা-নেওয়া ছাড়া বোলার আর কোনো কাজ ছিল না। তবুও সে রোগা থেকে আরও রোগা হতে লাগলো।

রাত হলে বোলা ইচ্ছামতো ঘোরাঘুরি করতো। ঘুরতে ঘুরতে এক রাতে সে দেখা পেলো ক্ষুধার্ত এক শিয়ালের। শিয়ালটা ধীরে-সুস্থে হাঁটছে আর খাবার খুঁজছে। বোলা এগিয়ে গেলো। কথা বলে জানতে পারলো এই শিয়ালের নাম বিজলী।

বিজলীর সঙ্গে কথা বলে বেশ মজা পেলো বোলা। বিজলীরও ভালো লাগলো। ওরা বন্ধু হয়ে গেলো।
শুধু কি তাই? এরপর প্রায় প্রতি রাতে তারা দেখা করতো, গল্প করতো, আর খাবার খুঁজতো। এভাবে খুঁজতে খুঁজতে এক রাতে পেয়ে গেলো রাজ্যের সবচেয়ে বড় শসা বাগানের খোঁজ। বাগানের শসা দেখেই বোলার জিভে পানি চলে এলো। দু'এক ফোঁটা গড়িয়েও পড়লো।

বোলার জিভে পানি দেখে শিয়ালেরও একই অবস্থা। এরপর দু'জন গুটি গুটি পায়ে বাগানে ঢুকে দেদার খেয়ে চললো শসা। এক সময় পেট ফুলে-ফেঁপে মোটা হয়ে ওঠলো। দু'জন হেলে-দুলে মোটা পেট নিয়ে বাড়ি ফিরলো। পরের রাতে এসে আবার শসা খাওয়া শুরু করলো। এভাবে একদিন, দুদিন, প্রতিদিন। রোগা-পাতলা বোলার স্বাস্থ্যের পরিবর্তন ঘটলো। অনেক মোটাসোটা হয়ে গেলো। দেখতে অন্য আট-দশটা গাধার মতোই স্বাস্থ্যবান মনে হলো তাকে।

এক রাতে শসার জুস দিয়ে ডিনার সেরে বোলা খুব আনন্দে আপ্লুত হয়ে প্রিয় বন্ধু বিজলীকে বললো, 'আকাশের দিকে তাকাও তো। গোলাকার চাঁদকে কেমন সুন্দর লাগছে। বইছে ঝিরঝিরে বাতাস। এমন একটা রাতের জন্যই আমার অপেক্ষা। এ রাতটাই আমাকে গান গাওয়ার ভাব তৈরি করে দিলো। এমন রাত দ্বিতীয়টি কবে পাবো, জানি না!'
'প্রিয় বন্ধু, এখন গান করো না, তোমার গান শুনলেই পাহারাদার জেগে যাবে। তাকে জাগিয়ে দেওয়া মানে বড়সড় একটা বিপদকে সংবর্ধনা দিয়ে নিজেদের ঘাড়ে নিয়ে আসা।' বন্ধুসুলভ হাসি দিয়ে বললো বিজলী।
কিন্তু তার এমন নিষেধ শোনার সময় কই বোলার? সে বললো, 'কী যা-তা বলছো! এমন মনোরম পরিবেশে তুমি আমার পাশে। এর চেয়ে বড় আনন্দের আর কী আছে? এমন একটা সময়ে গান থেকে কে থামাবে আমাকে!'

বন্ধুকে যুক্তি দিলো শিয়াল। বললো, 'যাই বলো, তোমার কণ্ঠ কাকের চেয়ে ভালো নয়! তার চেয়ে বরং তুমি চুপচাপ থাকো। তাহলে বিপদ আমাদের কাছে আসতে পারবে না।'

কিন্তু বোলা কোনোভাবেই সেটা মানতে চাইলো না। উল্টো বললো, 'তুমি কি গানের রাগ বা তাল সম্পর্কে কিছু জানো? জানবেই বা কেমনে? তুমি তো গানই জানো না। যদি জানতে তাহলে এমন ভীতুর মতো আমাকে বারবার নিরুৎসাহিত করতে না।'

আবারও বিপদের কথা মনে করিয়ে প্রিয় বন্ধুকে বিজলী বললো, 'আসলে তুমি ঠিকই বলেছো বোলা। গান বা মিউজিক সম্পর্কে আমার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। তবে এখন তুমি গান গাইলে পাহারাদার জেগে উঠবে। আর তোমাকে এমন পুরস্কার দেবে, যা তুমি দ্বিতীয়বার জন্ম নিলেও ভুলতে পারবে না। সুতরাং আমার কথা শুনে অন্তত এ মুহূর্তে গান গাওয়ার কথা ভুলে যাও।'

'আমি জানি, তুমি সব সময়ই একটা বোকা। আমার গানের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তুমি এখনও সন্ধীহান। আমি গান শুরু করছি। তবে অবশ্যই তোমার জন্য গানটা'_ বলেই ছেঁড়ে গলায় গাইতে শুরু করলো বোলা।
'থামো, থামো, তুমি যদি আরও গাইতে চাও, তাহলে আগে আমাকে এখান থেকে চলে যেতে দাও। আমি বাগানের বাইরে গেলেই তুমি মনপ্রাণ খুলে গাইতে শুরু করো। তবে আমি বাইরে তোমার অপেক্ষায় থাকবো।' কাঁদতে কাঁদতে বললো বিজলী।

বোলা উচ্চৈঃস্বরে গাইতে শুরু করলো। তবে তার আগেই বিজলী দ্রুত কেটে পড়লো। এদিকে গান শুনে জেগে ওঠলো পাহারাদার। তার নির্দিষ্ট লাঠি নিয়ে চুপিচুপি এগিয়ে এসে আচ্ছা পিটুনি লাগালো বোলাকে। শান্ত করে দিলো ওর গানের গলা! আচ্ছামতো মার খেয়ে আধমরা হয়ে পড়ে রইলো বোলা।

বিজলী তখনও অপেক্ষা করছে বোলার জন্য। সকাল হবে হবে_ এমন সময় জ্ঞান ফিরে পেয়ে কাতরাতে কাতরাতে বাগান থেকে বের হলো বোলা। গেটের সামনে এসেই দেখা পেলো বিজলীর।
'স্বাগতম বন্ধু, তুমি তোমার গানের উত্তম পুরস্কার পেয়েছো নিশ্চয়ই' -বললো বিজলী।

'আমাকে আর লজ্জা দিও না। তোমার কথা না শোনাতেই আমার এ অবস্থা। আমি খুবই লজ্জিত বন্ধু।' _নতমুখে জবাব দিলো বোলা।
এরপর কী হলো?

খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বাড়ি ফিরলো গায়ক গাধা। আর চালাক শিয়াল হেলে-দুলে বাসার দিকে চলে গেলো।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×