ছোট্ট বেলার সেই ঈদ
হঠাত কেউ চিতকার করে উঠত ঐযে চাঁদ দেখা যাচ্ছে। বুকের মধ্যে যেন ঢেঁকির পাড় পড়ত। ব্যাকুল হয়ে চাঁদকে খুঁজতাম।মেঘের ভাজে ভাজে চোখ ভেসে বেড়াত। বড়রা চাঁদ দেখে ফেলত। তাদের আঙ্গুলের মাথায় তাকিয়ে একসময় আমরা ছোটরাও চাঁদ মামার দেখা পেতাম। বুকের মধ্যে খুশীর হিল্লোল বয়ে যেত। অজানা আনন্দে মনের মধ্যে খুশীর ঢেউ। তারপর শুরু হয়ে যেত বড়দের সালাম করা। সে এক মহা আনন্দের ব্যাপার। বড়দের পা ছুঁয়ে সালাম করে তাদের কাছে দোয়া চাওয়া।সবকিছু কেমন যেন বদলে গেছে। এখনকার দিনে দোয়া চাওয়া তো দূরে থাক, শিশুরা চাদের খোঁজই রাখেনা। ইদের নতুন কাপড়টাই যেন শুধু তাদের ইদ। দাদীজানকে দেখতাম, নতুন ইদের চাঁদ দেখে কপালে বুকে হাত ছুয়ে সালাম করতে। আমরা বলতাম দাদিজান এটা করেন কেন, এটা তো শিরক। তখন অবশ্য শিরক কি জিনিস তা খুব ভালো বুঝতাম বলে মনে হত না। কিন্তু মসজিদের হুজুরের বয়ান শুনে মাঝে মাঝে আমিও প্রিচিত মহলে ফতওয়া ঝেড়ে দিতাম। চাঁদকে সালাম দিলে কেন শিরক হবে এটা নিয়ে দাদীজানের মাথা ব্যাথা ছিলনা। ছোটকাল থেকে মা চাচীদের তিনি দেখে এসেছেন ইদের নতুন চাঁদকে সালাম দিতে, তাই তিনিও দেন।বড় হয়ে বুঝেছি, বহুদিনের লালিত ব্যাপারগুলো যুক্তি দিয়ে হার মানানো যায় না। মানুষ অভ্যাষের দাস, মানুষ বিশ্বাসেরও দাস।
ফজরের আজান দিত। লেপের তলা থেকে মুখ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করতাম, গোসল করার সময় হল কিনা। মা বকা দিতেন। বলত ঘুমা। এখনও মেলা রাত। নামাজ শেষে অয়জদ্দি মামা মসজিদের মাইক নিয়ে বসে যান। ইদ মোবারক ইদ মোবারক বলতে থাকেন। আর কি বসে থাকা যায় লেপের ভিতর! ভালো করে আলো ফোটার আগেই বাইরে চলে আসতাম। বলে রাখি ছোটকাল থেকে আমরা ইদ করতে গ্রামের বাড়ী চলে আসি। আমার নানা বাড়ী দাদা বাড়ী একই গ্রামে। তাই ইদের আনন্দ হত ডাবল মজা নিয়ে।প্রতিটি বাড়ীর মেয়ে শিশুরা নিজ নিজ বাড়ীর সামনের রাস্তা ঝাড়ু দিতে শুরু করে। এওকজন আরেক জনের সাথে পাল্লা দেয় কে কার আগে ঝাড়ু দেওয়া শেষ করতে পারে। আমরা যারা একটু বড় তাদের বসিয়ে দেওয়া হয় নারিকেল ভাংতে। এই কাজটা আমাকে করতেই হত। ইদের সকালটা আমি কাটাই নানা বাড়ির উঠানে। আগের দিনেই গোবার মাতি দিয়ে ঝকঝকে তকতকে করে বাড়ির উঠোন নিকোনো হয়। সব কিছু সাফসুতরো করে রাখায় সজীব একটা অনুভব থাকে প্রকৃতির মাঝে।
তখনো মামাদের বিয়ে হয় নাই। নানী ব্যস্ত চুলার পিঠে। সেমাই পায়েস রান্না হচ্ছে। বাতাসে মিষ্টি গন্ধ ভাসছে। এখানে নানীর মুখে শোনা একটা গল্প বলি। সময়টা বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার কিছুকাল পরের। তখন গ্রামদেশে মানুষ সেমাই কি জানত না। ইদের সকালে হাঁড়ি ভরে গুড়ের পায়েস রান্না করা হত। হাটে সেমাই পাওয়া যেত না। খুলনা শহর থেকে সেমাই আনা লাগত। ইচ্ছে করলেই খুলনা যাওয়া যেত না। গহনার নৌকায় করে যেতে দুইদিন লেগে যেত। তাহলে সেই সেমাই খাওয়ার মজা কত আনন্দের ছিল। মা খালাদের সেই সেমাই খাওয়ার গল্প শুনলে আমি রীতিমত আবেগে আপ্লুত হয়ে যাই। এখন সেমাই কি সাধারন খাবার আমার কাছে। খেতেই ইচ্ছে করে না মাঝে মাঝে। আর একসময় গ্রাম দেশে এই সেমাই খাওয়ার জন্য কত না তরুন মন ইদের অপেক্ষায় থাকত। ইদ কেন হবেনা তাদের জন্য আনন্দের।কোন কিছুর জন্য অপেক্ষা করে থেকে সেটা হাতে পাওয়ার চেয়ে আনন্দের আর কিছুই হতে পারেনা। নানী বলেন তারপর সেমাই রান্না করতেন। যারা কম সেমাই রাঁধত তারা চুপি চুপি রাঁধত। পাড়ার দুষ্ট ছেলেরা খোঁজে থাকত কোন বাড়ি সেমাই রান্না হত। দলবেঁধে হাজির হত সেই বাড়ি।
ফিরে আসি আমার গল্পে। গামছা কাঁধে ফেলে আমরা হাজির হয়ে যাই পুকুরঘাটে। হিমশীতল পানিতে ঝঁপাস করে ঝাঁপিয়ে পড়ি।অন্যদিন তো পানিতেই নামতে চাইনা। আজ পুকুরের পানি ঘুলিয়ে দই এর রঙ করে তুলি।খালা আমাকে তুলতে না পেরে রাগ করে মা কে ডেকে আনেন, “বু তোর ছাওয়াল তোল……………।” মা পাড়ে দাঁড়িয়ে বকতে থাকেন। ইদের আনন্দে শীত পালিয়ে যায়। শরীর থেকে ধূয়া উঠতে থাকে। পুকুর থেকে ওঠার পর হিড়হিড় করে কাঁপতে থাকি। মা জোরে গা মুছে দেন।
এবার সাজার পালা। এদের জন্য তো নতুন জামা কাপড় কেনা চাইই চাই। বাবা মার কোন যুক্তি সেখানে খাটত না। যেমন করেই হোক দিতে হবে। সেই কাপড় কিন্তু আগে পরতাম না। ইদের দিন ভাজ ভেঙ্গে পরতাম নতুন জামা। কেমন যেন একটা নতুন নতুন গন্ধ বেরুতে থাকে।মাঝে অবশ্য সালামি পাওয়া হয়ে যায়। মেঝ কাকার সাথে ইদের মাঠে চলতাম। রোজার ইদ হলে দাদা বাড়ি থেকে সেমাই খেয়ে নিতে হত। ইদের নামাজ পড়তে যেতে হলে বাড়ি থেকে মাদুর সাথে নিয়ে যেতে হত। এখনকার মত আর চট বিছিয়ে রাখা হত না। ফসল কাটার পর যখন ইদ হত তখন মাঠে বসত ইদের বাজার। বাঁশির প্যাঁ পূঁ শব্দে মুখ্র হয়ে থাকে সেই দিক। বালিকারা ব্যস্ত কাঁচের চুরির দোকানে, বালকের ব্যস্ত প্লাস্টিকের বন্দুক, চশমার দোকানে।বিন্দুক কেনা হলে সেটা দিয়ে বন্ধুদের সাথে একটু ইয়া ঢিসু ঢিসু খেলে নিচ্ছে জসীম স্টাইলে। কুটুকুটু বাচ্চা বাবার কাছে আবদার জুড়েছে বেলুন কিনে দিতে হবে।
ইদগাহে ছোট একটা ছামিয়ানা টাঙ্গানো হয়। ইমাম সাহেব আর গ্রামের মাতবর টাইপের লোকেরা বসে তার নিচে। মেঝ কাকা কাতারের যেখানে ফাঁকা থাকে সেখানে মাদুর বিছয়ে নেন। বড় মাদুর। অনেকের বসার জায়গা হয়ে যায়। যারা মাদুর আনেনা তারাও বসার সুযোগ পায়।ইমাম ভাষণ দিতে থাকেন।রোজা যারা না রাখে তাদের জন্য এই ইদ নয়।যারা ইচ্ছে করে রোজা রাখে না আল্লাহ তাদেরকে ইদ গাহে আসতে নিষেধ করেছেন। মনে হালকা ভয় করে। আমি তো সব রোজা রাখি নাই।সবাই এক সাথে দাড়িয়ে নামাজ পড়তাম। নামাজ শেষে ইমাম খুতবা দিতে দাঁড়িয়ে যান। রৌদ্র তেতে ওঠে। পিঠ জ্বালা করে। একসময় মোনাজাত করা হয়। তখন আরো আনন্দ। সবাই মিলে ছুটি ইদের বাজারে। বাচ্চারা তো আগেই শুরু করে দিয়েছিল। বড়রা এখন মিষ্টি কেনায় ব্যস্ত।
সবাই এবার বাড়ির পথ ধরে। বিল দিয়ে গেলে পথ কম হয়। আমরা বিল দিয়ে হাঁটা শুরু করি। তারপর এই বাড়ি ওই বাড়ি ঘুরে ইদের সেমাই খেতে খেতে দুপুর হয়ে যায়।
সামনে ইদ। আমরা আবারো গ্রামে যাচ্ছি ইদ করতে। পাবকি ফিরে সেই ছোট বেলার ইদ আনন্দ ফিরে। সেই গ্রাম তো প্রায় আগের মতই আছে। এখন বড় হয়ে গেছি। কেউ আর আমাকে সালামী দেয় না। ইদের আনন্দ হবে কি করে বলো!
ইদ মোবারক সবাইকে।
মসজিদ না কী মার্কেট!
চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷
আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন
সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?
,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন
আকুতি
দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন
ক- এর নুডুলস
অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।
ক
একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু
২-১ : আলিফ-লাম-মীম
আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন