somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিপাহী বিদ্রোহ কখনো সফল হয়নি!

০৩ রা মে, ২০০৯ ভোর ৫:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মহারাজ: যদি আমি কোন জেনারেলকে প্রজাপতির মত ফুলে ফুলে উড়ে বেড়াতে বা একটা বিয়োগান্তক নাট্য রচনা করতে অথবা গাংচিল হতে বলি, এবং সে জেনারেল যদি সেটা না পারে, তবে সেটা কার দোষ? আমার না জেনারেলের?
খোকা: আপনার দোষ মহারাজ। সুনিশ্চিৎ জবাব খোকার।
মহারাজ: উত্তর সঠিক। কারো কাছ থেকে শুধু ততটুকুই চাইতে হয় যতটুকু তার দেয়ার ক্ষমতা আছে।

দ্যা লিটল প্রিন্স (খোকাবাবু) বইটা লেখার সময় লেখক বাংলাদেশের জেনারেলদের প্রতিভার পরিচয় পাননি। তাই উপরের সংলাপটি এমন হয়েছে। আজকাল জেনারেলরা গান, কবিতা ছাড়িয়ে বইও লিখছেন! এত প্রতিভাধর জেনারেলরা একটা জায়গায় শুধু ভুল করেন; “কারো কাছ থেকে শুধু ততটুকুই চাইতে হয় যতটুকু তার দেয়ার ক্ষমতা আছে।“ এই ছোট্ট বাণীটি তাদের মনে থাকে না। আর এখান থেকেই সব সিপাহী বিদ্রোহের শুরু।

১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ ভারতের স্বাধীনতার জন্য হয়নি। সিপাহীরা ইংরেজ সরকারের কাছে ভারতের স্বাধীনতা দাবী করেনি। শুকরের চর্বিমাখা গুল্লি দাঁত দিয়ে খুলে বন্দুকে ভরতে হতো, যা ধর্মীয় কারণে অনেকের পক্ষেই মানা সম্ভব ছিল না। আরো অনেক কারণ আছে। সে কথা এখানে আলোচনার প্রয়োজন নেই।
তাদের পরিনতি আমরা জানি। ইংরেজরা চলে গেছে কিন্তু সিপাহীদের অবস্থার কতটুকু পরিবর্তন হয়েছে!

জনৈক জেনারেলের ভাতিজা সর্বশেষ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অবজারভার পড়েন। জেনারেল হতে হলে ইংরেজী জানা খুব জরুরী। কারণ এখন উর্দুতে বাইনচোদ চলে না, ইংরেজীতে বাস্টার্ড, ব্লাডি-সিভিলিয়ান বলতে হয়। তো সেই জেনারেল ভাতিজা রিকসাওয়ালা ফারুককে সদরে পাঠিয়েছে ইংরেজী পত্রিকা আনতে। রিক্সা রাস্তার ঢালুতে নামার সময় ফারুক ব্রেক কসে রিক্সা থামাতে গিয়ে হাত থেকে পত্রিকা পড়ে যায়। ভূ- এবং ধুলুন্ঠিত পত্রিকার দিকে তাকিয়ে জেনারেল ভাতিজার মেজাজ প্রাক- থেকে পোষ্ট জেনারেলে উন্নিত হয়। থাপ্পর দিতে হাত তুলতেই, ফারুক চেহারাটা এমন করল যাতে জেনারেল ভাতিজা চড়টা খুব সহজে দিতে পারে।
ফারুকদের এভাবেই বেঁচে থাকতে হয়। বেঁচে থাকে। কিন্তু কত দিন?
বরাগ বাঁশের গোড়ায় বরাগ বাঁশ গজানোর মত, জেনারেল ভাতিজা কমিশনের ট্রেনিং শেষে, বিশেষ ভঙ্গীতে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ে আর ইংরেজীতে বক্তৃতা দেয়। অনেক ভারী কথার ফাঁকে জানালেন যে, এমনকি ছুটিতে এসেও একজন সাধারণ সিপাহীর সাথে কথা বলা সদ্য কমিশন প্রাপ্ত একজন অফিসারের নিষেধ!

কোন রকম দস্তখত দিতে পারে, এই বিদ্যা নিয়ে, কখনো রিক্সাচালক কখনো ক্ষেতমজুর ফারুকরা একটা স্থায়ী সরকারী চাকুরীর আশায় টাউন হল ময়দানে লাইনে দাড়িয়ে গেল।
রিক্সাচালক ফারুক অনেকদিন পরে রেশনের মালপত্র নিয়ে বাড়ি এল। বিডিআর ফারুকের মায়ের অহংকার দেখে কে! বাড়িতে একটা উৎসব হয়ে গেল।

সিপাহী আর জেনারেলরা এমনই হয়। তাদের সামাজিক এবং আর্থিক অবস্থান ধর্মে “ভাগ্যের ভাল-মন্দে বিশ্বাসের মত”।
সেনাবাহিনীতে ধর্মকে খুব গুরুত্ব দেয়া হয়। সে জন্যই কোন হিন্দু জেনারেল আমাদের সেনাবাহিনীতে নেই।
ভাগ্য নিয়ে মানুষকে জন্মাতে হয়। সেটা অর্জনের বিষয় নয়। কিন্তু যে কারণে বা শিক্ষার গুনে জেনারেল হওয়া যায়, সে গুনাবলী ফারুকের চেয়ে অনেক শিক্ষিত বিডিআর সেলিম ভাই বহু পড়ালেখা করেও অর্জন করতে পারেন নি। অভিজাত্য রক্ষার কারনেই সাধারন সৈনিকদের উচ্চপদে আরোহনের বিধান রাখা হয় নি। ব্রিটিশ আমলে অফিসার ছিল ইংরেজ, পাকিস্তান আমলে ফাকি, স্বাধীন দেশে একটা বিশেষ সম্ভ্রান্ত শ্রেণী বিডিআর-এর অফিসার। প্রভু-ভৃত্তের সম্পর্ক আর কাকে বলে! ধর্মে পাপের প্রায়শ্চিত্ত আছে, সেনাবাহিনীতে অফিসারের ছেলে-মেয়ের ফুট-ফর্মাসে পান থেকে চুন খসলেও সিপাহীদের প্রায়শ্চিত্ত নেই। বিদ্রোহতো বিডিআর করেছে, সেনাবাহিনীর সদস্য কেন বলে: “এদের (অফিসারদের) তামুক কাটা করা দরকার!

বিশেষ প্রয়োজনে সব রাজারাই নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী তৈরী করে। আহাম্মক রাজা-রাণীরা একটা নতুন বাহিনী গঠনের ঝামেলা পোহাবে, কিন্তু বিডিআরদের কোন কাজে লাগাবে না। তাদের সমস্যা শোনা বা সমাধান করাতো পরের কথা। এদের উন্নতি বা উচ্চতর প্রশিক্ষনের কথা না হয় বাদই দিলাম। ডাল-ভাতের অভাবেই যেখানে ভিক্ষা চাইতে হয়। অথচ বিএসেফ এর গুলিতে এই বিডিআররাই মরে।

সেনাবাহীনির কাছে আমাদের ঋণ অপরিসীম। যা কখনো শেষ হবার নয়। গান, কবিতা এবং বই লিখে তারা আমাদের সাহিত্যকে সবুজ করে চলেছেন। বিদেশী শত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষার জন্য প্রতিদিন কাতারে কাতারে সৈন্য শহীদ হয়েছেন। এবং এরা সবাই অফিসার। ১৯৭১ থেকে পৃথিবীর পথে পথে তারা আমাদের দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করে চলেছেন। এমনকি তারা শান্তি পর্যন্ত বজায় রাখতে পারে। আভ্যন্তরিন বিষয়ে যখন জাতি সংকটে পড়ে, সেনাবাহিনী তাতে ঝাপ দেয়। তাতে জাতির পিতার প্রাণনাশ হলেও তারা পিছপা হয় না। জনগনের মুল্যবান অর্থ বাঁচাতে তারা নির্বাচনের মত একটা ব্যায়বহুল ব্যাবস্থা ফরমান জারি করে বাতিল করে দেয়। সময় এবং পরিস্থিতির কারনে রাজনৈতিক দল গঠন করে। সেনাবাহিনী এমন দুটি দল আমাদের উপহার দিয়েছে। সেনাবাহিনী আমাদের ৩৭ বছরের স্বাধীনতায় প্রায় ৩০ বছর ক্ষমতায় থেকে দেশ ও জাতির গনতান্ত্রিক অধিকারকে ব্যারাকে জমা রেখেছেন। সময় মত তা শুধে-আসলে ফেরৎ দেবেন। কাজেই আমি একজন কৃতজ্ঞ বাঙ্গালী হিসাবে সেনাবাহিনীকে খুব দরকারী মনে করি। আমাদের থালায় খেয়ে কান্দায় হাগে এমন একটা সেনাবাহিনী না থাকলে আমাদের রক্তচুষে উচ্চরক্তচাপ থেকে রক্ষা করবে কে!

“কারো কাছ থেকে শুধু ততটুকুই চাইতে হয় যতটুকু তার দেয়ার ক্ষমতা আছে।“
কাজেই উপরের কথাটা ভুলে গিয়ে সেনাবাহিনী যদি সিপাহী এবং বিডিআরদের মানুষ মনে না করে তাহলে সেটারও ফজিলত আছে। কারণ পৃথিবীর অন্যসব প্রণী তৈরী হয়েছে সেনা বাহিনীর সেবার জন্য। এই কথা ভুলে গেলে চলবে না।

ক্ষমতা নির্ভর করে বিচক্ষনতার উপর। ক্ষমতায় থাকতে হলে সিপাহী বিদ্রোহের (তাও আবার বিডিআরদের) কথা ভাবলে চলে না। সেনা অফিসারদের কথা ভাবতে হবে। সেটা ক্ষমতাসীনদের সমস্যা। এ দেশে উৎপাদনমুখী সেনাবাহিনী গঠন করতে গিয়ে কোন এক কর্নেল প্রাণ দিয়েছেন। তার বিচারের কথা কেউ বলে না। হাতেগোনা কিছুলোক গোটা দেশের সব সুবিধা ভোগ করবে, আর রাইফেল্স স্কোয়ারে হতদরিদ্র বিডিআর ডাল-ভাতের দাবী নিয়ে তাকিয়ে দেখবে; কেমন করে অফিসারের বিবিরা ভোগের বিলাসে ভেসে যাচ্ছে। কে, কাকে করুণা করছে! এমন করুনা ৬০ ভাগ ভূমিহীন লোক আর কতদিন করবে! এবার তাও বিশেষ একটা সংগঠনের কয়েকজনের বলিদানেই সাপ গর্তে আশ্রয় নিয়েছে। অবস্থার আশু পরিবর্তন না হলে, গর্ত থেকে সাপ আবার বের হবে।

কম ক্ষোভে বিডিআর এমন রক্তপিপাসু হয়নি। নিঃশেষে প্রাণ দান করতে যে সাহস লাগে, সেটা তাদের আছে। এর পেছনে অন্য কোন শক্তি বা উৎস খুজতে যাওয়ার মানে তাদের এই সাহসটুকুকে অপমান করা। আর উদ্ভূত পরিস্থিতি অনুধাবন করে তার সমাধানে নিজেদের অযোগ্যতাকে কাপুরুষের মত আড়াল করতে চাওয়া।
কোন বিদ্রোহ কখনো বলি ছাড়া হয়না
এ বিদ্রোহের বলি যেন বৃথা না যায়।
মানুষ মানুষকে শিক্ষা জ্ঞান পদবী বংশ পরিচয় পেশা বা আর্থিক সঙ্গতি দিয়ে বিচার না করে মানুষ হিসাবে দেখতে শিখুক।






সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০০৯ দুপুর ২:৫৮
১৩টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×