somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফল এবং অফলের গল্প

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চাকরীর সুবাদে আমার আফগানিস্থানে থাকা হয়েছে প্রায় তিন বছর। তবে আফগানিদের অন্দরের বৈচিত্রপূর্ণ জীবনযাপন কখনো দেখার বা বোঝার সুযোগ হয়নি ! আফগানের নানা জাতিগোত্রের মাঝে পাশতুন (পাঠান), তাজিক কিংবা হাজারাদের দেখে চিহ্নিত করতে পারলেও কে তুর্কম্যান, কে বালুচ, কে নুরিস্থানি তা বোঝার সক্ষমতাও আমার কখনও হয়নি। তেমনি আফগানিস্তানের জাতীয় খেলা ‘বোজখাশি’ (Goat Pulling বা ঘোড়সওয়ার কতৃক ছাগল/ভেড়া টেনে তোলা) নিজ চোখে দেখা হয়নি। তবে এ নিয়ে আফগান প্রবাদ আমার বেশ মনে আছে। আমাদের গেস্টরুমের বিশাল পাগমানি পাঠান চৌকিদার ক’কা মারুফ চোখ ছোট করে তার স্মৃতি মনে করতে গিয়ে পাশতু, দারী আর উর্দু এই তিন ভাষা মিলিয়ে বলছিলো ‘বোজখাশি’তে ভাল ঘোড়ার উপর খারাপ খেলোয়াড় এর চাইতে, দূর্বল ঘোড়ার উপর ভাল খেলোয়াড় অনেক বেহেতর! বলে রাখা ভালো আফগানিরা কথায় কথায় প্রবাদ বলতে পছন্দ করে।


২০০৯ সালে প্রথমবারের মত ঘর এবং দেশের বাহিরে ঈদ করতে হল কাবুলে। ঈদের নামাজ পড়ার পর ‘সিফাত’ আর ‘রাজ্জাক’ (আমাদের আফগান বাবুর্চি) এর তৈরী করা সেমাই আর মোস্তফা ভাইয়ের রান্না করা ‘অধৃষ্ঠপূর্ব’ পোলাও (এখানে আগে এত কম জেনে পোলাও রান্না করার ধৃষ্ঠতা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে) খেলাম। ঈদের ছুটি যখন শেষ আমাদের আফগান সহকর্মী ‘লাইলুমা জান আফগানি ঐতিহ্যবাহী খাবার ‘মান্তু’ (মাংসের তৈরী) নিয়ে আসলেন। আমি আর মোস্তফা ভাই ‘ডমেস্টিক’ খাবারের আগমনে কিঞ্চিত উত্তেজিত কারণ আমরা এর আগে এই খাবার খাইনি। কিন্তু সাদেক ভাই, হুমায়ুন ভাইয়ের নিরুত্তাপ চোখ দেখে দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে যাই। তবে কি উনাদের ডাক্তারী নিষেধ আছে ‘মান্তু’ খাওয়ায়! একটু পরে আমাদের আরেক কলিগ ‘হাফিজ ভাই’ খাবার টেবিলে এসেই টেবিলে অন্য খাবারের দিকে চোখ দিলেন। একটি দেশের সেরা খাবারের প্রতি সবার একি অবহেলা ! !

ইত্যবসরে মোস্তফা ভাইয়ের চোখের রঙ বদল ঘটেছে; দেখে মনে হলো উনি যে বস্তু মুখে পুরেছেন তা ভেতরে নেবেন না বাইরে ঠেলবেন এই নিয়ে প্রবল দোটানায় পড়েছেন। বলা বাহুল্য ইতোমধ্যে ‘মাস্তু’র প্রতি আমার অদম্য আগ্রহও পুরোপুরি দুরীভূত । মসল্লা বিহনে ‘মান্তু’র এই ধরণীপাত! আমাদের 'স্পাইসি' মাংসের স্বাদে অভ্যস্ত যেকোন লোকের কাছে মসল্লা বিহীন মাংস অনেকটা কাঁচা মাংসের মতো (সত্যিই অমন গন্ধ আসে)। আফগানি অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী খাবারের মাঝে আছে ‘আউশাক’ (গান্দানার এবং অলিভ অয়েলের তৈরী ‘ভেজিটেবল’) আর ‘বুলানী’। ‘বুলানী’ অনেকটা আলু পরোটার আদলে তৈরী হয়। এই বুলানী একমাত্র আফগানী খাবার যা আমরা বাংলাদেশীরা আয়েশ করে খেতাম।

আফগানিস্তানে আঙ্গুর, আপেল বেশ সাধারণ ফল। আতিথেয়তায় বরং মানানসই বেশী ‘কেলা’ (কলা), আম এগুলো! একবার এক চেরাগ (৭ কেজি) আঙ্গুর কিনে ভাবলাম রাতদিন আঙ্গুর খাব। আঙ্গুরের প্রতি এমন টান দেখে সিফাত উপহাস করে। মুখে আঙ্গুর পুরে আমি ভাবী আহারে আমাদের দেশে কত বাহারী ফল। কলা, আম, আমড়া, পেয়ারা, লিচু, কাঠাল, আনারস, জাম, জামরুল, বড়ই, কামরাঙ্গা, তাল, তরমুজ, কদবেল, বেল আরো কত কি! আমরা রোগী দেখতে বা কোন অনুষ্ঠানে গেলে এগুলো নিলে ‘ইমেজ’ সংকটে পড়ি যেমনটা কেউ আফগানে আঙ্গুর আর আপেল নিয়ে পড়ে! সিফাত হয়তো কখনো জানবেইনা মাত্র একটা কাঁঠাল দিয়ে বিশটা মানুষ নাস্তা করতে পারে কিংবা বাংলাদেশে শুধু আম যত প্রকারের আছে পুরো আফগানিস্থানে তত রকমের ফল নাই। বোম্বাই ফজলি, সুরমা ফজলি, আশ্বিন, লেংড়া, লেদা, কলা আম, খিরসাপাত, গোপালভোগ, গোবিন্দ ভোগ, হিমসাগর, আম্রপালি, কাঁচামিঠা, গুটি আরো কত কি!

'হাতের কাছে আরশি নগর
কি দেখতে যাও দিল্লি লাহোর'

সিফাত আমাকে যে শিক্ষাটা দিলো তা হলো আমরা অনেকটা আত্মবিস্মৃত মানুষ যারা নিজেদের সৌন্দর্যগুলোকে অবহেলা করি। আমরা শ্রমিকের ঘামে অর্জিত টাকা দিয়ে lays কিনে খাই। আমরা আপেল আংগুরকে উন্নত ফল মনে করি আর দেশের গুলোকে করি অব-হেলা। আমরা পরশ্রিকাতর হয়ে পড়ছি।
১৯টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×