somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা তবুও বেঁচে আছি। সত্যি বেঁচে আছি।

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১,
আমার দাদার বয়স ৮০ এর উপরে, উনি গত চার দিন ধরে ঢাকার আজমপুর এ Medical College for Women and Hospital এ ভর্তি আছেন। স্ট্রোক করেছেন ,কথা বলতে পারেন না, খেতে পারেন না কিন্তু বুঝতে পারেন সব। আমি উনার বড় নাতি, আমি গেলে উনি কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকেন এবং এরপর কাঁদতে শুরু করেন। আমি যদি বলি,আবার আসব, উনি না বোধক মাথা নাড়েন,যার মানে “ না রে দাদা, আর তো দেখা হবে না রে”। একরকম শূন্যতা ভর করে আমার মাঝে, আমার মনে পরে উনি আমাকে হাঁটে নিয়ে যেতেন, মুরালি, মুরকি এবং নানা প্রকার মিষ্টি কিনে দিতেন, আমি খেতাম পেট ভরে। উনি সুর করে পুঁথি পড়তেন, সোহরাব-রুস্তম এর কাহিনি, অত্যন্ত হৃদয় বিদারক ঘটনা। হারিকেনের আলোয় চাদর মুড়ি দেয়া সেই দাদার ছবি এখনও আমার চোখে ভাসে, আমার মনে হয় এইত সেদিন, অথচ বিশ বছরের অধিক সময় পেরিয়ে গেছে, আমি আকারে বড় হয়ে গেছি। ভুলে গেছি দাদা আমাকে নিয়ে যেতেন কবি গানের আসরে অথবা সান্ধ্য-কালীন কোন দাওয়াতে। গরুর গোস্ত, মোটা চালের ভাত আর খাট্টা - অমৃতের মত লাগত। আমাদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর এ , এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছেনি, নদী থেকে খুব একটা দূরে নয় গ্রামটি। ছোটবেলায় গ্রামের বাড়িতে শুয়ে শুনতাম দূরে কোন স্টিমার এর পোঁ পোঁ আওয়াজ, সেই রাত গুলো এখন মনে হয় কোন দূরবর্তী অর্ধবিস্মৃত স্বপ্ন, এখনও আমাদের বাড়ির উঠানে সন্ধ্যে হলেই জোনাকি পোকারা আলো জ্বালায়, নারকেল গাছে ঝড়ের রাতে এখনও গা ছমছম করা শোঁ শোঁ শব্দ হয়, ঘর গুলির অবস্থা ভাল নয়। যদিও অনেক কিছুই আগের মত আছে কিন্তু সবই যেন বদলে গেছে, আমার দাদা এখন আমাদের আঁকড়ে থাকতে চান আরও কিছুদিন, আর আমি এখন পার করছি জীবনের বেঁধে দেয়া কঠিনতম সময়। আমার দাদা যখন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে , মনে হয় এত অল্প সময় নিয়ে কেন আসা এখানে একটা অনর্থক দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ? উনার জন্য সবাই দোয়া করবেন , আল্লাহপাক যেন উনাকে আরও অনেক বছর সুস্থ রাখেন।
২,
সাভারে যে ঘটনা তাতে আমার উপরের স্ট্যাটাস সময়োচিত নয়, কিন্তু এরপরও লিখলাম, একটি সময় সবার জন্য যে একই বার্তা বয়ে আনে না। যে মেডিকেল এর নাম উপড়ে উল্লেখ করেছি তারা কালো ব্যানারে শোক প্রকাশ করেছে আর ভেতরে নোটিস আছে রক্ত-দানের জন্য । আমি গেলাম রক্ত দিতে, ডাক্তার বললেন, আজকে উনাদের উয়িকলি হলিডে, ওয়ার্কিং ডে-তে রক্ত নেয়া হবে, এখানে আর কি বলা যেতে পারে!! আমি বলতে চাইলাম ভাই আপনারা কালকেও হলিডে-হানিমুন পালন করেন , সমস্যা নাই, রক্ত দেয়ার মানুষ অবশ্যই অনেক আছে এদেশে।পরে ভাবলাম একে বলে লাভটা কি? শুধু মাত্র ফেসবুক ব্যাবহার করে স্বেচ্ছা রক্ত, অর্থ ও অন্যান্য সামগ্রি দানের যে নজির এই প্রজন্ম দেখিয়েছে তা দেখে এত ধ্বংসের মাঝেও আশায় বুক বাঁধতে ইচ্ছা করে। আমাদের ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রি এখন নিজের জেলায় গেছেন নির্বাচনী প্রচারণায়, অর্থ মন্ত্রির কাছে চার হাজার কোটি টাকা ব্যাপার না, অথচ টর্চ আর অক্সিজেন কেনার টাকার জন্য হন্যে হয়ে মেসেজে শেয়ার হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ সাইটে। লিখতে কখনো আমার এতটা কষ্ট হয়নি কিন্তু আজ আমি লিখতে পারছি না , বারে বারে মনে হচ্ছে আমার একটি পা আটকে আছে ইটের কংক্রিটে, হাতের ভিতর দিয়ে রড চলে গেছে। যারা নিজেদের প্রিয়জনদের ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সন্ধানের আশায়, তারা কি তার প্রিয়জনদের ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ? তারা দাঁড়িয়ে আছেন চাপা পরা এক বাংলাদেশের ছবি নিয়ে, বলছেন আমার প্রাণটাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও , নতুবা আমার আধপেটা, অনাহারী শরীরের অভিশাপ বইতে পারবে না, এই অভিশাপ বুকফাটা নিঃশ্বাসের অভিশাপ, আমার দেশমাতা কি তা শুনতে পায় !

৩,
আমি একটা ভিনদেশি সাপ্লাই চেইন এ কাজ করছি যাদের এদেশে একটা অফিস রয়েছে, এরা প্রায় ১০০ এর উপরে ফ্যাক্টরির সাথে কাজ করে , কম দামে পোশাক কিনে বেশি দামে বিক্রি- এই হচ্ছে সারাংশ। আমার সেই বিদেশী সহকর্মী আমাকে গতকালকে বলছিল, “ দিস কাইন্ড অফ ইন্সিডেন্ট বিকামিং নরমাল ইন ইউর কান্ট্রি” এবং সে আরও জিজ্ঞেস করছিল ইফ হি উইল গেট হিজ গুডস অন টাইম। আমার মনে হয়েছিল কেউ একজন ছুরি দিয়ে আমার পিঠ চিড়ে ফেলেছে। সে ঠিকই বলছে , আমরা তো এভাবেই মরি- লঞ্চ ডুবে, হরতালে পিকেটিং এ, আগুনে পুরে, দালান ধসে , এইত আমরা , এইত আমাদের নিয়তি। সোনায় মোড়ানো বাংলা মোদের শ্মশান করেছে কে ? – পাকিস্থানিরা তো নেই এখন । আমি জানতে চাই কে ? কে ? কে?
৪,
কাজের সুবাদে আমার প্রতিনিয়ত ফ্যাক্টরি গুলোতে যেতে হয়, আমি অনেক গুলি কারখানার নাম বলতে পারব যাদের কমপ্লাইয়ান্স (কাজের জন্য সঠিক এবং মানসম্মত মাপকাঠি) ঠিক নেই , কিন্তু কাজের কাজ কিছুই কি হচ্ছে। ইচ্ছে করলেই সরকার এ সকল কারখানা চিহ্নিত করতে পারে এবং ব্যাবস্থা নিতে পারে, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে কিছুই হবে না, আবার দালান ধসবে , দুই দল দুজনকে দায়ি করবে এবং কিছুদিন পরে ভুলে যাবে। তাছাড়া এরা গরিব মানুষ , বিশ হাজার টাকা ধরিয়ে দাও, ঝামেলা শেষ। যে কারখানাটি ধসে গেছে আমি সেখানে কয়েকদিনের মধ্যে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলাম, আজকে আমিও চাপা পরতে পারতাম, যদি পরতাম তাহলে আমার বাবা-মা, স্ত্রী ছাড়া আর কারুর কিছুই হত না, হয়ও না। আমি দুর্বল , তাই এই একটি দোয়া আল্লাহর দরবারে, মৃত্যু অবধারিত। কিন্তু এরকম মৃত্যু যেন আর না আসে, অন্তিম সময়ে কাছের মানুষের যেন একটু স্নেহ – ভালবাসার স্পর্শ পাওয়া যায়। আর যেন শুনতে না হয় , “ দিস কাইন্ড অফ ইন্সিডেন্ট বিকামিং নরমাল ইন ইউর কান্ট্রি”।


০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরূপের সাথে হলো দেখা

লিখেছেন রোকসানা লেইস, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৫



আট এপ্রিলের পর দশ মে আরো একটা প্রাকৃতিক আইকন বিষয় ঘটে গেলো আমার জীবনে এবছর। এমন দারুণ একটা বিষয়ের সাক্ষী হয়ে যাবো ঘরে বসে থেকে ভেবেছি অনেকবার। কিন্তু স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×