somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মরণোত্তর চক্ষুদানঃ চোখ বেঁচে থাক চোখের আলোয়

১৬ ই মার্চ, ২০১০ রাত ১১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মরণোত্তর চক্ষুদান কী
মরণোত্তর চক্ষুদান হলো মৃত্যুর পর কর্নিয়া দান করার জন্য জীবিত অবস্থায় অঙ্গীকার করা। উল্লেখ্য, মৃত্যুর পরও মৃত ব্যক্তির বৈধ অভিভাবকেরাও কর্নিয়া দান করতে পারেন।
কর্নিয়া হলো চোখের সামনের স্বচ্ছ অংশ, যার মাধ্যমে আলো চোখের মধ্যে প্রবেশ করে।

কর্নিয়াজনিত অন্ধত্ব কী?
যদি কোনো কারণে কর্নিয়া অস্বচ্ছ হয়ে যায়, তাহলে ওই চোখে আলো প্রবেশ করতে পারে না। ওই চোখের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। এ অবস্থাকে কর্নিয়াজনিত অন্ধত্ব বলা হয়।
কারণ:  ভিটামিন ‘এ’র অভাব (সাধারণত দুই থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে)
 আঘাত
 কর্নিয়ার সংক্রমণ
 অন্যান্য

বাংলাদেশে কর্নিয়াজনিত অন্ধত্ব
বাংলাদেশে বর্তমানে কর্নিয়াজনিত কারণে অন্ধত্বের সংখ্যা পাঁচ লক্ষাধিক, যার বেশির ভাগ অল্পবয়স্ক। তার মানে, দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা না হলে এরা জীবনের বেশির ভাগ সময় অন্ধ থাকবে।
যদি আমরা ২০২০ সালের মধ্যে সব অন্ধের (কর্নিয়াজনিত) দৃষ্টি ফিরিয়ে আনতে চাই, তাহলে প্রতিবছর ৩০ হাজার কর্নিয়া প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে আমরা পাচ্ছি মাত্র ২০০ থেকে ২৪০টি কর্নিয়া।

মরণোত্তর চক্ষুদান বিষয়ে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি
চোখ দান করার বিষয়ে কোনো ধর্মেই বারণ নেই। মক্কাভিত্তিক ইসলামি ফিকাহ্ একাডেমি বলেছে, ‘মরণোত্তর অঙ্গব্যবচ্ছেদ বা সংস্থাপন শরিয়তবিরোধী নয়। মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি পণ্ডিতেরা ১৯৬৫ সালে এই মর্মে মত প্রকাশ করেন, যেহেতু ইসলাম মানবসেবাকে সর্বোচ্চ প্রধান্য দিয়ে থাকে, সেহেতু মানুষের কল্যাণে মরণোত্তর চক্ষুদান কোনোক্রমেই ইসলামবিরোধী হতে পারে না, বরং ইসলামে একে উৎসাহিত করা হয়েছে। সিরিয়া, মিসর, মরক্কো, তিউনিশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ইত্যাদি দেশে বিশেষ করে আলেমদের অংশগ্রহণে চক্ষুদানের মহৎ ধারা ধীরে ধীরে বিকশিত হচ্ছে। ওআইসি মরণোত্তর চক্ষুদানকে অনুমোদন দিয়েছে।
বৌদ্ধধর্মে চক্ষুদানের সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। খ্রিষ্টধর্মে বা হিন্দুধর্মেও চক্ষুদানের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই।

যারা চোখ দান করতে পারবে
যে কেউ চাইলেই চোখ দান করতে পারে। চোখে ছানি পড়া, হ্রস্ব দৃষ্টি অথবা বয়স—কোনোটাই মরণোত্তর চক্ষুদানের ক্ষেত্রে বাধা নয়।
তবে যেসব ব্যক্তি এইডস, ভাইরাল হেপাটাইটিস, জলাতঙ্ক, সিফিলিস, ধনুষ্টঙ্কার প্রভৃতি রোগের কারণে মৃত্যুবরণ করে, তাদের মরণোত্তর চক্ষুদানের জন্য অনুপযুক্ত ধরা হয়।

চক্ষুদানে চেহারা বিকৃত হবে কি
না। কর্নিয়া সংগ্রহের পর বাহ্যিক চেহারা অপরিবর্তিত থাকবে। শুধু কর্নিয়া সংগ্রহ করে ফাঁকা স্থানে একটি ‘আই ক্যাপ’ বসিয়ে দেওয়া হয়, যা অপরিবর্তিত চেহারা নিশ্চিত করে।

কীভাবে আপনি মরণোত্তর চক্ষুদান করতে পারবেন
সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি কর্তৃক বিতরণকৃত মরণোত্তর চক্ষুদানের অঙ্গীকারপত্র সংগ্রহ করে তা যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে এবং চক্ষু ব্যাংকের ঠিকানায় কার্ডটি পাঠাতে হবে।
পরবর্তী সময়ে অফিস থেকে পাঠানো পকেট ডোনার কার্ড চক্ষুদাতাকে সব সময় নিজের সঙ্গে রাখতে হবে।
মরণোত্তর চক্ষুদানে অঙ্গীকার করা ব্যক্তির মৃত্যুর ছয় ঘণ্টার মধ্যে নিকটস্থ সন্ধানী ইউনিট অথবা সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির জোনে খবর পাঠাতে হবে।

কর্নিয়ার গুণগত মান রক্ষা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় সন্ধানী চক্ষু ব্যাংক
সন্ধানী আন্তর্জাতিক চক্ষু ব্যাংক বর্তমানে সম্পূর্ণ চোখ তোলার পরিবর্তে শুধু কর্নিয়া সংগ্রহ করে থাকে এবং একটি কৃত্রিম কর্নিয়া সংগৃহীত কর্নিয়ার স্থানে স্থাপন করা হয়। এতে চক্ষুদাতার সৌন্দর্যহানি ঘটে না। বর্তমানে সন্ধানী আন্তর্জাতিক চক্ষু ব্যাংকে রয়েছে অত্যাধুনিক লেমিনার এয়ার ফ্লো হুড, আই ব্যাংক কেরাটো এনালাইজার, স্লাইট ল্যাম্প, সেরোলজি মেশিনসহ যন্ত্রপাতি। এখন কর্নিয়া সংরক্ষণ করা হচ্ছে এম কে মিডিয়ায়, যাতে ২৪ ঘণ্টার স্থলে বর্তমানে সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে।
একটি অত্যাধুনিক চক্ষু ব্যাংক সৃষ্টির লক্ষ্যে গ্রিফ কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে কর্নিয়া সংগ্রহ ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্নভাবে সংরক্ষণ করার জন্য ‘আই ব্যাংক টেকনিশিয়ান’ ও ‘আই ডোনেশন কাউন্সিলর’দের হায়দরাবাদে এল ভি প্রসাদ আই ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি ও সন্ধানী আন্তর্জাতিক চক্ষু ব্যাংক
একটি অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ১৯৮৪ সালে যাত্রা শুরু করেছিল মরণোত্তর চক্ষুদান সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং দৃষ্টিহীনকে দৃষ্টি ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে। তার পর থেকে সন্ধানী তার সবটুকু ভালোবাসা অন্ধ মানুষের জন্য বিলিয়ে দিয়ে আজ সমগ্র মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত একটি মানবদরদি সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এরই স্বীকৃতিস্বরূপ ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’সহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে সংগঠনটি। কয়েক মাস আগে সন্ধানী দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে নিজের যোগ্যতায়। হয়েছে আন্তর্জাতিক চক্ষু ফেডারেশন ও টিস্যু ব্যাংকের (আইএফইটিবি) স্থায়ী সদস্য। এর আগেও দেশের সীমানা পেরিয়েছে, তবে বর্তমানের সম্মানটুকু একেবারেই আলাদা করে দেখার মতো।
এই বিরল অর্জনটুকুর জন্য সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির প্রতিটি নিবেদিতপ্রাণ কর্মীর নিরলস প্রচেষ্টা ও দৃঢ় মনোবল ছিল প্রধান প্রভাবক।
সন্ধানী আন্তর্জাতিক চক্ষু ব্যাংক ইতিমধ্যে ‘আই ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া’র সদস্যপদ এবং ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব আই অ্যান্ড টিস্যু ব্যাংকের (আইএফইটিবি) স্থায়ী সদস্যপদ লাভ করে। সন্ধানী আন্তর্জাতিক চক্ষু ব্যাংককে স্থায়ী সদস্যপদ দেওয়ার লক্ষ্যে গত বছরের ৫ মে আইএফইটিবির সহসভাপতিসহ দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধিদল চক্ষু ব্যাংকের কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কি না, তা সরেজমিনে পরিদর্শন করে যান।

কর্নিয়া সংগ্রহে বাধা
আমাদের দেশে কর্নিয়া সংগ্রহে যেসব বাধা রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো:
সচেতনতার অভাব, ধর্মীয় ভুল ব্যাখ্যা, আইনি জটিলতা।

মৃত্যুর ছয় ঘন্টার মধ্যে কেবল কর্নিয়াটুকু সংগ্রহ করে একজন দৃষ্টিহীনের চোখে প্রতিস্থাপন করা হয়। মরণোত্তর চক্ষুদানের মাধ্যমে কর্নিয়া সংযোজনে কোনো ধর্মীয় বাধা নেই।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×