somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইভটিজিংকে উৎসাহ নয়

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানবদেহের কোনো ক্ষত-যন্ত্রণা বৃদ্ধি পেলে মানুষ তার দ্রুত চিকিৎসার চেষ্টা করে, যেন তার বৃদ্ধি ঘটতে না পারে, অন্যথায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কষ্ট-যন্ত্রণার মাত্রাও বৃদ্ধি পাবে। বিভিন্ন চিকিৎসায় কাজ না হলে সেই ক্ষতটি গ্যাংগ্রীন-এ পরিণত হয়ে সারাদেহে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিলে শেষ পর্যন্ত দক্ষ চিকিৎসকের পরামর্শে মানুষ তার দেহের আক্রান্ত অংশটি কেটে ফেলতেও দ্বিধা করে না। কারণ, তারপরও যন্ত্রণামুক্ত হয়ে অবশিষ্ট সুস্থ দেহ নিয়ে সে বেঁচে থাকতে চায়। এদিক থেকে আমাদের সমাজ দেহে আজ অন্যান্য যন্ত্রণাদায়ক মারাত্মক ব্যাধির পাশাপাশি ইভটিজিং ব্যাধির ক্রমবর্ধমান যন্ত্রণা যেভাবে জাতির দেহসত্তাকে তছনছ করে দিচ্ছে এর ফলে যেভাবে সমাজের যুবতী নারীরা বিশেষ করে শিক্ষাঙ্গনের ছাত্রীরা নারী উত্ত্যক্তকারীদের হাতে নির্যাতিত ও সম্ভ্রম হারাচ্ছে, এমনকি কোথাও কোথাও এতে বাধাদানকারী তাদের মা-বাবা, খালা, দাদী-নানীরাও প্রাণ হারাচ্ছে, তাতে গোটা সমাজ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। কারণ প্রতিদিনই ভোরে সংবাদপত্রের পাতা উল্টাতেই দেশের কোনো না কোনো এলাকায় যুবতী মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা ও তাদের সম্ভ্রম বিনষ্টের এক বা একাধিক খবর পাওয়াই যাবে। পাওয়া যাবে কু-প্রস্তাবে কোনো মেয়ে রাজি না হলে, হয় তাকে গুন্ডা বখাটেরা দলবল নিয়ে হত্যা করেছে বা এসিড মেরে তার চেহারা শরীর বিকৃত করে ফেলেছে কিংবা ধর্ষণ করে হত্যা করে রেখে চলে গেছে। আর কিছু না হোক হুমকি ধমকি দিয়ে তার ঘর থেকে বের হওয়া, শিক্ষাস্থলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ইভটিজিংয়ের দৌরাত্ম্য কি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে, তা গত কয়েক মাসের সংবাদ পত্রের পাতা উল্টালেই দেখা যাবে। এছাড়া নানা কারণে ও ভয়-লজ্জার দরুন এরূপ আরো কত সংবাদ যে অপ্রকাশিত থাকে তার কোনো সীমা নেই। ইভটিজিংয়ের ক্রমবর্ধমান এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে যেখানে তা রোধে দেশের প্রধান কর্তব্য হলো এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং ইভটিজিংসহ এ জাতীয় আপত্তিকর ঘটনাবলীর কার্যকারণসমূহ দেশ থেকে উচ্ছেদে সচেষ্ট হওয়া। কিন্তু তা না করে সরকার কর্তৃক ইভটিজিংয়ের ব্যাপারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্মতি বা উসকানিমূলক অনুসৃত ভূমিকা, গোটা জাতিকে আলোড়িত ও ক্ষুব্ধ করে তুলেছে।
গত ১০ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ভারতের শিল্পী শাহরুখ খানের লাইভ কনসার্ট অনুষ্ঠানে অশ্লীল নাচ-গানের আয়োজনকে সমাজের সকল স্তরের সচেতন রুচিবান মানুষ এদেশের সমাজ দেহের দুষ্টক্ষত ইভটিজিংকে আরো উসকিয়ে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়েদা লুটার লক্ষ্যে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্নদিকে ফিরাবার ষড়যন্ত্র মনে করে, তেমনি তারা এ ঘটনাকে সরকারের ছত্রছায়ায় এদেশ থেকে ইসলামী শিক্ষা সংস্কৃতি নির্মূলের মূল ষড়যন্ত্রের আরেকটি অংশ বলেও মনে করে। আমাদের বিশ্বাস তাদের এই মনে করার পেছনে যথেষ্ট যুক্তিও রয়েছে। কেননা, মাত্র কিছুদিন আগে সম্পূর্ণ অকল্পনীয় ঘটনা হিসাবে দেশের শীর্ষপর্যায়ের ইসলামী প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশনে খোদ মসজিদের প্রশিক্ষণরত ইমামদের সামনে অশ্লীল নারী নৃত্য অনুষ্ঠানের জন্য ইফার ডিজিকে অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে যখন সারাদেশ উত্তপ্ত, ঠিক সেই মুহূর্তে ভারতীয় শিল্পীদের দ্বারা আরেকটি অশ্লীল নৃত্যানুষ্ঠান, মূলত দেশবাসীর এ প্রতিবাদকে বৃদ্ধাঙ্গুল প্রদর্শনেরই নামান্তর ছাড়া আর কি হতে পারে?
সরকার সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জানা উচিত, একটি জাতির আসল পতন তার রণাঙ্গনে ঘটে না, ঘটে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পরাজয়ে। আমাদের মুসলিম ঐতিহ্যবাহী এদেশে এমনিতেই এর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন থেকে ভারতীয় অপসংস্কৃতির ষড়যন্ত্রমূলক আগ্রাসন নেপথ্যে সক্রিয় রয়েছে, যার পরিণতিতে আজ আমাদের স্বকীয়তা এক নাজুক অবস্থার সম্মুখীন, এছাড়া ভৌগোলিক সীমান্তের ন্যায় আমাদের সাংস্কৃতিক সীমান্ত সম্পূর্ণ উন্মুক্ত, এই পরিস্থিতিতে আমরা এহেন অপসংস্কৃতিকে যদি নির্লজ্জের মতো এভাবে স্বাগত জানাতে থাকি, তাহলে এটা যে, সার্বিক দিক থেকে আমাদের জন্যে দ্রুত আত্মহননের কাজ করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পৃথিবীর ছোটবড় সকল জাতিই নিজ জীবনবোধ কেন্দ্রিক কৃষ্টি-সংস্কৃতি লালন করতে যত্নবান, সেক্ষেত্রে আমাদের কি হলো যে, আমরা তার পরোয়া না করে বিদেশী অপসংস্কৃতিকে এভাবে স্বাগত জানিয়ে নিজেদের আত্মঘাতী পথে ঠেলে দিচ্ছি? দেশ জাতি ধর্মের ইচ্ছা বিরোধী বিজাতীয় অপসংস্কৃতির দুর্গন্ধে এবং তার অকল্যাণকারিতায় জাতি যেখানে অতিষ্ঠ সেক্ষেত্রে প্রাণঘাতি ব্যাধি এইডসবাহীরূপে পরিচিত ভারতীয় এহেন অপসংস্কৃতির অনুষ্ঠান আয়োজনের আমরা নিন্দাই করি না, যারা এর আয়োজক-উদ্যোক্তা, সেসব উৎসাহীর উপযুক্ত শাস্তিও আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×