somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘মাই নেম ইজ সুলতান’ ‘ঢাকার কিং’ ‘বস্তির বাদশাহ’ ... এরা আসলে আমাদের কি দিচ্ছে?

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘মাই নেম ইজ সুলতান’ ‘ঢাকার কিং’ ‘বস্তির বাদশাহ’ আমাদের সিনেমা জগতে এমন আরও অসংখ্য চকচকে নাম খুঁজলে পাওয়া যাবে। প্রশ্ন হল এইজাতীয় বাহারি নামের সিনেমাগুলো আমাদের সমাজকে প্রতিনিয়ত কি উপহার দিচ্ছে?

একথা অনস্বীকার্য যে গুটিকতক সিনেমা বাদে বাকি প্রায় সবগুলোরই দর্শক নিম্নবিত্তের মানুষেরা। আরও নির্দিষ্ট করে বললে পোশাক স্রমিক, রিকশাওয়ালা, দিনমজুর এরাই মূলত আমাদের চলচ্চিত্রের প্রযোজকদের মূল ভরসা। এদের মাঝেও মূলত তরুণ এবং যুবা শ্রেণীর লোকদের আনাগোনাই সিনামা হলগুলোতে বেশি। এখানে উল্লেখ্য যে কোনভাবেই এই পেশাগোষ্ঠীর মানুষকে ব্যঙ্গ করার অভিলাষ নিয়ে আমি লিখতে বসিনি। আগের কথায় ফিরে আসি, উপরে উল্লেখিত সিনেমাগুলো দেখলে এ প্রজন্মের বাংলা সিনেমার রাজপুত্তুর শাকিব খানকে আপনি পাবেন বিভিন্ন রুপে। সারা শরীরে উল্কি আঁকা স্টিকার লাগানো, কানে দুল, হাতে গোটা কয়েক ব্রেসলেট, কপালের ওপর আমেরিকার পতাকা বা অন্য কোন স্কার্ফ ফোল্ড করে পট্টির মত করে বাঁধা। তাকে বা অন্য কোন নায়ক, সহনায়কদেরকে আপনি আবিষ্কার করবেন মেয়েদের সাথে রাস্তাঘাট, স্কুল কলেজের সামনে ফ্লার্ট ( অন্য নামে বললে ইভ টিজিং) করতে। প্রায় সব সিনেমায় ভিলেনদের উদ্দেশ্যে চটকদার শ্রুতিকটু ডায়লগ দিতে, বাহারি স্টাইলে সিগারেট ফুঁকতে, মোটরবাইক চালাতে দেখা যায় আমাদের সিনেমা আইকনদের।

নিম্নবিত্তের প্রতিনিধি আঠারো উনিশ বছর বয়সের একজন মানুষ যখন এইসব কাণ্ড কীর্তি দেখে সিনেমাহল থেকে বের হয় তখন তার মনোজগতে একটা ঋণাত্মক পরিবর্তন অবশম্ভাবি। দু’দিন পর তাকে দেখা যাবে গলায় মোটা চেইন, হাতে কয়েকটা ব্রেসলেট, কানে দুল পরিহিত অবস্থায় পাড়ার চায়ের দোকানে বসে নায়কোচিত ভঙ্গিতে সিগারেট ফুঁকতে। পাশ দিয়ে কোন নারী হেঁটে গেলে সে হেঁড়ে গলায় গান ধরবে ‘চুমকি চলেছে একা পথে...’ । কিছুদিন পর যখন তার রোজগার কুলিয়ে উঠতে পারবে না লাইফ স্টাইলের সাথে তখন আসবে তার মাঝে আরেক পরিবর্তন। ছুরি চাকু বা কোন আগ্নেয়াস্ত্র যোগাড় করে সে শুরু করবে ছিনতাই। এভাবে কিছুদিন চলতে থাকলে তার উপর নজর পড়বে অনেক নেক নজরওয়ালার। নানা মিছিল মিটিঙে ডাক পড়বে তার, আরও লোক সংগ্রহ করার দায়িত্ব পড়বে তার উপর। পাতি নেতাদের সাথে ঘুরে ঘুরে সেই ছেলে ধীরে ধীরে তার ভিতরে তৈরি হতে থাকা ডিলিউশনটাকে কেবল আরও পরিপক্ক রূপ দিবে। তার ডিলিউশন ভুবনে নিজেকে সে আবিষ্কার করবে ‘বস্তির শাহানশাহ’ কিংবা ‘ঢাকার কিং’ হিসেবে।

এখানে আমি একটা ধারাবাহিক পটভূমি তৈরি করে লেখাটাকে এগিয়ে নিয়ে গেছি। বাস্তবে হয়তো আমার লেখার প্রতি লাইন ধরে ঘটনা এগিয়ে যায় না কিন্তু যে ‘সামাজিক বিষক্রিয়া’র কথা আমি বলতে চেয়েছি বাস্তবে তা প্রতিদিন ঘটে চলেছে। আমার মফস্বলে একটা চায়ের দোকানে চা নিয়ে বসলে অথবা সেলুনে চুল কাটাতে গেলে আমি যে তরুণ প্রজন্ম দেখতে পাই তার একটি বড় অংশের কারিগর আমাদের নিম্নমানের, নিম্নরুচির চলচ্চিত্র। অথচ একসময় এই বাংলাদেশে অসাধারণ ছায়াছবি তৈরি হয়েছে, আমাদের দেখে কলকাতার দাদারা কত সিনেমা নকল করেছে অথচ সেই তারাই এখন অটোগ্রাফ, ২২শে শ্রাবণ এসবের মত মানসম্মত সিনেমা উপহার দিচ্ছে। আর আমরা? দিনের পর দিন কেবল পিছিয়েই চলেছি। হলিউড যদি একজন 'আল পাচিনো' উপহার দিয়ে থাকে তবে আমরাও একজন 'হুমায়ূন ফরিদী' পেয়েছিলাম, তারা যদি একজন 'রবার্ট ডি নিরো' কিংবা 'জ্যাক নিকলসন' পেয়ে থাকে তবে আমাদেরও একজন 'রাইসুল ইসলাম আসাদ' আছেন।

জানিনা কবে আমাদের কর্তাব্যক্তিদের বোধোদয় হবে, কবে তারা একটু মনোযোগ দিবে আমাদের চলচ্চিত্রের দিকে! আমি আবার সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে চাই। শুধুমাত্র সিনেপ্লেক্সের মুরগীর খাঁচা টাইপের থিয়েটার না বিশাল বড় বড় আন্তর্জাতিক মানের হলে বসে, ১০০% ছারপোকা মুক্ত পরিবেশে প্রথম শ্রেণীর স্বদেশী সিনেমা দেখতে চাই। জানি নিশ্চয়ই আবার ফিরে আসবে আমাদের রুপালী পর্দার সোনালী দিনগুলো ! সেই ক্ষণের অপেক্ষায় আছি।
১১টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×