somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ই-সিগারেট বা ভেপিং: এমনও ভাবা যেতে পারে!

০৯ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বেশ কিছু দিন যাবত ধূমপানের নতুন ফরমেট ই-সিগারেট বা ভ্যাপিং নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। ইউরোপ, আমেরিকায় এটা নিয়ে নানা ব্যাখা বিশ্লেষণ, আলোচনা-পর্যালোচনা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। আমাদের দেশেও এসব নিয়ে আলোচনা চলছে।

ই-সিগারেট বা ভ্যাপিং আসলে কি
ইলেকট্রনিক সিগারেট বা ই-সিগারেট বা পারসোনাল ভ্যাপোরাইজার হচ্ছে প্রচলিত সিগারেটের একটি আধুনিক বিকল্প। এগুলো সাধারণত লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি দ্বারা চালিত হয় এবং এক ধরণের জলীয় বাষ্প তৈরী করে। এ প্রযুক্তিতে ব্যাটারি অন করার পর এটি একটি হিটিং কয়েলকে উত্তপ্ত করে যাকে এটোমাইজার বলা হয়। কম তাপমাত্রায় এটি একটি বিশেষ ধরণের তরল পদার্থকে বাষ্পীভূত করে যেটিকে সিগারেটের ধোঁয়ার মত মনে হয়। প্রচলিত সিগারেটের মতই এ বাষ্প ধুমপায়ীদের দেয় সিগারেটের তৃপ্তি।



কেন এত আলোচনা?
নতুন এই ডিভাইস নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলছে। চলছে গবেষণাও। কানাডা-নিউজিল্যান্ডের মতো দেশ বৈধ করেছে। ভারত এটাকে নিষিদ্ধ করেছে। নির্দিষ্ট আইন-কানুনের আওতায় উন্নত এসব দেশ অ্যালাউ করছে। ব্রিটেনে এমপিদের বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিষয়ক কমিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে মানুষের শরীরে ৭০০০ ক্ষতিকর রাসয়নিক ঢোকে। কিন্তু ভ্যাপিংয়ে শুধু নিকোটিন থাকে। চাইলে নিকোটিনের মাত্রা কমিয়ে নিতে পারবেন। তাতে ধীরে ধীরে ধূমপানের দীর্ঘ দিনের আসক্তি কমবে। এছাড়াও ভ্যাপিং বা ই-সিগারেট সাধারণ বা তামাকের সিগারেটের থেকে ৯৫ শতাংশ কম ক্ষতিকর। ফলে ই-সিগারেটের ব্যবহার সহজলভ্য হলে, সেটা অনেক মানুষকে তামাকের সিগারেটের ব্যবহার বা ধূমপান থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করবে।

যুক্তরাষ্ট্রে ভেপিং সংক্রান্ত অসুস্থতা বৈশ্বিক ই-সিগারেট খাতে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনেস্ট্রেশন (এফডিএ) পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণে দেখেছে, দেশটিতে এই পরিস্থিতির জন্য ই-সিগারেট দায়ী নয়, বরং ভেপিং যন্ত্রের ভেতর অন্য নেশাজাতীয় ক্ষতিকর দ্রব্য ব্যবহারের কারণেই অসুস্থতার ঘটনা ঘটেছে। যেমন: ভ্যাপিং যন্ত্রের ভেতর একসাথে ভ্যাপিং আর গাজা খাওয়ার কুফল। সাথে আছে কমদামি চায়না ডিভাইস। যার ফলে এমন দূর্ঘটনা ঘটছে।
নিষিদ্ধ করলে কি হবে?

বাংলাদেশে এটা কি বৈধ? উত্তর যদি না হয় তাহলে অভিজাত এলাকার তরুণ ও কর্পোরেট কর্তাদের হাতে যে ডিভাইস সেটা কিভাবে পাওয়া যায়? সরকার এখান থেকে কি কোন রেভিনিউ পায়? যদি না পায় তাহলে অবৈধ পথে আসে। কালোবাজারের আর একটা পথ। কিংবা নিষিদ্ধ করলে ধূমপান আইনের মতো হবে হয়তো। প্রকাশে ধূমপান করলে যেমন জরিমানা। আর বাস্তব!

অর্থাৎ নিষিদ্ধ করলেও এখনকার মতো রাস্তায় পাওয়া যাবে আর অভিজাত এলাকা থেকে শুরু করে সর্বত্র সবার হাতে থাকবে। ই-সিগারেট খাত নিয়ে কাজ করেন এমন বিশেষজ্ঞদের মতে, ভেপিং নিষিদ্ধ করা হলে তা ভালোর বদলে বরং উল্টো ফল দেবে। এতে একদিকে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহারে ঝোঁক বাড়াবে। পাশাপাশি অধিকসংখ্যক ভোক্তা অনিরাপদ ও নিম্নমানের ভেপিংয়ের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারেন। এতে জনস্বাস্থ্য আরও বেশি ঝুঁকিতে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

সমাধান কি?
ইসকুল, কলেজে ওঠার আগেই পাঙ্খা গজানো পোলাপান বিড়ি-গাজায় টান দেয়। কৈশর পেরতে না পেরতেই তারা চেইন স্মোকার। তাতে বছরে বছরে নতুন নতুন ধূমপায়ীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। সেটা কমানোর জন্যই প্রতিবছরই বাজেটে সিগারেটে দাম বাড়ানো হয়। এই মূল্য বৃদ্ধির সুফলও পেয়েছে বাংলাদেশ। গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে’র রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে গত ৮ বছর ২১.৭ শতাংশ ধূমপায়ী হ্রাস পেয়েছে।

অন্যদিকে গেল বছর ১২ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল সংসদে বলেছেন, ‘তামাক পণ্যের উপর পৃথক পৃথকভাবে উচ্চমূল্য ও উচ্চ সম্পূরক শুল্ক হার নির্ধারন করা হয়েছে যা এই উপমহাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।’সরকারের এই সাহসী পদক্ষেপ ম্লান হয়ে যাচ্ছে দেশব্যাপী গড়ে ওঠা অবৈধ সিগারেট উৎপাদন ও বিস্তারকারী চক্রের কারনে। ২০১৮ সালের মে মাসের অর্থমন্ত্রণালয়ের একটি চিঠিতে বলা হয়েছিলো অবৈধ সিগারেটের বাজার ৮০০ থেকে ১০০০ কোটি টাকার। আর এবছর মে মাসের এনবিআরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় অবৈধ সিগারেটের বাজার বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৫০০ কোটি টাকায়। অর্থাৎ মাত্র এক বছরের ব্যবধানে অবৈধ সিগারেটের বাজার বেড়ে গেছে প্রায় ২৫০ শতাংশ। একই রকম ভাবে যদি নিষিদ্ধ করা হয় তাহলে অবৈধ সিগারেট বাজারের মতো একসময় ছড়িয়ে পড়বে ভ্যাপিংয়ের অবৈধ বাজার। সেলক্ষ্যে আধুনিক ও বাস্তবসম্মত রেগুলেশন দরকার।

লাভ কি?

ই-সিগারেট সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকার কারণেই অনেকে হুট করে তা নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এই উদ্যোগে বরং নেতিবাচক ফল আনতে পারে। ধূমপান ছাড়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করে ই-সিগারেট। তা নিষিদ্ধ করা হলে ধূমপান ছাড়ার উদ্যোগে বাধাগ্রস্ত হতে পারে । তাই বাস্তব ও মানসম্মন্ন রেগুলেশনের আওতায় আনলে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমিয়ে মাননীয় প্রধাণমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশের ভিশন পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:১৬
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×