হৃদয়াকাশ
প্রায় দেড়শ বছর আগে ডিরোজিও শিষ্য অক্ষয় কুমার দত্ত সাফল্যের পেছনে ঈশ্বরের ভূমিকাকে অস্বীকার করে একটি সমীকরণ লিখেছিলেন। সমীকরণটি হলো : শ্রম + প্রার্থনা = শস্য, শ্রম = শস্য; অতএব, প্রার্থনা = ০
আজ আমি যে ঘটনাটি লিখবো সেটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ঘটনা। তারপর এটা আমি প্রকাশ করছি এই জন্য যে এটা জেনেও যদি ধর্মাক্রান্তভূতরা আসল সত্যটা বুঝতে পারে।
আমার 'মনের মানুষ'এর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয় যখন সে দুই বিষয়, ইংরেজি ও অঙ্কে ফেল করা দশম শ্রেণির ছাত্রী। তখন আমি তার প্রাইভেট টিউটর হিসেবে নিযুক্ত হই। কিছুদিন পরই আমি বুঝতে পারি মেয়েটির মধ্যে যথেষ্ট এনার্জি আছে, ওকে যদি সঠিক গাইডলাইন দেয়া যায় তাহলে একদিন ফাটাফাটি কিছু করে ফেলতে পারে। শুরু করলাম ওর পেছনে পরিশ্রম। আমি এইচএসসি পাস করার পর থেকেই নাস্তিক। আমার নাস্তিকতার যুক্তি ও কারণ শুনে এবং আমার দেয়া কিছু বই পুস্তক পড়ে অল্প দিনের মধ্যে সেও নাস্তিক হয়ে যায়। ছেড়ে দেয় বোরকা পরা ও নামাজ। এভাবে কাটে এক বছর । দুজনের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর এক বছরের মাথায় এস এস সি পরীক্ষায় সে সবাইকে অবাক করে দিয়ে 'এ গ্রেড' নিয়ে পাস করে।
এরপর আমার পছন্দ মতো একটি কলেজে তাকে ভর্তি করানো হয়। প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ার মতো আহামরি তার রূপ নয়। পরিচয়ের বছর দুয়েকের মাথায় আমরা উপলব্ধি করি আমাদের দুজনকেই দুজনের দরকার। এটা প্রকাশ পাবার পর আমরা মানসিকভাবে কাছাকাছি আসি এবং এক পর্যায়ে দৈহিকভাবে। এভাবে কাটে আরও এক বছর এবং ২০১১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফল বের হয়। আমার নিজের কম্পিউটারে আমি যখন ওর রেজাল্ট দেখি তখন নিজেই বিস্মিত না হয়ে পারি নি। ও পেয়েছে 'এ+' ।
এখন ঘটনার বিশ্লেষণে আসা যাক, এসএসসি পরীক্ষার আগে থেকেই সে নাস্তিক; নামাজ রোযার কোনো ধার ধারে না। এইচএসসি- তে ফার্স্ট ইয়ার পেরোনোর পর আমার সঙ্গে তার ফিজিক্যাল রিলেশন হয় এবং এটা নিয়মিত প্রতি সপ্তাহে একবার করে এখনও চলছে। ইসলামের দৃষ্টিতে যা সর্ম্পূণ ব্যভিচার। কিন্তু যেহেতু আমরা পরস্পরের প্রতি বিশ্বস্ত এবং বিয়ে না করলেও সারাজীবন একসঙ্গে থাকতে মানসিকভাবে প্রস্তুত, তাই এতে আমাদের কোনো অপরাধবোধ নেই। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আল্লা যদি থেকেই থাকে তাহলে সে এটা সহ্য করছে কিভাবে ? শুধু সহ্যই না, তার সাফল্যের সামনে সে কোনোরকম বাধারও সৃষ্টি করছে না। এতে কি মনে হয় না যে, আল্লা নেই ? অথবা থাকলেও মানুষের সাফল্যের পেছনে তার কোনো ভূমিকা নেই। মানুষ পরিশ্রম করলে ফল পাবেই। সে যেই হোক, আর যাই করুক। তাই যদি না হবে তাহলে ইসলামের আল্লা এবং তার নবী হযরত মুহম্মদের এত অপছন্দের হওয়া সত্ত্বেও হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ইহুদিরা এত উন্নতি করছে কিভাবে ? অনেক ক্ষেত্রেই তো এই অমুসলিমদের সাহায্য ছাড়া মুসলিমরা চলতেই পারে না। মুসলমানরা সকাল থেকে রাত্রি যা খায় আর ব্যবহার করে তার প্রায় সবই তো ঐ অমুসলিম বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার। এ থেকেও কি মনে হয় না মানুষের সাফল্যের পেছনে ঈশ্বর বা আল্লা নামক কোনো কাল্পনিক সত্ত্বার কোনো ভূমিকা নেই। হুদাই মানুষ তার কাছে কেঁদে মরে।