somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্রেকিং সিরিজঃ অপারেশন কির্সতং [তিন]

০৭ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ট্রেকিং সিরিজঃ অপারেশন কির্সতং


চার…।



কথন মনে মনে অনেক উত্তেজিত আর খুশি ছিল। এই মাত্র সে একটি নতুন প্ল্যান বানিয়ে ফেলেছে। এখন তার সাথে একজন কে দরকার।তাই সে অনেক রাতে রাইন কে ফোন দেয়।

-রাইন ভাই, ট্রিপ শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ আগে আপনার কোন খ্যাপ আছে? ফ্রি থাকবেন?

-চৌধুরী কখনো ফ্রি থাকে না। কত টাকা দিবা বল। তারপর প্রাইয়োরিটি চিন্তা করে উত্তর দিব।

-আরে ধুর মিয়া ফাজলামো রাখেন। একটা ফাটাফাটি প্ল্যান মাথায় আসছে, ফ্রি থাকলে বলব।

-হুমম…ফ্রি আছি। বল এখন, কি তোমার প্ল্যান।

-ট্রিপের তিন-চার দিন আগেই আমরা দুজন চলে যাব আলীকদম। গুহায় রাত্রি বাস করব। জোস মজা হবে।

-গম্ভীর হয়ে রাইন শুধু বলল, ডান। এখন ফোন রাখি তোমার জন্য মিয়া এই মাত্র ব্যাংক্রাপ্ট হইয়া গেলাম।

-হায়রে পোকার…কালকে ডিটেইল প্ল্যান নিয়ে বসব নে। বাই।

ফোন রেখে সে বসে গেলো ম্যাপ নিয়ে। এতদিন সযত্নে ছাই চাঁপা দিয়ে রাখা রাগ আবার ফুঁসে উঠছে। প্রায় দুই বছর হয়ে গেলো এখনো তার রাগ একটুও কমে নি।আলীকদম মানে ক্ষোভ, অপমান আর অসহায়ত্ব। এখনো সেই ঘটনার কথা মনে পরলে তার হাত-পা থরথর করে কাঁপতে থাকে। প্রতিশোধ নেয়ার সময় চলে আসছে। ব্ল্যাক কফিতে চুমুক দিয়ে আবার ম্যাপে মনসংযোগ করল কথন।

———–****——-



পাঁচ…।



তার পরের কয়েকদিন ঝড়ের বেগে চলে গেল। এক্সপিডিশনে কি কি জিনিস যাবে, কি কি লাগতে পারে? তাঁবু নেয়া হবে কি হবে না, নিলেও কয়টা? তাঁবুর এই অতিরিক্ত ওজন ক্যরী করা টা বোকামী হবে কিনা? শুকনা খাবার কি কি নিতে হবে? ইত্যাদি নিয়ে প্রতিদিন আলোচনা আর ঝগড়া চলত। কোন রুটে যাওয়া হচ্ছে, বিপদ কি কি থাকতে পারে, এসব নিয়ে প্রতিদিন রাহাত সবার কান পড়া দিত।

এক্সপিডিশন শুরু হতে আর বেশী সময় বাকী নেই। হাতে আর মাত্র পাঁচ দিন আছে। কথন আর রাইন প্ল্যান মত আগেই চলে যাবে। পুরো প্ল্যান টা আবার ভালো মত বুঝে নিতে রওনা দেবার আগের রাতে কথন রাহাতের বাসায় চলে যায়।গুগল আর্থ আর টপো ম্যাপ দেখে দেখে রাহাত কথনকে পুরো রুটের একটা ধারনা দেয়। ভোরের দিকে ক্লান্ত হয়ে তারা পারার টং এর দোকানে চা সিগারেট খেতে যায়।

হঠাৎ করে রাহাত বলল- কথন, এই সামিট মোটেও সহজ হবে না।সাবধানে থাকিস তোরা। অযথা রিস্ক নিস না, বি রেসপন্সিবল।

অবাক হয়ে কথন রাহাতের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, তোরা মানে কি? আপনি কই?

মুচকি হাসি দিয়ে রাহাত বলল, আমি নাই।

নাই মানে, একদম আকাশ থেকে পরে কথন। আপনি না থাকলে কেমনে হবে?আপন তো লিডার।

আমি না থাকলেও হবে। আরে তুই লিডারের মানেই জানোস না। মনে রাখিস, যুদ্ধ ক্ষেত্রে কখনোই জেনারেলের পায়ের ছাঁপ পরে না। হাহাহা…বুঝলি?

রাহাতের সেই হাসির পিছনে বিষন্নতা কথনকেও ছুঁয়ে গেল।

হু…আর কথা না বাড়িয়ে বেড়িয়ে গেল। তূর্ণা-নিশিতার টিকেট কাটতে হবে।আজকে রাতের ট্রেনে তারা যাচ্ছে আলীকদম ভায়া চট্টগ্রাম।

———–****——-



ছয়…।



কমলাপুর রেলওয়ে স্টেসন। গত একঘন্টা ধরে রাস্তার পাশের টং এ কথন আর রাইন একের পর এক বেনসন আর চা খেয়ে যাচ্ছে।

-কোন শালা যে বলসিলো তূর্না-নিশিতা দৈত্যকূলে প্রহ্লাদ।কোন দিন লেইট করে না। ওরে পাইলে এখন কোপাইতাম। ক্ষোভের সাথে বলল কথন।

-হাহাহা। বাংলাদেশের ট্রেন আর বাংগালী টাইম মেনটেইন করবে না? তা কি হয়?

-হাইসেন না রাইন ভাই। মেজাজ পুরা বিলা হয়ে আছে।

-আরে ব্যাপার না। আমাদের তো কোন তাড়াহুড়া নাই। দুই ঘন্টা পরে গেলে কিবা আসবে যাবে।

- টাইম এর জন্যে কে চিন্তা করে।আমার তো চিন্তা, হারে চা বিড়ি খাইতেসি, আলীকদম যাওয়ার আগেই তো ফুতুর হইয়া যামু।

কথনের গালাগালি শুনেই বোধ হয় তূর্ণা প্ল্যাটফর্মে এসে ভিড়ল। তারা সিটে এসে বসতেই ট্রেন ছাড়ে দিল।

হঠাৎ রাইন জিজ্ঞেস বলল- আচ্ছা কথন, আলীকদমে তোমার সাথে কি হয়েছিল এক্সাক্টলি? আমি ঠিক জানি না। বল তো

কথন বলল, সেটা এক বিশাল কাহিনী রাইন ভাই। আমার অপমান আর কলঙ্কের কাহিনী।

-কি হইসিলো?

- কাহিনী টা অনেক ইন্টারেস্টিং। গল্পের মত করে বলি, তাহলে মজা পাবেন। শেষ করার আগে কোন কথা বইলেন না। চুপচাপ শুন্তে থাকেন।

“ প্রায় তিন-চার বছর আগে আমি জানতে পারি একটা অনেক বড় ব্যাট কেভ আছে বাংলাদেশে। কিন্তু ডিটেইলস কিছুই জানতাম না। শুধু জানতাম গুহা টা আলীকদমের কোথাও আছে। তো দেড়-দুই বছর আগে মুগ্ধ ভাই রা গুহায় এক্সপিডিশনে যায়। সেটার গল্প তো জানেন ই।তাদের ঐ ট্রিপ টা থেকেই আসলে জায়গা টা সম্পর্কে একটা ধারনা পাই। সাথে সাথেই প্ল্যান বানিয়ে ফেলি। কিন্তু সাথে যাওয়ার মত কাউকেই আর পাই না। বন্ধুদের কত অনুরোধ করলাম, হাত-পা ও ধরসি, মাগার কাউকে রাজী করাতে পারি নাই।তার পর আর কি,

যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে…

রাইন বাকীটা শেষ করল, তবে একলা চল রে।

যা আছে কপালে বলে চলে গেলাম আলীকদম। ট্রেক করতে করতে ‘আলীর সুড়ঙ’ এর একটা সরকারী সাইন বোর্ড দেখলাম। মেইন রোড ধরে কিছু এগিয়ে হাতের বাম দিকে নেমে হাঁটা শুরু করলাম। হঠাৎ দেখি একটা কাঁটা তার দিয়ে ঘেরা কম্পাউন্ডে ঢুকে গেছি। দুটা সেন্ট্রি পোস্ট ও দেখলাম, কিন্তু কোন গার্ড ছিল না। কিছু দূর যাবার পর একজন আর্মি ইউনিফর্ম পরা সোলজার আমাকে চার্জ করে।

হই, আপনি কে? কই থেকে আসছেন? এখানে ঢুকলেন কেমনে?

আমি পুরো থ। হা করে তার দিকে তাকিয়ে আছি। কিছু বললাম না প্রথমে।

আমাকে চুপ দেখে সে আবার ও চার্জ করে। কথা বলেন না কেন? এখানে ঢুকার পারমিশান আছে আপনার?

আমি হতবম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করি, এখানে ঢুকতে কি পারমিশন লাগে নাকি?

আর্মির সোলজার টা ঝারি দিয়ে বলে, আপনি কি দেখতে পারছেন না এটা যে ক্যান্টনমেন্ট এরিয়া?

আমি ভালো মানুষের মত বললাম, আলীর সুড়ঙ যাব। রাস্তায় সাইন বোর্ড দেখলাম। এই রাস্তাই দেখানো ছিল সেখানে।য়ার এখানে ঢুকার সময় ও কোন সেন্ট্রি দেখলাম না। আমাকে কেউ নিষধ ও করে নাই। এখন বলেন, আমি কার কাছ থেকে পারমিশন নিব? অফিসার আছে?

ঐ সোলজার আমাকে একটা অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে মেজর আশফাক এর কাছে হ্যান্ড ওভার করে দেয়।

মেজর আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে বলে, সো ইউ এর এন ইনভেডার। সো মি ইউর আইডি।

ইনভেডার শব্দ টা শুনেই মাথা গরম হয়ে গেল আমার। তবুও ঠান্ডা মাথায় তাকে বললাম, দেখুন আমি আলীর সুড়ঙ যাবার জন্য আসছি। সাইন দেখে এখানে ধুকে গেছি। সেখানে কোথাও ক্লাসিফায়েড এরিয়া বা সিভিলিয়ান এন্ট্রি রেস্ট্রিক্টেড টাইপ কোন সাইন ছিল না।

মেজর মন দিয়ে আমার কথা শুনে বলল, হু দা হেল আর ইউ?

মেজরের কথা বলার ঢং দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। তবু অনেক ঠান্ডা মাথায় বললাম, আমি ইউনিভার্সিটির ছাত্র। এখানে ট্রেকিং এ আসছি। হারানোর ভয়ে সাথে আইডি নিয়ে আসি নাই।

এরপর মেজর অনেক গম্ভীর স্বরে বলল, আপনি ছাত্র না ‘র’ এজেন্ট সেটা নিশ্চয়ই আপনার কপালে লিখা নাই। আমি বুঝব কি করে? আপনি এখানে ঘুরতে এসেছেন না স্পায়িং করতে এসেছেন সেটা তো আমার জানতে হবে।

এটা শুনেই আর মাথা ঠিক রাখতে পারি নাই। ইন্ডিয়াকে মনে প্রানে ঘৃনা করে শেষ পর্যন্ত কি না ‘র’ এজেন্ট বানায় দিল। মনে হয় বেশ রুক্ষ ভাবেই বলে বসছিলাম,

ইফ আই ওয়াজ এন ইন্ডিয়ান স্পাই দেন ইউ ডোন্ট হ্যাভ দ্যাট ক্যালিবার টু ট্রেস মি ডাউন।আপনার কি মনে হয়, ইন্ডিয়ান স্পাই গর্ধবের মত এভাবে ঢুকে যাবে আর আপনার হাতে ধরা দিবে? ইট ওয়াজ মি হু হ্যাভ কেইম হেয়ার টু আস্ক ফর পারমিশান।

হাহাহাহা…। কঠিন, হেসে হেসে বলল রাইন।

হাইসেন না, পুরোটা আগে শুনেন।

বলে বুঝছি ভুল করে ফেলসি। কিন্তু বন্দুক থেকে গুলি বের হয়ে গেছে। এখন আর ফেরানো যাবে না।

আমার কথা শুনে আশফাকের চেহারা একদম কালো হয়ে গেলো।

রাগে লাল হয়ে চাবিয়ে চাবিয়ে বলল, ডু ইউ হ্যাভ স্লাইটেস্ট আইডিয়া, হোয়ার আর ইউ এন্ড হুম ইউ আর টকিং টু?

আমি ও তখন রাগে ফুঁসছিলাম। মুখ থেকে উলটা পালটা উত্তর বের হচ্ছিল-

ইয়েস আই নো। ইউ আর আ সারভেন্ট অফ পিপলস রিপাবলিক অফ বাংলাদেশ। ইউ আর পেইড টু সার্ভ দা পিপল। এন্ড এজ আ সিটিজেন অফ বাংলাদেশ ইটস ইউর ডিউটি টু সার্ভ মি।

আমার উত্তর শুনে অনেক বড় রকমের একটা ধাক্কা লাগল মেজরের। এতটা মনে হয় আশা করে নাই।

আর্মিদের নার্ভ অনেক শক্ত হয় সেটা সেদিন বুঝেছিলাম। তারা সহজে টেম্পার লুজ করে না। সে বেশ শান্ত স্বরে বলল-

ডেফিনেটলি। আই উইল সার্ভ ইউ।

ওর মুখে এই কথা শুনে আমার আত্মা শুকায় গেল।

এটা বলেই সে আমার ক্যামেরা আর মোবাইল নিয়ে নেয়। তারপর বলে, এখানে বসে থাকুন। আসছি।

আমি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালাম। সাথে সাথে মেজর কড়া গলায় বলল- আপনাকে বসে থাকতে বলা হয়েছে। বসে থাকুন।

তখন বুঝতে পারছিলাম তর্ক করে আর লাভ হবে না। চুপ করে বসে গেলাম।

দেয়াল ঘড়ি তে সময়ের কাঁটা ঘুরছে আর আমি দেখে যাচ্ছি। এক ঘন্টা গেল, কেউ আসে না।

আস্তে আস্তে আমার মনে ভয় লাগা শুরু করল। কাউকে ফোন যে দিব সেটার ও উপায় নাই। কোমর পিঠ সব ব্যাথা করতে লাগল। এক ঘন্টা যায়-দুই ঘন্টা যায় আমার অবস্থা খারাপ থেকে খারাপ হতে থাকে।

অস্থিরতা-অপমান আর ভয় সব একসাথে আমার উপর হামলে পরে। আর সহ্য করতে পারছিলাম না। দরজা খুলতে গিয়ে দেখি বাইরে থেকে লক করা। অনেকক্ষন নক করলাম, কেউ সাড়া দেয় না। একদম ঘাবড়ে গেলাম। মনের মধ্যে তখন চিন্তার ঝড় বয়ে যাচ্ছিলো।

কি করবে তারা আমার সাথে?

জেলে পুরে দিবে? আল্লাহ আব্বু-আম্মুর সামনে মুখ দেখাব কি করে? কোথায় যাচ্ছি কিছু তো বলেও আসি নাই।

মাথার চুল আর ভ্রু চেঁছে দিলে কেমন লাগবে দেখতে? মানুষের সামনে যাব কিভাবে? আল্লাহ গো

আর ও এক ঘন্টা গেল…

নাকি ক্রস ফায়ার করে লাশ টা গুম করে দিবে? এতটা সাহস কি পাবে? চাইলে করতেও পারে। কিছুই বলা যায় না। কত কিছু করার বাকী আছে জীবনে। আফসোস নিয়ে মরতে চাই না।

গেল আর ও এক ঘন্টা…

হঠাৎ পেটে গুড়গুড় আওয়াজে টের পেলাম প্রচন্ড ক্ষুদা পেয়েছে। টের পাওয়ার সাথে সাথে মনে হয় সেই ক্ষুদা টা আরো কয়েক গুন বেড়ে গেল। রাতের পর কিছুই পেটে পরে নাই। ক্ষুদার জ্বালায় তখন ভয় ও ভুলে যাওয়ার মত দশা। কার চেহারা দেখে যে কাল ঘুম থেকে উঠেছিলাম।

বেশী ক্ষিদা পেলেই খেয়াল করবেন দুনিয়ার সব ভালো ভালো খাবারের কথা মনে পরে যায়। নান্নার তেহারী, হাজীর বিরিয়ানি, আম্মাজানের হাতের চিংড়ি মাছের মালাই কারি, চিংড়ি ভাজা দিয়ে সাদা ভাত সাথে এক টুকরা কাগজী লেবু…উফফ

পুরাই…দ্বিরুক্তি করল রাইন।

খাবার চিন্তা দূর করতেই আবার টর্চারের উপায় গুলো চিন্তা করা শুরু করলাম।

সবচেয়ে খারাপ হবে যদি হুদাই টর্চার করে। পিঠের ছাল তুলে লবন লাগিয়ে বরফের পাটার উপর ফেলে রাখবে।

দুই হাত আর দুই পা দুই দিকে টান টান করে বেঁধে রাখতে পারে। গ্রোইন এর অবস্থা যে কি হবে সেটা কল্পনা করতেও ভয় লাগছে।

সেক্সচুয়ালি হ্যারাসমেন্ট ও করতে পারে। এটাই সবচেয়ে জঘন্য। শালার আর্মিদের আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। ওরা সব করতে পারে।

যতই এসব চিন্তা করি ততই খারাপ লাগতে থাকে।

আর্মিদের আর একটা খারাপ টর্চার হল পা ভেঙে দেয়া। হাঁটুর বাটি ভেঙে দিয়ে বলতে পারে- এখন থেকে যখনই স্টেপ ফেলবি আমার নাম মনে করবি। আমার নাম মেজর আশফাক।

এটা চিন্তা করার সাথে সাথে লুলা কথন কে যখন কল্পনা করলাম তখন খুব অদ্ভুত একজনের চেহারা ভেসে উঠেছিল। বিপ্লবী অনিমেষ…অ মানে ‘না’……হাহাহা। বাংলা সাহিত্যের একটা অন্যতম লুজার ক্যারেক্টার। রোমান্টিক মুড নিয়ে গিয়েছিল বিপ্লব করতে। কত বড় বিসি হলে এমন করতে পারে চিন্তা করেন। রোমান্টিক মানুষ কোনদিন বিপ্লব করতে পারে না। কারন, এটা মানুষ কে দূর্বল করে দেয়।

-হাহাহা……ক্যারি অন।

আরও এক ঘন্টা কেটে গেল জীবল থেকে। মনে হল কয়েক শতাব্দী ধরে এভাবে বন্দি হয়ে বসে আছি। প্রতিটি মুহুর্ত কাটছিল এক একটা বছরের মত।দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসল। তবুও কেউ আসে না।

পাক্কা ছয় ঘন্টা পর দরজা খুলে যায়। করিডোরের ম্লান আলোয় আশফাক কে তখন সাক্ষাত মৃত্যু দূত মনে হচ্ছিল।

ঘরে ঢুকে মেজর বলল, চলুন…।

আমিও চুপচাপ তার পিছুপিছু হাঁটা দিলাম। ইতোমধ্যে আমার বিপ্লবী রক্ত ঠান্ডা হয়ে গেছে। কিংবা বলতে পারেন, কুকুরের লেজ সোজা হয়ে গেছে।

এতক্ষন পর অন্ধকার অফিস থেকে বেরুতেই আলোতে চোখ ধাঁধিয়ে গেল। চারিদিকে এনার্জী সেভিংস লাইট জ্বলছে। সামনেই একটা ওয়াচ টাওয়ার থেকে নিয়ন ল্যাম্প পুরো ক্যাম্পের দিকে তাক করা। অফিসের সামনেই পার্ক করা একটি মিলিটারী জীপের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো মেজর আশফাক।

গায়ে জ্বলুনি ধরানো হাসি দিয়ে বলল, আসুন আপনাকে সার্ভ করে আমার ডিউটি পালন করি, বলে জীপের পিছনের দরজা খুলে দিল।

জীপ আপনাকে চকরিয়া নামিয়ে দিবে; উঠে পরুন।

আমি খুস ফস্কে বলে ফেললাম,কিন্তু আমার সাথে এমন হ্যারাসমেন্ট করার মানে কি ছিল?

মেজর আবারো হেসে হেসে বলল, হ্যারাসমেন্ট কাকে বলে সেটা সম্পর্কে আপনার কোন ধরনাই নেই। আর একটা অনেস্ট সাজেশন দেই, কখনো ধারনা করার চেষ্টাও করেন না।

উঠে পরুন, দেরী হয়ে যাচ্ছে।

আমি বিনা বাক্য ব্যায়ে জীপে উঠে বসলাম। সামনে ড্রাইভারের পাশে একটা ষন্ডা মত সোলজার। দেখেই বুঁক কেঁপে উঠল। আল্লাহর নাম নিয়ে বসে পরলাম।

জীপের দরজা লাগাতে লাগাতে মেজর মুচকি হেসে বলল, এই নিন মোবাইল আর ক্যামেরা। মেমরি কার্ড টা রেখে দিয়েছি।এন্ড ফাইনালি, হ্যাভ আ সেফ জার্নি।

ওর ঐ পাশবিক হাসি দেখে আমার অবস্থা তখন চূড়ান্ত রকমের খারাপ। আমি ধরেই নিয়েছিলাম আজকেই বুঝি আমার শেষ দিন। রাস্তার নির্জন কোন জায়গায় জীপ থামিয়ে বলবে পালাতে চাইলে পালাও, তুমি এখন মুক্ত। যেই দৌড় শুরু করব ওমনি গুলি করে মারবে। আলীকদম থেকে চকরিয়া যে কিভাবে আসছি শূধু আমি জানি আর আমার আল্লাহ জানে।

পরে চকরিয়ায় আমাকে নামিয়ে দিল। সেখান থেকে চলে গেলাম কক্সবাজার। গায়ের অপমান গুলো ধুঁয়ে আসলাম আসলাম সাগরের পানিতে। এই হল ‘আলীকদমের অপমান’ কাহিনী।

হাহাহাহা…মজা পেলাম। তবে তুমি খুব বোকা কথন।

আসলেই রাইন ভাই। নিজেকে আরও বশে রাখার দরকার ছিল। উলটা পালটা কথা বলা উচিৎ হয় নি।

আসলেই এত আজাইড়া কথা বলা উচিৎ হয় নি। তোমার জায়গায় চৌধুরী থাকলে এত কথা না বলে সোজা কান পট্টির নীচে একটা থাপ্পর বসায় দিত।

হাহাহা…।তা যা বলেছেন চৌধুরী সাহেব।

চল…যাচ্ছিই তো। হাই হেলো বলে আসব নে তোমার মেজরের সাথে।



চলবে…
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১১:১৭
১০টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×