somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্রেকিং ট্রেন্ডস: সচেতন হবার এখনই সময়

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

''এই রহস্যময় পৃথিবী, আমরা যেখানে বাস করি- আমাদের ধারনার চাইতেও আকর্ষনীয়; নির্মম আর নিষ্ঠুরভাবে ব্যবহার না করে আসুন এই সুন্দর প্রকৃতির মন্ত্রমুদ্ধ রুপ দেখে শ্রদ্ধায় অবনত হই, একে উপভোগ করি।''


আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে, ট্রেকিং তোমার কাছে কি?
উত্তরে আমি জোর দিয়ে বলব- প্রকৃতির খুব কাছে চলে গিয়ে, তার রুপে নিজেকে ঢেলে সাজানো; নিঃসঙ্গতায় ধ্যান এ বসে গভীর চিন্তায় মগ্ন হওয়া; প্রতিক্ষনে নিজের মানবিক গুনাবলী গুলোকে বিকশিত করার চেষ্টা করে যাওয়া- যেন গর্ব করে বলতে পারি আমি প্রকৃতির সন্তান।

আমার মত তরুনদের কাছে ট্রেকিং আর হাইকিং এখন খুব জনপ্রিয়। হাল আমলে ফেসবুক আর ব্লগ কমিউনিটি গুলোর কল্যানে এই ট্রেন্ড দিন দিন বাড়ছে। বাঙালী তরুন বিলাসী আর আমুদে ভ্রমন কে বাদ দিয়ে এখন কষ্টকর আর কম খরচে ট্রেকিং এ প্রশান্তি খুঁজে নিচ্ছে। এই ব্লগ টি লিখার সময় আমি অনেক শ্রদ্ধা আর গর্বের সাথে তাদের স্মরন করছি যারা আমাদের ট্রেকিং এর এই অসাধারন জগৎ টির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। আমাদের আগের জেনারেশনের ট্রেকার রা যদি আমাদের সাহস না যুগাতো, আমাদের রাস্তা না দেখাত তাহলে আমরা হয়ত এতটা সহজে এই পথে নামতাম না। আমাদের ভয় ও সংকোচ কাটিয়ে উঠতে তাদের অবদান বলে শেষ করা যাবে না।
ইতোমধ্যে আমাদের চার জন এভারেস্ট সামিট করে ফেলেছেন। সামনে আমাদের মধ্যে আরও অনেকেই চেষ্টা করবে পৃথিবী উচ্চতম বিন্দুতে দাঁড়াতে। এভারেস্ট জয় আমাদের তরুনদের মধ্যে ক্যাম্পিং, ট্রেকিং আর মাউন্টেনিয়ারিং কে অনেক জনপ্রিয় করেছে। এখন অনেকেই শারিরিক আর মানসিক সক্ষমতার পরীক্ষা দিতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আমরা ভাগ্যবান, নতুন এই ট্রেকিং ট্রেন্ড দেরীতে হলেও শুরু হয়েছে। এখন আমাদের মত তরুন-তরুনীরা ট্রেকিং করতে দেশ-বিদেশের এদিক সেদিক চলে যাচ্ছে। কম্পিউটার গেইমস আর ফেইসবুকের যুগে আমাদের অলসতা দূর করতে এই ট্রেন্ড অনেক গুরুত্বপূর্ন।

ডিসকভারি আর ন্যাটজিও এর পাশাপাশি তাই আমার পূর্বজ ট্রেকার দের আবদান স্বীকার না করে উপায় নাই। চার বছর আগেও টিভি তে টেন্ট আর ক্যাম্পিং করতে দেখে কি লোভ টাই না লাগত। কত যে আফসোস হত তা কখনোই লিখে বোঝানো যাবে না। ইশশ আমাদের দেশে যদি এমন ভাবে টেন্ট দিয়ে ক্যাম্পিং করা যেত। টেন্ট টা নিয়ে এদিক সেদিক চলে যেতাম, নিজেরা রান্না করে খেতাম। কত মজাই না হত- এসব ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। তারপর ফেসবুক ঘিরে কিছু গ্রুপ আর কমিউনিটি তৈরী হয়ে গেল। ক্যাম্পিং, ট্রেকিং আর ঘুরাঘুরি পছন্দ করে এই রকম কিছু মানুষ এক সাথে হয়ে গেল। একা একা যেই স্বপ্ন দেখা টা বৃথা মনে হত কয়েকজন মিলে সেই অলীক স্বপ্ন গুলোই এক এক করে পূরন হতে দেখে এখন খুব ভাল লাগে।

ট্রেকিং একটি প্যাশন, স্পোর্টস আর সর্বোপরী একটি লাইফ স্টাইল। সব খেলাধুলার মত এরও কিছু নিয়ম আছে। সব লাইফ স্টাইলের মত এরও কিছু দর্শন আছে। এটা একটা আর্ট একটা কলা যা প্রতিনিয়ত প্র্যাক্টিস করে আয়ত্বে আনতে হয়। ট্রেকিং এর সাথে নিজের আনন্দ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রকৃতির মাঝে মিশে যাওয়ার মধ্যেই সেই আনন্দ লুকিয়ে থাকে।

জীবন-সংসার থেকে দূরে কোথাও, মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে, কোলাহলময় শহুরে গেঞ্জাম থেকে পালিয়ে ; এক শান্ত, নিরিবিলি জুম ঘরের মাচায় সারাদিনের ট্রেক করা ক্লান্ত ঘর্মাক্ত শরীর টা যখন এলিয়ে দেবেন আর পশ্চিম কোনে সূর্য ঢলে পরার দৃশ্য দেখবেন, সেই স্বর্গীয় অনুভূতির কোন তুলনা করতে পারবেন না।

আমিও এই যুগের সেই তরুন দের দলে যারা ট্রেকিং খুব পছন্দ করি। ট্রেকিং আমার ভালোবাসা, ধ্যান- জ্ঞান। নতুন নতুন জায়গায় ক্যাম্পিং করা আমার শখ। ভাত খাবার মতই এগুলা আমার জীবনের এক আত্মিক প্রয়োজন। আপনি যা ভালবাসেন তার প্রতি আপনার কিছু দায়িত্ব থাকে। কেউ যদি মন থেকে ট্রেকিং কে, পাহাড় কে ভালবাসে তাহলে পাহাড়ের প্রতি তার লয়ালটি থাকতে বাধ্য। তাই যখনই পাহাড়ে আর বনে-জঙ্গলে ট্রেকিং বা ক্যাম্পিং এর প্রশ্ন আসে তখনই আবশ্যিকভাবে চলে আসে ইকো-ফ্রেন্ডলি ট্রেকিং এর কথা। যেই ট্রেইল বা রুটে ট্রেক করব সেটার প্রাকৃতিক অবস্থা কে বিরক্ত বা নষ্ট না করে কিভাবে সংরক্ষন করা যায় সেটাই মূল বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ছোট ছোট বিষয় গুলো যদি খেয়াল রাখা যায় তাহলেই ট্রেকিং এর আনন্দ বহুগুন বেড়ে যায়।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, ট্রেকিং শুধু আমাদের মধ্যে মিথ্যা জনপ্রিয়-ই হয়েছে। আমাদের কিছুই শিখাতে পারে নি। ট্রেকিং এর মূল দর্শন ই আমরা কেউ জানি না। আমার লেখা পড়ে কেউ আঘাত বা কষ্ট পেয়ে থাকলে জানবেন আমি জেনে শুনেই তাকে কষ্ট দিচ্ছি। কারন এটা দরকার ছিল। নিজেকে বড় প্রমান করতে বা অন্যকে ছোট প্রমান করা আমার উদ্দেশ্য নয়। ট্রেকিং এর ভালবাসা থেকে এক প্রকার বাধ্য হয়েই আমি এই কথা গুলো লিখছি। কারন আমি মনে করি এটা আমার ভালবাসা কে রক্ষা আমকেই করতে হবে। যে কোন ভাবে। যে কোন উপায়ে। শুধুমাত্র আমাদের মূর্খতা আর অজ্ঞানতার কারনে চোখের সামনে সুন্দর সুন্দর ট্রেইল গুলো আজকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। খুব কষ্ট হয়। এক বছরের মধ্যে একটা জায়গা কিভাবে স্বর্গ থেকে নরক হয়ে উঠে সেটা নিজ চোখে দেখা একদম সুখকর কোন অনুভূতি না।

ছোট্ট একটা গল্প বলিঃ

প্রায় দেড় বছর আগের কথা। ২০১১ এর এপ্রিল মাস। আমি আমার শিহাব ভাই গিয়েছিলাম একটা বনে। ক্যাম্পিং করতে। জায়গা টার দূর্গমতার ব্যাপারে এখন যদি কিছু বলি তাহলে আপনারা কেউ বিশ্বাস করবেন না। যাওয়ার সময় প্রতি টা জায়গায় বাঁধা অতিক্রম করে হয়েছে। এমন ভাবে জেরার সম্মুখীন হতে হয়েছে যা বললে এখন আপনাদের হাসি পাবে। অতিরঞ্জিত মনে হবে যদি বলি এমন এক জায়গায় রাত কাটিইয়ে ছিলাম যেখানে মৃত্যু ভয় ছিল? জায়গা টা ছিল আমাদের জন্য পারফেক্ট হাইড আউট। শহর থেকে দূরে, দুই পাহাড়ের খাঁজে, অতীব সুন্দর এক ঝরনার পাশে ছোট্ট একটা নিভৃতবাস। সরি শিহাব ভাই, আপনার লুকানোর জায়গা টাকে এভাবে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য। জায়গা টা হচ্ছে রাজকান্দি রিজার্ভ ফরেস্ট এর “হাম্মাম ফলস”।
চিনেছেন আপনারা জায়গা টা? গিয়েছেন নিশ্চয়?? অবশ্যই গেছেন। আর যদি গিয়ে না থাকেন তাহলে বলব আমার খুব খারাপ খারাপ কিছু গালি আর এক ভয়ানক পাপ করা থেকে বেঁচে গেছেন। হাম্মাম আমার জন্য এক দুঃস্বপ্নের নাম। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য কে আমি নষ্ট করে দিয়েছি। প্রতিদিন হাম্মাম এর গন ধর্ষনের দায় আমি এড়াতে পারি না। হাম্মাম এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে একটা ব্লগ লিখে ফেলেছিলাম। সামহোয়ারইনে পোস্ট দেখে সবার ই মাথা খারাপ হয়ে গেল। এক ঘন্টায় ৫০০ হিট। ২০০ বার ফেইসবুকে শেয়ার...অস্থির অবস্থা। আমি তো খুশিতে বাকবাকুম করছি। আমি ব্লগে হিট হয়ে গেলাম।
এখানে একটা কথা বলে রাখি, আমি বলছি না হাম্মাম আমার আর শিহাব ভাইয়ের আবিস্কার। আমরা কেউ কখনোই এটা ক্লেইম করি নাই। আর এই রকম ঝরনা আবিস্কারের ক্লেইম করা আমার কাছে খুব খেলো, চাইল্ডিস আর আজাইড়া মনে হয়। মানব জাতির কোনদিন এখানে পদচিহ্ন পরে নাই, আমরাই প্রথম সভ্য সমাজের কীট ঐখানে রাত্রিযাপন করেছিলাম-এটাই ক্লেইম করি না। আর আবিস্কার করা তো পরের কথা। আরে ভাই, ঐখানে প্রতিদিন মানুষ জন বাঁশ আর গাছ কাটতে যায়। এটা বুঝো না কেন??
তবে হ্যাঁ, আমি এটা ক্লেইম করছি আমি ব্লগ লিখার পর হাম্মামে পানির জায়গায় মানুষের ঢল নামে, সাথে শহুরে আবর্জনা আর পলিথিনের পলি রেখে দিয়ে আসে হাম্মামের বুকে। আমার ব্লগ পড়ে ১০০ মানুষ হাম্মাম যায়। তাদের মধ্যে কয়েকজন পেপারেও তাদের মুগ্ধতার কথা বেশ ফলাও করে ছাপিয়ে দেয়। সেটা দেখে আরও লাখ খানেক মানুষ যায়। লাখ খানেক মানুষের লাখ খানেক ফেইসবুক প্রোফাইল দেখে আরও ১০ লাখ মানুষ হাম্মাম ধর্ষন করে আসে। এই কয়েক মাসের মধ্যে হাম্মার এর কি অবস্থা হয়ে গেছে সেটা না দেখলে বিশ্বাস করবেন না। বিস্কিট, চিপস এমন কি বিরিয়ানির প্যাকেট দিয়ে পুরো ট্রেইল টা ডুবে গেছে। বর্ষার সময় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের পায়ের চাপে পাহাড়ের পাড় ধসে ধসে এখন আর রাস্তাই কিছু বাকী নাই। আমাদের সেই প্রিয় হাইড আউট এখন হাজারো মানুষের মোচ্ছব করার জায়গা। ব্যান্ড পার্টি নিয়ে সেখানে পিকনিক ও হয়। লাউড স্পিকারে গানের দাপটের হাম্মাম এর আওয়াজ ও স্তব্ধ হয়ে যায়। আজকাল আর ঝরনা দেখা যায় না, আন্ডার ওয়ার পরে ভুড়ি দেখানো প্রোফাইল পিক তুলতে থাকা মানুষ দেখবেন সেখানে। লজ্জা লাগে ফেইসবুকে যখন এসব ছবি দেখি। মাথা ঝুকে যায়। আমি আমার ভালবাসাকে রক্ষা করতে পারি নাই। কত বড় নিমকহারাম আমি। তারপর থেকে ট্রেকিং ব্লগ লিখা বন্ধ করে দিয়েছি। পাছে আরেক টা দূর্নাম আমার ভাগ্যে জুটে যায়।

হাম্মাম এর মত একই অবস্থা বগা লেক, কিওক্রাডাং, নাফাকুম, তিন্দু, রামাক্রি, জাদিপাই এর। তুলনামূলকভাবে একটু সহজে এসব জায়গায় পৌঁছানো যায় বলে মানুষের ভিড় এদের সামলাতে হচ্ছে।

এই সিজনে থানচি রূট বন্ধ থাকায় সব চাপ এসে পরেছে বগা লেকের উপর। কি যে বিচ্ছিরি অবস্থা সেটা বলে বুঝানো যাবে না। এক্সিডেন্টের পর এই ঈদে বগা লেক গিয়েছিলাম। কিন্তু মনে হয়েছে এই সময়ে এসে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। চারিদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ, চিৎকার চেঁচামেচি, মোবাইলে গান, হিন্দি-বাংলা, গালাগালি, যেদিকে চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ। বগা লেকের বাসিন্দাদের তাদের নিজ বাসা থেকেই উচ্ছেদ হয়ে হয়ে যেতে হয়েছে। আর আমরা শহুরে মানুষ যেদিকে যাই সেখানেই আবর্জনা নিয়ে যাই। তো সেই আবর্জনার ও কোন অভাব নাই। বগা লেক থেকে কিওক্রাডাং হয়ে জাদিপাই পর্যন্ত ট্রেইলে কত যে আবর্জনা পাবেন তা কল্পনার ও করতে পারবেন না। বগা লেক এর মত এত ছোট্ট একটা জায়গা কি করে ৬০০ মানুষের জায়গা দিতে পারে এটা আমার ধারনার ও বাইরে।

আজকেই আবার শুনলাম তাজিংডং এ নাকি ৩৭ জন যাচ্ছে। কিভাবে সম্ভব???

ধুঁকে ধুঁকে শেষ হয়ে যাচ্ছে আমাদের এই ভালবাসার ট্রেইল গুলো।
এখন কথা হচ্ছে আপনার কি এসব দেখে খারাপ লাগে না? আপনি কি আমার মত একটুও লজ্জিত নন? আপনার কি এক্টুও বিরক্ত লাগে না প্রকৃতির এই দূর্দশা দেখে? আপনি কি এমন ট্রেইলে ট্রেক করে মজা পান?? নিজেকে কি আপনার দায়ী মনে হয় না? যদি হয়...তাহলে একটু মন দিয়ে ভাবুন প্লিজ...। আমরা এখন কি করতে পারি? মন থেকে যদি আমি-আপনি ভালবাসি তাহলে আমরা একটা রাস্তা ঠিক বের করতে পারব।


আমাদের সবাইকে এখন সচেতন হতে হবে। সব অজ্ঞানতা গুলো দূর করে সবাই কে নিয়ে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। ট্রেকিং এর সময় কি কি করতে হবে আর কি কি করা যাবে না সেগুলো নিজেরা জেনে অন্যদের ও জানাতে হবে। আমাদের নিজেদের ই এখন থেকে সব মনিটর করতে হবে। কেউ ভুল করলে তাকে শিখিয়ে দিতে হবে।
বাই হুক অর বাই ক্রুক...ট্রেইল গুলোকে রক্ষা করতেই হবে ।

এখানে আমার কিছু ব্যক্তিগত ধারনা শেয়ার করছি। আশা করছি আলোচনা হবে।

ক) যখনই আমরা কোন ট্রেক প্ল্যান করব, তখন অন্যদের প্ল্যান সম্পর্কেও জেনে নিব। যদি দেখি অন্য অনেকের সাথেই আমার রুট মিলে গেছে তাহলে আমি ট্রেকের তারিখ বা জায়গা কিছু টা অদল-বদল করে নিতে পারি। এতে দু’টা উপকার হবে।

১) আমি আমার মত করে নির্জনে ট্রেক করার আনন্দ পাব।
২) একটি নির্দিষ্ট ট্রেইলে বেশী মানুষ হবে না। মানুষ যত কম হবে আবর্জনার চাপ ও কম হবে। প্রকৃতির উপর চাপ ও কম পরবে।
কেউ বিরক্ত হবে না। না আপনি, আর না প্রকৃতি। বগা লেক এর মত জায়গায় এক রাতে ৫০ জন এর বেশী থাকা মোটেও লিজিক্যাল না।

এই জন্য আপনারা যারা সিরিয়াস ট্রেকিং করেন তারা প্লিজ, অন্যদের উৎসাহিত করুন-তারা যেন ঈদের সময় বুঝে শুনে তাদের ট্রেইল টা প্ল্যান করে। ঈদ ছাড়া কম্ন ছুটি পাওয়া যায় না এটা ও জানি তবে চেষ্টা করুন যেন ভীড় এড়িয়ে চলা যায়।

খ) টীম যতটুকু পারেন ছোট রাখুন। ছোট টীম নিয়ে ট্রেক করে অনেক মজা পাবেন, বিশ্বাস করুন। টীম মেম্বার যত বাড়ে আনন্দ ততই কমে যায়। ঝামেলা বেড়ে যায়। চার জনের টীম হচ্ছে একটি আদর্শ ট্রেকিং টীম।

গ) প্রাকৃতিক জায়গায় বিশেষ করে বন্য অঞ্চলে বার-বি-কিউ / ক্যাম্প ফায়ার না করলেই ভাল। যদি করতেই হয় তাহলে বার-বি-কিউ / ক্যাম্প ফায়ার করার সময় এনশিওর করবেন যেন বন্য পশু-পাখিদের কোন সমস্যা না হয়। গাছের ডাল পালা ভেঙে ক্যাম্প ফায়ার করা একমাত্র তখনই যুক্তি সঙ্গত যখন ঠান্ডায় আপনি মৃত্যুর সম্মুখীন হবেন।

ঘ) ক্যাম্পিং করার জন্য জায়গা খুঁজে বের করুন। প্রাকৃতিক অবস্থা কে নষ্ট করে ক্যাম্পিং গ্রাউন্ড বানানো টা দুঃখজনক। মাটি কেটে সমান করে, গাছ পালা উপড়ে টেন্ট পিচ করা টা খুব খারাপ একটা প্র্যাকটিস।

ঙ) আমাদের নিয়ে যাওয়া আবর্জনা গুলো ভাল মত ডিসপোজ করা।

** আমাদের আবর্জনা গুলো সাধারনত দুই ধরনের হয়।

যে গুলো পঁচে গলে মাটিতে মিশে যায়
যেগুলো পঁচে না যা প্রকৃতির জন্য খারাপ

***আমাদের একটি কমন কথা হচ্ছে অপঁচনশীল আবর্জনা গুলো নিয়ে আসুন। আমরা কেউ পঁচনশীল আবর্জনা গুলোর ব্যপারে কিছু বলি না। আমার কাছে পঁচনশীল টাই কেন জানি বেশী কষ্ট দেয়। হাম্মাম এর কথাই বলি, দ্বিতীয় বার যখন আবার হাম্মাম যাই তখন এক পাথরের পাশে বসতে গিয়ে দেখি প্রচন্ড দূর্গন্ধ। পাশে তাকিয়ে দেখি বিরিয়ানির এক আধ খাওয়া প্যাকেট, পঁচে ফাঙ্গাস পরে বিচ্ছিরি অবস্থা। দেখেই বমি চলে আসছে। তাই বলছি, ক্যাম্প করার সময় পেঁয়াজের খোসা, আলুর খোসা, বাড়তি খাবার সহ যত রকম পঁচনশীল আবর্জনা থাকবে সেগুলো ও ডিসপোজ করতে হবে। বেইজ ক্যাম্প এ নিয়ে আসা অসুবিধাজনক মনে হলে ক্যাম্প এর পাশে অনুকূল একটা জায়গায় গর্ত খুঁড়ে সেগুলো পঁচনশীল আবর্জনা গুলো পুঁতে ফেলবেন।

***এবার আসি অপঁচনশীল আবর্জনার ব্যাপারে। বিস্কুটের প্যাকেট, নুডলস, স্যুপ এর প্যাকেট, ব্যাটারী সহ যাবতীয় সব কিছুই সাথে করে নিয়ে আসতে হবে। সিগরেট এর বাড ও ফেলে আসা যাবে না।
এই এন্টি- লিটারিং এর জন্য আমরা একটি প্রাক্টিস করতে পারি। ট্রেকিং টীম এর লিডার আবর্জনা ফেলার একটি নির্দিষ্ট জায়গা ঠিক করবে। টীমের প্রতিটি মেম্বার সেই জায়গাতেই ময়লা ফেলবে। এতে ক্যাম্প সাইটের চারিদিকে ময়লা আবর্জনা ছড়াবে না। কেউ যদি এই নিয়ম ভেঙে অন্য কোথাও ময়লা ফেলে তাহলে তাকে নির্দিষ্ট অংকের টাকা ফাইন করা হবে। এতে যেমন সবাই সচেতন হবে। আরেক দিকে সেই টাকা দিয়ে গাইড বা ট্রেইলের পারমিটের খরচ শেয়ার করা যাবে।

*** প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দেবার সময় ও আমাদের সচেতন হতে হবে। পায়খানা করতে হবে ঝিড়ি থেকে দূরে। মাটিতে গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে। টয়লেট টিস্যু এদিক সেদিক ফেলে রাখা যাবে না। সেগুলো ও মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।

*** ক্যাম্প গুটিয়ে চলে আসার আগে ভালমত দেখে নেয়া...সঙ্গে নিয়ে আসা কোন কিছুই ফেলে আসা যাবে না। এমন কি জাতীয় পতাকা টাও না।

চ) ট্রেইলে কোন কিছুকে নষ্ট করা যাবে না। আমাদের একটা বদ অভ্যাস হচ্ছে যেদিকেই যাই পাথর খোদাই করে নিজের নাম টা লিখে দিয়ে আসি। কিওক্রাডাং এর চূড়ার কি অবস্থা করেছি আমরা...একটা অক্ষর লিখার ও কোন জায়গা বাকী নাই আর এখন। সেটাকেই ঘসে ঘসে পুরানো লিখা মুছে আবার কেউ একজন অমুক+ তমুক লিখে দিয়ে আসছে। নাম লিখে আপনি কি মজা পেলেন বুঝা গেল না। হাম্মাম, তিন্দুর বড় পাথর শিল্পিদের ক্যানভাস আর কবিদের খাতা হয়ে গেছে।

ছ) চেষ্টা করবেন ট্রেইলে যেন অন্য কোন গ্রুপের সাথে দেখাই না হয়। দেখা যদি হয়েই যায় তাহলে অন্য গ্রুপের সদস্যদের সাথে ফ্রেন্ডলি আচরন করতে হবে।

জ) ট্রেইলে ক্যাম্প করার সময় খুব আস্তে আস্তে কথা বলতে হবে। আমাদের চারপাশে অনেক পশু-পাখি থাকে। তাদের ভয় দেখানোর কোন অধিকার আমাদের নাই। প্রকৃতির আওয়াজ কান পেতে শুনুন। আনন্দ পাবেন।


[আরও অনেক কিছু লিখার ছিল। শেষ করতে পারলাম না। লিখতে লিখতে ভোর হয়ে গেল। সময় নিয়ে পরে আপডেট করব]


ফটো ক্রেডিটঃ অমিত সেন গুপ্ত
২৪টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×