somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুর্নীতি চালাও, হুন্ডি ঠেকাও

২০ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলের একটি ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ শাখায় বিট্রিশ পাউন্ডের রেট জানতে চাইলে একবাক্যে ১১৩.৫০ টাকা জানিয়ে দেন ডেস্কে দায়িত্বরত কর্মকর্তা। এরপর মুদ্রা বিনিময় চাইতেই তিনি বলেন মুদ্রা নাই, শুধু দামটুকুই বলা যাচ্ছে। সরকারি/বেসরকারি মিলিয়ে ৪টি শাখায় একই উত্তর।



তবে ভিন্নপন্থায় ১৩০ টাকা রেটে যাচ্ছে মানি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে পাউন্ডের সন্ধান মেলে ঠিক একই এলাকায়। চোর-পুলিশ খেলার মধ্যে এভাবেই ডলার, পাউন্ড, ইউরো লেনদেন হচ্ছে ঢাকার ব্যাংকপাড়া মতিঝিল, দিশকুশা, পল্টন সহ মানি একচেঞ্জ নির্ভর এলাকায়। অথচ সরকারি এজেন্সিগুলো হন্য হয়ে খুঁজছে ডকুমেন্টস ছাড়া লেনদেনকারী এসব মানি এক্সচেঞ্জগুলোকে। ততদিনে বৈদেশিক রির্জাভের ত্রাহি অবস্থা।

গত এক বছরে রিজার্ভ প্রায় অর্ধেকে ঠেকেছে (২৬ বিলিয়ন)। মুদ্রাস্ফিতির কারনে নিত্যপ্রয়োজনীয় ক্রয়সামগ্রী মানুষের নাগালের বাইরে যাচ্ছে। সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি ১৯০ টাকা, চিনিতে বেড়েছে ১৩ টাকা। ব্যাংকগুলোয় বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্কটে এলসি খুলতে পারছে না আমদানিকারকেরা।

স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজে বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষের আভাস দিয়েছেন। আমিও চাইবো না আমার দেশ শ্রীলঙ্কা লোক। তবে এমন পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি না হলেও দেশের রিজার্ভ নিয়ে শঙ্কায় আছেন অর্থনীতিবিদরা। সরকারের পক্ষ থেকে ডলার সঙ্কটকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব বলা হচ্ছে। সংস্থাগুলো হুন্ডিতে টাকা পাচার রোধে উঠেপড়ে লেগেছে। কিন্তু কাজের কাজটা আসলেই হচ্ছে?

ধরুন আপনার/আমার এলাকার এমপি সাব/উপজেলা চেয়ারম্যান/পৌরসভার মেয়র/আমলা স্যার প্রকল্প বা ঠিকাদার থেকে যে কমিশন নেন তাতে মাসে কোটি কোটি টাকা আসে। নিয়োগ বাণিজ্য, চাঁদাবাজির কথা বাদই দিলাম। প্রকল্প হলেই এমপি-মন্ত্রীরা খুশি।

আবার এসব জনপ্রতিনিধি ব্যাংক একাউন্ট বা নির্বাচন কমিশনের হলফনামায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা নাই। আমলাদের ব্যাংক একাউন্ট যেন 'দিন আনে, দিন খায়' অবস্থা। তাহলে লুটপাটের কোটি কোটি টাকায় কোথায় যায়? এক কথায় দেশের টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে।

ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটগুলো বলছে, ব্যাংকের এলসি/হুন্ডি সহ কয়েকটি মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচার হয়ে আসছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলো অর্থপাচারে সহায়তা করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রা বিদেশেই রয়ে যাচ্ছে, যা অর্থপাচার। হুন্ডি ব্যবস্থা তৃণমূল পর্যায়ে পৌছেছে। সম্প্রতি ব্যাংকে তারল্য সঙ্কটের গুজব বা বাস্তবতায় প্রবাসীরা ব্যাংক বা বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে স্বাচ্ছন্দবোধ করছেন না। টাকা আসছে হুন্ডিতে, লাভবান পাচারকারীরা।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই) ২০২০ সালে বলেছিলো, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাচার হয়।

জিএফআই'র তথ্য মতে, ২০০৮ সালের পরে বাংলাদেশে পণ্যের মূল্য ঘোষণায় গরমিল দেখিয়ে অর্থ পাচারের পরিমাণ বেড়েছে। দুই হাজার পনের সালে সর্বোচ্চ ১ হাজার ১৫১ কোটি ৩০ লাখ ডলার বিদেশে চলে গেছে।

বৈদেশিক সংস্থার রিসার্স বা তথ্যর বাইরে কী পরিমাণ অর্থ বিদেশে যাচ্ছে তা কেবল বিদেশে বাংলাদেশীদের অট্রালিকা বা বিলাসবহুল বাড়ি দেখলেই বোঝা যাবে।

প্রশ্ন হচ্ছে- গত এক দশকে তৃণমূল পর্যন্ত যেভাবে দৃর্নীতি, লুটপাট, চাঁদাবাজি হয়েছে তার লাগাম কী টেনে ধরা হয়েছে। প্রকল্প ব্যয়ে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলো ছাড়াও উন্নত বিশ্বের চেয়ে বেশি ব্যয় করছে এ নিয়ে কী কোন ব্যবস্থা হয়েছে। ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ এমপি-মন্ত্রীদের কতজনকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে পেরেছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে কতজন দুর্নীতিবাজ বা কমিশন নেয়া আমলাকে চিহ্নিত করা হয়েছে

গত এক যুগে মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি বা যারা মাদক নির্মূল করার কথা তারাও এ কারবারে জড়িয়েছে, নেপথ্যে টাকা। এই টাকাও পাচার হচ্ছে। কিন্তু বন্দুকযুদ্ধের বাইরে আসলে ইয়াবা-ফেন্সিডিল কতটুকু নির্মূল হয়েছে?

দুর্নীতির উৎস বন্ধ না করে হুন্ডি ঠেকাও পদ্ধেতিতে বাংলাদেশ আদৌ কী বিদেশে অর্থপাচার ঠেকাতে পারবে?

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৫৫
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×