সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১১ ভোর ৬:১৯
থেমে যাওয়া জীবনের গল্প-১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
কুয়াশা মাখা বাতাস কেটে হনহন করে হেঁটে চলছি।পথ যেন ফুরোতেই চায়না। পথের মাঝখানের ধুলো-বালি শিশিরসিক্ত। দু'পাশে ইতস্তত গজিয়ে ওঠা ঘাসগুলো ভিজে গেছে। সময়টা কাকডাকা ভোর হলেও কোন কাকের কর্কশ গলার সারা-শব্দ নেই কোথাও। কারণ এই সাত সকালে কাকগুলো কুয়াশায় ভিজে কুকড়ে গেছে। গাছের মগডালে বসে ঝিমুচ্ছে। দুর দিগন্তে সূর্য রেখা উঁকি মারছে, কিন্তু কুয়াশার পুরু চাদর ভেদ করার সাহস সে হারিয়ে ফেলেছে। গাঁয়ের এই মেঠো পথটিতে তখনো লোকজন সরব হয়নি। দু'একজন ব্যবসায়ী তাদের পসরা নিয়ে ছুটে চলেছে। খেজুর রসের সুগন্ধী ছড়িয়ে মাটির দুটো হাড়ি দু'পাশে ঝুলিয়ে কিছুটা বেঁকে গিয়ে পথ দেখে চলেছে একজন। অন্য একজনকে দেখা গেল সাইকেলে কচি বেগুনের ঝুড়ি নিয়ে দ্রুত বেগে বাজারের পথের পানে। আমি বড় রাস্তা ছেড়ে এবার সর্ষে ক্ষেতের আল পথ বেয়ে চলেছি। ফিকে হলুদ ফুলে সারাটা মাঠ ভরে গেছে। চোখ ধাঁধিয়ে দেয়, ক্যামেরা থাকলে কয়েকটা ক্লিক, ব্যাস ফ্রেমে বন্দী হয়ে যেত এই স্মৃতিময় আবহটা। কিন্তু সাথে ক্যামেরা নেইতো। কী আর করা পথ সংক্ষেপ করার পাঁয়তাড়া করছি। একারণেই আলপথ। এতে দুটো উপকার হয়, এক.পথ কমে যায়।দুই. এলাকাবাসীর আদরমাখা ডাক, এই কেমন আছো? কোথায় যাচ্ছো। ও হানিফ প্রফেস্যারের কাছে পড়তে। ও আচ্ছা যাও ভালো করে পড়ো। আবার এই শোন শোন তোমার আব্বা কেমন আছে? ভালো । ও এই শোন ফেরার পথে আমাদের বাড়ীতে এসো। এমনতরো হাজার আদর। তাদের পক্ষ থেকে । কিন্তু থেমে গল্প করলে স্যরের কাছে যেতে দেরি হয়ে যাবে যে। তাছাড়া আমি ছোটবেলা থেকে ব্যস্তসময় কাটাতে চাই। সময় পাই কম। সারাদিন কাজ, নয়ত পড়া। একারণেই সবার কাছ থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ানোর এই অপচেষ্টা। পশ্চিম পাড়ায় আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের বাটি। যেখানে আমি বিগত দু'বছর যাবত পড়ছি। এখন আমি ক্লাস সেভেন এ। স্যারের দেয়া বীজগণিতের সূত্রগুলো মনে মনে আওড়াচ্ছি। এ,বি সমান এ প্লাস বি ডিভায়ডেড টু হোল স্কয়্যার প্লাস এ মাইনাস বি ডিভাইডেড টু হোল স্কয়্যার। হঠাৎ দেখি শাহেদ এসে হাজির। আরে কেমন আছো। হ্যাঁ ভালো। আমি ওকে বলি, তুমি স্যারের কাছে যাবে জানলেতো আমি তোমার সাথে একসাথেই যেতাম। কিন্তু ওর কথা শুনে আমার খুব মায়া হয়। ও বলে জেঠিমা যদি জানতে পারেন যে আমি তোমার সাথে পড়তে গেছি তাহলে হয়ত খারাপ মনে করবেন। অমি বলি কেন? 'না আমিতো ভালো ছাত্র নই তাই আমার সাথে তোমার মেশামেশিটা হয়ত তিনি ভালোচোখে দেখবেননা।' আমি কেমন ছোট হয়ে যাই ওর কথায়। কেমন করে নিজকে অড়াল করে ফেলে। অসলে তখনো বুঝে উঠতে পারিনি যে বড় মনের মানুষগুলো আসলে নিজেকে ছোটভাবে উপস্থাপন করতেই অভ্যস্ত । শাহেদের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছেনা। দু;জনে স্যারের কাছে পড়ি। আবার বাড়ী ফিরে স্কুলের তাড়া। স্কুলের ফিজিক্যাল টিচার জনাব আব্দুল মজিদ সাহেবের সমানে দাঁড়িয়ে লেফট রাইটের পালা এবং আমার সোনার বাংলা গেয়ে গেয়ে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করার রিহার্সেল শেষে ক্লাস। শাহেদ আমার চেয়ে বছর দু'য়েকের বড় ছিলো। কিন্তু তার পড়া পিছিয়ে যাওয়ায় সে ক্লাস সিক্সে পড়ত। একদিন রোভার স্কাউট উপলক্ষ্যে আব্দুল মজিদ স্যার আমাদের বাছাই করলেন। শাহেদ সেদিন আসেনি কিন্তু বাড়ী ফিরলে আমার থেকে যখন শুনলো যে বাছাই চলছে এবং আগামী পড়শু পাশের স্কুলে মহড়া হবে। ব্যাস শাহেদ সব কাজ বাদ দিয়ে মেতে গেল রোভার স্কাউট নিয়ে। অনেক বেশী অধ্যবসায় ওর। একটা কাজ ধরলে সেটার পেছনেই লেগে থাকবে শেষ না দেখা অবধি ধরেই থাকবে। ওর ক্লাস ও নব ধারা বলে পরিচিত ছিলো। আমার বাড়ীর দেয়ালের সাথে লাগানো আমার চাচা যখন বাড়ী বিক্রি করে দিয়ে ঢাকায় চলে যায়। তখন শাহেদের বাবা বাড়িটি কিনে বসবাস শুরু করে। তখন অমি ক্লাস ফোর এ পড়তাম। সেই থেকে ওরা অমাদের সবচেয়ে কাছের পড়শী হয়ে আছে। বিপদে-আপদে, সুখে-আনন্দে সবার আগে শাহেদরাই আমদের সঙ্গী ।
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আমি আর এমন কে

যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন
২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন
রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন
চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন
ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।