ক্যানাডিয়ান দার্র্শনিক এবং যোগাযোগ তত্ত্ববিদ হার্বার্ট মার্শাল ম্যাকলুহান তাঁর Understanding Media: The Extensions of Man (1964), বইয়ে বলেছিলেন, প্রতিটি প্রযুক্তিগত আবিস্কার মানুষকে আরো একধাপ করে এগিয়ে নিয়ে গেছে। সব ধরণের কাজকে সহজ করে দিয়েছে। চাকার আবিস্কার মানুষের পায়ের এক্সটেনশান, তেমনি দূরবীন আবিস্কার চোখের এক্সটেনশান, লাউড স্পিকার কন্ঠস্বরের এক্সটেনশান। আমাদের আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের জন্য আর্শীবাদ বয়ে এনেছে। এটা মানুষের সৃষ্টি। আবার ক্ষেত্র বিশেষে এটা অভিশাপ হয়ে দেখা দিচ্ছে । সেটাও মানুষেরই সৃষ্টি। একটু সচেতন হলেই এগুলো রোধ করা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ আজকের দিনের প্রতিটি নাগরিকের অতীব প্রয়োজনীয় এটিএম বুথের কথাই বলি।

এটিএম(automated teller machine) ১৯৬০'র দশকে আমেরিকায় যাত্রা শুরু করলেও এর পরিচিতি ও বহুল ব্যবহার শুরু হয় ১৯৮৮ সালের দিকে। এর পর একে একে ক্যানাডা, অস্ট্রেলিয়া, বৃটেন, চীন, জাপান হয়ে ইন্ডিয়া। বংলাদেশে এটিএম বুথ চালু হয় ২০০০ সাল থেকে। এটিএম বুথ এবং এর ব্যবহৃত কার্ড আমদের দীর্ঘ কিউ করে সময় নষ্টের হাত থেকে বাঁচিয়েছে, আমাদের কাজের প্রয়োজনে যে কোন এলাকায় থাকি সেখানে থেকে টাকা উঠাতে পারি, ব্যাংক বন্ধ থাকলেও আমাদের টাকা উঠাতে পারি। সুন্দর কথা বৈকি। কিন্তু এই সুবিধাটুকু ভোগ করতে গিয়ে যে কী পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে যাচ্ছি আমরা তার খবর রাখে কয়জনা? যখন থেকে এটিএম বুথ চালু হয় তখন থেকেই এর সাথে অনেকগুলো সমস্যা জড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে বুথের কম্পিউটারে ‘নেটওয়ার্ক নেই’‘যান্ত্রিক ত্রুটি’, ‘নেটওয়ার্ক দুর্বলতা’, ‘টাকা না থাকা’ এগুলো কমন সমস্যা। এটিএম বুথ ব্যবহারের সময় ব্যাংক হিসাবে জমা থাকা টাকার পরিমাণ জানতে বার কয়েক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হতে হয়। কারণ অনেক সময়ই বুথের মেশিনের স্লিপ শেষ হয়ে যায়। কখনো আবার প্রিন্টার অকেজো থাকে। টাকা তোলার পরও জমা থাকা টাকার পরিমাণ জানার সুযোগ থাকে না তখন। অনেক সময় দেখা যায় বুথে ১০০ টাকার নোট থাকে না। আবার পাসওয়ার্ড দিতে বারকয়েক ভুল হয়ে গেলে শেষে কার্ডটি মেশিন ক্যাপচার করে ফেলে। তখন মহা বিপদে পড়তে হয়। টানা এক সপ্তাহ কার্ড ছাড়া চলতে হয়। কিন্তু এখানেই শেষ নয় সবচেয়ে ভয়াবহ সমস্যা রয়েছে দুটো। এক, বুথে উত্তোলিত টাকা জাল হওয়া। এই ফেইক নোটের বাজার বসিয়েছে হয়ত কোন এক চক্র। তারা বান্ডিলের ভেতর দিয়ে রাখে। সেখানে কোন লোক থাকেনা। কার নিকট অভিযোগ করা যাবে তা কেউ জানেনা। শেষে কোন এক মফস্বলের টং দোকানে পুরু কাঁচের চশমা পড়া এক বৃদ্ধ টিমটিমে হারিকেনের আলোয় দোকান পাতি সাজিয়ে বসে আছে। তার নিকটে নোটটি চালান করা। কিন্তু সেই বৃদ্ধকে ঠকিয়ে প্রকারন্তরে আমি আমার বাবা, চাচাকেই ঠকাচ্ছি। কিংবা দ্বিতীয় উপায় হিসেবে বড় কোন বান্ডিলের ভেতর চালান করে ব্যাংকে দেয়া মাত্রই তারা নোটটি পাঞ্চ করে দিচ্ছে। কী সুন্দর তাদের ব্যাংকিং ম্যানেজমেন্ট! নিজেরাই টাকাটা বুথে রাখছে আবার নিজেরাই নোট ছিদ্র করে দিচ্ছে। এর থেকে বেড়িয়ে আসার উপায় বের করা বড়ই কঠিন। কারণ আইন অনুযায়ী ফেইক নোটের বাহকই অপরাধী, একারণে প্রকৃত অপরাধীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে সবসময়।
দুই, বুথে টাকা উঠানোর সময় কার্ড এন্ট্রি করে কোড এবং টাকার অ্যামাউন্ট চাপার পর শব্দ হয় কিন্তু টাকা বের হয়না। অথচ ব্যালেন্স ঠিকই কমে যায়। কী ভয়ানক কথা! এই গতকালই শান্তি নগরের বাসিন্দা শারমিন ডেইজি আমার নিকট অভিযোগ করলেন, তার এলাকার ডাচ বাংলা ব্যংকের বুথ থেকে টাকা উঠানোর সময় ২০০০ টাকার নির্দেশ দেন। শব্দ হয় , ব্যালেন্স কমে কিন্তু টাকা বের হয়না। ব্যাস্ত গৃহিনীটি সেদিন ভালো করে বুঝতেও পারেননি। পরদিন টাকা উঠাতে গিয়ে ব্যালেন্স দেখে আঁৎকে ওঠেন। একই অভিযোগ করলেন গাজীপুরের বাসিন্দা মহব্বত। তিনি চৌরাস্তা বুথ থেকে টাকা উঠাতে গেলে তার ৯০০ টাকা ব্যালেন্স কমে যায় কিন্তু তিনি কোন টাকা পাননি। কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করলে তাকে জানানো হয়, যে ধরণের সমস্যা নিয়ে তারা কাজ করছেন এর ভেতরে তার অভিযুক্ত বিষয়টি নেই, তাছাড়া তিনি যে টাকা পাননি এর কোন প্রমাণ্ও উপস্থিত করতে পারেননি।
এ হচ্ছে আজকের আধুনিক যুগের প্রযুক্তির বিষ্ময়। আর সময় নেই বসে থাকবার। সবাই ঐক্যবদ্ধ হোন। এটিএম নিয়ে যে, যে ধরণের সমস্যায় পড়েছেন দ্রুত সেগুলো লিখে পাঠান। আপনার নাম, কোন এলাকার বুথে সমস্যাটি হয়েছে এবং কী সমস্যা বিস্তারিত লিখে কমেন্ট দিন। আপনার অভিযোগের ভিত্তিতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে এগুলো প্রভাবশালী দৈনিকে প্রকাশ করব।কেউ আলাদাভাবে জানাতে চাইলেও এই ঠিকানায় মেইল করুন আমরা আপনার অভিযোগ কর্তৃপক্ষের নিকট তুলে ধরে নিউজ করব।
[email protected]
**সবচেয়ে বেশী এটিএম বুথ রয়েছে ডাচ বাংলা ব্যাংকের । তাদের শুধু ঢাকা শহরেই ৭০৬টি এটিএম বুথ রয়েছে। সারাদেশে র্ফাস্ট ট্র্যাক এবং এটিএম মিলিয়ে ১৩৯৬টি বুথ রয়েছে। ইসালামী ব্যাংক এর সারা দেশে ১৭৮টি এটিএম বুথ বর্তমানে চলছে আরো ১৫০টি নতুন স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া স্ট্যান্ডার্ড চার্টারড, প্রাইম, ঢাকা, এসআইবিএল, প্রাইম, উত্তরা, ব্র্যাক, সোনালীসহ বেসরকারী ৫৩/৫৪ টা ব্যাংকের প্রায় সবগুলোরই এটিএমবুথ আছে, হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া। এবার সরল অঙ্ক করিয়া দেখুন কত লক্ষ লোক প্রতিদিন লেনদেন করছে এবং কত কোটি টাকার ক্ষতি তাদের হচ্ছে, যার কোন সমাধান কর্তৃপক্ষ দিচ্ছেনা।
*** সামু কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ পোস্টটি স্টিকি করার জন্য্।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১১ দুপুর ১:০৯