somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলার দুর্গা এই প্রথম টেমস্ পেলেন

০৩ রা অক্টোবর, ২০০৬ সকাল ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাঙালির ব্যবসাবুদ্ধি চিরকালই মেলা আর ফেরি করা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। কেনা-বেচার কষাকষিতে আর বেশি সুবিধা করতে পারলো না জাতিটা। খোদ কোলকাতায় বাঙালি নারীর কাছে শাড়ি বেচছে মাড়োয়ারিরা। ওদের বাণিজ্য-বুদ্ধির ভোজবাজিতে বাঙালি ব্যবসায়ীরা কবেই পাত্তাড়ি গুটিয়েছে। সেই গাধা-উটের যুগ থেকে কাবুলিরা পাহাড়-মরুভূমি ডিঙিয়ে এদেশে এসে নাকি লবণ-মরিচ বেচতো, সুদের ব্যবসা বা ব্যাংকিংটাও চালাতো। এবার বুঝুন তাহলে বাঙালির ব্যবসা-বুদ্ধির দুর্ভিক্ষ কেমন ঐতিহাসিক। তবে আমি ভাবছিলাম একটু উচ্চমার্গের ব্যবসা নিয়ে। এই যেমন ধর্ম-কর্ম। দুর্গাপূজাটা শুধু বাঙালি হিন্দুরা করে অন্য হিন্দুরা করে না একথা প্রথম যখন শুনেছিলাম তখন মুখ হাঁ হয়ে গেছিলো বিস্ময়ে। হা দুর্গা! কিন্তু পরে ভাবলাম ধর্মাবিষ্কারে বাঙালিও একটু-আধটু অবদান রেখেছে, সে কম কি। মোটামুটি ছবি, গল্প, আর মূর্তি মিলিয়ে প্যাকেজটা খারাপ না। বিশেষ করে আজকালকার মিডিয়ার তড়পড়ানির যুগে ভালো যায়। মূর্তিগুলোয় মডেল, সেলিব্রিটি ভাব আছে, লেটেস্ট ফ্যাশন ডিজাইনের বিষয় আছে। ঢাকের নৃত্যতালের ছন্দ আর অঞ্জলি দেয়ার ভঙ্গিটাও বেশ আপমার্কেট মনে হয়। (দক্ষিণ লন্ডনের পূজারিরা সেরকম কায়দা করে ওয়েবসাইটও বানিয়েছে: http://srsd.co.uk/ )। কিন্তু বাঙালির দুর্গার কপালে গঙ্গা নদীই শেষ ভরসা। টেমস, মারে, হোয়াংহো, সিন-পৃথিবীব্যাপী কত জলের ধারা। দুর্গা সেসব জলের ছোঁয়া পাবেন না, প্রতিবার দূষিত গঙ্গাতেই তিনি বিসর্জিত হবেন- একে বাঙালির ব্যবসা-বুদ্ধির অভাব বলেই মনে হয়। (নেপাল ও ভুটানেও দুর্গাপূজা হয়। এর কৃতিত্ব বাঙালিকে দেব নাকি হিমালয় আর গঙ্গাকে তা এখনও ঠিক করতে পারিনি।)

ধর্মের যে একটা প্রচার-প্রসারের বিষয় আছে, এ আর নতুন কি। নিন্দুকের মত শোনাতে পারে, তবে সমব্যথী হলে ধরে নিতে পারেন রস করেই একে আমরা ধর্ম-ব্যবসা বলতেই ভালবাসি। তো ধর্মের যে ব্যবসা তা বাঙালি হিন্দুরা আর করবে কি করে, ব্যবসাটাই যে সে বুঝে কম। হিন্দু ও বাঙালি, দুটোই জন্মসূত্রে হতে হয়- দুর্গার সীমাবদ্ধতার জন্য এইতো মস্ত দুর্ভাগা বিষয়। বাঙালি মুসলমানদের মধ্যেও যারা হিন্দু ধর্মানুসারীদের কাছাকাছি, কোলকাতা-কেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক বলয়ে বাঁধা তারাও ব্যবসার অলি-গলি চিনতে পারেন না। (মৃত্তিকাবিজ্ঞানীরা হয়তো মাটির মধ্যে এর কোনো কার্যকারণ খুঁজে পাবেন)। যমুনা পাড়ি দিতে পারলেও চকবাজারে পথ তারা পাবেন না নিশ্চিত। বাগেরহাটের আতিয়ার ভাইকেই এ খোঁচাটাই দিতাম সবসময়। 'এতো বড় ষাটগম্বুজ মসজিদ, বিশাল দীঘি, কালাপাহাড়-ধলাপাহাড় কুমির, তবু তো খান জাহান আলীর নামটা ঠিকমত ফাটাতে পারলেন না'। সিলেটের শাহজালাল-শাহপরান, চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোসত্দামি-আমানত শাহের ধামাকার কাছে খান জাহান আলী কেমন স্লো-আইটেম হয়েই রইলেন। সিলেটিরা তো গণতান্ত্রিক মিথ বানিয়ে ফেলেছেন। 'শাহজালালের সিলেট সদরে যে দল জেতে সেই দলই ক্ষমতায় যায়'। ভোটের বাজারে শাহজালাল তাই একচেটিয়া।

দুর্গায় ফিরে আসি। বাঙালি হিন্দুরা রবীন্দ্রনাথের কথাকে ম্লান করে দিয়ে এখন নানা দেশে আস্তানা গেঁড়েছেন। আমেরিকা-ইউরোপের নানা দেশে দুর্গাপূজাও হচ্ছে। এই লন্ডনেও হচ্ছে প্রায় 30 বছর ধরে। কিন্তু এই প্রথম বাঙালির মা দুর্গা টেমস্ পেলেন। সব সংবাদ মাধ্যমেই ফলাও করে সংবাদটা প্রচার করা হয়েছে। আমি ভাবছিলাম নদী বাঁচাও আন্দোলনের কর্মীরা না বাঙালি-হিন্দুর এই অগ্রগতিতে এসে বাগড়া লাগায়। বিবিসি'র প্রতিবেদক দেখলাম, প্রতিবেদনের শেষ বাক্যে এসে আশংকামুক্ত করলেন। জানালেন, ভয়ের কিছু নেই, এই দুর্গা বায়োডিগ্রেডেবল।


(দুর্গার জন্য দু:খগাঁথা: ওরা স্থায়ীরূপ ভালো বাসে না মা, সবকিছুপচে গলে যাক, তাই চায়।)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লাইকা লেন্সে তোলা ক’টি ছবি

লিখেছেন অর্ক, ১৭ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৩০




ঢাকার বিমানবন্দর রেল স্টেশনে ট্রেন ঢোকার সময়, ক্রসিংয়ে তোলা। ফ্ল্যাস ছাড়া তোলায় ছবিটি ঠিক স্থির আসেনি। ব্লার আছে। অবশ্য এরও একরকম আবেদন আছে।




এটাও রেল ক্রসিংয়ে তোলা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কার গল্প জানেন ও কার গল্প শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৫:৩১



গতকাল সন্ধ্যায়, আমরা কিছু বাংগালী ঈদের বিকালে একসাথে বসে গল্পগুজব করছিলাম, সাথে খাওয়াদাওয়া চলছিলো; শুরুতে আলোচনা চলছিলো বাইডেন ও ট্রাম্পের পোল পজিশন নিয়ে ও ডিবেইট নিয়ে; আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাবাকে আমার পড়ে মনে!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৭ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২

বাবাকে আমার পড়ে মনে
ঈদের রাতে ঈদের দিনে
কেনা কাটায় চলার পথে
ঈদগাহে প্রার্থনায় ..
বাবা হীন পৃথিবী আমার
নিষ্ঠুর যে লাগে প্রাণে।
কেন চলে গেলো বাবা
কোথায় যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×