somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রক্তাক্ত ছবিটি প্রত্যাহার করে উদাহরণ সৃষ্টি করুন প্রিয় ক্যাপ্টেন

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম, আপনাকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাই। ঈদ মুবারক। এ ঈদে আপনি আমাদের জন্য কী বার্তা রেখেছেন সেটা দেখার জন্য আজ আপনার ফেসবুক পেজে ঢুকেছিলাম। অন্যদিনও এরকম এক দুইবার ভিজিট করি। আপনার ছবি/পোস্ট নিউজফিডে ভাসলেও কখনও কিছু না জানলাম কিনা সেই অাশংকায় পেজেও ঘুরে আসি। আমার নিউজফিডে যে আপনার পোস্ট/ছবি ভাসে এর কারণ আমি আপনার পেজ লাইক করেছি। জানা-অজানা অনেক গ্রুপে আমাকে নিয়মিত এড করা হলেও আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে যেসব পেজ লাইক করেছি তার মধ্যে আপনারটি অন্যতম।
আমার লাইক-ডিজলাইকে আপনার কিছু যায় আসে না কারণ আমি গুরুত্বপূর্ণ কেউ নই। তবে আমার মতো লাখ লাখ লাইকেইতো আপনার বিশাল ফ্যানগোষ্ঠি। আলাদাভাবে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দাবি করতে পারে না। কিন্তু এক এক করে যোগ হয়ে বিশাল যে সংখ্যা সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি তার ৫০ লাখ ভাগের এক ভাগ হয়ে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র যে ভগ্নাংশ তার জন্যও গৌরব বোধ করি। কারণ আপনি আমাদের প্রিয় স্বদেশকে গৌরবান্বিত করেছেন।
আপনি যখন ক্রিকেট মাঠে একটি শট খেলেন, যখন উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে একটি ক্যাচ নেন বা স্টাম্পিং করেন, কিংবা অধিনায়ক হিসেবে টস করতে নামেন; প্রতিবার আপনার ক্যারিয়ারের মুকুটে শুধু যে একটি করে নতুন পালক যোগ হয় তাই নয়, জাতি হিসেবেও আমরা গৌরবান্বিত হই। এ কারণেই আপনার কোটি কোটি ভক্ত। ফেসবুকে হয়তো আপনি শুধু তার একটি অংশ টের পান। কিন্তু ফেসবুকের বাইরেও রয়েছে বিশাল ভক্তকূল।
শুধু আপনি বা সাকিব আল হাসান অথবা মাশরাফি বিন মর্তুজাই নন, এমনকি আগামীর তারকা সৌম্য সরকার বা সাব্বির রহমানও বাংলাদেশের মানুষের কাছে আইডল। আপনারা টের পান কিনা জানি না, নতুন প্রজন্মের কাছে আপনারা একেকজন মহানায়ক। এর কারণ ক্রিকেটে আপনাদের হাত ধরে আমাদের অবিস্মরণীয় সাফল্য। বাচ্চারা আপনাদের ক্যামোন ফ্যান তার উদাহরণ আমি প্রতিদিন বাসায় পাই। খাবারের আগে আমার মেয়েটি সাকিবের হ্যান্ড ওয়াশের বিজ্ঞাপনের কথা বলতে বলতে হাত ধোয়। আমি ইন্টারনেটের গতি নিয়ে কমপ্লেইন করলে আপনার বিজ্ঞাপনের উদাহরণ দিয়ে অপারেটর চেঞ্জ করতে বলে। এমনকি বাসার টিভি ফ্রিজও চেঞ্জ করার পক্ষে সে।
এসব কথা বলার কারণ নতুন প্রজন্মের কাছে আপনাদের মানসিক প্রভাবটা বোঝানোর জন্য। সেটা আপনারা কম বোঝেন মোটেই তা নয়। তারপরও হয় না যে হঠাৎ একটা ভুল হয়ে যায়। এরকম একটা ভুল আজ আপনি করেছেন প্রিয় অধিনায়ক। যে আমি সবসময় আপনাদের পক্ষে গলাবাজি করি সেই আমিই বলছি, আপনি একটা ভুল করেছেন। ফেসবুকে নিজ হাতে গরু জবাইয়ের যে ফটো আপনি পোস্ট করেছেন তা অনুচিত হয়েছে।
আপনি বা আপনার কোনো কোনো ভক্ত হয়তো বলতে পারেন, ফেসবুক যে কোনো ব্যক্তির জন্য ব্যক্তিগত বিষয়, তিনি কি ছবি দেবেন বা দেবেন না তা তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বা রুচির বিষয়। অবশ্যই তাই। আপনার স্বাধীনতা বা রুচির বিষয়ে কোনো বক্তব্য নেই। কিন্তু আপনি যে কেউ নন, আপনি মুশফিকুর রহিম, বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক, এদেশে এমন একজনকে পাবেন না যে আপনাকে ঘৃণা করে। ফেসবুকেও আপনি একজন পাবলিক ফিগার। তাই আপনার মনে রাখা উচিত ছিলো যে গরু জবাইয়ের রক্তাক্ত ওই দৃশ্য অনেকের জন্য অসহনীয় হতে পারে।
না, মি. মুশফিকুর রহিম, আমি আপনাকে পশু কোরবানি করতে না করছি না। সেটা ধর্মীয় কারণে আমি আপনি সবাই করি। আমাদের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে আপনি নিজেই গরুটা জবাই করেছেন অথবা জবাইয়ের ভাণ করেছেন। যদি ভাণ করে থাকেন তাহলে ইসলাম ধর্মের ওয়াজিব একটি বিষয় নিয়ে আপনি মজা করতে পারেন না।আবার যদি নিজেই জবাই করে থাকেন তাহলে ভাবুনতো ইসলাম আপনাকে গরু জবাইয়ের রক্তাক্ত এই গৌরব জাহিরের কোনো সুযোগ কি দিয়েছে?
ধর্ম নিয়ে এসব বিতর্ক বাদ দিলেও সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান বলে, আপনার মতো পাবলিক ফিগারের ফেসবুকে এরকম রক্তাক্ত ছবি দেওয়া খুবই ভুল হয়েছে। মাংস খেলেই যে সবাই রক্তারক্তি পছন্দ করবে তা নাও হতে পারে। ধর্মীয় অনুষঙ্গ হলেও, খেয়াল করে দেখুন, কোনো সুস্থ গণমাধ্যম পশু জবাইতো দূরের কথা, কোরবানির পশুর রক্তও দেখায় না। এটাই সাধারণ সভ্যতা। ফেসবুক ব্যক্তির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হলেও আপনার মতো পাবলিক ফিগারের জন্যও গণমাধ্যমের সাধারণ নীতি-নৈতিকতা প্রযোজ্য হবে। কারণ আপনার মতো পাবলিক ফিগার নিজেই একটা প্রতিষ্ঠান। আপনার পেজে ডেইলি ভিউ প্রতিষ্ঠিত অনেক গণমাধ্যমের চেয়ে অনেক বেশি। অডিয়েন্সের উপর আপনার প্রভাবও তাই তাদের চেয়ে বেশি হওয়ার কথা। আর কোরবানির পশুর রক্ত ত্যাগের বিষয়, পাবলিসিটির বিষয় নয়; সেটাও নিশ্চয়ই আপনি ভালো বুঝবেন।
প্রিয় মুশফিক, আপনাকে তাই ওই ছবিটি প্রত্যাহার করে নিতে অনুরোধ করছি। হয়তো প্রশ্ন উঠবে, এখন আর তুলে নিয়ে কী হবে? লাখ লাখ মানুষতো দেখেই ফেলেছে। সত্য যে এ অর্থে প্রত্যাহার করে আর কোনো লাভ নেই। কিন্ত নেতির মধ্যেও যেমন ইতিবাচক বিষয় থাকতে পারে তেমনি আপনার এই ছবি তুলে নেওয়ার মাধ্যমেও নতুন প্রজন্মের কাছে বড় এক বার্তা পৌঁছাবে। তারা যখন জানবে যে মুশফিকুর রহিম এরকম একটি ছবি পোস্ট করে ঘোষণা দিয়ে তুলে নিয়েছে, তখন তারা এ শিক্ষাটাও পাবে যে ফেসবুকে কোন ছবি পোস্ট করা যায়, কোন ছবি যায় না, কোন ছবি দেওয়া অনুচিত।প্রিয় অধিনায়ক, আপনাকে এই অসাধারণ উদাহরটি সৃষ্টির বিনীত অনুরোধ জানাই। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, আমরা আপনাকে কতোটা ভালোবাসি, আপনাকে কতোটা ভালোবাসে বাংলাদেশ যার এক গৌরবের নাম মুশফিকুর রহিম।
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×