একজন লেখক/কবি/সাহিত্যিক যদি একবার লিখেই সে লেখার জন্য আজীবন তিনি এবং তার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রয়্যালটি পেতে পারে, একজন বাড়িওয়ালা যদি একবার বাড়ি তৈরি করেই ওনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রয়্যালটি করে যেতে পারে, বাবার সম্পত্তি বা ব্যবসা বা রাজনীতির সুবাদেই যদি তার সন্তান এবং প্রজন্মের সেই সম্পত্তি, ব্যবসা বা রাজনীতিতে অবাধ বিচরণের সুযোগ থাকে, তবে একজন মুক্তিযোদ্ধার এবং তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কেন এই দেশে অগ্রাধিকার থাকবে না! কেন তাদেরকে পদে পদে অপমান করা হবে! স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরেও একজন মুক্তিযোদ্ধাকে বারবার কেন মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার প্রমান দিতে হবে? ধরে নিলাম, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও অমুক্তিযোদ্ধা মিলিয়ে টোটাল ২.৫ লাখ রয়েছেন। এই ২.৫ লাখ ব্যক্তি থেকে যাচাই করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সনাক্তকরণ কি এতই কঠিন যে ৪৭ বছরেও মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা করা সম্ভব হয় নি!!
৩০% কোটা থাকার পরেও বাস্তবে তার সঠিক প্রয়োগ নেই। শুধুমাত্র আইওয়াশ করা হয়। কোন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান যদি কোন রকমে চাকুরী পেয়েও যায়, তাকে যেতে হয় নানারকম প্রতিকূল পরিবেশের মধ্য দিয়ে, যার অনেকটাই কেউ জানে না। যাচাই বাছাইয়ের নামে প্রায়শই মুক্তিযোদ্ধাদের হতে হচ্ছে নানারকম হয়রানি।
বয়সের ভারে ন্যুজ, একসময় উদ্দিপ্ত, তেজস্বী, বর্তমানের ঘোলাটে চোখ, অসুস্থ, অবহেলিত, দিকভ্রান্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মন্ত্রণালয়ে ঘোরাঘুরি, এ রুম থেকে ঐ রুম, এ টেবিল থেকে ও টেবিল, কোথাও একটু আশার আলো দেখলেই সেদিকে ছুটে যাওয়া, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার কারনে দেখেছি কত কয়দিন। দেশের সূর্য সন্তানদের শেষ বয়সে এই পরিনতি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমি মেনে নিতে পারিনি। মাত্র ২.৫ লক্ষ লোকের জন্য একটি আলাদা মন্ত্রণালয় হবার পরেও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকার এবং একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান প্রধানমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও মুক্তিযোদ্ধাদের এই পরিনতি মেনে নেয়া যায় না!!
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রতিটি জেলায় One Stop Service booth করা প্রয়োজন ছিল আরো অনেক আগেই। প্রতিজন মুক্তিযোদ্ধার জন্য থাকা উচিৎ ছিল আলাদা আলাদা ফাইল। মুক্তিযোদ্ধাদের আবেদন করা প্রতিটি ইস্যু সর্বোচ্চ ২১ দিনের মধ্যে সমাধান করার মত শক্তিশালী কর্ম পরিকল্পনা ও দক্ষ, সৎ জনবলের প্রয়োজন। ডিজিটাল বাংলাদেশের রুপায়নের পথে এই দাবী কি অন্যায্য? মন্ত্রনালয়ে আগত মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যার্থে মন্ত্রনালয়ের ফ্রন্ট ডেস্ক আরো উন্নত করা উচিৎ। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি পূর্ন সন্মান রেখে এবং তাদের প্রতি নমনীয় ও সহযোগিতা মূলক আচরন করে সেবা দেয়া উচিৎ। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিবাচক উপস্থাপন করে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্ত সন্মান দেয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি।
দেশের পতাকা, মানচিত্র অত্যাচারী পাকিস্তানি হানাদারদের কাছে থেকে ছিনিয়ে আনা মুক্তির জয়গান গাওয়া এই মানুষগুলো, আমার বাবা, আমার দাদা কি জাতীর কাছে এতটুকু সন্মান, সহানুভূতি পেতে পারে না!! বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক ও দাপ্তরিক জটিলতায় কোন একটি ইস্যু নিয়ে মন্ত্রণালয়ে আসা আমার বাবাকে কেন বুক ভরা চেপে রাখা কান্না আর একরাশ অভিমান নিয়ে বলতে হয়,
"আমাকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দিন। আমার সব সুযোগ সুবিধা ফেরত নিন। আমি কোন সুবিধা চাইনা, শুধু সন্মানের সাথে বাঁচতে দিন। আমি মুক্তিযোদ্ধা সেটি বারবার প্রমান দিতে দিতে আমি ক্লান্ত। আর পারছি না। আমাকে মুক্তি দিন।"
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:২৩