শামছুল হক রাসেল
অফিসে একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে কখন যে চুপিসারে কাকে ভালো লেগে যায় তার কোনো ঠিক নেই। অফিসে সমস্যার উৎস হয়ে দাঁড়ায় সহকর্মীর সঙ্গে এ ধরনের
ভালোলাগার সম্পর্ক। বাধা আসে আপনার ক্যারিয়ারের সিঁড়িতে। অফিসের নিয়মকানুনের বেড়াজালে এই রোমান্স এবং নিজের ক্যারিয়ারকে পাশাপাশি
এগিয়ে নেওয়ার বিষয় নিয়ে আজকের প্রতিবেদন_
ইশিকা কখনো সেই সকালটাকে ভুলতে পারবে না। নিজের কেবিনে বসে ফাইলগুলো চেক করছিল সে। হঠাৎ দরজা ঠেলে ঢুকেছিল তমাল, অফিসের নতুন ডিভিশনাল ইনচার্জ। প্রথম দেখাতে ভালো লাগা শুরু, যদিও তমাল পদাধিকারে ইশিকার এক ধাপ নিচে। শ্যামলা বর্ণের লাজুক কিন্তু কাজের ব্যাপারে ভীষণ সিরিয়াস আর ডেডিকেটেড। তাকে চিনতে বেশি দেরি হলো না ইশিকার। দিনের শেষে গ্রুপ মিটিংয়ে ঝগড়া, ফরেন ডেলিগেটদের জন্য একসঙ্গে প্রেজেন্টেশন তৈরি করা, কোনো সমস্যায় পড়লে একে অন্যকে তৎক্ষণাৎ ফোন করা_ এভাবেই কেটে গেল পুরো একটি বছর। এর মধ্যে ওরা দুইজন অসংখ্যবার কফি খেতে গেছে বিএফসি অথবা এসপারাগাসে। কখনো টিমের সঙ্গে, কখনোবা শুধু দুইজনে। এছাড়া স্পেশাল অকেশনে দুইজনে মিলে আশুলিয়া কিংবা ধানমণ্ডির লেকে ডিঙ্গির মধ্যে অবসর সময় কাটিয়েছে। এক সময় ইশিকা নিজেই বুঝতে পারল, অফিসই হোক বা অফিসের বাইরে হোক তমালকে ছাড়া তার এক মুহূর্ত ভালো লাগে না। সে জন্য জন্মদিনে তমাল যখন তাকে প্রোপোজ করল, তখন তার মনে হলো এমন একটি খুশির মুহূর্ত জীবনে খুব আসেনি। দুইজনে দুইজনের মধ্যে পরিপূর্ণতা খুঁজে পেলেও বাদ সাধল অফিস। অফিসের সহকর্মীরা ওদের সম্পর্কটা কী চোখে দেখবে সেটা নিয়ে সন্দেহ ছিল দু'জনেরই। তাছাড়া অফিসের কাজের চাপও ছায়া ফেলছিল ওদের ব্যক্তি জীবনে। নিজেদের ডেজিগনেশন, পার্কস, সেলারি নিয়েও একটা সূক্ষ্ম চিন্তায় পড়ে গেল ওরা। এসব সমস্যাকে সঙ্গী করেই টিকে রইল ইশিকা আর তমালের অফিস রোমান্স। অফিসে সহকর্মীর প্রেমে পড়ার ঘটনা এতই সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে যে, এ ব্যাপার নিয়ে এখন আর কেউ ভ্রূ কুঁচকান না। কিন্তু সমস্যার উৎস হয়ে দাঁড়ায় সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্কের ওপর এই রোমান্সের প্রভাব এবং নিজেদের সম্পর্কের সমীকরণে রদবদল। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে অফিস রোমান্সের বিরুদ্ধে কড়াকড়ি নিয়ম আছে। সেজন্য অফিস রোমান্স হ্যান্ডল করার জন্য চাই একটু বেশি সহনশীলতা এবং রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট স্কিল।
কী করবেন ও কী করবেন না
যদি অফিসে সহকর্মীদের মধ্যে বিয়ে আইনবিরুদ্ধ হয়, তাহলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিয়ের আগেই এ বিষয়ে আলোচনা করুন। সম্ভব হলে অফিসের অন্য শাখা বা ডিপার্টমেন্টে ট্রান্সফার নিয়ে নিন। যদি কর্তৃপক্ষ অনড় থাকেন, তা হলে একজনকে অন্য চাকরি খুঁজতেই হবে। যেকোনো একজনকে অবশ্যই এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
মনে রাখবেন সবার আগে কাজ অর্থাৎ ক্যারিয়ার। তাই অফিসের রেগুলার রুটিনে কোনো পরিবর্তন আনবেন না। কাজের ফাঁকে প্রিয় মানুষটির সঙ্গে গল্প করার বাসনা প্রবল হয়ে উঠলেও অফিস ছুটির অপেক্ষা করুন। নিজের ব্যবহারে কোনো তারতম্য যাতে না আসে, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখুন। টিফিন আওয়ারে দুইজনে আলাদা বেরিয়ে না গিয়ে দল বেঁধে খেতে যাওয়াই ভালো। একসঙ্গে যদি খাওয়াই লাগে তাহলে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিন। কেবিনে, লিফটে বা অফিসের কোনো জায়গায় যদি দুইজনে একান্তে থাকেন, তাহলে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ হারাবেন না। এতে করে আপনার ক্যারিয়ারে দাগ পড়তে পারে। হুমকির মুখে পড়তে পারে আপনার ভবিষ্যৎ। অফিসের ভেতরে এমপ্লয়িদের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতা কোনো অফিস কর্তৃপক্ষই সুনজরে দেখেন না।
রোমান্সের খাতিরে অফিসের কাজে ফাঁকি দেবেন না। কাজের সময় অযথা ফোন করে, এসএমএস পাঠিয়ে বা ই-মেইল করে নষ্ট করবেন না। অফিসের ই-মেইল বা স্টেশনারি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করবেন না। বরং যে সময়টুকু অফিসে রয়েছেন, সে সময়টুকু বেশি করেই কাজে মন দিন। অফিস কর্তৃপক্ষও আপনার ওপর খুশি থাকবেন এবং সঙ্গীর কাছেও একটি পজিটিভ ইমেজ সৃষ্টি হবে।
অফিস এবং ব্যক্তিগত জীবন আলাদা করতে শিখুন রোমান্সের প্রথম দিন থেকেই। অফিসের বাইরে যে সময়টুকু দুইজনে একসঙ্গে কাটাচ্ছেন, সে সময় অফিসের প্রসঙ্গ টেনে আনলে ক্রমেই রোমান্স একঘেয়ে হয়ে উঠবে।
অফিসে আসার পথে একসঙ্গে আসতে পারেন। প্রয়োজনে ছুটির পরে তাকে বাসায় পেঁৗছে দিন। যদি অফিসের কোনো কাজ থাকে সে কাজটা আগে শেষ করুন। সেটা রেখে কখনোই রোমান্সের দিকে এগুবেন না। এতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে নতুন কোনো ঝামেলা।
সুতরাং অফিসিয়াল নিয়মকানুন মেনে অফিস রোমান্স ভালো। মনে রাখা উচিত সবাই কাজ করে নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য। একটু সচেতন থাকলে সহকর্মী বা অফিসিয়াল কোনো সিদ্ধান্তই আপনাদের রোমান্সের বিপক্ষে যাবে না। পাশাপাশি গড়তে পারেন নিজের উজ্জ্বল ক্যারিয়ার।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




