শিশুর মধ্যে একই সঙ্গে বিভিন্ন বিকাশপ্রক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। শিশুদের মধ্যে সাধারণত যেসব ক্ষেত্রে বিকাশ ঘটে সেগুলো হচ্ছে_ শারীরিক বিকাশ (শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সামঞ্জস্যপূর্ণ বৃদ্ধি, ওজন, শক্তি ইত্যাদি)।
মানসিক বিকাশ (চিন্তাশক্তির ক্ষেত্রে সহনশীলতা ও খোদাভীরুতা, সুষ্ঠু আচরণের চিন্তা, মনোযোগ, একাগ্রতা, কার্যকারণ সম্পর্কে ধারণা, সমস্যা সমাধানের শক্তি ইত্যাদি)। ভাষাগত বিকাশ (কোনো কিছু করার ক্ষমতা, কথা বলার ক্ষমতা, কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করার ক্ষমতা ইত্যাদি)। সামাজিক বিকাশ (অন্যদের সঙ্গে মিশতে পারা, সামাজিক রীতিনীতি জানা ও শেখা, কুশল বিনিময়, দলীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা, সামাজিক ও নাগরিক কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া, সমবয়সীদের সঙ্গে খেলাধুলায় অংশগ্রহণ, জামাতে নামাজ আদায় করা ইত্যাদি)। আবেগ-অনুভূতির বিকাশ (সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, উচ্ছ্বাস, আগ্রহ ইত্যাদি)। নৈতিক বিকাশ (ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ, নৈতিক-অনৈতিক, অন্যের জন্য ভালো কিছু করা, অন্যের ক্ষতি হবে এমন কাজ না করা ইত্যাদি)। শিশুর এই বিকাশের দিকগুলো স্বাভাবিক রাখতে হলে আর্থিক সামর্থ্যের চেয়ে আন্তরিকতার বিষয়টিই বেশি প্রয়োজন। আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর জীবনে শিশুদের সঙ্গে বিভিন্ন আচরণের মধ্য দিয়ে শিশু বিকাশের প্রতি আন্তরিকতার দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে রেখে গেছেন। আমাদের উচিত তা অনুসরণ করা।
মহাগ্রন্থ আল কোরআন সব শ্রেণীর মানুষের জন্য সার্বিক বিষয়ে সব ক্ষেত্রে সহায়ক ও মৌলিক গ্রন্থ হিসেবে ভূমিকা পালন করে। শিশুর শারীরিক বিকাশের পাশাপাশি আত্মিক ও মানসিক বিকাশ একটি অপরিহার্য বিষয়। এক্ষেত্রে মহাগ্রন্থ আল কোরআন অতীব কার্যকর ভূমিকা পালনকারী। আর এর ইঙ্গিত পাওয়া যায় আল্লাহ্ তা'আলার পবিত্র বাণীতে। তিনি মানবজাতিকে কোরআন শিক্ষা প্রদান সম্পর্কে ইরশাদ করেন_ তিনি (আল্লাহ) দয়াময়। যিনি কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন। মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের বয়ান শিক্ষা দিয়েছেন। (অর্থাৎ বিভিন্ন বিষয়কে ব্যাখ্যাসহ বর্ণনা করার যোগ্যতা প্রদান করেছেন)। সূরা আর রহমান-১-৪।
আল্লাহ্ তা'আলা প্রতিটি শিশুকে স্বাতন্ত্র্য প্রতিভা দিয়ে সৃষ্টি করেন। তাই আমরা লক্ষ্য করি বিভিন্ন মানুষের প্রতিভা বিভিন্নভাবে বিকশিত হয়। এক বিষয়ে সবার যোগ্যতা সমানভাবে পরিলক্ষিত হয় না। তাই এ সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের জন্য শিক্ষা-দীক্ষা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এ জন্যই আল্লাহ্ তা'আলা পবিত্র কোরআন অবতরণের সূচনা করেন ইকরা অর্থাৎ 'পড়' শব্দ দিয়ে। আল্লাহ্ তা'আলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, পড়, তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন জমাট রক্ত থেকে। পড়, আর তোমার প্রতিপালক সম্মানিত, যিনি কলম দিয়ে শিক্ষা দেন। তিনি মানবজাতিকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা তারা জানত না। সূরা আলাক-১-৫।
তাই শিশুদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের জন্য তার মেধাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার জন্য উপযোগী শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থা করা অভিভাবকের অপরিহার্য কর্তব্য। তবে দীন ও দুনিয়ার প্রাথমিক প্রয়োজনীয় শিক্ষা সমানভাবে সব শিশুকেই দিতে হবে। গর্ভাবস্থায় শিশুর শারীরিক বিকাশ ও আকৃতি গঠন বিষয়ে আল কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে_ তিনিই তো ওই সত্তা যিনি তোমাদের মায়েদের গর্ভে নিজের ইচ্ছা মতো আকৃতি গঠন করেন। তিনি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই। তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। সূরা আল ইমরান-৬।
শিশুর যথাযথ বিকাশ সাধনের জন্য অভিভাবকদের প্রতি মহানবী (সা.)-এর নির্দেশনা, পিতার ওপর সন্তানের অধিকার হলো তাকে লেখাপড়া শিক্ষা দেওয়া, সাঁতার শিক্ষা দেওয়া, তীর নিক্ষেপ শিক্ষা দেওয়া এবং তাকে ভালো ও পবিত্র খাবার খাওয়ানো। বায়হাকি। তাই অভিভাবককে শিশুর গুণগত বিকাশ সাধনের জন্য উলি্লখিত দায়িত্বগুলো অবশ্যই পালন করতে হবে।
লেখক : সাইয়্যিদ জুলফিকার জহুর, খতিব, মসজিদুত তাকওয়া, ধানমণ্ডি, ঢাকা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




