somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প দা তি ক

০৫ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


লিংক-----পদাতিক/৯

১০
রেল বস্তির মানচিত্রে সামনের দিকে কিছুটা খোলা জায়গা। তার মধ্যে একটা পাড় বাঁধানো বড় কুঁয়ো। বাকি খোলা জায়গাটা বস্তির বাচ্চাদের। ভোট আসলে মাঝে মধ্যে সেখানে রাজনৈতিক দলের জমায়েত হয়। তারপরেই রাস্তা। আর রাস্তার ধারেই মালার মতো নানা কিসিমের ছোট বড় দোকান। এই দোকানের সারি রাস্তা ধরে অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত। সন্ধ্যেবেলা দূর থেকে দেখলে আলোর মালার মতো লাগে। তখন ভিড়ও থাকে।

এই অঞ্চলের খদ্দেরদের অনেককেই সুবোধকে চেনে। চিনে নিতে হয়েছে।সুবোধ আসার কিছুদিন পর থেকেই ঊর্মিলার জীবিকার বদল ঘটে গেছে।হলদিবাড়ি লোকালে যাতায়াত,ঝুড়ি ভর্তি সবজি, নিত্য নতুন উৎপাত, শরীরী অপদস্ততা, তার উপর ঘরের ছানাপোনাদের টান—এই সমস্ত কিছু ছেড়ে ছুঁড়ে ঊর্মিলা এখন রাস্তার পাশে তেলে ভাজার দোকান দিয়েছে। এর মূলে আছে সুবোধ। কিছুদিন যাবৎ সুবোধকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে তার জেগে ওঠার অভ্যাস। পেছনে আনাড়ী হাতের সাহায্য ছাড়াও রয়েছে তার সতর্ক উপস্থিতি। যদিও স্বভাবে সে কিছুটা উদ্যত, কিন্তু বুদ্ধিনির্ভর বটে। ফলে প্রথম প্রথম সুবোধকে নিয়ে ওঠা কথা এখন সব ঝিমিয়ে পড়েছে।অবশ্য সবারই আত্মরক্ষার ব্যস্ততাও সেই সব কথা কিছুটা টেনে নিয়েছে। রয়ে গেছে সুবোধ, ঊর্মিলার এক সম্পর্কের ভাই হয়ে। যদিও প্রতিবেশী ময়না টগরদের কাছে হয়তো এখনো সে ঊর্মিলার ‘নয়া নাঙ’হয়েই আছে। তবু এতে বিপদের কিছু নেই। প্রতিবেশী গোপাল,অধীর বা বসন্তদের কাছে ‘শালাবাবু’ হয়ে মিশে আছে। এটা ঊর্মিলার পক্ষে বড় পাওনা।

কল্পনাথ একজন চেনা খদ্দের।প্রতিদিন দেখা যায় প্রায় একই দৃশ্য—মাতাল কল্পনাথ বাড়ি যাওয়ার সময় ঊর্মিলার কাছে ক্ষমা চায়।কেন চায় ঊর্মিলা জানে না।ভাবে মাতালের এটাই বুঝি দস্তুর।অভ্যস্থ হাসিতে ঊর্মিলাও কখনো কখনো বলে—হ, হ, যান ওখন, বাড়ি যান।
কিন্তু আজ কল্পনাথ যায় না। কথা বলার একটু সুযোগ পেয়েই শুরু করে বকবক। নীরবে ঊর্মিলাকে দোকান সামলানোর ফাঁকে ফাঁকে শুনে যেতে হচ্ছে তার বকবকানি। মাঝে মাঝে তার ইচ্ছে হয় তেলে ভাজার ঝাঝরিহাতাটা দিয়ে ওকে তাড়া করতে। কিন্তু দোকান বলে কথা। মাথা গরম করলে পেট চলবে না। এই সময় সুবোধটা যে কোথায় থাকে।
শোনা যায় কল্পনাথের মাছের আড়ত আছে। মরা মাছ আর সাদা বরফ নিয়ে তার কারবার। চমৎকার মধ্যবয়স, স্মার্ট চেহারা। টাকা পয়সা তার কাছে খুব সহজ। আর সহজ টাকা পয়সা দিয়েই নাকি সে সব কিছু কেনে।
এখানে রাত বাড়লে সুবোধকে সে ঘন ঘন ফরমাস দেয়। সিগারেট আন। দেশলাই আন। চানাচুর আন। ঊর্মিলার জন্য একটা ভাল দেখে পান নিয়ে আয়তো—ইত্যাদি। অবশ্যই সে কখনো খুচরো ফেরত নেয় না। বর্তমানে এই সাদা পোশাকের আনাগোনার মধ্যে বারণ করা সত্ত্বেও তার ফরমাসের বিরাম নেই। কিন্তু সুবোধটাকে-তো আর কাছে পাওয়া যাচ্ছে না।
এর মধ্যেই হঠাৎ করে—এ-ই শালা সুবোধ,শালাবাবু—কোথায় গেলি বাবা? জড়ানো গলা। হঠাৎ ঊঁচুতে উঠে আবার খাদে নেমে এলো।
রাস্তার দুদিকেই রেলের জমি। জবর দখল। একদিকে দোকান, অন্যদিকে বস্তি। বস্তির দিকে দু’একটা মুদি দোকান।এই মুদি দোকান কয়টা বাদ দিলে এখানে সবই একপ্রকার হোটেল কাম গ্যারেজ কাম রাতের বেআইনী দেশী মদের দোকান কাম পানের দোকান কাম শুকনো নেশার দোকান কাম আরো কতো কী--। এই অঞ্চলেই একটা ফাঁকা জায়গা ঊর্মিলা পূরণ করে তার তেলেভাজার দোকান দিয়েছে। যারা দোকানে বসে মদ খাচ্ছে তারা অনেক সময় তেলেভাজাটা নিজেরাই কিনে নিয়ে গিয়ে বসেছে। কেউ কেউ দোকানে মদের গ্লাস রেখে মাঝে মাঝে এক ঢোঁক খেয়ে এসে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তেলে ভাজা খাচ্ছে। যেন সে তেলেভাজাই খাচ্ছে। মদ নয়। এটা পুলিশের হঠাৎ হামলা বা মাসিক হামলার হাত থেকে বাঁচার জন্য। মান্থলি পাওয়া সত্ত্বেও পুলিশকে এটা চাকরির খাতিরে করতে হয় মাঝে মাঝে। এটা পুলিশ দোকানী আর খদ্দের তিন পক্ষই জানে। এর জন্য ঝামেলা বা ক্ষতি যেটা হয় তা মানিয়ে নেয়াই এখানকার স্থানীয় রীতি।
কল্পনাথ এমনই একজন ফ্লাইং খদ্দের। যার বোতল গ্লাস দোকানে তো নিজে সে বাইরে। বাইরে বলতে ঊর্মিলার দোকানের সামনে।
--‘স--শালা সোবোধ’—আবার হঠাৎ উঁচু গলা। কিন্তু কোন সাড়া না পেয়ে যেন নিজের আওয়াজেই একটু ধাতস্থ হলো। এবার গলার স্বর যথাসম্ভব নামিয়ে নরম করে বলে—কি গো ঊর্মিলা, সুবোধকে দেখছিনা তো!
--কেন সুবোধরে দিয়ে কী হবে? ঊর্মিলা খুব রুক্ষভাবে ঝামটে উঠলো।
--না, মানে, সিগারেট লাগবে---।
--লাগবেতো নিজেই কিনে নেন না—ঐ তো দোকান।
--কিন্তু ব্যাটা গেল কই?
--যেখানেই যাক, এখানে চেঁচাবেন না।
--অঃ
ঊর্মিলার মাথা গরমের আঁচ টের পেল কল্পনাথ। একটু দূরে গিয়ে নিজের মনেই বলে চললো—শালীর দেমাগ কতো—মাগ ভাতারে জমেছে ভাল—পিরিতের ঢল নেমেছে গতরে—বুঝি না, না—শালা, আমার নাম কল্পনাথ—বরফ সরিয়ে কেমন করে মাছ তুলতে হয় জানি—তোকেও মাগী তুলবো—তুলবোই একদিন--।
বিড় বিড় করতে করতে এগিয়ে যায় কল্পনাথ। সামনেই পানের দোকান। হঠাৎ টের পায় গা’য়ে গা ঠেকিয়ে চলছে সুবোধ।
--আরে সুবোধ যে—কখন থেকে ডাকছি ভায়া।
সুবোধ চাপা গলায়—আস্তে,--ডাকছি মানে? সুবোধ তোমার বাপের চাকর নাকি—বাঞ্চোৎ!
আর একদিন যদি শুনি গলা ছেড়েছো একদম ফাঁসিয়ে দেবো বলছি।
পাঁজরের নিচে হাল্কা একটা খোঁচা খেয়ে কল্পনাথ তাকিয়ে দেখে সুবোধের হাতে একটা খাপে ঢাকা ছোরা। এমন ভাবে ধরা আছে যে খুব কাছে না এলে বোঝা যাবে না।
কল্পনাথ যেন সম্বিৎ ফিরে পেল। কিছুটা তোতলানো অবস্থায় বললো—না না, মানে ঠিক আছে, ঠিক আছে।
বলতে বলতে পান দোকানের সামনে আলোতে এসে দাঁড়াতেই সুবোধ অন্য মানুষ। বলে উঠলো—এ-ই সুবল, কল্পনাথ দা’কে পান দে। দুটো সিগারেটও দিস। কী দাদা, আজ মাছের দর কেমন উঠলো? আজ আসতে দেরি হলো যেন মনে হয়?
কল্পনাথ অনেকটা ফ্যাল ফ্যাল করে সুবোধের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো
--ভাল, ভালই উঠেছিল দাম। আচ্ছা আজ যাই। (ক্রমশ:)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:১০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×