somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: দু:খী সবুজ পাতা - ৩

২২ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দু:খী সবুজ পাতা প্রথম পর্ব
দু:খী সবুজ পাতা দ্বিতীয় পর্ব


সবুজ ছোট্ট ছিটে পাতার বুকের শিরাটা ফ্যাকাশে হয়ে আছে। পাতার মা ভাইবোনদের সবাইকে শক্ত করে আঁকড়ে আছে। লক্ষী পাতাটা ভাবে, পৃথিবীর সব মাই কি এমন ভালবাসে? কাঠুরেদের মা কি তাদের ভালবাসেনি?

পাতাটা ভয়ে ভয়ে নিচে চেয়ে দেখে কাঠুরেরা খাবার শেষ করে আবার কুড়াল তুলে নিয়েছে। ঠুক ঠুক ঠুক - বিকট শব্দ করে তারা তেতুলের ডালটাকে টুকরো টুকরো করছে। বনের অন্যপ্রান্ত থেকে প্রতিধ্বনি ভেসে আসে। ভয়ে তার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।

তেতুলের যে ডালটা নিচে ছটফট করছে সেখানে ছিটে পাতার অনেক বন্ধু ছিল। বন্ধুদের চিকন সবুজ চোখ সে ভুলতে পারেনা । শব্দটা বাড়তে থাকলে কান চেপে থাকে ।

সেই মগডালে শীতের শেষে অনেক নতুন পাতা শিশু জন্মেছিল। ওরা তখনো মায়ের রস ছাড়েনি। রোদ, জোছনা, বৃষ্টি - পৃথিবীর কোন কিছুই সেই নবজাতকেরা বুঝতে শেখেনি। মানুষেরা তাদের শিশুর অসুখ বিসুখেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। কিন্তু তেতুল গাছ সব দাঁতে দাঁত চেপে সয়ে যায়, নিচ থেকে বাচ্চাদের শব্দ শোনে, মা মা, মাগো - আমাদের বাঁচাও। সে অন্তত: একটিবার শাখা নুইয়ে স্পর্শ করতে চায় তাদের! চলে যাবার আগে শেষ আদর করতে চায়। ডালটা মচকে যেতে চায়।বেশী নুয়ে গেলে সে ভেঙে যাবে।

আর মানুষ খুব সামান্য বিষয়ে ঝগড়া করে। আড়ি নেয়। গাছের গাছেরা তেমন করে না। তাদের অনেক মিল। শিমুল, কড়ই, মান্দার - সবাই মিলে প্রতিবেশী তেতুলকে বোঝায়।

এমনকি সবচেয়ে কম কথা বলে যে ঝাউগাছ সেও সবুজ পাতার বাবড়ি নেড়ে তেতুলকে সান্ত্বনা দেয়। তেতুল গাছের বয়সও কম না। আগে সে এমন ঘটনা দেখেছে। তবুও সে মা, নিজেকে বোঝাতে পারে না।

ছিটে পাতার মা সন্তানদের বলে, "ভাল গাছ হতে তোমাদের সব কিছু সয়ে যেতে হবে। কেউ কষ্ট দিলে তার জন্য রাগ করা যাবে না"।

সবুজ ছিটে পাতাটা না বুঝে উল্টো প্রশ্ন করে, "মা, ভাঙচুড় আর হৈচৈ ছাড়া মানুষ আর কী পারে? তুমি তো রাতের পর রাত জেগে বাতাসে অক্সিজেন ঠিক করে দাও, অথচ তোমার কোন একটা পা নাই, হাত নাই? আর সেই কষ্ট দেয়া মানুষদের কেন থাকে? ওরা কেন লাফাতে পারে, নড়তে পারে..?"। আজকে এসব প্রশ্ন ভাল লাগেনা পাতার মায়ের।

ছিটে পাতা মায়ের কাছে শুনেছে, পুকুরের অন্যপাশে গোটা চারের বয়েসী সেগুনগাছ ছিল। কয়েকটা পুরনো শিলকড়ই গাছ - যাদের বয়স ১০০ বছরের বেশী। গত চৈত্রে কাঠুরেরা এই থুরথুরে বুড়ো গাছের শরীরটাকে বিভৎস ভাবেই করাত দিয়ে কেটে নিয়েছে।

নিচের কাঠুরেরা টুকরো কাঠ তাদের ট্রাকে বোঝাই শেষ করে। তেতুল গাছ সর্বশান্ত হয়ে চেয়ে দেখে - পাতাগুলো ছটফট করতে করে, নিস্তেজ হয়ে আসে, ট্রাকটা তার শরীরের খন্ডগুলো নিয়ে বিন্দুতে মিলিয়ে যায়।

বনে রাত নামে। পাখিরা ফিরতে থাক। শিশুরা ঘুমানোর আগে রূপকথা আর ছড়া শুনতে চায়।

শিশু পাতারা তারাদের গল্প খুব ভালবাসে। মায়েরা রাতে কাজে ব্যস্ত থাকে তখন তারারাই তাদের গল্প শোনায় । ভারী মজার সে গল্প। একটা গল্প আছে ছোট ছোট তারার রাজপুত্র নিজেদের কাতুকুতু দেয় আর হাসায় । পায়রারা ছিটে পাতাকে বলেছিল মানুষরা তাদের বাচ্চাদের খালি রাক্ষস খোক্ষস দৈত্য দানোর ভয়ঙ্কর কাহিনী শোনায়। ছিটে পাতার মনে হয়, এজন্য মানুষগুলো আর ভাল হয় না।

তারারা গল্পের হাট বসালে ছিটে পাতা চুপ করে গালে হাত রেখে গল্প শুনতে থাকে। মানুষেরা কিন্তু তারার শব্দ শুনতে পায়না, শুধু মিটমিট আলো দেখে।

সেই দু:খের দিন বল্প কইয়ে তারারা এসে দেখে তেতুলের যে বড়.ডালের শিশুদের তারা গল্প শোনাতো, সেখানটা একদম ফাঁকা। তারা মিটমিট আলো থামিয়ে চুপ হয়ে থাকে। কালো মেঘের আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে নেয়। তেতুল গাছটার ডালে জমে থাকা শিশির দেখে তারাদের ঘটনাটা বুঝতে সময় নেয় না। সেদিন আর গল্প হয়না। টুপ টাপ শব্দ করে সারা রাত ধরে উল্কা হয়ে তারা ঝরে পড়তে থাকে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ৮:১৪
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×