অঝর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে।
বারান্দায় দাড়িয়ে আরনিশি.....
বৃষ্টির পানিতে ভিজে যাচ্ছে কাপড় সেদিকে ওর কোনও পাত্তা নেই। এক মনে বাহিরে তাকিয়ে দেখছে আর ভাবছে পুরনো কথা গুলো....।
এমন সময় পিছন থেকে ওর মা ডাকলো।
মা : আরনি এই আরনি....
কোনো সারা নেই......
অবশেষে ওর মা ওর পিঠে আলতো করে হাথ রেখে বললেন: মা তোর কি হয়েছ..??
মেয়েটি কিছু না বলে দৌড়ে পালিয়ে গেলো।
ওর মা অবাক দৃষ্টিতে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
ও ছুটে বাথরুমে গেলো। গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলো। এক মনে আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে কতক্ষন দেখলো। তারপর ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। মনে পড়ে গেলো ওর পুরনো সব কথাগুলো। বেশি দিন হয়নি। মাত্র কয়েকদিন আগের কথা....
প্রশ্ন ! যে ছেলেটি ছিলও ওর সব। খুব ভালোবাসতো দুজন দুজনকে। প্রশ্ন নীল রং খুব পছন্দ করতো। আরনিশিকে বলেছিলো যেদিন ওরা প্রথম দেখা করবে সেদিন যেন আরনি নীলে নীলে নীলান্নিত হয়ে আসে।
ওদের ফেইসবুকে প্রেম। সেদিন ছিলো ওদের দেখা করার দিন। আরনি খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলো। আগের রাতে শপিং এ গিয়েছিলো নীল চুরি,শারি,নীল টিপ কিনে এনেছে। এটাই আজ পড়বে সে তার প্রিয় মানুষটির জন্য।
এদিকে প্রশ্ন আজ ৮ টার দিকে ঘুম থেকে উঠে রেডি হতে শুরু করেছে। প্রিয় মানুষটির সাথে দেখা বলে কথা ! ১০ টার ঘুম না হয় একটু আগেই ভাঙলো তাতে কি..!!
নীল পাঞ্জাবি পড়েছে। আরনি বলেছিল বলে ! সাথে চোখে ছিলও গ্লাস হাতে ছিলো বড় ডায়ালের ঘড়ি। আরনি এক মনে প্রিয় মানুষটির জন্য সেজে চলছে। আয়নায় বার বার নিজের মুখটি দেখছিল আরনি। ওর মনের মতো হবে তো..!!
প্রশ্ন বৃষ্টিতে ভিজতে খুব পছন্দ করতো। আরনিকে বলতো বৃষ্টি হলে ওর হাতে হাত রেখে ভিজবে আর মনের সুখে গান করবে....এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকে না তো মন..........
ওর পাগলের মতো কথা গুলো শুনে আরনি শুধু হাসতো কিছু বলতো না। ৯ টা বেজে গেছে এবার ও বাসা থেকে বেরবে। ওদিকে প্রশ্নও বের হয়ে গেছে।
১০.৪৫ এ ওরা ওদের বলা জায়গায় চলে এসেছে। রাস্তার এক পাশে আরনিশি অন্য পাশে প্রশ্ন। দুজন দুজনকে এক নজর দেখলো। এই মেয়েটি সেই যার জন্য প্রশ্ন এতো পাগল। যাকে ও ওর নিজের থেকেও বেশি ভালবাসে। ওর দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো আরনি।
দুপাশ থেকে বিশ্রামহীন ভাবে গাড়ি আসছে রাস্তা পার হবার কোনও উপায় নেই। আরনির আর সহ্য হল না। ও পাগল হয়ে যাচ্ছে ওর প্রিয় মানুষটির কাছে যাবার জন্য। সব উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে পড়লো। কিছুদুর যাবার পরেই একটা বাস এসে ওকে ধাক্কা দিবে দিবে এমন সময় কে যেনো ওকে পিছন থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। আরনি লোকটাকে দেখতে পেল না। শুধু দেখলো অজস্র রক্ত ঝরে যাচ্ছে। এর মধ্যেই শখানেক লোক এসে সেখানে ভিড় করলো ।
আরনি লোকটাকে দেখার জন্য অনেক গুলো লোক ঠেলে ওই লোকটির কাছে যেতেই ওর দম যেনো বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হলো।
ও কি দেখছে এটা? এটা কি সত্যি..?!
ও কিছু বলতে পারলো না। চুপ করে নিস্তেজ হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা লোকটির পাশে গিয়ে বসলো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে জোড়ে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো।
এমন সময় বৃষ্টি পড়তে শুরু হলো এক ফোঁটা দু ফোঁটা করতে করতে এক সময় অঝর ধারায় পড়তে শুরু করলো। বৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে মনে হচ্ছে আরনির চোখের পানি ঝরতে লাগলো বিরামহীন। এ ঝরার কি কোনো শেষ আছে..??
এই প্রশ্নের উত্তর শুধু প্রশ্নেরই জানা আছে !
সেদিন থেকে আরনি আর কারো সাথে কথা বলে না। বৃষ্টি পরলেই বৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে কাঁদতে শুরু করে,এক সময় বৃষ্টি শেষ হয়ে যায় কিন্তু ওর কান্না শেষ হয়না।
কাঁদতে কাঁদতে সেই নীল পাঞ্জাবিটা হাতে সারাদিন চুপ করে ওই গানটা শোনে.... এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকে নাতো মন কাছে যাবো কবে পাবো আমি তোমার নিমন্ত্রন..........