somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিযোদ্ধা খোকা মিয়া আজও ছেড়ে যাননি তাঁর ৪৮ শহীদ সহযোদ্ধাকে

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৩:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আনসারের সশস্র ট্রেনিং পাওয়া চব্বিশ বছরের স্বল্প শিক্ষিত টগবগে তরুন খোকা মিয়াকে মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে দু'বার ভাবতে হয়নি। সুনামগঞ্জের নারায়ণতলা গ্রামের সাদাসিধে এ মানুষটি ১৯৭১ এর ২৭ মার্চই যোগ দেন যুদ্ধে, আশেপাশের গ্রামের আরও অনেকের সাথে।

ভাগ্যবান পিতা ও কন্যা, এমন একজন মুক্তিসেনার সান্বিদ্ধ পেয়ে..



মুক্তিযুদ্ধে তো যোগ দেয়া হল, কিন্তু হাতিয়ার কোথায় পাওয়া যাবে? মনে পড়ে গেল আনসার ট্রেইনিং ক্যাম্পে অনেকগুলো টি থ্রী-নট-থ্রী রাইফেল আছে। সবাই মিলে গেলেন তাঁরা এসডিও সাহেবের কাছে, কিন্তু সরকারী মাল কিছুতেই দিলেননা সরকারী সেই আমলা। অগত্যা খেলেন গণধোলাই। এসডিও-র বুদ্ধীমতি মাতা ত্রানকর্ত্রীর ভূমিকায় ছেলেকে উদ্ধারের প্রচেষ্টা চালালেন! 'বাবাসকল, আমার ছেলে সরকারের চাকরি করে, সে কিভাবে তোমাদের হাতে সরকারী অস্ত্র তুলে দিবে বল? তোমরা গুদামের তালা ভেঙ্গে নিয়ে যাও যা ইচ্ছে'। মুহুর্তেই লুঠ হয়ে গেল হাতিয়ার। নিরস্ত্র মুক্তিসেনারা হলেন সশস্ত্র!

এর পরের কাহিনীতো সবারই জানা। ব্যার্থতা আর সফলতার মিশেলে এগিয়ে চলল স্বাধীনতার যুদ্ধ। সুনামগঞ্জে আসা প্রথম এগার জন পাক সেনাকে কিভাবে নাস্তানাবুদ করে পরাস্থ করা হলো সে কাহিনী যখন তিনি বলছিলেন তখন চোখে তাঁর ভিন্ন দৃষ্টি। তিনি যেন ফিরে গেলেন সেই একচল্লিশ বছর আগের দিনটিতে। আমারা বাপ-বেটি মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম তাঁর সময় পরিভ্রমনকৃত দৃষ্টিটি!

তিনি একে একে বলতে থাকেন কিভাবে সহযোদ্ধারা বিভিন্ন যুদ্ধে পরম সাহসিকতায় আত্মত্যাগ করেছিলেন বিভিন্ন সময়ে। একেকটি খন্ডযুদ্ধ কেড়ে নিচ্ছিল দু-তিনটি যোদ্ধার তাজা প্রাণ। খন্ডযুদ্ধ শেষে সৎকারের জন্য লাশগুলো পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছিল নারায়নতলা গ্রামটিতে। বর্ডারের সংলগ্ন হওয়ায় গ্রামটি কিছুটা নিরাপদ ছিল তখন। তাই হয়তো শহীদদের কবর হিসেবে বেছে নেয়া হল এই গ্রামটিই। মোট আটচল্লিশ জন শহীদের লাশ কবর দেয়া হলো গ্রামটির একই জায়গায়, যার ভেতর ছিলেন ছয়জন হিন্দু মুক্তিযোদ্ধা। মহান মুক্তির সংগ্রামে হিন্দু-মুসলমানের ধর্মীয় জাত্যাভিমান অথবা ভিন্নতাটি বড় হয়ে উঠতে পারেনি!

আটচল্লিশজন বীর শহীদের নামই লেখা আছে সমাধিটিতে..



কবরগুলোকে আরেকটু স্পষ্ট করে দেখার চেষ্টা করেছি এখান থেকে



বিজয়ের পর ৫ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর মীর শওকত আলী-র কাছে গেলে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার কথা বলেন খোকা মিয়াকে, অন্য অনেকের সাথে তিনি তিন বছরের সিনিওরিটি সহ যোগও দেন সিপাহী হিসেবে। কিন্তু সাত বছরের মাথায় খোকা মিয়া মাটির টানে আবার ফিরে আসেন নারায়নতলা। ফিরেতো এলেন কিন্তু কি করবেন তিনি। জমিজমাও অতি অল্প। শত অভাবেও কারও কাছে হাত পাতেন না। দিনের বেশীরভাগ সময়ই খোকা মিয়া কাটান আটচল্লিশ শহীদের সমাধী চত্বরে। এভাবেই একদিন তিনি হয়ে উঠলেন শহীদ সমাধীর অফিসিয়াল কেয়ারটেকার, তাও মাত্র পাঁচশত টাকা বেতনে!

মানচিত্রটিতে দেখা যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধকালীন সবগুলো সেক্টরের অবস্থান। ৫ নম্বর সেক্টরটি উপরের দিকে ডান কোনা বরাবর..



মুক্তিযোদ্ধা খোকা মিয়া স্বভাবে সাদা-সিধে। নেই কোন উচ্চাভিলাষ তাঁর। কারও প্রতি নেই কোন অভিযোগ। তাই বলে কি কারও কিছু করার থাকবেনা? কে দেবে এর উত্তর? চলছে দেশ অথর্ব দের কাঁধে সওয়ার হয়ে। এগিয়ে যদি কেও আসেই তবে হয়তো কোন একদিন তরুণ প্রজন্মই আসবে এগিয়ে। আমরা যারা অথর্ব তারা তরুণদের জানানোর দায়িত্বটুকু যেন অন্তত অবহেলায় না এড়িয়ে যাই।







তরুন বন্ধুরা, দেখে নিতে পারেন মহান মুক্তিযুদ্ধের সবগুলো সেক্টর ও সাবসেক্টর কমান্ডারদের নামসহ কিছু দরকারী তথ্য । দেশকে হয়তো প্রায় সবাই ভালবাসি আমরা। তবে চলুন একটু বুঝেশুনে ভালবাসি!

উৎসর্গ: খোকা মিয়া, বীরমুক্তিযোদ্ধা, পাঁচ নম্বর সেক্টর। আপনারা দেশ স্বাধীন করার আসল কাজটি করে গেলেও বাকী কাজগুলো আমরা আজও করতে পারিনি। আমরা যে অথর্ব.. :(
৬০টি মন্তব্য ৬১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×