somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিংকাচিকা, ঈদ শপিং এবং অন্যরকম ইফতার!

২০ শে আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৩:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


"ডিংকাচিকা-ডিংকাচিকা" অদ্ভূত এক শব্দ করে গত কিছুদিন থেকে আমার ৮ বৎসরের ছেলে ইশতি প্যান্টের দু'পকেটে হাত ঢুকিয়ে কি যেন বলে, কিন্তু বিষয়টি আমি খুব একটা আমলে নি নাই। আজ সকাল থেকে তার একটিই আবদার মার্কেটে গেলে তাকে একটি ডিংকাচিকা সিডি কিনে দিতে হবে। ইশতিকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম...বাবা ডিংকাচিকা কি? ও রাজ্যের বিস্ময়! নিয়ে আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করলো বাবা তুমি ডিংকাচিকা চেনো না? প্যান্টের দু'পকেটে হাত ঢুকিয়ে অমনি আমাকে ডিংকাচিকা দেখিয়ে দিলো। বুঝলাম এটি একটি নাচের মুদ্রা।



তারপর যথারীতি বসুন্ধরা সিটিতে প্রবেশ করেই প্রথমে একটি ডিংকাচিকা সিডি কিনতে হলো নীচ তলা থেকেই। তারপর মেয়ের পোশাকের জন্য লেভেল-৩ তে গিয়ে দেখি ডিংকাচিকা থ্রী পিসে মার্কেট সয়লাব। বুঝেন এবার ফ্যাশন কাকে বলে? দোকানীদের কাছে যা শুনলাম...ডিংকাচিকা,শিলা কি জওয়ানী, এক্সফেক্টর, মোগলে আজম, ঝালোয়া, আশকারা, বোম্বে বেলুন ইত্যাদি বৈচিত্র্যময় এসব নামের সালোয়ার-কামিজে সয়লাব নগরীর বিপণিবিতানগুলো। নগরীর অভিজাত শপিংমল বসুন্ধরা সিটি, ইস্টার্ন প্লাজা, ধানমন্ডি রাপা প্লাজা, মেট্রো শপিং মল, নিউমার্কেট বা মধ্যবিত্তের মার্কেট বলে খ্যাত গাউছিয়া বা চাঁদনীচকেও এই ডিংকাচিকা বা ইন্ডিয়ান সিনেমা বা গানের অথবা সিরিয়ালের নামে নামকরণ করা এসব তরুনীদের ড্রেস দেদারসে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিবার ঈদ আসলেই অন্যদের মতো আমাকেও একটি ঝামেলায় পড়তে হয়, আর এই ঝামেলাটি হচ্ছে গিন্নীকে ঈদ শপিং-এ সময় দেওয়া। যদিও বিষয়টি বরাবরেই আমার কাছে খুবই বিরক্তীকর টেকে। কিন্তু আমাকে ছাড়া আবার আমার উনি এই ভীড় ভাট্টার বাজারে বের হবেন না, তাঁর সাফ কথা। অগত্যা গত হলিডেতে আমাকে অনিচ্ছা সত্বেও বলি হতে হলো শপিংএর এমন ঝামেলাপূর্ণ কাজে। এখানে বলা রাখা ভাল...ম্যাচিং নামক একটি বিষয়ে সবচেয়ে বেশী সময় নষ্ট হয় এবং এ কারণে পুরো মার্কেটও চষে বেড়াতে হয় বারে বারে। শাড়ীর সাথে চুড়ি, ব্যাগ, সেন্ডেল, টিপ, লিপেষ্টিক, লিপগ্লস, লিপলাইনার, আইব্রু পেন্সিল, মাশকারা, ...ও মাই গড! আরো কত কি?



এ দোকান থেকে ও দোকানে হাঁটতে হাঁটতে পায়ের অবস্থা যা-তা। আর এই ম্যারাথন হাটার মিছিলে শুধু আমি নই আমার মতো হাজারো “স্বামী নামের আসামী” গিন্নীদের এমনতর ইচ্ছের কাছে হার মানছে প্রতিনিয়ত। বসুন্ধরা সিটিতে এই হাটার পথে দেখা হল নড়াইল এক্সপ্রেস খ্যাত সাবেক অধিনায়ক ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজার সাথে। তার অবস্থা আরো করুন...সাথে ৪/৫ মাসের ফুটফুটে একটি বাচ্চা। বাচ্চাটি তাঁর বাবা-মার এমন শপিং ম্যানিয়ায় বিদ্রোহ করে রীতিমত চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। অগত্যা মাশরাফি দম্পতি শপিংএর মাঝ পথে রণভঙ্গ দিলেন, তারা বাড়ীর উদ্দ্যেশে রওনা দিলেন।



আবারো হাঁটার পালা, বসুন্ধরা সিটির লেভেল-৪ শাড়ী, লেভেল-৬-জুতা, লেভেল-১ ও ৩ তে কসমেটিকস আর লেভেল-৮ এ ইফতার...বুঝতেই পারছেন উপরে নীচে করতে গিয়ে একজন মানুষের কি হাল হওয়ার দশা!


মাশরাফির সাথে নীচ তলায় দেখা হয়েছিল বাচ্চাদের কাপড় কিনতে গিয়ে.....তারপর ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসাতে এবার ভোঁ দৌড় বাচ্চা-কাচ্চাসহ লেভেল-৮ এ খাওয়ার জন্য। একি! ইফতার সময়ের আধ ঘন্টা আগে এসেও দেখি এই লেভেলে তিল ধারণ করার স্থানটুকু নেই। সব সীট বুকড। তারপর করিড়োর, হাটার চিপা গলি, মেঝের মাঝখান সব খানেই ব্লকড। কিছু খাবার অর্ডার দিয়ে যে নিয়ে আসবো সেই পথটুকুও যেন বন্ধ। কি করি বৌ-বাচ্চাদের স্টার-সিনেপ্লেক্সের সামনের ফুটপাতে পেপার দিয়ে বসিয়ে দিলাম শত রোজাদারদের ভীড়ে। তারপর কোন মতে "হ্যালো" নামক একটি ফুড কর্ণারে গিয়ে নগদ টাকা দিয়ে অনেক যুদ্ধ করে কিছু খাবার জোগাড় করলাম। নিজের পকটের পয়সা দিয়ে যুদ্ধ করে খাবার জোগাড় করার এমন অভিজ্ঞতা জীবনে এই প্রথম পেলাম। তারপর গণমানুষের ভীড়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে কি খেলাম বুঝতে একটু কষ্টই হলো বৈকি। তবে মনে হলো এমন নতুন পরিবেশে ইফতার করে নতুন এক অভিজ্ঞতা লাভ করলাম।



যাই হউক...এর পরও শপিং কাহিনীর শেষ হয়নি...তারপর আবারো উপরে নীচে ম্যাচিং ম্যাচিং খেলা, আর জানের রফাদফা। এবার আবারো নীচতলায় আবিস্কার করলাম আরেক সেলিব্রেটি গীতিকার কবির বকুলকে। বেচারা তার দেড় বৎসর বয়সী এক বাচ্চাকে বেবী লকারে ঝুলিয়ে নিয়েছে নিজের গলার সাথে...তারপর তাঁর গিন্নী গায়িকা দিনাত জাহান মুন্নীর পিছনে পিছনে সর্পিল গতিতে হেঁটে চলছেন বাধ্য স্বামী হয়ে। বাচ্চাটি বাবার বুকের উপর পা দুলিয়ে বেশ মজায় পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছিল। ঈদ শপিং-এ জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত একজন গীতিকারেরই এই অবস্থা....আর আমিতো আম জনতারই একজন! আমার গিন্নী বকুলকে দেখিয়ে বললো দেখেছে ওরাও বৌয়ের জন্য কত সময় ব্যয় করে...আর তুমিতো আমাকে কত কথায় শুনাও। মনে মনে সয়ে যাওয়া ছাড়া আমার আর কিবা করার আছে আমার...যেখানে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক বা একজন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত গীতিকারেও একই অবস্থা। এখন হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারলাম---- এরি নাম ঈদ শপিং!
সুতরাং যারা এখনো বের হননি তাঁরা নিশ্চয় আগাম প্রস্তুতি নিয়ে বের হবেন...এমন তিক্ত-বিরক্ত মজা পাওয়ার জন্য।
১৪টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×