সবাইকে একটা কিছু তাড়া করছে । অার অামরা ছুটছি তো ছুটছি, যেনো সহস্র বছর ধরে । এই দৌঁড়ের শেষ নেই । উদ্দেশ্যহীনভাবে । তবুও থামছিনা । কেনো এই দৌঁড়? কে অামাদের তাড়া করছে? অামরাই বা কেনো বোকার মতো দৌঁড়াচ্ছি?
প্রতিটা মানুষকে যেনো একটা অজানা বীভৎস দানব হয়তো পিশাচ তাড়া করছে । মানুষ ভয়ে দৌঁড়াচ্ছে তো দৌঁড়াচ্ছেই । এই দৌঁড়ের কাছে ম্যারাথন রেস কিছুই না । মানুষ একটু পর পর হাঁপিয়ে যায় । বিশ্রামের সুযোগ নেই । যারা পিশাচটাকে ভয় না পেয়ে চরম প্রশান্তির ঘুম দিচ্ছে তারা অাবার অতিসন্নিকটে নিজেদের ধ্বংস ডেকে অানছে । জাপানিজরা এই দৌঁড়ে বোধহয় সবচেয়ে এগিয়ে; যার কারণে অকালে তাদের অনেককেই মৃত্যুবরণ করতে হচ্ছে । চীনারা এই দৌঁড়ে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারছেনা । অতিরিক্ত দৌঁড়ে তাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ঋণাত্মক হয়ে অাসে । অার এই দৌঁড় প্রতিযোগিতায় পাশ্চাত্য দেশগুলোর অবস্থা নাজেহাল । এতই প্রতিযোগিতায় বিশ্বাসী যে, ঘর-সংসার করা তারা একরম ভুলেই গিয়েছে । সত্যিই এই পিশাচের তাড়া বড়ই ভয়ানক । দৌঁড়ালেও শান্তি নেই, না দৌড়িয়েও উপায় নেই । দোটানায় মানুষ চরম অশান্তিতে বেঁচে অাছে ।
একটি শিশু জন্মের সাথে সাথেই এই দৌঁড় প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় । না, নিজের ইচ্ছে নয়, নিজের অজান্তে তার জন্মের সাথে সাথেই তার পৃথিবী তাকে অভ্যর্থনা জানায় এই বলে, “হে মানব শিশু, দৌড় প্রতিযোগিতায় তোমাকে স্বাগতম" । শৈশবের খেলনাগুলো নতুনই থেকে যায়, হাতের নড়নে পুরনো হয় বইপত্র, পেন্সিল-কলম অার পিঠে ঝুলানো ব্যাগ । অপরিপক্ক শৈশব থেকে কৈশোর, অসমাপ্ত কৈশোর থেকে যৌবন 'ক্লাস বাই ক্লাস' বেড়ে চলে দৌড়ের গতি । যৌবনের শেষে দৌঁড়ের একধাপ শেষ হয় । তারপরই শুরু হয় দৌঁড়ের দ্বিতীয় ধাপ । এবার বইয়ের ব্যাগের পরিবর্তে কাঁধে কিংবা হাতে শোভা পায় অফিসিয়াল ব্যাগ । কিছুদিন পর এতোদিনের দৌঁড় প্রতিযোগিতার সান্ত্বনা পুরষ্কারস্বরূপ গলায় শোভা পায় 'বিবাহ মেডেল' । ভারতবর্ষের বাইরে এটার পরিবর্তে হয়তো অন্যকিছু জোটে । যেটাই জুটুক । প্রতিযোগিতা অার শেষ হয় না । সেই পিশাচের তাড়া কিছুতেই ছাড়ে না । সেই তাড়া নিয়ে যায় অামৃত্যু । মৃত্যুর ঠিক অাগে মানুষ যথেষ্ট হতাশ হয় । কী পেলাম অার কী হারালাম অার অামার কি এখানেই শেষ? কেনোই বা এই দৌঁড় প্রতিযোগিতা? প্রশ্নের উত্তর মিলার অাগেই শেষ নিঃশ্বাস ।
মৃত্যুর অাগেই এই প্রশ্নগুলো নিজেকে করাটা কি বুদ্ধিমানের কাজ নয়? এমনও তো হতে পারে, এই দৌঁড় প্রতিযোগিতার বিপরীতে কোনো সত্য লুকিয়ে অাছে যেটা অাড়াল করছে সেই বীভৎস দানব কিংবা পিশাচ, কিংবা অাপনি অামি একটু সাহস করে পেছনে তাড়া করা পিশাচকে একটি বারের জন্যও লক্ষ্য না করে অযথাই ছুটছি অথচ তাকে হারানোর শক্তি অাপনার অামার মধ্যে অাছে । অাসুন না, একবার সাহস করে দাঁড়াই । হাতে হাত রেখে, কাঁধে কাঁধ রেখে - দেখবেন অনেকই অাপনার পাশে দাঁড়িয়েছে । অাসুন না, সেই দৌঁড় প্রতিযোগিতাকে ধ্বংস করে সহযোগিতার মিছিল বের করি । অাসুন না সিস্টেমটাকেই পাল্টাই
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৫