বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেশ বাংলাদেশ। আর তাদের আবাসভূমি সুন্দরবনের এতো কাছাকাছি অবস্থান করছেন,অথচ বাঘ নিয়ে আলোচনা হবে না,তা কী করে হয়! বিশেষ করে যখন সেজন্যই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের উপাধি হয়ে আছে 'টাইগারস'।অনত্দত হাসি ঠাট্টার ছলে নির্মল বিনোদন তো জোটে!কাল তাই বিশ্বের 168 তম আনত্দর্জাতিক ভেনু্য হিসেবে আত্নপ্রকাশের অপোয় থাকা খুলনার বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে সেই বিনোদনের অনুসন্ধান চললো।এর ছোঁয়া লাগ্েলা বাংলাদেশ দলেও।এই যেমন প্র্যাকটিসের এক ফাকে সংবাদ সম্মেলনে হাজিরা দিতে আসার পথে একজন হাবিবুল বাশারকে জিজ্ঞেসই করে বসলেন,'সুন্দরবনের খুব কাছাকাছি এসে একজন টাইগার হিসেবে আপনার কী করতে ইচ্ছা করছে?'রসিক লোক হিসেবে বেশ খ্যাতি আছে বাংলাদেশ অধিনায়কের।আর ওরকম প্রশ্নে সিরিয়াস ভঙ্গিতে জবাব দেয়ার মতো বেরসিক তো আর তিনি নন।হাসতে হাসতেই বললেন,'আমি মানুষ খেতে চাই।'
নিকের সেই বিনোদনকে রুপকার্থে হাবিবুলের খেতে চাওয়া মানুষ হিসেবে কেনিয়ানদেরই ধরে নিন না,কে বাধা দিচেছ আপনাকে!হাজার হোক বাঘ তো!তবে বাংলাদেশের যদি সুন্দরবন থাকে,তাহলে কেনিয়ার আছে মাসাইমারা অরন্য।জীব বৈচিত্র্য প্রেমীদের জন্য রীতিমতো স্বর্গ মাসাইমারার সিংহও কিন্তু বিখ্যাত।তবে প্রথম ওয়ানডেতে বড়ো ব্যবধানে হার আপাতত বয়সের ভারে নিসত্দেজ হয়ে পড়া মাসাইমারার কোনো সিংহের প্রতীক হিসেবেই দাঁড় করাচ্ছে কেনিয়ানদের।অবশ্য রাজত্ব হারানো জমিদারদের তেজটা নাকি শেষপর্যনত্দ অবশেষ থেকে যায়।আজ খুলনায় দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে সেই তেজ খানিকটা দেখালেনও টমাস ওদোয়ো।এই সিরিজ শুরুর আগে বাংলাদেশের বিপ েসাত ম্যাচ খেলে ছয়টাতেই জয়, এই দুদেশের লড়াইয়ের অঘোষিত জমিদারিটা দিয়ে রেখেছিল কেনিয়ানদেরই। সেজন্যই হয়তো বাংলাদেশের কাছে সবচেয়ে বড়ো ব্যবধানে হারের পরও স্টিভ টিকোলোর ডেপুটি বলতে পারছেন,'প্রথম ম্যাচ হারাটা হতাশার।তবে আমরা ফিরে আসবো।সেই সামর্থ্য আমাদের আছে।আমি নিশ্চিত আমরা ফিরবো।'আজ নিজেদের 71 তম ওয়ানডেটাই কেনিয়ার সিরিজে ফেরার লড়াই।আর এর সবগুলোতেই খেলতে যাওয়া ওদোয়ো কাল সংবাদ সম্মেলনে কোচ রজার হার্পারের সঙ্গে ছিলেন কেনিয়ার প্রতিনিধি।কারণ সাইনাসের সমস্যায় ভুগতে থাকা টিকোলোর আজকের ম্যাচ খেলা নিয়ে অবশ্য কোনো সংশয়ই নেই। ্্তার অনুপস্থিতিতে হুঙ্কার ছেড়ে বাংলাদেশকে আতঙ্কিত করার চেষ্টাটা একাই করলেন ওদোয়ো,'আপনারা এখনো আমাদের সেরা খেলাটা দেখেননি।প্রথম ম্যাচে যা খেলেছি, তার চেয়ে আমরা অনেক ভালো দল।'
তাদের আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টাটা বিফলে গেছে বলেই মনে হলো।মাত্রই কিছুদিন আগে আনত্দর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে ইএসপিএনের কমেন্ট্রি টিমে ঢুকে পড়ার পরও কাল বাংলাদেশ দলের নেটে বল করা খালেদ মাহমুদের কথাই শোনা যাক,'টিকোলো তো আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিতই খেলছে।ওর কাছ থেকে শুনতাম কেনিয়ান ক্রিকেটের অবস্থা দিনকে দিন খারাপ হচ্ছে।কিন্তু প্রথম ম্যাচটা দেখার পর নিশ্চিত হলাম ওদের অবস্থা আসলেও তাই।'
মাহমুদের মতো নিশ্চিত হতে পারছিলেন না বাংলাদেশ দলের কেউই।সেটা তাদের কাছে অতীতে গোহারা হারার অভিজ্ঞতায় এবং কেনিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিনের অদেখায়।তাই এই সিরিজ শুরুর আগেও কেনিয়াকে বাংলাদেশের সমমানের দল বলে মেনে নিতে আপত্তি ওঠেনি হাবিবুলদের তরফ থেকে।কিন্তু নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমব্্ারের মতো তিনশো পেরুনো এবং সবচেয়ে বড়ো ব্যবধানে জেতার (131 রানে) পর 'কেনিয়া মোটেই বাংলাদেশের সমমানের দল নয়' বিষয়ক আলোচনায় যথেষ্টই উজ্জ্বল দেখালো হাবিবুলের মুখ।যদিও এখনই কিছু বলতে চাইলেন না,'আরো দুটো ম্যাচ খেলি।তারপরে বলবো।'তবে এজাতীয় আলোচনায় হাবিবুলের মতো অনুদার নন তার ডেপুটি খালেদ মাসুদ,'আসলে দীর্ঘদিন আমরা ওদের সঙ্গে খেলিনি।তাই জানা ছিল না ওদের ক্রিকেটটা আসলে কোথায় আছে।এবার প্রথম ম্যাচে দেখার পর বুঝলাম আমরা ওদের চেয়ে অনেক ভালো দল।এখন ওদেরকে কেউ আমাদের সমমানের বললে আমি তীব্র আপত্তি জানাবো।' মেনে নেবেন না মোহাম্মদ আশরাফুলও,'ওরা আমাদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে গেছে।আমরা অনেক,অনেক ভালো দল।'যার অর্থ প্রথম ম্যাচের আগে কেনিয়ানদের সম্পর্কে ধোঁয়াশায় থাকা বাংলাদেশ পরিষ্কার ধারণা নিয়েই সিরিজে আজ আরো এগিয়ে যাওয়ার জন্য নামছে।
এই নামায় আগের ম্যাচের 12 জনকে নিয়েই নামছে তারা।তাই এম্যাচেও খেলা হচ্ছে না মানজারুল ইসলাম ও রাজিন সালেহর।কিন্তু তাতে কী!টিম কম্বিনেশনের স্বার্থে একটুও নাকি মন খারাপ হয়ে নেই মানজারুলের।তাই নিজের হোমগ্রাউন্ডে খেলতে না পারার ব্যাপার নিয়ে আলোচনা উঠতেই থামিয়ে দিলেন এই বলে,'কী যে বলেন?দল জিতলেই আমি খুশি।'দলকে খোশমেজাজে রাখতে এই তরুণের চেষ্টারও কমতি নেই।খুলনার বিভাগীয় স্টেডিয়াম থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে তার বাসা।'চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়াম থেকে আকরাম ভাইদের বাসা যতো কাছে,আমার বাসা এখান থেকে আরো কাছে'-কাল প্র্যাকটিস শেষে স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে বলছিলেন মানজারুল।কাল সন্ধ্যায় গোটা বাংলাদেশ দলকেই দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গেছেন নিজের বাসায়।
সেখানে নৈশভোজের সময় সিরিজ শুরুর আগের ল্যটার দিকেই মনে হয় বারবার ঘুরেফিরে চোখ গেছে হাবিবুলদের।ল্যটাতো জানাই,কিন সুইপ মানে 4-0।তার দৃষ্টি যে সেখান থেকে এক চুলও সরেনি,সেটাতো কাল সকালেই নিশ্চিত করে গেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক,'আসলে শ্রীলংকা সিরিজ থেকেই আমাদের ব্যাটসম্যানরা রান পাচ্ছে।কিন্তু একসঙ্গে অনেকে রান পাচ্ছিল না।সেটা প্রথম ম্যাচে হয়েছে।এভাবে ব্যাটিংটা গোটা সিরিজে করে যেতে পারলে আমারতো মনে হয় ওদের কিন সুইপ করা নিয়ে চিনত্দার কিছু থাকে না।'
কেনিয়ানরা দল হিসেবে এখন কোন অবস্থায়,তা নিয়ে চিনত্দাটা সমাপ্তিরেখা পেরিয়ে গেছে।এখন ব্যাঘ্রশাবক থেকে ক্রিকেট যৌবনের দিকে ধাবমান বাংলাদেশের কেনিয়াকে ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলার চিনত্দাটা সবচেয়ে ভালো বুঝতে হবে ব্যাটসম্যানদের।তারা রান দিলে বোলার-ফিল্ডাররাতো বাঘের থাবা বসানোর জন্য থাকবেনই।সুন্দরবন যে খুলনার খুব কাছে!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



