কেনিয়া: 49.5 ওভারে 161/10
বাংলাদেশ: 23.5 ওভারে 162/1
ফল: বাংলাদেশ 9 উইকেটে জয়ী
ম্যাচ আগেভাগেই শেষ হয়ে গেছে।টাটকা জয়ের আমেজটা থাকতে থ াকতেই কোনো এক দলের ক্রিকেটাররা তাই মেতে উঠেছেন রাগবি কিংবা ফুটবল নিয়ে।নিজেদের প্রতিপরে এমন আনন্দের হিল্লোল দেখতেই এতোদিন অভ্যস্ত ছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।দূর থেকে দেখে নিজেদের সেই জায়গায় কল্পনা করার দিন ফুরানোর হাসিই কাল শেষ দুপুরে শোভা পেল মোহাম্মদ রফিকের মুখে,'আরে,সবে তো শুরু।'তখন যে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান শেষে ঝটপট খুলনার বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে নেট টানিয়ে ভলিবল খেলার জন্য ছুটছিলেন হাবিবুল-রফিকরা।অর্ধেকেরও বেশী ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচ শেষ করে দেয়ার পর সময় কাটানোর বন্দোবস্ত আর কী!
আপনার স্মৃতির পর্দা খুলে নিশ্চয়ই উঁকি দিচ্ছে 31 জানুয়ারি,2005।সেদিনও তো নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজ জেতার পথে জিম্বাবুয়ের বিপ েএমন মারমার কাটকাট ব্যাটিংই করেছিল বাংলাদেশ।তবে জানুন,নিক্তিতে মাপতে গেলে কাল কেনিয়া ম্যাচের বিস্ফোরক ব্যাটিংই এগিয়ে থাকবে।কারণ একাধিক।কেনিয়ার বিপ েসিরিজের প্রথম ম্যাচে পরিসংখ্যানের পাতায় অনেক কিছুই নতুন করে লিখিয়েছিল বাংলাদেশ।কাল তাতে সম্পাদনার কলম চললো আরো।যার শুরুটা হলো জিম্বাবুয়ে ম্যাচকে ছাড়িয়ে গিয়েই।সেই ম্যাচে জিম্বাবুয়ের করা 198 রান এতোদিন হয়ে ছিল বাংলাদেশের বিপ েআগে ব্যাট করে করা(50 ওভারের ম্যাচ)কোনো দলের সর্বনিম্ন স্কোর।কাল সেটাকে দুই নম্বরে নামিয়ে উঠে আসলো কেনিয়ার 161।পরের পর্বে জিম্বাবুয়েকে 33 ওভারে হারানোকে পেছনে ফেলে 26.1 ওভার বাকি থ াকতেই ম্যাচ জিতে দ্রুততম জয়ের নজিরও স্থাপিত হয়ে গেল।শেষ নয়,আরো আছে।জিম্বাবুয়ে ম্যাচে উইকেটের দিক থেকে সবচেয়ে বড়ো ব্যবধানে(8 উইকেটে) জয়কে ছাপিয়ে কালকের 9 উইকেটের জয় কেনিয়াকে কিন সুইপ করার পথে আরো একধাপ এগিয়ে দিল বাংলাদেশকে।আগের ম্যাচেই বাংলাদেশ পেয়েছিল রানের দিক থেকে সবচেয়ে বড়ো ব্যবধানের(131 রান) জয়।কেনিয়া বাংলাদেশের সহজতম শিকার, সিরিজের সঙ্গে সঙ্গে এটাও তাহলে প্রমানিত হওয়ার পথে এগুচ্ছে!
কেনিয়ান অধিনায়ক টমাস ওদোয়ো এটা না মেনে বলছেন,'ইটস ভেরি আর্লি টু জাজ।'হ্যা,সাইনাসজনিত অসুস্থতা নি:শ্বাসের সমস্যা পর্যন্ত এগুনোয় কাল খেলা হয়নি নিয়মিত অধিনায়ক স্টিভ টিকোলোর।কিন্তু আগেরদিন যে ওদোয়ো বলেছিলেন,তারা সিরিজে ফিরবেনই।এটা নিজের কথা গেলা ছাড়া আর কী!ওদোয়োকে তাই খিলখিল করা হাসি দিয়ে লজ্জাবনত মুখে বলতে হলো,'আসলে আজ আমাদের কোনো পরিকল্পনাই কাজে আসেনি।'
কাজে আসবে কিভাবে? আফতাব আহমেদ যে 31জানুয়ারি,2005-এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে ধুন্ধুমার ব্যাটিংই করে যাচ্ছিলেন।সঙ্গে যোগ হয়েছিল সম্ভবত নিজের ওয়ানডে উপযোগিতা নিয়ে চালু থ াকা অপবাদ ঘুচানোর জন্য এই ম্যাচকেই বেছে নেয়া জাভেদ ওমরের(64*) মারমুখী ব্যাটিংও। অযথাই বাইরের বল তাড়া করে কাভারে ক্যাচ দেয়া শাহরিয়ার নাফিসকে(28)সঙ্গে নিয়ে 69 রানের ওপেনিং পার্টনারশিপের তরতর করে এগুনোতেও আছে জাভেদের মারের ছোঁয়া।মার্টিন সুজির করা ত্রয়োদশ ওভারেই যেমন মারলেন চার চারটা বাউন্ডারি।যার দুটো দেখার মতো স্ট্রেট ড্রাইভে।ম্যাচশেষে কে একজন যেন রসিকতা করে বলছিলেন,'জাভেদ ওই মারটা 10 ওভারের মধ্যে মারতে শুরু করলেই তো এই ম্যাচটা আমাদের জন্য আরিক অর্থে টুয়েন্টি-টুয়েন্টি হয়ে যায়।'তবে তেমন একটা আবহ আফতাব(59*) ঠিকই এনে দিয়েছিলেন।ম্যাচের তৃতীয় পাওয়ার প্লে তে(16-20,5 ওভার)বাংলাদেশ 51 রান তো তুলেছে তার ব্যাটিংয়েই।মাঝে ব্যক্তিগত 22 রানে পেসার থেকে স্পিনার বনে যাওয়া জিমি কামান্ডের বলে পিটার ওনগোন্ডো ডিপ মিড উইকেটে তার ক্যাচ ফেলার পর কেনিয়ানরা দেখেছে আফতাবের ব্যাটকে রিতিমতো খাপখোলা তলোয়ার হয়ে উঠতে।আর তাতে ছিন্নভিন্ন হয়েছে কেনিয়ার বোলিং।তলোয়ারের ধারটা সবচেয়ে বেশী রক্তাক্ত করেছে স্পিনার কলিন্স ওবুইয়াকে।তার করা ম্যাচের 18-তম ওভারে উঠেছে 23 রান(দুটো ওয়াইডসহ)।আর দুটো করে ছক্কা ও বাউন্ডারিসহ বাকি 21 রান আফতাব তোলার পরপরই প্রেস বক্সে নাড়াচাড়া শুরু হয়ে গেল সবচেয়ে কম বলে ফিফটির রেকর্ড নিয়ে।তা না হলেও আফতাবের ফিফটিতে পৌছাতে লেগেছে মাত্র 24 বলই।এতে কেনিয়ার বোলিং এমনই এলেমেলো হয়ে গেল যে বাংলাদেশের জয়সূচক রানটাই এলো ওয়াইড থেকে পাওয়া বাউন্ডারি দিয়ে।
আগের ম্যাচে জেতার পরও খেদ ছিল হাবিবুলের,7 উইকেটে 97 থেকে কেনিয়ার 170 পর্যন্ত পৌছাতে পারা নিয়ে,'ওদের 120 রানে অলআউট করতে পারলে খুব ভালো হতো।'কিন্তু এই ম্যাচের পর বাংলাদেশ অধিনায়ক বললেন,'এর চেয়ে ভালো কিছু হওয়া সম্ভব ছিল না।'এর বাইরেও তার বড়ো সন্তুষ্টির কারণ,'আসলে এই ম্যাচে আমরা পাওয়ার প্লে টা খুব ভালো কাজে লাগিয়েছি।'
কাজে লাগানোর আগে প্রতিপকে অল্পতে বেঁধে রাখার েেত্র সবচেয়ে বড়ো ভুমিকাটা নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে থ াকা সৈয়দ রাসেলের।আগের ম্যাচেই 31 রানে 3 উইকেট নিয়ে নিজের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংকে মুছে দিয়ে কাল 3/28।বলা হচ্ছিল তার বল কেনিয়ানরা খেলতেই পারেনি।এই বাহাতি পেসারের প্রথম স্পেলের দিকে তাকালে সেটাকে যৌক্তিক বলে মনে হবেই,7-1-14-2।তিনি নিজে পরে সেই রহস্য ভেদও করেছেন এভাবে,'নতুন বলে প্রথম কয়েক ওভারের পর আসলে মুভমেন্ট থ াকে না।তখন মাথা খাটিয়ে বল করতে হয়।আমি সেটা করেছি।লাইন লেন্থ মেনে বল করার েেত্র সফল হয়েছি।এজন্য ওরা আমার বল খেলতে পারেনি।'সঙ্গে মাশরাফি(2/26) আর বাহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাকদের(2/30) সহযোগিতাটাও থাকায় ব্যাটিং মেরুদন্ড টিকোলোকে ছাড়া খেলতে নামা কেনিয়ানদের পিঠ সোজা করে দাড়ানোর উপায় ছিল না।শুরুর ধাক্কায় তাদের নিরূপায় করে দেয়া রাসেলই তাই ম্যাচের সেরা।ও হ্যা,বলাই হয়নি।তার বলে ডানদিকে ঝাঁপিয়ে জিমি কামান্ডের ক্যাচটা নিয়ে খালেদ মাসুদও পৌছে গেছেন একটা মাইলফলকে।ওটা যে ছিল ওয়ানডেতে তার 100-তম ডিসমিসাল।তার আগে এমন কৃতিত্ব আছে আর মাত্র 17 জন উইকেটকিপারের।আরে,শেষপর্যন্ত এটা যে বাংলাদেশের অনেক কিছু পাওয়ার ম্যাচই হয়ে থাকছে।
পাওয়াগুলোর সঙ্গে কালকের ভলিবল খেলার দৃশ্যটা যোগ করে নিতে কিন্তু ভুলবেন না!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



