somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সংখ্যার হিসাবটাও ভুলে থাকতে শেখাচ্ছে বাংলাদেশ

২৭ শে মার্চ, ২০০৬ ভোর ৪:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কেনিয়া: 50 ওভারে 232/9
বাংলাদেশ: 41.3 ওভারে 237/3
ফল: বাংলাদেশ 7 উইকেটে জয়ী

'এটা ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের কততম জয়?' বারো,তেরো নাকি চৌদ্দ? নাহ, স্মৃতি থেকে হিসাবের অংকটা উধাও হয়েই গেল বোধহয়। শনিবার শেষ বিকেলে তাই সংখ্যাটা উদ্ধারে অন্য অনেকের শরণ নিতে হলো।কিন্তু প্রশ্নটা শুনে মাত্রই কেনিয়াকে হোয়াইটওয়াশের উত্তেজনার বারুদ ঠাঁসা অনুভূতিও যেন ভোঁতা হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো হাবিবুল বাশারের। ব্রেট লি'র বাউন্সারের মুখোমুখি হওয়ার মতোই দশা তখন বাংলাদেশ অধিনায়কের,' আমি জানি না। ধুর, কী যে বিপদে ফেললেন!'অন্যদেরও একই অবস্থা। কেউ কেউ চেষ্টা করলেন। তাতে অবশ্য সঠিক সংখ্যাটা পাওয়া গেল না।অগত্যা ক্রিকইনফোর স্ট্যাটসগুরু ফিল্টারে চেপে বসা। অথচ একমাসও হয়নি, বগুড়ায় শ্রীলঙ্কাকে হারানোর পর সবার ঠোটের আগাতেই ঝুলে ছিল,' এটা একাদশ জয়।'কেনিয়া সিরিজটা বাংলাদেশের জন্য নিয়মিত জয়ের এমন এক উপলক্ষ হয়েই এসেছে যে, সংখ্যার হিসাবটাও রাখতে ভুলে যাচ্ছেন সবাই।
কিন্তু বাংলাদেশ তাদের লক্ষ্যটার কথা একদমই ভোলেনি। সেটা তো সবার জানাই, ক্লিন সুইপ। তাই শেষ ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য শুধুই আনুষ্ঠানিকতা সারার বিলাস হয়ে দাড়ায়নি। লক্ষ্যের দিকে চাতক চোখে চেয়ে থাকার পাশাপাশি সাবধানতাও ছিল হাবিবুলদের। 20 রানে জেতা তৃতীয় ম্যাচটার কথা বাদ দিলে আগের দুটো ম্যাচে হেসেখেলেই কেনিয়াকে হারানোর পর তারাও বুঝে গেছেন, স্টিভ টিকোলোরা এখন 'পচা শামুক'। অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগে তাতে পা না কাটার সাবধানতায় থেকে 7 উইকেটের জয় দিয়ে প্রথমবারের মতো কোনো দলকে হোয়াইটওয়াশ করার তৃপ্তি নিয়েই ফতুল্ল্লা থেকে ফিরেছে বাংলাদেশ দল।
সেই তৃপ্তির পালে আরো অনেক কিছুই হাওয়া যুগিয়েছে। বাংলাদেশের ওয়ানডে সেঞ্চুরির বন্ধ হয়ে যাওয়া খাতাটা আবার খুলেছে এম্যাচেই। '99-র মার্চে মেরিল ইন্টারন্যাশনাল কাপে জিম্বাবুয়ের বিপ েক্ষ নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম সেঞ্চুরি করে সাত বছর নি:সঙ্গই হয়ে থাকা মেহরাব হোসেন সঙ্গী খুঁজে পান গতবছর। কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মোহাম্মদ আশরাফুল সেঞ্চুরি করায়। কিন্তু সেটা ঠিক 100 হওয়ায় ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস হিসেবে এতোদিন লেখা ছিল মেহরাবের 101-ই। শনিবার বাংলাদেশের তৃতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরিয়ান বনে যাওয়া রাজিন সালেহ এখন সেই জায়গায়। তার অপরাজিত 108 রানই এখন সর্বোচ্চ। যেকোনো উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পার্টনারশিপের সঙ্গেও জড়িয়েছে জাভেদ ওমরের বিশ্রামে শনিবার খেলার সুযোগ পাওয়া এই ওপেনারের নাম। সেটা হাবিবুলের সঙ্গে চতূর্থ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন 175 রানের। আগেরটা 170 রানের , '99-তেই মেরিল কাপে প্রথম উইকেটে মেহরাব আর শাহরিয়ার হোসেনের। রাজিনকে নিয়ে সেটা টপকে যাওয়ার পথে হাবিবুল পেয়েছেন তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দশম ফিফটি (64*), 23 ম্যাচ পর (আসলে হবে 21 ম্যাচ, কেনিয়ার বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচে যে ব্যাটিং করারই সুযোগ পাননি)। রান এবং উইকেটের দিক থেকে সবচেয়ে বড়ো ব্যবধানের জয়, প্রথমবারের মতো তিনশো পেরুনো ইনিংস, সর্বোচ্চ পার্টনারশিপ, ওয়ানডেতে দ্বিতীয় বাংলাদেশী বোলার হিসেবে রফিকের ম্যাচে 5 উইকেটের পর একটা সেঞ্চুরিই বাকি ছিল। শেষ ম্যাচে সেটাও পেয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের জন্য কেনিয়া সিরিজের শিরোনাম হতে পারে একটাই,'প্রাপ্তির মালা গাঁথার সিরিজ।'
মালা গাথঁতে গেলে কিছু জ্বালাও পোহাতে হয়। শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের জন্য সেই জ্বালা হয়ে থাকলো 233 রান তাড়া করতে নেমে 62 রানে 3 উইকেট হারানো। চারটি চোখ ধাঁধানো বাউন্ডারি মারার পর আবারো জায়গায় দাড়িয়ে বাইরের বল তাড়া করে ক্যাচ দেয়ার মতো অপরাধ না করলেই কী পারতেন না শাহরিয়ার নাফিস(20)! তবে 196 রান করে 'টাইগার অফ দ্য সিরিজ' হওয়া কিছুটা হালকা করে দিয়েছে তার অপরাধ। সিরিজে দুটো ফিফটি থাকায় টমাস ওদোয়োকে রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে অল্পতেই ফিরে যাওয়া আফতাবেরও(9) রেহাই মিলছে।কিন্তু মিলছে না আশরাফুলের। পিটার ওনগোন্ডোর প্রথম ওভারেই বল একবার বাতাসে ভাসিয়ে সীমানা ছাড়া করার কিছুক্ষণ পর তারই সহজ শিকার আশরাফুলের (11) যে গোটা সিরিজেই রান নেই। ফলাফল 62 রানে 3 উইকেট হারানো দলে পরিণত বাংলাদেশ।
কেনিয়ানদের এই শান্তিকে শেষপর্যন্ত কেবল সাময়িক বলেই মনে করিয়ে গেছেন হাবিবুল আর 'টাইগার অফ দ্য ম্যাচ' রাজিন। দলের সঙ্গে থেকেও বেশ কিছুদিন মাঠের বাইরে থাকা এই ওপেনারের ব্যাটে শনিবার বাউন্ডারির মহোৎসবও দেখেছে বাংলাদেশ।3-0-30-0, টনি সুজির প্রথম স্পেলের এমন বাজে চেহারাই এর উদাহরণ। এর মধ্যে থাকা সাতটি বাউন্ডারির ছয়টাই রাজিনের ব্যাট থেকে আসা। নিজের অতীত মনে করে ম্যাচ শেষে বলেছেন,' আমার ইনিংস 40-এ পৌছালেই একটা ভেজাল হয়।'এযাত্রায়ও সেটা হলো। 40 রানে টিকোলোর বলে তাকে স্ট্যাম্পিং করার সহজতম সুযোগটি হারান হিতেশ মোদীর জায়গায় সুপার সাব হিসেবে নামা উইকেটকিপার কেনেডি ওটিয়েনো। এরপর উইকেটে সঙ্গী অধিনায়ক একটা কথাই তার কানে বাজিয়েছেন,'ম্যাচটা শেষ করে ফিরবি।'64 বলে ফিফটিতে পৌছালেও সেখান থেকে সেঞ্চুরিতে পৌছাতে লেগেছে মাত্র 45 বল। আর নার্ভাস নাইনটিজ থেকে সেঞ্চুরির দূরত্ব ঘুঁচিয়েছেন মাত্র 6 বলে। সেই টনি সুজির বলেই মিডউইকেট দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে পরম আরাধ্য সেঞ্চুরিতে পৌছামাত্রই অধিনায়কের আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়েছেন।এরপর তন্ময় মিশ্রের বলে হাবিবুলের মারা ছক্কায় জয়ের বন্দরে নোঙ্গর ফেলেছে বাংলাদেশ।
'টিকোলো বনাম বাংলাদেশ'-এই ধারণাটাও শেষ ম্যাচে এসে নোঙ্গর ফেলেছিল। প্রথম 10 ওভারে বোলাররা উইকেট না পেলেও দুই কেনিয়ান ওপেনারকে বেঁধে রেখেছিলেন। 5 ওভারে 13, 10 ওভারে 19, নিশ্চয়ই বোঝাতে পারছে সেটা। মাশরাফি আর শাহাদাত দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে দেয়ার পর 81 রান করা টিকোলোই হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ। অবশ্য শাহাদাতের বলে এলবিডাবি্লউর জোরালো আবেদনে আম্পায়ার নাদিম ঘাউরি সাড়া দিলে টিকোলো ফিরে যেতেন 1 রানেই। কেননা রিপ্ল্লে দেখে কমেন্ট্রি বক্স থেকে বেরিয়ে কেনিয়ার সাবেক অধিনায়ক আসিফ করিমও নাকি বলেছেন,'ইট ওয়াজ আউট।' এটা কাটাকুটি হয়ে যাচ্ছে ওটিয়েনোর রাজিনকে স্ট্যাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া করার সঙ্গে।
কাটাকুটি শেষে যা দাঁড়াচ্ছে, সেটা ওয়ানডেতে 122 ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের পঞ্চদশ জয়। যে সংখ্যাটা মনে করতে পারেননি হাবিবুল নিজেও!

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×