somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙ্গালী মুসলমানদের মননের অধোগতি এবং এ বিষয়ে আমার উপলব্ধি------ প্রথম পর্ব

১০ ই আগস্ট, ২০০৯ দুপুর ২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা"- আমার মতে এই বাক্যটির প্রতি বাঙ্গালী মুসলমানদের অতিমাত্রায় বিশ্বাস, একে লালন এবং সর্বক্ষেত্রে একে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টাই আমাদের অধোগতি এবং পিছিয়ে থাকার মূল কারণ। শুধুমাত্র অন্ধভাবে মোল্লাতন্ত্রকে অনুসারী প্রতিক্রিয়াশীল জনগোষ্ঠীই নয় অনেক উচ্চশিক্ষিত মুসলমান যারা ধর্মকর্ম তেমন একটা করেন না তাদেরকেও অনেকটা অভ্যাসের বশেই এ বাক্যটি হরহামেশা আওড়াতে দেখা যায়। আর যারা মোল্লাতন্ত্রের অনুসারী তাদের বেলায়তো কথাই নেই। প্রয়োজনে দেশের সব মানুষকে মেরে হলেও রাষ্ট্র ও জীবনের সর্বস্তরে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। জীবনের মূল্য তাদের কাছে নগন্য। সব মূল্য হচ্ছে ব্যবস্থার। জীবন অবশিষ্ট না থাকলেও চলবে। তবে কাংখিত ব্যবস্থাটি অবশ্যই কার্যকর থাকতে হবে।

এ বাক্যটির দিকে অতিমাত্রায় ঝুকে থাকা বা এর প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আকর্ষণের মূল কারণ হচ্ছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। আমাদের দেশের শতকরা প্রায় ৯৫ জন শিশুর শিক্ষাজীবন শুরু হয় ধর্মীয় শিক্ষার মধ্য দিয়ে। লজ্জাস্থান ঢাকার মতো জ্ঞান হয়নি এমন শিশুদেরকেও কায়দা হতে দৌড়ে মক্তবে যেতে দেখা যায়। এসব মক্তবের শিক্ষক হচ্ছেন মাদ্রাসার অর্ধশিক্ষিত মোল্লারা। 'চৌদ্দশত বছরের পুরনো সমাজব্যবস্থা বর্তমানের ব্যবস্থার চেয়ে অনেক উত্তম ছিল এবং সে ব্যবস্থা যেকোন মূল্যে কায়েম করতে হবে'- এই মন্ত্রটি একজন কোমলমতি শিশুর মগজে রোপন করেন এই অশিক্ষিত মোল্লারাই। শিশুদেরকে সাম্প্রদায়িক বিভক্তির শিক্ষা দেয়া হয় এখানেই। মানুষ শৈশবে যা শিখে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সারাজীবনই তা বহন করে। এ কারণেই মুসলমান মাত্রই বিশ্বাস করে একমাত্র ইসলামের অনুসারীরাই সর্বশেষ্ঠ, বাকিরা অভিশপ্ত।

জীবনের শুরুতে মগজে রোপন করা সেই বীজের বৃত্ত থেকে বের হওয়া খুব কম শিশুরই ভাগ্যে জোটে। উপরন্তু মক্তবের এই পাঠ সমাপ্ত করার পর যারা মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত হন তাদের চিন্তা জগৎ রোপিত এই বীজকে মহীরুহে রূপান্তর করে। তাঁদের কর্ম, তাঁদের চিন্তা, তাঁদের ধ্যান সব পরিচালিত হয় তথাকথিত সর্বশ্রেষ্ঠ জীবনব্যবস্থা-কে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টায়। এর বাইরেও যে আলাদা একটা জগত আছে, ভালভাবে বাঁচার যে আরো অবলম্বন আছে তা তাঁরা মানতে নারাজ। আধূনীক শিক্ষার কোন চিন্তা বা মনন তাঁদের মাঝে নেই। তবুও তাঁরা নিজেদের শিক্ষিত ভাবে এবং অন্যদের নিজের মতের বশে আনতে চায়।

শুধু মাদ্রাসা শিক্ষায় নয়, সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিরাও সহজে এই বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসতে পারেনা। আপনি দেখবেন সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থায়ও মাধ্যমিক পর্যন্ত ধর্মীয় শিক্ষা একরকম বাধ্যতামূলক। ধর্মশিক্ষা বইয়ের বাইরেও অন্যান্য পাঠ্য বিষয়েও একটা না একটা ধর্মীয় কাহিনী ঢুকানো হয়। এই ধর্মশিক্ষা এবং শৈশবের মক্তবকেন্দ্রিক শিক্ষার সমন্বয়ে সে একজন মডারেট মুসলমানে পরিনত হয়, মডারেট মানুষে নয়। আমাদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে হিজবুত তাহরীর বা তবলীগ জামাতীদের সাম্প্রতিক উত্থান এই মডারেট ইসলামী শিক্ষারই ফসল।

আমাদের ধর্মকেন্দ্রিক এই শিক্ষাব্যবস্থা মননশীল সমাজ গঠনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। সমাজ ও শ্রেণীকে বিভক্ত করেছে। জঙ্গীবাদের প্রেরণা ও সম্প্রসারণ করেছে। দেশকে মানুষের নয় বরং মুসলমানের দেশে পরিনত করেছে। ড. আহমেদ শরীফ, হুমায়ুন আজাদ, তসলিমা নাসরীন, দাউদ হায়দার সহ যারা ভিন্নচিন্তা করার সাহস দেখিয়েছে তাঁদের টুটি চেপে ধরেছে। বিগত সময়ে ধর্মীয় প্রভাবের মাত্রাটা কতোটা বেড়েছে তা আমাদের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দিকে তাকালে স্পষ্ট হবে। প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপেক্ষ দল হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিলেও এই দলের নেত্রী তাঁর নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন পীরের মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে। নির্বাচনের শুরুতে প্রতিজ্ঞা করেছেন ক্ষমতায় গেলে ইসলাম বিরুদ্ধ কোন আইন প্রণয়ন করবেন না। মুসলমানদের পক্ষ্যে আনার জন্য বক্তব্যের শুরুতে বিসমিল্লাহ'র সংযোজন করেছেন (এক সময় তাঁরা তা করত না)। শুধু তাই নয়, দেশের ধর্মান্ধ সম্প্রদায়কে সন্তুষ্ট ও শান্ত রাখার তাগিদে এই সরকারের আইনমন্ত্রীকে বলতে হয়েছে যে, দেশ যদি বায়াত্তরের সংবিধান ফিরতও যায় তবুও সংবিধানে বিসমিল্লাহ থাকবে। কি আশ্চর্যের বিষয়, আপনি ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান চালু করবেন অথচ সংবিধানের শুরু করবেন একটি ধর্মীয় শ্লোগান দিয়ে।

আমাদের ধর্মকেন্দ্রিক শিক্ষার ফলে দেশের কওমী মাদ্রাসাগুলো থেকে মানুষ বের হচ্ছেনা, বের হচ্ছেন জঙ্গী। সরকার কর্তৃক স্বীকৃত আলীয়া মাদ্রাসাগুলো মৌলবাদী রাজনীতিবিদ গড়ার এক একটা কারখানা। আর সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো মডারেট মানুষ নয়, মডারেট মুসলমান তৈরী করছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাংলাদেশ নিকট ভবিষ্যতেই মডারেট আফগানিস্তানে পরিনত হবে।

কিন্তু আমার বিশ্বাস বর্তমান সরকার এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকগণ দেশটির এ পরিনতি দেখতে চাননা। তাঁরা অবশ্যই একটি মননশীল সমাজ ও রাষ্ট্র দেখতে চান। যদি সত্যিই তাঁরা তেমনটা চান তবে তাঁদের অবশ্যই এই ভোটের রাজনীতির মারপ্যাচ থেকে বের হয়ে আসতে হবে এবং সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তাঁদের অবশ্যই ধর্মীয় বিষয়াদি মুক্ত একটি সুষ্ঠু শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে এবং মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসার-কে শক্ত হাতে দমন করতে হবে।

পরবর্তী পর্বে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা আশা রাখি।

------------------------------------------------------------------------চলবে
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০০৯ দুপুর ২:৩৪
৩৭টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×