somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রামগঞ্জ : কিছু কথা কিছু স্মৃতি ২

১৩ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব

নতুন বিদ্যালয়ে আসলে সাধারণত অনেক সমস্যা শুরু হয়, যেমন, পুরানো বন্ধুদের মনে পরা, নতুন বিদ্যালয়ে যারা আছে তারা ঠিক মতো সাহায্য না করা, পড়াশুনা বুঝতে দেরী হওয়া ইত্যাদি,ইত্যাদি। কিন্তু আল্লাহর রহমত যে আমাকে ফরহাদ এর মতো একজন বন্ধু পাইয়ে দিয়েছিলেন। ফরহাদ ছিল আমাদের ক্লাসের রোল ১, পরে ওর সাথে আমার প্রতিযোগীতা ছিল দারুন। ওর কারণে এই বিদ্যালয় আমার কাছে খুবই ভাল লেগেছিল।

এই বিদ্যালয় ছিল আমাদের বাসা থেকে বেশ দূরে, হেঁটে যেতে প্রায় ৪০-৫০ মিনিট লাগতো, তারপর ও এই জায়গাটা ছিল দারুন, দেড় বছর এই বিদ্যালয়ে ছিলাম, কিন্তু কখনো মনে পড়ে না স্কুল খোলা অবস্থায় আমি বাসায় ছিলাম। এর অন্যতম কারণ ছিল স্কুল পরিবেশ, নতুন বন্ধুরা এবং আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দ

রামগন্জ মডেল বিদ্যালয়টা ছিল মূল রাস্তার সাথে লাগানো, ইংরেজী "এল" অক্ষরের মতো, একপাশে বেশ বড় একটা পুকুর, পেছনে বিশাল একটা বন-জঙ্গল, আর সামনে ছিল খেলার মাঠ। পেছনের জঙ্গলটা ছিল আমাদের জন্য এডভেন্চারের জন্য উপযুক্ত স্থান, কারণ এমনিতে জঙ্গলটা ছিল আয়তনে বিশাল, চট্টগ্রামের প্যারেড মাঠের সমান হবে। আর অনেক ধরনের ফলের গাছ ছিল সেখানে, সত্যি বলতে গাছের ফলগুলো ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য :P, তবে বিপদ ও ছিল অনেক বেশী, কারণ বিভিন্ন প্রকারের সাপ ছিল জঙ্গলে /:), আমাদের সময়ে তৃতীয় শ্রেণীর একটা ছেলে মারা যায় সাপের কামড় খেয়ে :((, এরপর থেকে বিদ্যালয় প্রশাসন স্কুলের পিছনে একটা পরিখা/খাল খনন করে দেয় এবং মূল রাস্তায় পাহারা বসিয়ে দেয় যাতে করে কেউ জঙ্গলে যেতে না পারে। এই কাজের জন্য হেড স্যারের চৌদ্দগোষ্টীর নাম বদলিয়ে ফেললাম আমরা X(; মূল কারণ ফলগুলো আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে এবং পেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে/:), এটাতো সহ্য করা যায় না এবং চিন্তা করা শুরু করলাম কিভাবে জঙ্গলে প্রবেশ করা যায়; এবং পেয়েও গেলাম; আমাদের বন্ধু টিপুর বাসায় যেতে হলে জঙ্গলের পাশের রাস্তা দিয়ে যেতে হয় এবং ওদের বাঁশের ব্যবসা ছিল, ওর সাথে চুক্তি হলো সে দুইটা মোটা সাইজের বাঁশ এনে আমাদের ক্লাসের পিছনে রাখবে তবে ফল পাড়ার সময় সে গাছে উঠতে পারবে না কিন্তু তাকে ভাগ বেশী দিতে হবে, আমরা তাতেই রাজী হয়ে গেলাম। পরে টিফিনের সময় বাঁশ দুইটাকে সাঁকোর মতো করে জঙ্গলে প্রবেশ এবং ৪০ মিনিটের মধ্যে সব কাজ শেষ করে ক্লাসে প্রবেশ। এইভাবে বেশ কিছুদিন ভালই চলছিল, কিন্তু কিছুদিন পরেই নেমে আসে দু:সময়, তাহমিনা, শিখা সহ আরো কয়েকটা মেয়ে ভাগ চেয়ে বসে X(, নাহলে হেড স্যারের কানে নালিশ লাগাবে, আর সেটা মানে হচ্ছে প্রথমে ট্রিপল বেতের গোটা পাঁচটা বাড়ি, তারপর বাপকে ডেকে এনে আবার বাপের সামনে গোটা পাঁচটা বাড়ি এবং বোনাস হিসেবে বাসায় যাওয়ার পর বাসার তেল মাখানো বেতের বাড়ি (কারণ ততক্ষণে আব্বাজানের মেজাজ সপ্তমে উঠে যায়), সুতারাং এতকিছু চিন্তাকরে মেয়েদেরকে ভাগ দিতে আমরা নিমরাজী হলাম, এবং ওদেরকেও বলা হলো যে ওদের টিফিনের (কারণ ওরা বাসা থেকে টিফিন আনতো) ভাগও আমাদেরকে দিতে হবে, তারাও চিন্তাভাবনা করে রাজী হয়ে গেলো; অতএব, শান্তিপূর্ণ সমাধান। প্রায় এক বছর ঠিকে ছিল এই অলিখিত চুক্তি, এরপর বাবার বদলি, স্কুল বদল।

এই স্কুলের স্যারদের মধ্যে খুবই ভালো লাগতো মোশারফ স্যার (অংক) এবং করিম স্যার (ইংরেজী)। মোশারফ স্যার শুধু অংকই পড়াতেন না, তিনি ছিলেন আমাদের শারিরীকশিক্ষার শিক্ষক। স্যারের হাতে কখনো বেত দেখেছি কিনা মনে পড়েনা। করিম স্যার ছিল ঠিক তার উল্টো, জীবনে কখনো ডাবল বেত ছাড়া ক্লাসে এসেছেন কিনা সন্দেহ আছে, তবে ইংরেজী পড়াতেন দারুন, স্যার প্রায় ১৫-২০ কিলোমিটারের মতো সাইকেল চালিয়ে আসতেন, একদিন ক্লাসে আমাদের হেভী মার লাগাইছিল, ছেলে-মেয়ে কেউ বাদ নাই, সেটার শাস্তিস্বরূপ উনার সাইকেলের দুইটা চাকাই অঙ্গতা কারণবশত লিক হয়ে গিয়েছিল, বেচারাকে দুইদিন হেঁটে হেঁটে স্কুলে আসতে হয়েছিল, কাজটা ছিল, আমি, ফরহাদ এবং কামালের, তবে স্যারের মারামারিটা অনেক কমে গিয়েছিল। স্যারের কাছে পরে অবশ্য মাফ চেয়ে নিয়েছিলাম, স্যার কিছু না বলে একটা সবজান্তা মার্কা হাসি দিয়ে মাফ করে দেয়।

পরের পর্বে আমার বন্ধুদের কথা থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ৩:০৫
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×